Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ধারাবাহিক উপন্যাস ‘মসনদ’

: | : ২৪/০৮/২০১৩

অগ্রহায়ণ মাস। অপরাহ্নের শেষ প্রান্তে দাড়াইয়া পৃথিবীকে বিদায় জানাইতে ব্যস্ত দিবস । প্রকৃতির ঘাড়ে আগত সন্ধ্যার হাতছানি। বিদায় সাজ পরিয়া অস্তগহ্বরের তালাসে রত রক্তিম দিবাকর। রেওয়া নদীর মায়া ত্যাগিয়া কিনারার সন্ধানে শীতার্ত হস্তে বহিত্র বাহিতেছে ধীবর তাফি উল্লাহ। তাহার সঙ্গীস্বরুপ ভেলায় রহিয়াছে ন দশ বত্সরের পুত্র ছলিম উল্লাহ। সাত বত্সর পূর্বে ছলিমের মা গত হইয়াছে। মাতৃহারা পুত্রকে তাফি সর্বদা সঙ্গে সঙ্গেই রাখে। যেই বয়সে পাড়াসুদ্ধ মাত্ করিয়া বেড়াইবার কথা,হইহল্লোর করিয়া গাঁ-এর মাঠ কাঁপাইয়া তুলিবার কথা,ভাগ্য তাচ্ছিল্যতার দরুন ছলিমের সেই সময় কাটিতেছে পানি বন্ধি হইয়া। কৈশরের প্রত্যাশিত বহু আনন্দ, সুখ ভাসিয়া যাইতেছে জল তরঙ্গে। সমগ্র ভূবণের বিনিময়েও যাহা কভূ ফের ফিরিয়া পাওয়া সম্ভবপর হইবে না। এক জীবনে কৈশর একটাই আসে, দুটো নয়। কাবাডির পরিবর্তে,ডাঙ্গুলির পরিবর্তে,ছলিম খেলা করে মত্স, নদীর জল আর ভেলার সঙ্গে। খেলিতে খেলিতে যখন অবসন্ন হইয়া পড়ে, তখন বিষন্ন মুখে বসিয়া অভিমানী নয়নে ধূসর জলের রঙ খোঁজিবার প্রচেষ্টা করে,সুদূরে অবস্থান রত মেঘাচ্ছন্ন গগণপানে ক্ষোব্ধ ও কাতর নয়নে চাহিয়া আপন ভাগ্যরেখা দেখিবার বৃথা প্রয়াস চালায়। যখনি তাহার বাবা বড় অথবা নতুন কোনো মাছ জালরুদ্ধ করে,তখন ছলিমের চেহেরা হইতে ক্লান্তি নামক অনুভূতি ও অভিমানের রেশ দূরিভূত হয়। ছলিম ভীষণ ধীরৌদ্ধত। তবে আজ তাহাকে বেশ আমোদে মেজাজে বলিয়া ঠাহর হইতেছে। খোশ মেজাজের উপলক্ষ্য হইল,আজ তাহার বাবা বড় একটি মাগুর মাছ শিকার করিয়াছে। মাগুর ছলিমের অত্যান্ত প্রিয় মত্স। পানি ভর্তি মাটির পাত্রে মাছ ছাড়িয়া দিয়া অতঃপর মাগুর মাছের দাড়িতে ধরিয়া খেলা করিতে ঢের আনন্দ হয় তাহার। ছলিমের বাবা তাফির বয়স কত হইবে, তাহাকে দেখিয়া বলা কেবল মুশকিলই নহে,ঈষদ দুর্সাধ্যিও বটে। প্রখর রোদ্দুরে তাহার ত্বক পোড়িয়া ইতোমধ্যেই শ্যামা হইতে সন্দেহাতীত কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করিয়াছে। মুখে ছুঁচাল দাড়ি,আউলা মাথার কেশ,গন্ডকূলের বৃহত গহ্বর আর শীর্ণ দেহ দেখিয়া বয়স আন্দাজ করা দুষ্কর। ছলিমের বয়স যখন দুই বত্সর তখন তাহার মাতা প্রয়াত হয়। অকালে স্ত্রী-র পরলোক গমনের পর পুত্র ছলিমের পোষণের সমস্ত দায় দায়িত্ব আসিয়া পড়ে তাফির উপর। সেই হইতে পুত্রকে সর্বদা সে সঙ্গে সঙ্গেই রাখে । ইহা ব্যতিত তাফির নিকট দ্বিতীয় কোনো পন্থাও ছিল না বটে। একমাত্র পুত্র ব্যতিত তাফির পরিজন বলিতে ত্রি-ভূবণে অন্য কেহ নাই । শূন্য গৃহে অবুঝ পুত্রকে একা রাখিয়া যাইবার মতো দুঃসাহসও তাহার নাই। পুত্রকে সদা সঙ্গে রাখিবার বিশেষ আরেকটি উপলক্ষও আছে। চারপুরুষের বৃত্তিটি যেন পুত্রধন ভালো রকমে শিখিতে পারে ও অক্লেশে নদী মখো হইতে পারে, ইহাও তাফির মুখ্যম অভিপ্রায়। 1185972_354756621322238_1225587413_n

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top