Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ধারাবাহিক উপন্যাস “নরক” পর্ব ২২

: | : ১৫/০৮/২০১৩

সকাল দশটা। কাঁছা দিয়ে লুঙ্গি পরিহিত আর সেন্টু গেঞ্জি গায়ে তের চৌদ্দ বছরের একটি ছেলে সড়ক দিয়ে দৌড়াচ্ছে আর গলা ফাঁটা চিৎকারে বলছে, সর্বনাশ অইছে, খালপাড়ে সবুজ ডাক্তারের লাশ পইড়া আছে ! সর্বনাশ অইছে, খালপাড়ে সবুজ ডাক্তারের লাশ পইড়া আছে !
সড়ক ধরে অপর দিক থেকে হাসমত আসতে ছিল। ছেলেটির চিৎকার শোনে থমকে দাড়াল।
ছেলেটি কাছে আসতেই জিজ্ঞাস করল, পাগলের মত কী বলছিস এসব ?
ছেলেটি হাপাতে হাপাতে জবাব দিলো, হাছা কইতাছি, কেরা জানি সবুজ ডাক্তাররে মাইরা খালপাড়ে ফালাইয়া রাখছে।
এ কথা বলেই ছেলেটি ফের দৌড়াতে শুরু করল। দৌড়ে তালুকদার বাড়ির দিকে যাচ্ছে আর বলছে, সর্বনাশ অইছে, খালপাড়ে সবুজ ডাক্তারের লাশ পইড়া আছে।
হাসমত মাথায় হাত দিয়ে দূর্বা ঘাসের উপর বসতে বসতে বলল, আহা রে, ডাক্তার সাহেব কত ভালো মানুষ ছিল। তার মত ভালো মানুষকে কে মারল ?
এ কথা বলেই তৎক্ষনাৎ দাড়িয়ে খালপাড়ের দিকে ধেয়ে দৌড় দিলো। দৌড়াচ্ছে আর বলছে, সর্বনাশ হইছে, খালপাড়ে সবুজ ডাক্তারের লাশ পড়ে আছে ! সর্বনাশ হইছে, খালপাড়ে সবুজ ডাক্তারের লাশ পড়ে আছে !
যে শোনছে সেই খালপাড়ের দিকে লম্বা লম্বা পা ফেলছে। এদের মধ্যে অনেকেই হাসমত ও ছেলেটির মতন বলতে বলতে যাচ্ছে, সর্বনাশ হইছে, খালপাড়ে সবুজ ডাক্তারের লাশ পড়ে আছে ! সর্বনাশ হইছে, খালপাড়ে সবুজ ডাক্তারের লাশ পড়ে আছে !
পুরুষ রমনী, বৃদ্ধ যুবক কিশোর, এ রকম অসংখ্য লোক খালপাড়ে ভিড় জমিয়েছে। সবাই লাশকে ঘিরে দাড়িয়ে আফসোস করছে। উবু করা অবস্থায় সবুজের লাশ পড়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর উপস্থিত জনতার ভিড় ছেঁদ করে ভেতরে ঢুকল মজনু ও মতিন। দুই হাতে নরম করে ধরে উবু করা লাশ চিঁত করতেই মজনু ধরাস করে মাটিতে বসে পড়ল। মতিনও থমকে দাড়াল।
মজনুর সারা শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। দুই চোখ গলে অশ্রু ঝরছে। লাশের মুখের কাছে বসে মতিন হাউমাউ করে কাঁদছে। মজনু ও মতিনের কান্না দেখে উপস্থিত অনেকের চোখেই জল এসে গেল।
বেশ কিছুক্ষণ পর উপস্থিত জনতার মাঝখান থেকে মুরব্বি গুছের একজন দু-কদম এগিয়ে এসে বলল, চলো, লাশ নিয়ে বাড়ি চলো।
মজনু সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বলল, খবরদার, কেউ এক পা এগুবে না। তোমাদের মতন জঘন্য মানুষের কাধে চড়ে আমার ভাই বাড়ি ফিরবে না। তোমরা থাকো তোমাদের লোভ, লালসা, হিংসা আর প্রতিপত্তি নিয়ে। তোমরা মানুষকে ভালোবাসো না। তোমাদের হৃদয়ে দেশ প্রেম নেই। যে হৃদয়ে দেশ প্রেম নেই, সেই হৃদয় অপবিত্র। যার মন অপবিত্র, তার সবকিছু অপবিত্র।
এ কথা বলেই মজনু হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। আগত লোকটি পিছিয়ে গিয়ে স্তিমিত হয়ে পূর্বস্থানে দাড়াল।
এরই মধ্যে আসাদ এসে পৌছল। ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে নির্বাক দৃষ্টিতে লাশের দিকে তাকিয়ে আছে। গলার নিচে লাল দাগ দেখা যাচ্ছে। এছাড়া আর কোনো জখম নজরে আসছে না।
নিহত সবুজের মুখের দিকে তাকিয়ে মজনু কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার ভাই তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত মানুষের জন্য কাজ করে গেছে। দেশের জন্য কাজ করে গেছে। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে যার মৃত্ত্যু হয়, সে শহীদ। যে শহীদ, সে পবিত্র। তেমাদের ঐ অপবিত্র হাত দিয়ে আমার ভাইয়ের পবিত্র লাশকে ধরবে না।
আসাদ ধীর পায়ে এগিয়ে এসে মজনুর কাধে সান্ত্বনার হাত রাখল। আসাদকে দেখে মজনু আরও জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করেছে। মজনুর আহাজারি দেখে আসাদের চোখ পানি ছেড়ে দিলো। সেই পানি গড়িয়ে পড়ল মজনুর মাথার উপর।
লাশ কোলে নিয়ে আগে আগে চলছে আসাদ, আর পেছনে পেছনে চলছে শোকাহত জনতা। এদের মধ্যে অনেকেই কানাঘোষা শুরু করে দিয়েছে। একজন আরেকজনের কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে, হামিদ খাঁকে ছাড়া এই কাজ আর কেউ করে নি। নির্বাচনে তার সাথে প্রতিযোগিতার বদলা হিসাবে সে এই কাজ করেছে।
সবুজের লাশ বাড়ি পৌছতেই বর্ষা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। থানায় খবর দেওয়া হল। পুলিশ এসে পৌছতে পৌছতে দুপুর গড়িয়ে গেল। ময়না তদন্তের জন্য পুলিশ লাশ নিয়ে গেল। আসাদ ও বর্ষা লাশের সাথে থানায় গিয়েছে। মজনুকে বলেও লাশের সাথে পাঠানো গেল না ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top