Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

সত্তরের কথা

: | : ০৪/০৯/২০১৩

বুড়োর গলা টিপে ধরল পঞ্চানন। এমনিতেই বুড়ো মরো মরো–রোগ শয্যায় দু মাস ধরে পড়ে আছে–দু দিন পরে স্বাভাবিক মৃত্যু হতো তার।

পঞ্চানন ওর গলা টিপে ধরে থাকলো। যতক্ষণ ওর মৃত্যু না হচ্ছে ততক্ষণ ও ছাড়বে না।

পঞ্চানন দেখতে থাকলো, গলা টেপা মানুষের মৃত্যু কি কি দৈহিক লক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে সম্পন্ন হয়। এও এক অভিজ্ঞতা ! ভবিষ্যতের বেছে নেওয়া জীবনে তার কাজে আসবে।

বুড়ো প্রথমে বড় করে তাকিয়ে ছিল পঞ্চাননের  দিকে। কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল, কিন্তু সে শব্দ অর্থ পূর্ণ হোয়ে মুখ থেকে বের হল না। গোঁ গোঁ শব্দ হোয়ে মাঝখানে থেমে গেলো। চোখ দুটো বন্ধ হয়েই আবার খুলে গেলো আর ধীরে ধীরে চোখের কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো। মুখটা অটোমেটিক হাঁ হতে লাগলো। জিভ ধীরে ধীরে বেরিয়ে এল মুখের বাইরে। হাত, পা ক বার ঝটকা মেরে স্থির হোয়ে গেলো, বুড়ো নেতিয়ে পড়ল বিছানায় !

মৃত্যুর আগের মুহূর্ত থেকে বুড়োর চেহারা ভয়ঙ্কর হয়ে যেতে লেগেছিল, চোখের মণি দুটো অর্ধেকের বেশী বেরিয়ে এসেছে, জিভ মুখের এক পাশে ঝুলে পড়েছে।

ঠিক সে মুহূর্তে এ বাড়ির বৌ ঘরে ঢুকল। অপরিচিত পঞ্চাননকে দেখে ও থতমত খেয়ে গেলো। মুখ থেকে তার বেরিয়ে আসলো, কে? কে আপনি ?

পঞ্চানন আর দাঁড়ালো না। দু তিন লাফ দিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে দ্রুত রাস্তার ভিড়ে মিশে গেলো। চীৎকার করতে করতে বৌটা বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত এসেছিল।

এটা প্রথম কেস ছিল পঞ্চাননের। সে ইদানীং পার্টির দলে মেশা শুরু করেছে। নিজের বড় নেতা হবার যোগ্যতা নেই। পড়া লেখা ক্লাস টেন পর্যন্ত করেছে। একটুর জন্যে মেট্রিক পাশ করতে পারে নি। তবে বড় নেতা না হতে পারুক, ছোট নেতা তো হতে পারে ! আর কখনো যদি মেট্রিক পাশ করতে পারে তবে বড় নেতা হবার সে চেষ্টা করতে পারবে। মনু দা বলেছ, নেতা হতে গেলে মেট্রিক পাশ করতেই হবে এমন কোন কথা নেই !

বড় বড় পা ফেলে মনুদার ঘরে ঢুকে গেলো পঞ্চানন।

–কি হল পঞ্চু, এত হাঁপাতে হাঁপাতে কোথা থেকে আসছিস ? মনুদা প্রশ্ন করে।

–হ্যাঁ, দাদা, তোমার কথা মত হাতে খড়ি দিয়ে এলাম। ওই হরি সরকার বুড়োকে টাসিয়ে দিয়ে এলাম, পঞ্চু নির্বিবাদ বলে উঠলো।

–মানে ?

–মানে, তোমার কথা মত ওকে গলা টিপে মেরে এলাম।

–কেউ দেখল টেখল নাতো ?

–বুড়োর বৌমা দেখেছে–তবে চিনতে পারেনি। চেনার আগেই আমার কাজ ফিনিশ হোয়ে গিয়ে ছিল।

–দেখলি তো মানুষের মৃত্যু ! বিশেষ করে গলা টেপা কেসের শরীর কেমন ওলট পালট হোয়ে যায় ! বলে মনুদা স্বাভাবিক হাসল।

মনুদা পার্টির দলের স্থানীয় নেতা। বড় দাদা বললে  চলে। শাগরেদ বানাবার জন্যে মাঝে মধ্যে ট্রেনিং দেওয়ায় নতুন দলে ঢোকা ছেলেদের। পঞ্চানন ও তেমনি একজন ট্রেনী।

