Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

পুতির মালায় গাঁথা আনন্দ

: | : ১৬/০৯/২০১৩

সেবার নানার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে শীতের এক মিষ্টি দুপুরে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম – বিস্তীর্ণ খোলা প্রান্তরের জমির আলে খেলায় মশগুল একদল বাচ্চা ছেলেমেয়ে । খানিকটা দূর থেকে তাদের আনন্দের ভাগ নিচ্ছিলাম আমিও । ছুটোছুটিতে মাতোয়ারা বাচ্চাদের দলের সবচেয়ে ছোট সাত বছরের লিমু সেদিন খেলছিল না, দিঘীর জলের মত স্থির আর টলটলে চোখের বাচ্চা মেয়েটির গলায় ছিল একটা নতুন ঝকঝকে লাল পুতির মালা । লিমুর বড় ভাই আগের দিন হাট থেকে ওর জন্য এনেছে । লিমু দেখেছে – ওর বন্ধুরা নতুন জিনিষ গায় দিলে খেলে না,গর্বিত মুখে দূরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখে । তাই লিমুও সেদিন হাসি হাসি মুখে একপাশে নিঃশ্চুপ দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল । সেই বন্ধুদেরই একজন আচমকা শান্ত লিমুকে জোড়ে ধাক্কা মারলে – মুহুর্তে হাতের টানে সুতো ছিড়ে লাল পুতিগুলো লাঙ্গল টানা জমির বড় বড় মাটির টুকরোর ফাঁকে হারিয়ে যেতে লাগল !
লিমু তাকিয়ে দেখছে ওর মালার চকচকে পুতিগুলো দ্রুত মাটির খাঁজে লুকিয়ে পড়ছে । মেয়েটি নিজের দিকে খেয়াল না করে হুরমুর করে উঠে বসে পাখির মত একটি একটি করে পুতি টুকিয়ে ছিড়া সুতোয় গাঁথছিল আর তার চোখ বেয়ে নিঃশব্দে পানি ঝড়ছিল । হঠাতই হাসি-খুশি পরিবেশের বদলে হুল্লোড়রত বাচ্চাদের দলটা থমকে গিয়ে ছোট্ট লিমুকে দেখতে লাগল । চারপাশ থেকে একটি কষ্টদায়ক মায়ার চাদর ওকে ঘিরে ধরেছিল – এ সবের মাঝেও অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল তখন মেয়েটিকে ! মেয়েটির আনন্দগুলো খোঁজে দিতে অন্য কেউ এগিয়ে যায়নি – শুধু লিমুর চেয়ে বছর দুই বড় ওর সহোদরা ছাড়া । চুপচাপ সঙ্গী হয়েছিল সেই নিরবতার । সে সঙ্গ তখন লিমুর খুব একটা পছন্দ হচ্ছিল না, তবু সেই মুহুর্তে সে তার প্রতিটি ঈন্দ্রিয় দিয়ে পুতিগুলো খোঁজছিল বলেই অন্য কোনদিকে মনযোগ নষ্ট করেনি । একটি শব্দও উচ্চারণ না করে ওরা দু বোন হয়ে উঠেছিল আত্মার সঙ্গী । শুনতে পারছিল একে অন্যের অব্যক্ত কান্নার শব্দ । খারাপ লাগছিল খুব চোখের সামনে ওমন দৃশ্য দেখে । বুঝে পাচ্ছিলাম না কি বলব বা কি করা উচিত । বাচ্চা মেয়েটির ওমন নিঃশ্চুপ ওঙ্কারে বুকের মধ্যে কেমন একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছিলাম ।
এরপর ঢাকায় ফিরে এলেও ছোট্ট ঘটনাটা চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছিল । পলকের ব্যবধানে এক ধাক্কা মেয়েটির কাছ থেকে তার আনন্দ ছিনিয়ে নিয়েছিল । কিন্তু ওই অতটুকু মেয়ে তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে,এক পাহাড় কষ্ট চেপে আনন্দগুলো খোঁজে বের করছিল । জীবনের কাঠিন্যতার মুখোমুখি হয়ে আস্ফালন করে সময় ব্যয় করেনি, বরং কি আশ্চর্য ধীরতায় জটিল সময়ের খাঁজ থেকে জলদি জলদি হারানো সুখগুলো খোঁজে জীবনের মালা আবার গেঁথে নিচ্ছিল ।
মাস সাতেক পর আবার নানার বাড়ি যাওয়ায় ছোট্ট লিমুর সাথে দেখা – গলায় সেই মালাটা । কয়েক জায়গায় সুতোর গিট দিয়ে জোড়া দেয়া মালার পুতিগুলোতে হালকা লালের ছোপ বহন করছে, সেগুলো যে একদিন লাল ছিল তার চিহ্ন । এতদিন পরও হাস্যজ্যোল লিমুর গলায় মলিন পুতির মালাটা দেখে জেনেছিলাম –সুখেরা রঙ বদলায়,শুধু বদলায় না সুখের প্রতি মানুষের ভালবাসা । যদিও এখন ওটা একটা সাদা পুতির মালাতে রূপান্তরিত হয়েছে । তবু রুপান্তর হয়নি মালায় গাঁথা মেয়েটির আনন্দের ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top