Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

সামিনার ও নুরুদ্দিন এর জীবন পাল্টে গেল (চতুর্থ ও শেষ পর্ব )

: | : ১৯/০৯/২০১৩

পূর্ব্ব প্রকাশিতের পর

আমিনা বুর গ্রাম থেকে বের হয়ে বাশের সাকো র কাছে আসা মাত্র এমন ভাবে বিজলি চমকানো সুরু করলো, সামিনার বুক ধরপর করা সুরু করলো, সে টর্চ জালিয়ে দৌড়াতে সুরু করলো একরকম. বিজলি র সঙ্গে প্রচন্ড বৃষ্টি . রাস্তার পাশে মুদির দোকান খোলা থাকায় একটু আলো রাস্তায় এসে পড়ছে, .

 

আল্লাহ আল্লাহ করে গ্রামের রাস্তায় এসে পরেছে, হটাত করে কিছু মানুষ এর গলার আওয়াজ পেয়ে সে খুশি হয়ে গেল, যাক সে এই অন্দকার রাস্তায় একা না , টর্চ টা জালিয়ে নিজেকে সামনে এনে কে আপনারা বলে সালাম করার চেষ্টা করলো. l কিন্তু ততক্ষণে যা ভুল হওয়ার হয়ে গেছে , মনে মনে ডুকরে উঠলো যখন সামিনা দেখল তার পাশে বখা রমিজ আর তার বন্দুরা , এগুলি কি করতেছে বৃষ্টির মধ্যে কে জানে, সবগুলার চেহারা দেখছে পশুর মত ,

 

সুধু এটা বলতে পারল আমর আল্লাহ আমাকে বাচাও .

 

শয়তান উল্লাস করে বলল আমার সোহাগিরে পাইছি কাছে, বলে তারা জোরে টেনে হিচড়ে জঙ্গলের দিকে নিয়ে গেল l সারারাত নর পশুর দল অসহায় নিরীহ মেয়েটাকে নির্যাতন করলো. প্রচন্ড বৃষ্টি আর বিজলীর শব্দে তার আর্তনাদ ঢাকা পড়ে গেছে, কোনো মানুষ এর কানে পৌছায়নি, সামিনা তার বাড়ি থেকে মাত্র দশ হাত সামনে লাঞ্চিত হয়ে পড়ে থাকলো, এমনকি সামিনার মাও জানতে পারলনা. আল্লাহ আরশ এ ও তার আর্তনাদ পৌছায়নি, কেননা  শয়তান  রাজত্বে তার তান্ডব যখন চলে তখন পালনকারী আল্লাহ ও অসহায় হয়ে পড়েন, তার কোনো কিছু করার থাকেনা l               

নুরুদ্দিন প্রতিদিন খুব আগ্রহ নিয়ে রাকিব এর জন্য বসে থাকে l রাকিব এর আর কোনো সন্ধান মেলেনা l একদিন ফোন এলো মোহাম্মদ এর , রাকিব ধরা পরেছে l নুরুদ্দিনের বুকটা কাপতে থাকে ভয়ে উত্কন্ঠায় l গরিব দের মধ্যে শিন্নি বিলায় .নুরুদ্দিন সব দোয়া দুরুদ শিন্নি বৃথা একদিন বিচারে রায় হলো রাকিব এর ফাসির, তার গুলি তে দুজন পুলিশ মারা যাওয়াতে কতৃপক্ষ শাস্তি কমাতে রাজি হয়নি l নুরুদ্দিন এর উকিল চেষ্টা করেছে এভাবে অল্প বয়স উনিশ বিশ বছর ছেলের ফাসি না দিয়ে সশ্রম অথবা যাবজ্জীবন হোক. কোনো কিছু করে শাস্তি কমানো গেলনা l এক শুক্রবার বাদ জুমা রাকিব এর ফাসি কার্যকর হলো l নুরুদ্দিন কাপতে কাপতে লাশ নিতে হাজির হলো l

দৃশ্য আট

নুরুদ্দিন প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে থানায় এসে পৌছালো , গেট এর গার্ড কে মোহাম্মদ এর সঙ্গে দেখা করার কথা জিজ্ঞাসা করলে সে জানালো মোহাম্মদ স্যার জরুরি অপারেশন এ কিছুক্ষণ আগে বের হয়ে গেছেন কখন ফিরবেন কোনো  ঠিক নাই l

নুরুদ্দিন হতাশ হয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল l গার্ড এর তাকে দেখে সম্ভবত মায়া হলো l

হুজুর  আপনি ভিতরে গিয়ে দেখেন ওনার বন্ধু আছে একজন আপনার সব   কথা বলেন দেখেন যদি উনি কোনো হেল্প করতে পারেন l বলল গার্ড টি

ভিতরে এসে অনেকক্ষণ বসে থাকা র পর ও পরিচিত কারো দেখা  হোলনা, মন খারাপ করে বাসার দিকে রওয়ানা হলো, গেট এর কাছে পৌছে মোহাম্মদ এর সেই ফ্রেন্ড হাবিব এর সাথে দেখা হয়ে গেল.

হুজুর ব্যাপার কি আন্তরিক ভাবে করমর্দন করলো

নুরুদ্দিন তার বোনের সব কথা বলল, শেষের দিকে গলা ভেঙ্গে গেল, সে অসহায় এর মত আদরের বোনটার জন্য কাদতে লাগলো l

হুজুর আমার সাথে আসেন, কেস লিখেন.