কেসটা মনুদাই পঞ্চাননকে দিয়ে ছিল, বলেছিল, পঞ্চু দেখ, দারগা পাড়ার হরি সরকার অনেক দিন থেকে অসুস্থ–প্রায় মরো মরো। ওর ঘরে ওর ছেলে, ছেলে বৌ ছাড়া কেউ থাকে না। ছেলে আজ সকালে কলকাতা গেছে, ঘরে একা তার বৌ। এই সুযোগে তুই তোর হাতে খড়ি দিয়ে আয়।

আর কিছু বলতে হয় নি পঞ্চুকে। ও বেরিয়ে গেলো। বর্তমানে তার হাতিয়ার দুই পকেটে দুই চাকু। ব্যাস, নতুন দলে ঢুকেছে তো এর বেশী এখন নয়।

দারগা পাড়ায় হরি সরকারের বাড়ি তার চেনা ছিল। বুড়োর বৌমাকে ও যে ভাবে হোক মেনেজ করে নেবে তা ঠিক করেই নিয়েছিল। বাড়ির কাছে গিয়ে দেখল দরজা খোলা। একটু সময় চুপ করে দাঁড়ালো। না, ঘরের ভিতরে লোক জনের আওয়াজ নেই। টুক করে ঢুকে পড়ল ঘরে। এ ঘর, সে ঘর ঘুরে কাউকে দেখল না। আওয়াজ হচ্ছিল বাথরুমে। তার মানে বুড়োর বৌমা স্নান করতে ঢুকেছে। এই সুযোগ। চট করে পঞ্চানন পাশের ঘরে ঢুকে দেখল দাদু জুলজুল করে তাকিয়ে আছে তারই দিকে! চীত্কার করার ক্ষমতা নেই, মুখ থেকে ফিস ফিস আওয়াজ বের হচ্ছিল।

আর দেরী করা যায় না। আজ তার পরীক্ষা–মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে দু হাত দিয়ে সটান টিপে ধরল হরি বুড়োর গলা। কয়েকটা হাড়গোড় দলা পাকানই তো ছিল ! এক দু মিনিটের মত সময় নিয়ে ছিল। যখন হাত পা ঢলে পড়ল–শরীর নেতিয়ে পড়ল–বুঝতে পারলো পঞ্চু কম্ম ফতে !

রাতে পার্টি হল। সনাতন, অধীর, লোকেশ, মানস–এমনি সব দলের সঙ্গীরা এক সঙ্গে বোতল খুলল।

মনুদা বলে উঠলো, আজ কি জন্যে পার্টি তোরা জানিস? দু চার জনের মুখ থেকে, না, শব্দের সুর বেরিয়ে এলো।

–আজ পঞ্চুর হাতে খড়ি হল, মরা মানুষ গলা টিপে মেরে এলো !

সবাই হো হো  করে হেসে উঠলো।

মরা না,জ্যান্ত ছিল রে,পঞ্চু সঙ্গীদের বোঝাতে লাগলো।

সবাই বোতলের পর বোতল খুলে গেলো। নিজেরাই নাচল, কুদলো, হৈ হল্লা করল। রাত বারো বাজার পর ধীরে ধীরে মহফিল ভাঙ্গল।

পঞ্চুর ট্রেনিং চলছিল।

সে দিন পঞ্চুর স্কুলের বন্ধু বিকাশের সঙ্গে দেখা।

বিকাশ নতুন নতুন চাকরি পেয়েছে। ছেলেটা পড়া লেখায় ভালো ছিল। মেট্রিক পরীক্ষার নম্বরের পার্সেন্টেজের বেসিসে ওর পোস্ট অফিসে চাকরি হয়ে যায়। বিকাশ জানে পঞ্চানন পড়া লেখায় ভালো না। তা ছাড়া গুণ্ডামি ষণ্ডামির দিকে তার ঝোঁক বেশী।

পঞ্চুই ডেকে কথা বলল, আরে বিকাশ, দাঁড়া।

বিকাশকে অনিচ্ছা স্বত্বেও দাঁড়াতে হল, বলল বল, কি বলছিস ?

–খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে তোকে ? প্রশ্ন ছোঁড়ে পঞ্চু।

–না, মানে অফিসে যাচ্ছি।

–জানি, জানি তুই চাকরি করিস।

–তুই কি করিস?

ভ্যাগাবেন্দ।

–বিকাশ, তোর সঙ্গে দরকার ছিল।

–বল।

–কটা টাকা হবে রে ?

