মেঘের কোলে রোদ-৮
ঘুম ভেঙে গেছে রোমিলার। বেশ বিরক্তি বোধ করছে সে।
ভাবতে পারছে না,তপতীর রুচি এত নিম্নগামী।শিক্ষিত
মেয়ের ভাবনা হবে উন্নত স্তরের। কিন্তু তপতীর এখনকার
আচরণ দেখে রোমিলা নিশ্চিত যে,লেখপড়া শিখলেও তপতী এখনও গাঁইয়া হয়েই আছে।
হায়দার নামের ছেলেটি ভাল নাম ওয়াশিম হায়দার। নামটি এমনকিছু
আহামরি নয়।চেহারাও সাধারণ।রোগা-পাতলা গড়ন। গায়ের রং শ্যামবর্ণ।
থ্যাবলা নাক।মুখে বসন্তের দাগ। চোখ দুটো বেশ।
এই ছেলের মধ্যে কি এমন দেখছে তপতী যে, কথায় কথায় অত উতলা
হয়ে উঠছে!
গনেশ একটু বোকাসোকা টাইপের। সে না হয় ‘দাদা’ কে ভক্তি করতে
পারে। কিন্তু তপতী কেন হয়?
ছেলেটার প্লাস পয়েন্ট কি-কি হতে পারে তপতীর চোখে?
নম্বর এক, ছেলেটা পরোপকারী।
নম্বর দুই, ছেলেটার বাবা-মা নাই।
নম্বর তিন, ছেলেটা একটা স্কুল অর্গানাইজ করছে। মাস্টার ডিগ্রী
থাকা স্বত্তেও সে নিজে কোন পদ দখল করে বসে নাই।
কারণগুলি সবই একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত। ছেলেটার
বাবা-মা নাই সেই সুবাদে পেয়েছে অবাধ স্বাধিনতার ছাড়পত্র।
অবিভাবক থাকলে নিশ্চয় ওকে চাকরী-বাকরী করার জন্য
নিয়মিত চাপ দিত। নিদেনপক্ষে একটা বিয়ে দিতো।কাঁধে
জোয়াল পড়লে ছেলের মাথার পরোপকারের ভূত নামতো।
বড়লোক মাসী থাকার সুবাদে ছেলেটা পয়সার অভাব
টের পায় না।তাই পরের পয়সায় সমাজসেবা করে নাম কুড়োয়।
স্কুলের ব্যপারটিও ওই নামের লোভের ফসল।
সময়-সুযোগ মত তপতীকে বুঝিয়ে বলতে হবে এসব। তপতী
বুদ্ধিমতী,নিশ্চয় তার ভুল ভাঙবে।
নিজের বিছানায় শুতে গেল রোমিলা। তখনই তার চোখে ভেসে
উঠল একটি মুখ, কত সুন্দর। কথাবার্তাও ওই ছেলেটার মত
কর্কশ নয়।সে ছেলেকে মন দেয়া যায়।মরা-বাড়িতে একটুখানি
পরিচয়, তাতেই মনে হচ্ছে,কাল তার সাথে দেখা হবে তো?
হিল্লি-দিল্লি ঘোরা মেয়ে রোমিলা কি শেষে এই গন্ডগ্রামে মন
হারাবে?
জানে না রোমিলা। কাল সকালেই তপতীকে ওই ছেলটির বিষয়ে
বলতে হবে। জানতে হবে তার কথা।এখন তপতী গেছে সেই
‘কুকুরভীতু’ পরোপকারীর সন্ধানে,কখন ফিরবে কে জানে।
ততক্ষণ জেগে থাকার কোন মানেই হয় না।
ভাবতে-ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল রোমিলা। তার স্বপ্নে এল সেই
সুদর্শন তরুণ। হাত ধরে বলল,কেমন আছো রোমিলা।
(পরের কথা আগামী পর্বে।)