Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

বই পড়া এবং বই মেলা নিয়ে কিছু স্মৃতি কিছু কথা

: | : ০৮/০৯/২০১৩

বই পড়া বা বই মেলার কথা বলতে গেলে যে  কথা টা প্রথমে চলে আসে তা আমার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড এর কথা। আমার জন্ম হয়েছে খুব রোমান্টিক আর নভেল পড়ুয়া মা বাবার ঘরে। বাবা একইসঙ্গে ছিলেন যেমন ধার্মিক মনের তেমনি ছিলেন সংস্কৃতি মনা। সকাল এ ফজর নামাজ না পড়লে যেমন শাসন করতেন, তেমনি বিকাল গানের ওস্তাদ এসে আমাদের গান শিখাতো  বাবা মায়ের ইচ্ছেতে। কিনে দিতেন প্রচুর গল্পের বই। সব মহামানব মানবীদের  দের জীবনী যেমন কিনে দিতেন একইসময়ে বাবা মায়ের সাথে বসে উত্তম সুচিত্রার ছবি ও দেখতাম। আমার মাকে দেখতাম সংসার এর সব কাজ শেষ করে রাত তিন টা চার টা পর্যন্ত গল্পের বই পড়তেন ।

 

পরবর্তিতে আমাদের সব ভাই বোনের মধ্যে পর্যায় ক্রমে এই বই পড়ার অভ্যাস চলে এসেছিল। কত রাত পার করে দিয়েছি আমি আর আমার পরের বোন্ বই পড়তে পড়তে । মনে আছে আমার মাস্টার্স পরীক্ষার ইনর্গানিক  কেমিস্ট্রি বই এর ফাকে রেখে দিতাম শীর্ষেন্দু, বাণী বসু এর  বই। আমার বোন্ মেডিকেল  হার্ড পরীক্ষা র প্রফ এর সময় পড়ত  সুনীল এর “সেই সময় ” বুদ্ধ দেব গুহ র “মাধুকরী।

 

সর্ব প্রথম যেই বই টি পড়ি তা ছিল ” লাল পরী নীল্  পরী  ‘ নাম এ ছোটদের রূপকথার বই যা আমি পেয়েছিলাম দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন কবিতা আবৃত্তির প্রথম পুরস্কার। আমার দ্বিতীয় বই ছিল “মুসলিম রেনেসায় নজরুল এর অবদান” কোরান আবৃত্তির প্রথম পুরস্কার।

 

শরত্চন্দ্রের ‘পরিনীতা’ ছিল আমার পড়া প্রথম বড়দের বই। তখন পড়ি আমি ক্লাস ফাইভ এ।  পরিনীতা পরে  শেখর এর জন্য বুকের ভিতর হু হু করতে লাগলো। কল্পনায় নিজেকে মনে  হলো ললিতা আমার  প্রাইভেট টিউটর কে মনে হলো শেখর। ঐসময়ে আমাদের চার ভাই বোন্ কে পড়াতে আসতেন একজন হিন্দু শিক্ষক। ওনার নাম ছিল তপন চাটার্জী,পড়তেন ক্লাস টেন এ,আর  আমি ফাইভ এ একেবারে রোমান্টিক  কম্বো যাকে বলে। উনি সবসময় আমাদের বাসায় আসতেন হাতে এক টা লাল গোলাপ নিয়ে। উনি সেই ফুলের গন্ধ শুকতে শুকতে আমাদের পড়াতেন। আমার ললিতা অস্তিত্বে ওনাকে মনে হলো শেখর। একদিন আম্মার একটা শাড়ী পরে চুলে বিনুনি করে স্যারের কাছে পড়তে গেলাম। ওই রাতে স্যারের বেত এর মার খেয়ে আমার  ইচড়ে পাকা প্রেমের ইতি ঘটেছিল। উনি অবশ্য বেত মেরেছিলেন ট্রান্সলেশন ভুল হওয়ার জন্য।

 

এর পরে বই পড়ার সেই যে নেশা হলো সেটা এখন পর্যন্ত আছে। তখন আমাদের দেশের বই এর বাজার ছিল ইন্ডিয়ান রাইটার দের দখলে। ক্রমে আমার আম্মার কালেকশন এ সব বই আশুতোষ,,ফাল্গুনী, নিহার রঞ্জন, এমনকি দস্যু বনহুর পড়ে শেষ করতে লাগলাম। দস্যু বনহুর এর সাথে ঘোড়ায় চড়ে মাস্ক পরে অভিযান এ  বের হতাম কল্পনায়। সবচেয়ে স্মরণীয় যে সময়টা আমার বই পড়া বা বই মেলা ৮৯ অথবা  ৯০ সম্ভবত ,সন  টা ঠিক মনে করতে পারছিনা। তার আগে প্রথম বাংলদেশী রাইটার এর  বই পড়েছিলাম হুমায়ুন আহমেদ এর  শঙ্খ নীল্ কারাগার,শহীদুল্লাহ কায়সার এর সংসপ্তক, জাহির রায়হান এর হাজার বছর ধরে।

 

