সামিনার ও নুরুদ্দিন এর জীবন পাল্টে গেল
পূর্ব প্রকাশিতের পরে ( পর্ব -২)
খুব ভোরে আজকে ঘুম ভেঙ্গেছে সামিনার l বাড়ির কল টা তে পানি না থাকাতে সে পুকুর ঘাটে এসেছে অজু করতে l এখনো পুবের আকাশ ফর্সা হয়নি, চারিদিকে প্রকৃতি এত নিস্তূব্দ যে সামিনার গা টা ছমছম করতে লাগলো l নিচের সিড়িতে নেমে তাড়াতাড়ি অজু করতে সুরু করলো l হটাত করে তীক্ষ্ণ কিসের ডাক শুনলো এটা হায়েনা না কিসের ভৌতিক ডাক শুনে আতকে উঠলো পিছলে পানিতে পড়ে গেল l
পুরা পানি আর কাদায় জামা ভিজে জবজব হয়ে গেল, গোসল করা ছাড়া উপায় নাই দেখে তাড়াতাড়ি নিচের ঘাটে নেমে ডুব দিয়ে উঠলো l হটাত মনে হলো ঝোপের মধ্যে দিয়ে কি যেন একটা দ্রুত এদিকে ছুটে আসছে, ভয়ে ও মাগো বলে আবার পানিতে পড়ে গেল l তাড়াতাড়ি উঠে খুব দ্রুত পরিস্কার হয়ে বাড়ির দিকে তাড়াতাড়ি হাটতে লাগলো l
বোকামি হয়ে গেছে এভাবে একা একা অন্ধকারে আসা উচিত হয়নি l কেন যে এত ভয় লাগতেছে আমার আজকে এসব ভাবতে ভাবতে বুকে ফু দিয়ে আয়াতুল কুরছি পড়তে পড়তে দ্রুত পা চালালো l
মনে হলো কে যেন আড়াল থেকে তাকে দেখছে l ভয় পেলেও সামিনা দমে না গিয়ে জোরে হাক দিল
এই কে এখানে ? তার ইচ্ছে তার জোর গলার আওয়াজ শুনে যদি পাশের বাড়ি র লোকদের ঘুম ভেঙ্গে যায় l
আবার জোরে চিত্কার দিয়ে বলল
এই শিগ্রই বাহির হই আয় কইতাছি ,যা ভেবেছে ব্যাপারী চাচার বখা ছেলে রমিজ বদ টা l
একেবারে ইতরের চেহারা ইতরের মত হাবভাব, গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে আছে ,লুঙ্গি ধরে আছে হাটুর ওপরে দাত খিলাল করছে আর শয়তানির দৃষ্টিতে দেখছে তাকে l
ভয় পেলেও সে কড়া গলায় ধমকের সুরে বলল
এই সর রাস্তা থেকে
বদটা এই কথায় পাত্তা না দিয়ে সামিনার পায়ের কাছে থু করে এক দলা থু থু ফেলল l
চমকে সামিনা লাফ দিয়ে সরে গেল l
কি গো সোহাগী এত ভোরে নাইছ কেনে? বলে খিক খিক করে হাসলো বদটা
কাল কি হইছিল তোমার বাসর নি? সপ্নে আমার লগে বলে আবার বিশ্রী করে হাসলো বেয়াদবটা l
সর বেয়াদব পথের সামনে থেকে , চাচার কাছে বিচার দিমু কিন্তু l
পাশ কাটিয়ে আসার সময় শুনলো বদটা শীষ দিছে আর গান গাচ্ছে
তুই যদি আমার হইতি রে বুয়াই
আমি হইতাম তর
কোলে তে বসাইয়া তরে করিতাম আদর রে
তুই যদি আমার হইতি গো বুয়াই
প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে পিছন দিকে তাকাতে তাকাতে সামিনা এসে ঘর পৌছালো l ঘরে এসে পৌছাতে দেখল মা চুলায় আগুন ধরাচ্ছে l
কিরে সকাল গোসল করলি কেন? আর এত হাপাচ্চিশ কেন? বললেন মা উদ্বেগের স্বরে l
মাকে দেখার পর এতক্ষণের পেরেশানি উদ্বেগ দূর হয়ে গেল, বোকার মত একটা গাধা বদ ছেলেকে কি ভয় টা না পেল l
আজকে প্রি -টেস্ট পরীক্ষা সুরু না? টেনশন হচ্ছে মা, আমার l দুই রাকাত হাজাত নামাজ পরে দোয়া করবেন আম্মা l