–না রে! পকেটে দুটো টাকাই পড়ে আছে।

–ফালতু কথা বলিস না। ছাড় বাবা, কটা টাকা ছাড়, বলে পঞ্চু বিকাশের বুক পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলো।

বিকাশ রেগে গেলো, ছাড়, ছাড়, আমার পকেট ছাড় বলছি।

–না ছাড়লে কি করবি তুই? পঞ্চু উগ্র হোয়ে উঠলো।

–আমায় যেতে দে !

–না, আগে বল না ছাড়লে কি করবি তুই?

–তুই জবরদস্তি আমার কাছ থেকে টাকা নিবি?

–হ্যাঁ, দরকার হলে তাই নেবো। পঞ্চু চট করে পকেট থেকে ছুরি বের করে নিলো।

বিকাশ শান্ত হোয়ে গেলো। হাত জোর করে বলল, দেখ পঞ্চু আমার কাছে দুটো টাকাই আছে। বলে বুক পকেট থেকে দুটো টাকা বের করে দেখাল।

–থাক,থাক,আমায় টাকা দেখাতে হবে না। তবে আমার সঙ্গে কথা বলার আগে ভেবে চিনতে বলবি !

–এত চটে যাস কেন? বিকাশ পঞ্চুর পিঠে হাত রাখল।

পঞ্চুর তাও রাগ পড়ল না। বিকাশের হাত নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল, দেখবি আমি কি করতে পারি? বলে চাকু দিয়ে নিজের হাতে একটা পোঁচ দিয়ে দিলো। পোঁচের জাগা থেকে দর দর করে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

বিকাশ ভয় পেয়ে গেলো। ও বলল, আমায় মাফ কর, আর কোন দিন এমন হবে না ! ধীরে এক পা, এক পা, করে ও জাগা ছেড়ে চলে গেলো।

পঞ্চু নিজের হাত থেকে বেয়ে পড়া লাল রক্তের দিকে স্থির দৃষ্টি নিয়ে দেখে যেতে লাগলো।

গুরু মনুদা বলে ছিল পঞ্চাননকে, তাজা রক্তের দিকে তাকিয়ে থাকবি। কোথাও এক্সিডেন্ট হলে দেখতে যাবি। বডির কাঁটা, ছেঁড়া হাত, পা কিম্বা মাথা ফেটে বের হয়ে যাওয়া ঘিলুর দপদপানি দেখবি! দেশী খেয়ে শ্মশানে যাবি। মরা দেহ কেমন নেতানো, ঝিমানো পড়ে থাকে, দেখবি। তবে তোর ভয় কাটবে। আস্তে আস্তে তুই পাকা ঝানু খেলোয়াড় হোয়ে উঠবি,বুঝলি?

মাথা নাড়ে পঞ্চু। এ পথে মনু দা তার গুরু।

মনুদা বলে ছিল, তোকে আমার বডি গার্ড বানাবো রে পঞ্চু ! আমি যখন এম.এলো.এ.হবো, আমি যখন মন্ত্রী হব, তুই থাকবি আমার নাম্বার ওয়ান বডি গার্ড। তোর বেতন তখন অনেক হবে , বুঝলি ?

হাসে পঞ্চু, স্বপ্ন দেখে যায়। মনুদাকে যে করে হোক ইলেকশনে জেতাতে হবে। আর জিতলে ওর চাকরি বাঁধা হোয়ে যাবে। তখন আর কাকে পরোয়া ! লোক তাকে দাদা বলে ডাকবে, ও তখন মনুদার মত স্বপ্ন দেখবে ! সেও তার বডি গার্ড বানাবে।

বুক ফুলিয়ে খোলা হাওয়ায় বড় করে শ্বাস নেয় পঞ্চু।

পঞ্চু ভালো ঘরের ছেলে। অম্বিকা কালনায় ধর বাড়ির কথা অনেকেই জানে। ওর বাবা ছিলেন কালনা পুলিশ থানার বড় দারগা।

সে সময় পঞ্চানন ভালো ছিল। ভালো স্কুলে লেখা পড়া করত। পড়া লেখাতে ও মন্দ ছিল না।

ওর ছোট বেলায় বাবা মারা গেলেন। ও তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। বাবা তার অনেক দিনধরে অসুখে ভুগে মারা যান। কয়েক বছর বিছানায় পঙ্গু হোয়ে পড়ে থাকতে হয়ে ছিল তাঁকে। শুরুতে মা তার বাবাকে ভালই দেখা শোনা করতেন। ক মাস পর থেকেই মা আর বাবার প্রতি তেমন যত্নবান ছিলেন না। অনাদরে বিছানায় পড়ে বাবা একান্তে যন্ত্রণা ভোগ করতেন। মার প্রতি পঞ্চাননের রাগ হতো খুব ! মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে মাকে বলে উঠত, তোমায় বাবা কখন থেকে ডাকছে, শুনতে পাচ্ছ না তুমি !