তখন  ও শারদীয়া পূজা সংখা, আনন্দ বাজার,আনন্দ লোক,সবাই বেশি পড়লে ও ঈদ এর সময় আসলে  একই সঙ্গে দেশের পত্রিকা বিচিত্রা কিনতাম আগ্রহ নিয়ে।.হুমায়ুন আহমেদ, শামসুল হক,,জসিম মল্লিক,মইনুল  আহসান সাবের এরা ক্রমে বাংলাদেশী বই এর বাজার এত ভালো করলো আমরা ক্রমে বাংলাদেশী রাইটার এর বই এর দিকে বেশি ঝুকে গেলাম। সবসময় শীর্ষেন্দু এর বই না পড়ে তখন  হুমায়ুন আহমেদ পড়তাম ,সুনীল না পড়ে জসিম মল্লিক এর বই পড়তাম , সুমিত্রা ভটচার্য না  পড়ে তসলিমা নাসরিন এর বই বেশি পড়তাম ।অর্থাৎ  একটা কম্পারিসন আসতে সুরু করেছিলাম  আমাদের  পাঠকদের  মধ্যে ।মনে হলো আমাদের রাইটার রা বেশ ভালো লিখছে ,তো  আমাদের  মনে এ ভাব চলে আসলো আগে আমার দেশের বই ,পরে অন্য বই। এইভাবে আমাদের রাইটার রা অনেক  বেশি জনপ্রিয় হয়ে পড়ে আর  প্রবল আগ্রহে ঝুকে পড়ি বই মেলার দিকে। বই মেলা মানে বিপুল আয়োজন ব্যাপক উদ্দীপনা। বই মেলা আসলে আনন্দ,,ভালোবাসার স্রোতে ভাসতে থাকা। কোনো কোনো বই মেলায় প্রতিদিন যাওয়া হত,প্রতি দিন কোনো কোনো বই কিনা হত। বই মেলায় এলে সুধু  বাংলাদেশ এর রাইটার এর বই কিনতাম।

 

জীবনের অন্নেষণে একদিন  চলে আসি কানাডায় ২০০৪ এ। প্রথম যে প্লেস এ থাকতে সুরু করি তা হচ্ছে লরেন্স এন্ড ভিক্টোরিয়া পার্ক এ, যেটা আরাবিয়ান দের এরিয়া হিসাবে পরিচিত। ওখানে বাঙালি মাছ ,সিনেমা ,বই কিছু পাওয়া যেতনা। আমার সব প্রিয় গল্পের বই,বাংলা বই আর বাংলা ফুড এর জন্য মন টা হাহাকার করতে লাগলো। আসার বেশ কয়েক মাস পর প্রথম বার এর মত আসলাম ডানফোর্থএ। আহ এসে যে কি ভালো লাগলো। চারিদিকে মনে হলো সেই ঢাকা বাংলাদেশ। দেশের মানুষ ,দেশের মাছ তরকারী,সর্বপরি সব বাংলা নাটক,সিনেমা। কোথাও বাংলা নভেল ,গল্পের বই খুঁজে পেলামনা। আমি জানতামনা কোথায় পাওয়া যায় বাংলা বই। এরপর আরো দুইবার বাসা  চেঞ্জ করার পর ফাইনালি আমি চলে আসি বাঙালি অধুষিত ডান ফোর্থ এর নিকটস্থ টিস ডেল এ বর্তমানে আমি যেখানে আছি। এখানে এক বাঙালী ভাবী র কাছে শুনলাম অন্যমেলা বুক ষ্টোর এবং সাদী ভাই এর কথা। .সঙ্গে সঙ্গে চলে আসি ওনার বই এর দোকানে  বই কিনার জন্য। ওনার কাছে শুনলাম টরন্টো বই মেলার কথা। শুনে আমি খুব উত্তেজিত। সেবার প্রথম গেলাম বই মেলায় টরন্টো আসার পর। এটা সত্যি বাংলাদেশ এর মত ব্যাপক আকারে বই মেলা করা সম্ভব হয়না নানারকম সীমাবদ্ধতা আর প্রতিবন্ধকতার কারণে। মেলায় জড়িত সবার মধ্যে  টেনশন কাজ করে স্পন্সর নিয়ে,টাকা পয়সা র অপ্রতুলতা  নিয়ে। তারপর ও  বই মেলা বলে কথা। বছর এর দিনে অধীর আগ্রহ নিয়ে সবাই অপেক্ষা করি আমাদের প্রানের আনন্দ,মনের অনন্দ আর আত্মার খোরাক এর জন্য। অনেক সীমাবদ্দতার মধ্যে প্রতিবার প্রানের বইমেলা কে খুঁজে পাই এই সুদুর পরবাসে থেকে। সেইজন্য ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার অন্নমেলার কর্ণধার এবং বই মেলার সঙ্গে জড়িত আর সকল কলাকুশলীরা।.আমার হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকে জানাই অসীম  কৃতজ্ঞতা বইমেলার সঙ্গে জড়িত সকল কলাকুশলীদের প্রতি বছর সফল বইমেলা উপহার দেওয়ার জন্য। আশা করছি এবার ও সমপরিমাণ সফল হবে টরন্টো বইমেলা। আসুন  সকলে শ্লোগান মুখরিত হয়ে বলি “সফল হোক সপ্তম টরন্টো বইমেলা।

,

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top