Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

স্বপ্ন ও ভালোবাসা

: | : ০১/০৯/২০১৩

টে টে করে আর কাঁদবি না। আর পারছি না। আমার জীবনটা অতিষ্ঠ করে দিলি। বিয়ের পর থেকে সংসারের ঘানি টানতে টানতে আমার জীবনটা শেষ হওয়ার উপক্রম। অতি কষ্টে মুখ দিয়ে এমন কথাগুলো বের হচ্ছিল রাহেলা বেগমের।

আর দশটা মেয়ের মতো রাহেলা বেগমেরও স্বপ্ন ছিল বিয়ের পর স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখী একটি পরিবার হবে। সেটা আর হলো কই। বিয়ের দুই বছর পর জিসানের জন্ম হয়। জন্ম থেকেই সে প্রতিবন্ধী। জিসানকে নিয়ে যদি রাহেলা বেগমের কষ্ট হতো তাহলেও চলত। কিন্তু স্বামী শফিক সাহেব বছরখানেক হলো অ্যাকসিডেন্টে একটি পা ভেঙে ফেলেছে। আসলে ভাগ্য প্রতিনিয়ত রাহেলা বেগমের সাথে প্রতারণা করছে।

খুব ছোটবেলা থেকেই রাহেলা বেগম লাজুক প্রকৃতির ছিলেন। পড়াশোনা ছাড়া আর কিছুই বুঝতেন না। অন্য ছেলেমেয়রা যেখানে খেলাধুলায়, প্রেম-ভালোবাসায় মগ্ন, সেখানে রাহেলা বেগম পড়া ও লেখায় ব্যস্ত। কারণ রাহেলা বেগমকে ডাক্তার হতে হবে। এটা যে রাহেলা বেগমের একমাত্র স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে পুঁজি করেই দিনাতিপাত করছিল রাহেলা।

আগামীকাল টিউটোরিয়াল পরীক্ষা, তাই অনেক রাত পর্যন্ত পড়ছে রাহেলা। টিউটোরিয়ালসহ সব পরীক্ষায় ভালো করতে হবে মতিন স্যারের কড়া আদেশ। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে রাহেলার অনেক সুনাম আছে। তাই মতিন স্যারের বাড়তি নজর থাকে রাহেলার ওপর। প্রায় রাত ১২টায় মুঠোফোনটি বেজে উঠল রাহেলার। এত রাতে কল করার মতো কেউ নেই তার, তাই একটু হকচকিয়ে গেল রাহেলা। মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখেই দেখল অপরিচিত নাম্বার।

– হ্যালো! রাহেলা কেমন আছো

-ভালো, কিন্তু আপনি কে

-আমি তমাল, তোমার নাম্বার তোমার খালাতো বোনের কাছ থেকে নিয়েছি। জামানের বিয়েতে তোমাকে দেখেছি। কাস থ্রির রাহেলা আর এখনকার রাহেলার মধ্যে অনেক তফাত দেখলাম। তোমার সাথে পরিচিত হতে খুব ইচ্ছে করছিল। তাই কল দিলাম। একনাগাড়ে কথাগুলো বলে যাচ্ছিল তমাল।

-আমার আগামীকাল পরীক্ষা। আমি এখন কথা বলতে পারব না। এই বলে রাহেলা লাইনটা কেটে দিলো। লাইন কাটার পর চিন্তায় পড়ে গেল। কে এই তমাল, কী চায় আমার কাছে আবার এক দিন পর তমাল রাহেলাকে কল দেয়। রাহেলা তমালের পরিচয় জানতে চায়। তমাল পরিচয় দেয় তমাল রাহেলাদের গ্রামের কামরান চৌধুরীর একমাত্র ছেলে। সে কাস ফাইভ পর্যন্ত রাহেলার সাথে একই স্কুলে পড়েছে। পরে তার বাবা-মায়ের সাথে ঢাকায় চলে যায় এবং ওখানে পড়াশোনা করে। এবার রাহেলা তমালকে চিনতে পারে।

রাহেলার আপত্তি সত্ত্বেও তমাল প্রায়ই কল করত। আর এ দিকে তমালও রাহেলার মন জয় করার চেষ্টায় থাকত। এভাবে কথা বলতে বলতে রাহেলার কঠিন হৃদয় একদিন তমালের প্রতি কোমল হয়ে উঠল।

রাহেলার মনে একটা ভয় ছিল যে ভালোবাসায় পড়লে পড়াশোনায় তি হবে। কিন্তু তমালের সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর সেই ভয় কেটে গেল। পড়ালেখায় আরো উন্নতি হলো। কারণ তমাল রাহেলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য সচেষ্ট ছিল। রাহেলাকে ডাক্তার অবশ্যই হতে হবে, এটা তমালেরও ইচ্ছা। আর কিছু দিন পর রাহেলার ফাইনাল পরীক্ষা। তাই তমাল রাহেলার সাথে দেখা করতে চায়। রাহেলা সম্মতি দেয়। কারণ পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ এক মাস দেখা হবে না।

আমবাগানের কোলঘেঁষে মানুষ চলাচলের রাস্তা। ঠিক ওই সময় রাস্তা দিয়ে মুজিব মণ্ডল যাচ্ছিল। দু’জনকে মুজিব মণ্ডল দেখে ফেলে। তমাল ও রাহেলার ও দিকে কোনো খেয়ালই ছিল না। তমালকে বিদায় দিয়ে রাহেলা যখন বাসায় ঢুকল বিপত্তিটা তখনই ঘটল। ভয়ঙ্কর চোখে রাহেলার দিকে বাবা তাকায়। জানতে চায় এতণ সে কোথায় ছিল। এই বাগানে ঘুরতে গিয়েছিলাম, রাহেলার সরল স্বীকারোক্তি। বাবা বলে, সেটা আমিও জানি। কিন্তু এতণ কার সাথে ছিলে সে কে রাহেলার আর বুঝতে বাকি রইল না। কূট মুজিব মণ্ডলই বাবাকে প্যাঁচটা লাগিয়েছে। যেহেতু ধরা পড়ে গেছে তাই রাহেলা সত্য স্বীকার করে। ছেলেটা তমাল, আমি তাকে ভালোবাসি। কথাটা বলার আগে তোমার বুকটা একবারও কাঁপল না বাবার জিজ্ঞাসা। আমি এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেবো না। আমি তমালকে ভালোবাসি এবং তাকেই বিয়ে করব এ কথা বলে রাহেলা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রাহেলার বাবা আর দেরি না করে মুজিব মণ্ডলকে পাত্র দেখার নির্দেশ দেয়। আর সাথে সাথে মুজিব মণ্ডলও একজন সুপাত্রের বায়োডাটা এনে হাজির করে। এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।

তিন মাস পর রাহেলা তার খালাতো বোনের কাছে জানতে পারে তমাল এখন পুরোপুরি অ্যাবনরমাল। কথাটি শোনার পর রাহেলা তার চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারল না। খালাতো বোনকে ধরে হু হু করে কাঁদতে থাকল।

রাহেলার বর্তমান অবস্থার জন্য কে দায়ী তার বাবার কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, নাকি তমালের আত্মার অভিশাপ এ প্রশ্ন দু’টির উত্তর খুঁজতে রাহেলা এখনো ব্যতিব্যস্ত। আসলে কি এ প্রশ্ন দু’টির উত্তর কখনো মিলবে?

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top