Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা…….. সে কি ভোলা যায় !

: | : ০২/০৯/২০১৩

শৈশবে নানা বাড়ি গেলে সারাদিনের জন্য হারিয়ে যেতাম । সঙ্গী হত আমার সমবয়সী মামাতো ভাই শুভ (আমার সমস্ত অকাজের বিশ্বস্ত সঙ্গী ) । আট-নয় বছরের সেই সময়ে সকালে কোনমতে নাস্তা করেই বেড়িয়ে পরতাম উদ্দেশ্যহীন । উঁহু, উদ্দেশ্যতো ছিল – অজানা ! অদেখাকে দেখার, অচেনাকে চেনার সে কি অদম্য কৌতূহল তখন !

সাদা স্বপ্নের দেশে :
একবার চলতে চলতে গিয়েছিলাম কল্পনার রাজ্যে । ভাবতেও পারিনি চোখে জ্বালা ধরানো প্রখর রোদে, ফাটা মাটির বুক পেড়িয়ে এমন অদ্ভুত সুন্দরের উদ্দেশ্যে চলছিলাম । কিন্তু শুভ জানতো যে আমরা চলেছি ফুলের দেশে – ফুল তোলতে, ফুলের সিঙ্গারা খেতে !
বিশাল বিলের সামনে দাঁড়িয়ে পথের ক্লান্তি কোথায় লুকিয়ে পড়েছিল তা মনেও নেই । যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর তার মাঝে অগণিত অপরূপ সাদা শাপলা । আমিতো সাতার জানিনা, তার উপর আবার জোঁকে ধরার সম্ভাবনা শোনে আর পানিতে নামার সাহস করিনি । কিন্তু মামাতো ভাই পানিতে নেমে শাপলা ছিড়তে লাগল । যখন ওর দু’হাত ভরে উঠতো, পাঁড়ে এসে ফুলগুলো আমার কাছে জমা রেখে আবার আনতে যেত । এভাবে সেদিন ছোট্ট দুটো মানুষ দু’হাত ভরে স্বপ্ন নিয়ে ফিরে এসেছিলাম, শাপলা রূপে যা জড়িয়ে রেখেছিলো । শুধু তখন না, আজও আমাকে আবেশিত করে সেই মুগ্ধতা ।

পথ চলাতেই যেথায় আনন্দ :
নানা বাড়ির অফুরন্ত স্বাধীনতার সুযোগ আমি কখনোই হেলায় হারাতাম না । হারিয়ে যেতাম প্রায়ই । সেদিন সিদ্বান্ত হল – শুধু হাঁটবো । পিচঢালা রাস্তা ধরে গল্প করতে করতে হেঁটে চলেছি । রাস্তার দু’পাশে সারি সারি গাছ, তাদের ঘন নিবিড় ছাঁয়া ছাতা হয়ে পথটাকে আগলে রেখেছে । সেই পথের একপাশে ছবির মতো সুন্দর গ্রাম আর অন্য পাশে যতদূর চোখ যায় শুধু ধান ক্ষেতের চাঁদর । সেই সাথে গ্রামীণ সরল মানুষগুলোর কৌতূহলী চাহনি । গ্রামের সেই পরিবেশটা বড় মায়াময় ।
এসব দেখতে দেখতেই চলত আমাদের বিরাট বিরাট গুরুগম্ভীর বিষয়ে আলোচনা – বিকেলে কোন খেলাটা খেলবো, কে কার পক্ষে যাবে, খেলার স্ট্রেট্যাজি কি হবে আরও কত হাবিজাবি কথাই না তখন বলতাম আর ভাবতাম ! ভুল হল, ভাবতাম না । নির্ভাবনার সেই বয়সে কিছুই ভাবতাম না, শুধুই বলতাম আর করতাম । কতদুর গিয়েছিলাম আজ আর তা মনে নেই, তবে হঠাতই খেয়াল হল এবার উল্টো পায়ে বাড়ি ফেরা উচিৎ (নয়ত উত্তমমধ্যম জুটবে) । এ সবের ফাঁকে যে কত সময় ধরে, কত পথ হাটা হয়ে গেছে, বুঝতেই পারিনি, অবশ্য তা জানার ইচ্ছাও হতনা ।

আনন্দের নাম কদম ফুল :
অন্য বারের সঙ্গে এর পার্থক্য হল, এবার কোথায় যাচ্ছি তা জানতাম । আমার তখনও কদম ফুল দেখা হয়নি, অথচ নানাবাড়ি থেকে মাত্র দু’গ্রাম (!) পরেই নাকি আছে সেই কদম ফুলের গাছ । তাহলে এবার কদম ফুল দেখায় কোন মিস নেই । কিন্তু বড়রা শুধু বলে ওখানে নাকি বাচ্চাদের একা যাওয়া ঠিক না । তাই কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে আমরা চললাম – কদম ফুল আনতে । গ্রামের ভেতর দিয়ে চলছিতো, চলছিই । অবশেষে সেই জায়গায় পৌঁছে আমি কিছুটা দমে গেলাম ! কারণ পাশাপাশি দুটো বিশাল আকারের পুকুর আর সেই দুই পুকুরের মাঝে কদম ফুলের গাছ । যাব কি যাব না দ্বিধায় পড়ে গেলাম – ভয় লাগছে আর জায়গাটাও নীরব । ভাবছি না এলেই বোধহয় ভালো হত । কিন্তু এতদূর এসে কদম ফুল না নিয়ে ফেরত যাব তা কি করে হয় ? তাই ভয়ে ভয়ে দুই পুকুরের মাঝের সরু আল ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম কদম তলার দিকে । মামাতো ভাই গাছে উঠে ফুল পেড়ে নীচে ফেলে আর আমি সেগুলো কুড়াই । মনে হচ্ছিল যেন গাছ থেকে আনন্দ ঝরে পড়ছিল আর আমি তা কুড়াচ্ছিলাম ! জড়ো হল অনেক ফুল কিন্তু ছোট্ট চারটি হাত অত নিতে পারবে না, তাই কিছু ফুল রয়ে গেল গাছ তলাতেই । সেই ফুলগুলো ফেলে আসার জন্য আজও কষ্ট হয় । কারণ আমি যে শুধু কিছু ফুল নয় – আনন্দ ফেলে রেখে এসেছিলাম ।
সেবার বাড়ি ফেরার পর বেশ ভাল মতো বকা খেতে হল ( হালকা মারও জুটেছিল কপালে) । জায়গাটা নাকি ভাল না, জ্বীনের আছর আছে, সাপ আছে আরও কত কত নাকি ভয় সেখানে । কিন্তু আমার তখন তাতে বয়েই গেছে ! আমি যে আনন্দকে বাড়ি নিয়ে এসেছি ! আমার আবার মন খারাপ হয় কি করে !?

আজ এই বড় বেলায় ক্লান্ত মন যখন মাঝে মাঝে একদন্ড শান্তির খোঁজে শান্তির বাড়ি গিয়ে হাঁক ছাড়ে, তখন শান্তির মা গলা চড়িয়ে জানায় – শান্তি বাড়ি নেই । সেই ক্ষণে বড্ড ইচ্ছে হয় – কোন ছাঁয়া ঘেরা পথ ধরে একাকী ভাবনাহীন বহুদূর হেটে যাই ! ভাঙা স্বপ্নের টুকরোগুলো যখন প্রতিনিয়ত আহত করে তখন বড্ড ইচ্ছে করে – কোথা হতে গিয়ে দু’হাত ভরে স্বপ্ন আর আনন্দ নিয়ে আসি !

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top