মা সবসময় দোয়া করি তোর্ জন্য বলে স্নেহে মেয়ের মাথায় হাত মুছিয়ে দিলেন l
———————————————————————————————————————————–
নুরুদ্দিন দেওয়ালের দিকে ফিরে মুখ ঢেকে বসে আছে. সে যেন এ মুখ কাওকে দেখাতে চাচ্ছেনা .মাজে মাজে তার শরীর টা কেপে উঠছে কান্নার দমকে. সেল এর ভিতরে আরো কিছু কয়েদির সাথে বসে আছে. একজন তার সাথে এসে বার বার কথা বলার চেষ্টা করছে l
হুজুর আপনি কি করেন? শিবির না হেফাজোত ইসলাম?
নাকি হরকাতুল জিহাদ বলে তারা হাসতে লাগলো
হে আল্লাহ কোন পাপ এর শাস্তি আমাকে দিতাছ? ও পাপ তো আমি করছি, মিথ্যে বলছি পুলিশ এর লগে. বলে সে কাদতে থাকে l
হুজুর হুজুর বলে পিছনে থেকে সেল এর বাহির থেকে মনে হলো কে একজন ডাকছে নুরুদ্দিন কে. তাকাতে দেখতে পেল সকাল এর সেই ভালো পুলিশ টা l
নুরুদ্দিন দৌড়ে এলো তার কাছে.
ভাইজান আমারে এখান থেকে বের করেন, আমারে বাচান ভাইজান, আল্লাহ খোদার কসম আমি মাদ্রাসায় আরবী শিখাই..আমি ওদেরকে চিনিনা, ওদের প্যাকেট এ কি আছে তাও জানিনা l আমি সুধু ওদেরকে একরাতের জন্য থাকতে দিছি অসহায় মনে হইছে বলে l
আস্তে আস্তে হুজুর আমি জানি আপনি নিরপরাধ, কিন্তু বিপদে পরে গেছেন. এখন আমি যা বলি মনোযোগ দিয়ে শুনেন, সরকারের কৌশলী আসলে আপনি এটা স্বীকার করেন না যে ওদের কে থাকতে দিছেন, তাহলে আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে পুলিশ এর কাছে কেন মিথ্যে বলছেন l
এখন আপনার দরকার একজন ভালো উকিল আপনাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনবে l
ভাইজান আমি কোথায় উকিল পাব? আমি খুব দরিদ্র মানুষ, মাদ্রাসায় পড়াইয়া ২৪০০ টাকা পাই, বাড়িতে মা আর ছোট বোনের পড়ার খরচ দিয়া আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা থাকেনা ভাইজান, অনেক কষ্টে চলি l
দেখি হুজুর, কি করা যায় আপনার জন্য l সার্জেন্ট স্যার কে কিছু বলে লাভ নাই, অস্র সহ ধরছে তো, দেখি কালকে কমিশনার স্যার আসবে, উনি অনেক ভালো দেখি ওনাকে বলে কিছু করা যায় কিনা l
আপনি আমার ভাই, বাড়িতে আমার বয়স্ক মা, আমার ছোট বোন্ পড়ালিখা করে, আমারে সাহায্য করেন ভাই l
এইযে ধরেন হুজুর আপনার জন্য একটু তেহারি আনছি আর এখানে ফ্লাস্ক এ চা আছে. এখানে যে সেন্ট্রি আছে রহমত নাম দরকার মনে হলে রহমত এর খবর দিবেন, আমি এসে কথা বলব l
খাওয়ার লাগবেনা ভাই জান আমি খাইছি, আপনি এগুলি নিয়া যান
রেখে দেন পরে খিদা লাগলে খাবেন, বলে জোর করে খাওয়ার টা দিয়ে দিলেন l
পরের দিন সকাল দশটা একজন সেন্ট্রি এসে বলল এইযে তুমি নুরুদ্দিন কে ডাকলো স্যার তোমাকে ডাকে l
সকাল দশটা
এক সেন্ট্রি এসে সেল এর দরজা খুলে ডাকলো
এই যে নুরুদ্দিন মিয়া এদিকে এস , সার্জেন্ট স্যার তোমারে ডাকে
নুরুদ্দিন ভয়ে কাপতে কাপতে সেন্ট্রি র পিছনে পিছন রওয়ানা হলো
ভিতরে ঢুকতে সার্জেন্ট জিজ্ঞাসা করলো .”আপনার চা খাওয়া হয়েছে কি”?
