শান্তির ঘুম
বেগুনতলীর সঙ্গে পটলপুরের খুব আঁকশা-আঁকশি চলছে।অবস্থা খারাপ হতে-হতে
থানা-পুলিশ অব্দি গড়িয়েছে। থানার বড়বাবু গোঁফে তা দিচ্ছেন আর বলছেন,দুই
গাঁয়ের কুকুর-শেয়ালও রেহায় পাবে না। সবাইকে লক-আপে ভরে কাপড়-কাচা
করাব।কাকপক্ষীও টের পাবে আমি কি রকম জাঁদরেল বড়বাবু!
বেগুনতলী গ্রামের বেগুন জগৎবিখ্যাত।রং-চেহারা আর স্বাদে অতুলনীয়।
হাটে-বাজারে ফড়েরা হাঁকায়,আসুন বেগুনতলীর বেগুন নিয়ে যান।রেঁধে খান,ভেজে
খান,পুড়িয়ে খান। এই বেগুন খেলে আর মাংস খেতে ইচ্ছে করবে না। মাংসকে
কচুপোড়া মনে হবে।
পটলপুরের পটলেরও তেমনই সুখ্যাতি।বিক্রিবাটা।থানার পুলিশ অব্দি
ঘুষের বদলে পটলপুরের পটল খেতে চায়।
বেগুনতলীর লোকজন বেগুন নিয়েই মেতে থাকে।ট্রাক্টর কেনে,পাকা
বাড়ি বানায়।অবসরে কুটুমবাড়ি গিয়ে,নিজের গাঁয়ের ফসলের সুখ্যাতি শোনে।
পটলপুরের চাষীরাও নিজেদের ফসলের সুনামে ডগমগ। তাদের ভাল লাগে
যখন দেখে,শহরের মিষ্টির দোকানে নতুন মিষ্টি চালু হয়েছে,পটলভোগ।দোকানের
বেয়ারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাঁক দেয়,আসুন বাবু, নতুন মিষ্টি খেয়ে যান,পটলপুরের
পটলের মত মিষ্টি,পটলভোগ।
এ বছর সব কিছুর মতই সব্জীর দাম বেড়েছে। বেগুন কুড়ি টাকা কেজি।পটল
পঁচিশ।বাজারদর নিয়ে দুই গ্রামের চাষীদের কোন মাথাব্যথা নেই। মাথা ব্যথা হ’ল
ইঁদুরদের।বেগুনতলীর ইঁদুররা বলল,আমাদের চেয়ে ওদের দাম বেশী হয়ে গেল? চল,
ওদের সব গাছের গোঁড়া কেটে দিই।
পটলপুরের ইঁদুরদের ভয়ানক রাগ,আমাদের গাঁয়ের উপর হামলা।চল, ওদের
গাছগুলোও আস্ত রাখব না।
বেগুনতলীর চাষীরা ফসলের এই দূর্গতি দেখে হায় হায় করে। বলে,এ নিশ্চয়
পটলপুরের বদমাশ গুলোর কাজ।
পটলপুরের চাষীরাও একমত,এই সর্বনাশ বেগুনতলীর শয়তান গুলোই করেছে।
ওদের যাকে এই এলাকায় দেখবি,গোঁফ কেটে দে।
বেগুনতলীর রামু গোয়ালা পটলপুর থেকে দুধ কিনে শহরে বেচতে যায়।আজ
সে বাড়ি ফিরল কাঁদতে-কাঁদতে।পটলপুরের চাষীরা তার শখের গোঁফ মুড়িয়ে
দিয়েছে।
পটলপুরের অনাথ বৈরাগীও কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরল ন্যাড়া মাথায়।বলল,
বেগুনতলীর লোকরা আমার অশৌচ করে দিয়েছে।
বৃত্তান্ত শুনে বড়বাবু তড়পান,হুকুম করেন,ধরে নিয়ে আয় দুই গাঁয়ের সকলকে।
হেড কনস্টোবল বলে,দুই গাঁয়ের লোক ধরে নিয়ে আসবেন কিসে,গাড়ির
টায়ার পাংচার।
— চলো আমরা হেঁটেই যাব। বেঁধে আনবো সবকটাকে।
— অত দড়ি পাবেন কোথায় স্যার,মুদির দোকানে হাজার টাকা বাকী।
— তা হলে উপায় কি বলো তো,দুই গাঁয়ের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।এক গাঁয়ের
লোকজন গোঁফ কামানো অবস্থায় ঘুরছে,অন্যরা ন্যাড়া মাথায়,খবরের কাগজের
লোকজন ছুটবে,আমার বদনাম,থানার বদনাম।হুম!
খবরের কাগজের লোকজন হৈ-হৈ করে ছুটে এল,ফটাফট ফটো তুলল।
বলল,স্যার যে দেখছি পিসি সরকারের ম্যাজিক দেখালেন।রাতারাতি দুই গাঁয়ের
জমি চাষ হয়ে গেছে। তাতেই চাষীরা খুশি।তারা ফের নতুন চারা বসাতে ব্যস্ত।
আর কোন অশান্তি নেই।
আলমারীর কাছে কট্-কট্ শব্দে ঘুম ভাঙল বড়বাবুর। হ্যাঁ, ধেড়ে ইঁদুরটা।রোজ
জ্বালায়।আজও এসেছে।বড়বাবু বললেন,তোকে আমি গুলি করব।তাতে যদি
জঙ্গলমহলে বদলী হতে হয়,হবে।
—আমার জাতভাইদের জন্যে আজ আপনি শান্তিতে ঘুমোচ্ছেন স্যার।হেসে বলল
ইঁদুরটা।রহস্যের গন্ধ পেয়ে তড়াক করে বিছানায় উঠে বসলেন বড়বাবু।বললেন,
তার মানে?
—দুই গাঁয়ের ইঁদুররা নিজেদের মধ্যে মিমাংসা করে নিয়েছে।রাতারাতি সব জমি
চাষ করে দিয়েছে ।নইলে কি অশান্তি মিটত?
বড়বাবু গম্ভীর গলায় বললেন,তোর জন্যে রোজ একটা পাঁউরুটি রেখে দেব।আর
জ্বালাস নে বাপু। বহুদিন পরে একটু শান্তিতে ঘুমোতে দে।
দুই গ্রামের লোক শান্তিতে ঘুমোয়। বড়বাবুও ঘুমোন। তাঁর নাক ডাকে,পায়রার
বকম বকমের মত,ঘটর- ঘ,ঘটর-ঘ।
*