জাগো হে বাঙ্গালী
আর একবার জাগো
হে বাঙ্গালী,
আর একবার নিজেরে নিজে নাও খুঁজি,
আর একবার চাই
জাগরণ।
আর একবার হোক
রেনেসা, রেভ্যুলুশন।
নিজেরে নিজে নাও চিনে,
তুমি বাঙ্গালী, মহাপ্রান,
তোমার পাড়েই থেমে গিয়েছিল
গ্রীসের অভিযান।
তোমার তেজের পেয়েছিল ভয়
গ্রীক বীরের ভয়শুন্য মন,
সেই ভয়েই তার প্রস্থান
মরুদ্যান ব্যাবিলন।
আর একবার জাগো
হে বাঙ্গালী
নিজেরে নিজে নাও চিনে,
কেন ধর্মের আশ্রয়ে
নিজেরে নিজে কাঁটো
বিষাক্ত বিষের বীণে?
তুমি বাঙ্গালী
এই বড় পরিচয়
হলেই বা মুসলিম।
তুমি বাঙ্গালী
এই রক্তের ধ্বনি
হলেই বা হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, মুনি।
ছিঁড়ে ফেলো কাঁটাতার
আর একবার জাগো
নিজেরে চেনার বেগে,
ভেঙ্গে ফেলো সাম্প্রদায়িকতার দূর্গ
প্রচন্ড আবেগে।
আজ কেন মনে মরুদ্যান
আজ কেন মনে মুসলিমত্বের বাণ,
সেদিন এমন ছিলে না তুমি
যেদিন পাকসেনার আঘাতে
রক্তরঞ্জিত বঙ্গের ভূমি।
অথবা যেদিন ইংরেজ শয়তান
বা তুর্কির সুলতান
আঘাত করিল বুকে,
সে কথা কি মনে নেই
দুই শত বছর মরিলে ধুকেধুকে।
যেখানে ছয়শত বছর
বাঁচিল ইসলাম
বঙ্গমায়ের ছায়াতলে,
কিভাবে তুমি
সেই মায়েরে
এত বড় আঘাত দিলে।
ক্রোড়ের সন্তান
দিলে নির্বাসনে
বেড়া দিলে কাঁটাতারের,
এ কি প্রতিদান ধর্মের
মায়ের সেই রুপ দানের।
এই ভেবে বাঙ্গালী কেন জাগলেনা
আজও আহত,
আজও হৃদয়ে
কাঁটাতারের বেড়া।
রক্তের তেজ কি গেছে থেমে
নাকি মরু বালিতে ঢেকে গেছে তারা?
সহস্র মায়ের কান্নাতেও
কেন জাগলো না তোমার প্রান
মায়ের আদরের, ভালবাসার কিভাবে করলে অপমান?
নাকি আজও মায়ের বুকে আগুন জ্বেলে জ্বেলে
দাও ভালবাসার প্রতিদান?
তাই আর একবার জাগো
হে বাঙ্গালী,
ধুয়ে মুছে ফেলো সে আবর্জনা।
যে সংস্কার শুধু বলে মুর্তি ভাঙ্গতে
মায়ের মুখ রক্তে রাঙাতে,
সে ঈশ্বর মেনো না।
মুছে ফেলো সে আবর্জনা।
যে সংস্কৃতি
রক্তের প্রকৃতি
পারে নি করতে পরিবর্তন
কালজয়ী আর্যের ব্রাহ্মন,
আজ কিভাবে রোধ করে
সে রক্তের তেজ
মরুর বেদুইন?
তাই জাগো হে বাঙ্গালী
মনে জাগাও সেই গঙ্গাঋদ্ধির বীরত্ব,
যে বীরত্বের গাঁথা
রোমের মহাকবি ভার্জিলের মনে
জাগালো অমর করে রাখার তৃষা।
যদি ফিরে যাই দেশে
সোনার গদে উঁচু টাওয়ারে
চিরস্মরনীয় করে রাখিব এ বীরত্বগাঁথা,
ভাবিল কবির মন।
গঙ্গাঋদ্ধি বলে এক জাতি ছিল
গঙ্গার পুবে,
যাদের ভয়ে ভীত হয়
দিগ্বিজয়ীর মন।
সেই জাতি তুমি
হে বাঙ্গালী,
যারা আড়াই হাজার বর্ষ আগে
সৃজন করিত ভীতি
দিগ্বিজয়ীর মনে।
তবে আজ কেন
ভীত হও তুমি ছিড়ে ফেলতে
হৃদয়ের মাঝের কাঁটাতার,
বলো
কবে তুমি জাগবে আবার?
ভেঙ্গে ফেলো সেই বাঁধ
দেশ নামের বিভাজন,
ভেঙ্গে ফেলো সেই ধর্মের নীতি
যার ফলে আঘাত করতে হয়
নিজে নিজেকে
ভাঙ্গতে হয় মায়ের মন।
যদি আজও মা তুমিই আশ্রয়,
তবে কেন
আগুন মন্দির প্যাগোডায়।
যদি সে স্বাধীনতা
সূর্যসেন, প্রীতিলতা, ক্ষুদিরামের রক্তের দানে,
তবে কেন বিভক্ত বাঙ্গালী
দেশ নামের অবহেলায়।
যদি জাতি হল পাকসেনামুক্ত
ত্রিশ লক্ষ বাঙ্গালীর রক্তে
তবে কেন আমরা ইসলামিক রাষ্ট্র?
যদি মরিল হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান
যারা সবই বাঙ্গালী
তবে কেন হল না বাঙ্গালীর রাষ্ট্র।
তাই আজ জাগো
হে বাঙ্গালী
গড়ো বাঙ্গালীর দেশ,
ভাঙ্গো ধর্মের ভেদ, কাঁটাতারের বেড়া
মিথ্যে অহংকারের বেশ।
২৫.০৮.১৩, বদলগাছী, নওগাঁ।