নুরজানের বাবা
এই যে ভাই কোথায় চললেন ধেয়ে
কিছু কথা ছিল, শুনবেন কি এগিয়ে ?
ডাকছেন কেন ভাই
বেশ তাড়া আছে
শুনবো পরে, এখন যাই ।
কেউ শুনে না
কেউ শুনে না
সবাই চইলা যায়
কেউ জানলো না কেন কাঁদে
নুরজাহানের মায়,
নুরজাহানের দুস্থ বাবা
কাতরাচ্ছে জ্বরে
দুইদিন ধরে অনাহারী
এই বুঝি যায় মরে !
যখন তার ত্রিশ বছর
নির্ভীক ছিল জীবন
কভূ তাকে ছোঁতে পায় নি
মৃত্ত্যু ভয়ের কাঁপন,
স্ত্রী কন্যা নিয়ে যখন সুখী তার ঘর
তখনি তো প্রলয় এল ঘর নড়বড়
নিজ গৃহে পরবাসে থাকতে চায়নি সে
লাঙ্গল ছেড়ে অস্ত্র ধরে গর্জে ওঠেছে ।
যুদ্ধে গেল স্বাধীন হল স্বাদের আপন দেশ
বাড়ি এসে দেখে সবি হইছে নিঃশেষ
বাড়ি আর বাড়ি নাই পুড়ে হইছে ছাই
স্ত্রী কন্যা আছে কই কোনো খবর নাই,
পাশের বাড়ির একজন এসে বলল কানের কাছে
যুদ্ধের সময় পাঞ্জাবিরা ধরে নিয়ে গেছে ।
কিছুদিন পর বউ ফিরেছে, ফিরে নি আর মেয়ে
সেদিন থেকেই বউটা নিরব থাকে শুধু চেয়ে,
নিষ্ঠুরদের নির্যাতনে ক্যাম্পেই মরে নুরজাহানের বোন
চোখের সামনে মেয়ের মৃত্ত্যু সহ্য করা দ্বায়
সেই থেকেই সে পাগলিনী শুধুই কেঁদে যায়,
তবুও তো কাঁদে নি বীরের দুইখান চোখ
স্বাদের দেশ স্বাধীন হইছে এই তো বড় সুখ ।
নতুন করে যাত্রা পথে নতুন নতুন আশা
ধীরে ধীরে আশাগুলো হল দুরাশা ।
যুদ্ধের তিন বছর পর নুরজাহানের জন্ম
তাই যুদ্ধ হল তার কাছে বাবার বলা গল্প
রাইফেল হাতে যুদ্ধ করতে
নুরজাহান দেখে নি তার বাবাকে
তবে দেখেছে সে অভাব কেম্নে
থামিয়ে দেয় জীবন যানের চাকাকে ।
গত বছর নুরজাহানের পচিঁশ হইছে পার
যৌতুক দিতে পারে না তাই বিয়ে হয় না তার
স্বাধীনতা আজও যেন করছে ছলকাচুরি
দেশটা যারা স্বাধীন করলো তাদের বোঝাই ভারী !
স্বাধীন দেশেও স্বাধীনতার জন্য প্রতিক্ষা
বাচাঁর জন্য অবশেষে করতে হল ভিক্ষা ।
যার বীরত্বের গল্প শোনতে
ভিড় করতো হাজার হাজার লোক
সেই আজ ধূলোয় পড়ে কেউ শোনে না ডাক
ট্যাঙ্ক কামানের সামনে থেকে
বিজয় ছিনে এনেছিল যেই নুরজাহানের বাবা
তাকেই আজ থামিয়ে দিল দারিদ্রতার থাবা !