Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

চোখের সামনে দিয়ে চলে যায় স্বজন

: | : ২৮/০৮/২০১৩

১৪ আগষ্ট ২০১২
বিকাল ৩টা কি ৩.৩০মি.। সেল ফোনে শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী জানান দিলো রিয়াজ সড়ক দূঘর্টনায় আহত। বুকের ভেতর হঠাৎ মোছড় দিলো। অবিশ্বাস্য কথা, মন যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা। তবু বলি বিধাতার লিখন মেনে নিতেই হবে।
ইফতারের পর গেলাম নগরীর হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের দিকে।
এরি মাঝে চলে গেল কয়েকটা ঘন্টা।
-চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় রিয়াজকে।
-২ থেকে ৩ ঘন্টায়ও চিকিৎসা শুরু হয়নি।
-অবস্থা সংকটাপন্ন।
-ডাক্তার বলে দিলো আইসিইউ প্রয়োজন।
-চট্টগ্রাম মেডিক্যালে আইসিইউতে কোন সিটখালি নাই।
-তারপর দ্রুত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে।
– সব রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেন আর আশা নেই।
এখন শুধু ওপর ওয়ালার অলৌকিক কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। কান্নার শব্দ শুনা যাচ্ছে দূর থেকে। একা দাঁড়িয়ে কাঁদছে মাঈন উদ্দিন। আলম ভাইয়ের শব্দহীন কান্না চোখে পড়লো,মিঠুর চোখের পানিতে কখন যে নিজের অজান্তে আমার দুচোখ ভিজেছে বুঝতে পারিনি। শব্দহীন কান্নার কাতারে আমিও যোগ হলাম। মাটিতে লেপটে বসে শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরীর মন কাঁদছে রিয়াজের জন্য। আতœীয়-স্বজনদের আর্তনাদে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল যেন ভারী হয়ে গেলো। মনে হলো পুরো হাসপাতালে ওই একজন রিয়াজই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। যার মৃত্যুর প্রহর গুনছি আমরা। আমরা বুঝতে পারছি আর কতটা সময় সে আমাদের মাঝে থাকবে। আমাদের যে আর কিছুই করার নেই। সারারাত রিয়াজের পাশে বন্ধু স্বজনরা। আইসিইউর দরজায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা, উঁকি দিয়ে দরজার কাঁচের ফাঁকে দেখা নিথর দেহখানা।

১৫ আগষ্ট ২০১২
ভোর হলো আইসিইউর সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এখনো চোখের পানি ফেলছে কিছু স্বজন। কিছুজন ফিরে গেল মিরসরাইতে। তারাও বুঝে গেল এখানে না থেকে ওখানে যোগাড়-যন্ত্র করাটা ভালো হবে।
দুপুর ১.৩০ মিনিট। স্বজনদের আহাজারি। এ যেন বলে কয়ে আসা মৃত্যু। ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হবে। তার মানে কৃত্রিময়তায় আর বেশীক্ষণ রাখা যাবেনা।
রিয়াজের বেডের চারপাশে ১৫-২০ জন আমরা তার বন্ধু স্বজন। সকলের চোখ ওই একটি দেহের দিকে। আইসিইউতে একসাথে ১৫-২০জন মানুষ কখনও ঢোকার অনুমতি আছে কিনা জানিনা। সেদিন আমরা অনিয়মকে নিয়ম করেছিলাম রিয়াজের জন্য।
আইসিইউর মেশিনের পালর্স কমতে কমতে শুন্যের কোটায় পৌঁছায়। ক্রমশঃ চলে যাওয়ার ঘন্টা বাজছে। এটাতো মেনে নেয়ার মতো নয়। যেন মৃত্যুকে নিজ চোখে দেখতে পাওয়া। বিধাতার কাছে মনে মনে প্রার্থনা আর কাউকে তিনি যেন জীবনেও এধরণের মৃত্যু না দেখান।
খবরের কাগজের মানুষটি আজ নিজেই খবর হয়ে গেলেন। যে কিনা খবর খুঁজতে খুঁজতে জীবনের বেশ কয়েকটা বছর পার করে দিলেন আজ সে নিজেই খবর হয়ে খবরের কাগজের পাতায়। লাইলাতুল কদর আর ১৫ আগষ্ট একটি উত্তম আর একটি স্মরণীয় দিনে চলে গেল আমাদের ফখরুল ইসলাম রিয়াজ। আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্তবাসী করেণ।  তার চলে যাওয়ার এক বছর হলো আমরা অনেকেই তাকে মনে রেখেছি,কেউ কেউ মায়া কান্নায় জড়িয়েছি কেউবা আবার স্মৃতি থেকে ঝেঁড়ে ফেলেছি এই খবরের মানুষটিকে। রিয়াজ যেখানেই আছো ভালো থেকো সব সময়।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top