খাবেন আমার সাথে?
না বলে মাথা নাড়তে কেন থাকবে কেন?
কলিং বেল বাজাতে একজন পুলিশ উকি দিয়ে বলল জি স্যার
আমাদের দুজনের জন্য নাস্তা আর চা নিয়ে এস বলে তার হাতে টাকা দিলেন l
আমার জন্য লাগবেনা কুন্ঠিত হয়ে বলল নুরুদ্দিন l
অবশ্যই লাগবে সকালে কি নাস্তা করেছেন? দেখেন পুলিশ কে, আমাদের কে আপনারা অনেক খারাপ বলেন ? আমরা কি ততটা খারাপ বলেন? এখনো ও কি আপনার সাথে আমরা কোনো খারাপ ব্যবহার করেছি বলেন? অথচ আপনি ধরা পড়েছেন অস্র সহ আমাদর হাতে l
স্যার এসব আমার না?
তাহলে এ ব্যাপার এ কি বলেন আপনার ঘরে যে অস্র পাওয়া গেছে l
হটাত মনে পড়ে গেল মোহাম্মদ এর কথা কার ও কাছে স্বীকার না করা হয় ছেলে দুইটাকে থাকতে দিয়েছেন তার সাথে, কিন্তু এখানে অস্বীকার করার কোনো উপায় কি আছে, পুলিশ এর সামনে থেকে তো এরা পালিয়ে গেল l
হে আল্লাহ আমি মিথ্যে ও বলতে চাইনা, তুমি আমাকে এ বিপদ থেকে উদ্বার কর l
নুরুদ্দিন উত্তর দিলেন ঘুরিয়ে.দেখেন ওই ছেলেরা কি করে বা তাদের সাথে কি ছিল কিছু ই আমি জানিনা l ওরা সুধু আপনারা আসার কতক্ষণ আগে আসছিল, দরজা নক করলে আমি খুলে দেই, এবং তারা বলল তাদের থাকার জায়গা নাই, যদি এই রাত টা তাদের থাকতে দিতাম, এরই মধ্যে পুলিশ চলে আসছে l আমি কিছু ই জানিনা এদের সম্পর্কে l
আমি আপনাকে মোটামুটি বিশ্বাস করলাম, পুরোপুরি করব তখন যখন আপনি আমাদের কে সাহায্য করবেন এই দুজন কে ধরিয়ে দিতে, আপনাকে আজকে ছেড়ে দিচ্ছি, কিন্তু পুলিশ সবসময় ফলো করবে. পরবর্তিতে যখন ওই ছেলেরা আপনার কাছে আসবে, আপনার কাজ হবে ওদের যাওয়ার পথ রুদ্ধ করা l এভাবে আপনি আপনার বিশ্বাস ফিরে পাবেন আমাদের কাছে, এবং পুলিশ আর আপনাকে হয়রানি করবেনা. যেটা আপনার কাছে আমার প্রমিস l
হায় কি করি আমি নুরুদ্দিন এর বুক থেকে দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এলো l
ঠিক আছে স্যার আপনি যা বলেন, এটা আমার কর্তব্য l