মা পঞ্চাননকে চুপ করিয়ে দিতেন, তুই চুপ কর, অমন রাত দিন তো আমায় ডেকেই চলেছে ! সারা দিন বিছানায় শুয়ে তার একটাই তো কাজ ! আমায় দিন ভর খেটে যেতে হয় !

পঞ্চানন চুপ করে যায়। সময় পেলে ও বাবার কাছে যায়। চুপ করে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। বাবা ইশারায় তাকে কাছে ডাকেন। সে এগিয়ে যায়। অনেক দূরের মানুষের মত, কেমন আছ? ভালো আছি, এমনি দু চার কথা বিনিময় ছাড়া আর কিছু করার থাকে না পঞ্চাননের। কয়েকবার ও বাবাকে চোখ মুছতে দেখেছে।

বাবা মারা যাবার পর থেকে মা তাকেও ভালো চোখে দেখতেন না। দাদা, দিদি ওদের প্রতি মার যেমন নজর, পঞ্চাননের প্রতি তেমনটি ছিল না। তার প্রতি ওঁর বড় অবহেলা ছিল, কখনো ডেকে আদর করে খাওয়াতেন না, দুটো কথা হেসে বলতেন না। সব সময় দাদা দিদিরা ভালো, সে খারাপ, এমনি তুলনা করতেন মা। সামান্য কিছুতেই পঞ্চাননকে মুখ ঝামটা দিয়ে বকা তাঁর স্বভাব হোয়ে গিয়ে ছিল।

তারপর থেকেই পঞ্চাননের যে কি হল সে নিজেই জানে না ! পড়া লেখা থেকে তার মন ছুটতে লাগলো। কিছুই তার ভালো লাগ তো না। মাঝে মাঝে বাবার কথা মনে পড়ে তার মন উদাস হয়ে যেত। ঠিক মত পড়া লেখা না করবার জন্যে দাদা দিদিরা ওকে হেয় চোখে দেখতে থাকলো।

ক্লাস সেভেন থেকে একটা মেয়ের সঙ্গে পঞ্চাননের ভাব হোয়ে ছিল। মেয়ের নাম ছিল, কলি। শ্যাম বর্ণ, কিন্তু খুব মিষ্টি চেহারা। তখন পঞ্চানন স্টুডেন্ট ভালো ছিল বলে ও পিছনে খুব লেগে থাকত। পঞ্চাননেরও ভালো লাগত ওকে।

ক্লাস এইটে ওঠার পর থেকে পঞ্চানন বিগড়াতে শুরু করল। ক্লাসে থার্ড হওয়া ছেলে লাস্ট বেঞ্চের ছেলে উজান,বলরামদের সঙ্গে বসতে লাগলো। আর পরিণামে সে বছর সে কোন মত টেনে টুনে পাশ করল।

কলি মন থেকে পঞ্চাননকে ভালোবাসে। কিন্তু তার অধঃপতন  কলি অনেক চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারলো না।

সে দিন কলি পঞ্চুর পথ আটকে ছিল, বলেছিল, কি ব্যাপার তোমার ?

–কি? প্রশ্ন করে পঞ্চু।

–পড়া শুনা ছেড়ে দিয়েছ ? লোফার ছেলেগুলোর সঙ্গে মিশছ?

–বাবাঃ, তুই দেখছি অনেক বড় হোয়ে গেছিস ! রয়াবে কথা বলছিস !

–না, পঞ্চানন দা, আমি ইয়ার্কি করছি না! দিনকে দিন তুমি নিজেকে নীচে নামিয়ে দিচ্ছ।

–কলি ! তুই কিন্তু বেশী বলে ফেলছিস। ও সব লেকচার টেককচার উপদেশ আমার বাড়িতেও অনেক দেয়, আমার পথ ছেড়ে দে !

–না, তুমি কথা দাও, তুমি ভালো হবে।

–ও রে বাবা ! প্রেমিকার মত কথা বলছিস দেখছি ! ঠিক আছে, পথ ছাড়, বলে সামান্য ধাক্কা মেরে পঞ্চু নিজের কাজে চলে গিয়েছিল। কলির কোন কথা কাজে লাগে নি সে দিন। দিন প্রতিদিন বিগড়াতে থাকলো পঞ্চানন। উজান, বলরামের সঙ্গে রাত দিন ঘুরে বেড়াতে থাকলো। রাতে সামান্য নেশাও করতে লাগলো।

ক্রমশ…

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top