আমার কোনো সময় নাই ভাই, আজকের রাতের ট্রেন এ বাড়ি পৌছতে হবে , কালকে গ্রামের মাতবর এর সাহায্য নিয়া সালিশ বসাচ্ছে, মিথ্যে বদনাম দিয়া বোনের নাম ফতওয়া দিবে

ওই বদ ছেলের জন্য বোনের বিয়ের প্রোপসাল দিছিল, আমরা রাজি হইনি, ছেলে খুব বাজে চরিত্রের l

ভাই আমারে হেল্প কর ভাই, আমার অসহায় বোন্ টারে বাচাও l

শান্ত হন হুজুর, শয়তান গুলা কিছু করতে পারবেনা আপনার বোনের, আপনি বাড়ি যান

রাতে পুরা পুলিশ ফোর্স নিয়ে গ্রাম ঘেরাও করে ফেলবো, কোনো চিন্তা করবেননা l

রাতের ট্রেন এ নুর্দ্দিন এসে গ্রাম এ পৌছল , বোন্ কে দেখে অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা হলো. প্রবল জ্বরে সে কাতরাছে , মা সমানে কেদে যাচ্ছেন l নুরুদ্দীন পাথরের মূর্তির মত বোনের শিয়রে বসে রইলো, তার কোনো নড়াচড়ার ক্ষমতা রইলোনা l

দৃশ্য নয়

সকালে  ঢেরা  পিটানোর  আওয়াজে  লাফ  দিয়ে দাড়িয়ে পড়ল , ঘোষণায়  গ্রামের  সৰ েলাক েদর  মাতবর এর উঠানে হাজির হতে বলা হচ্ছে l  নুরুদ্দিন অসহায় এর মত দাড়িয়ে থাকলো l

সালিশ  শুনানি  সুরু  হলো ,সালিশ  শেষে  এই সাব্যস্থ হলো  সামিনার  চুল  কেটে  দেওয়া হবে আর স্যান্ডেল এর ২০  বাড়ি দেওয়া হবে l

অনেকটা অচেতনের মত নুরুদ্দিন আর তার  মাকে  মোড়ল এর  উঠানে  নিয়ে  আসলো . সামিনা  জ্বরে  পুরা  বেহুশ  হয়ে  আছে  এখনো l

কেন আল্লাহ এত  শাস্তি আমাকে দিচ্ছেন  বাক্য শেষ  করলনা  নুরুদ্দিন l তার  মনে  হলো  আল্লাহ  এই  মুহুর্তে  তার  কথা  শুনবেনা

অজ্ঞান  এর ভান  করতাছে  মাইয়া একজন  ফোড়ন কেটে  বলে  ,

আরেকজন  বলে  বেলাজ  মাইয়া  পোলাগো  লগে  নাচানাচি করতে করতে স্কুল যায় , আচ্ছা  করে কয় ঘা  পড়লে  ঠিক  হইব বেত্তমিজ মাইয়া

নুরুদ্দিন অসহায়ের  মত একবার ব্যাপারীর  হাত  ধরছে  আরেকবার  মোড়ল চাচার  পায়ে  ধরছে

সে  পাগল এর মত চিত্কার  করে বলছে চাচা এই  অন্যায়  করবেন না আপনি তো ভালো করে জানেন সামিনা কি রকম মেয়ে,আমার ভালো বোনটার সাথে এই অন্যায় করবেননা আপনারা, আমি কথা দিছি রমিজ এর বিরুদ্দে কোনো পুলিশ কেস করবনা l

এই কথা বলে নুরুদ্দিন আরো বোকামি করে ফেলছে. সে তার বদ ছেলেকে বাচানোর জন্য এই অন্যায় মিথ্যে নাটক এর আয়োজন করেছে l

কি আমার ছেলে র কি তোমার বাজে বোন্ এর দোষ চাপানোর জন্য আমার ছেলের নাম মিথ্যে কলঙ্ক , শুনলা মিয়া তোমরা শুনলা, অহেতুক অভিনয় করে লাফাতে লাগলো l

আপনাদের অন্যায়ের বিচার আমি আল্লাহ এর কাছে দিলাম, মনে রাখবেন আল্লাহ র বিচার ন্যায় বিচার, আপনার অন্যায় এর শাস্তি অবশ্যি পাবেন l

হে আল্লাহ তোমার দয়ার উপর ভরসা করে আছি, আমি জানি পৃথিবীর মানুষ যত হিংস্র আর অন্যায় কাজ করুক, যত খারাপ মানুষের হাতে আমার বোন্ থাকুক না কেন তুমি আমার আর আমার বোনের পালন করি এই অন্যায়কারী দের হাত থেকে আমার বোন্ কে বাচাও, আল্লাহ বাচাও , বলে আকাশের দিকে হাত তুলে পাগলের মত দয়া প্রাথ্থনা করতে থাকলো l

সামিনা কে ধরে এনে একজন চেয়ার এ বসালো, সে এখনো মূর্ছিত অবস্থায় আছে l তার গায়ে প্রথম স্যান্ডেল এর বাড়ি পড়ল, তখন সে সুধু চোখ খুলে তাকালো পরক্ষণে আবার মূর্ছিত হয়ে গেল l

পরক্ষণে অনেক বুট জুতার আওয়াজ, অনেক শোরগোল করে হাবিব, মোহাম্মদ তাদের পুলিশ বাহিনী পুরা জায়গা ঘিরে ফেলল l

সরি হুজুর এক মিনিট দেরী হয়ে গেল, কিন্তু আপনি নিচিন্ত থাকেন এই বেটাদের সব কাজের রেকর্ড ভিডিও এখন আমাদের হাতে l

হুজুর আমি আপনারে কিরে কেটে বলছি এই বদ গুলার ফাসি র ব্যবস্থা করব আমি, এই বিষাক্ত কিট গুলার পৃথিবীর আলো দেখার আর অধিকার নাই l
প্রথমে হাবিব গিয়ে যে স্যান্ডেল দিয়ে সামিনাকে মারছিল তার হাত থেকে স্যান্ডেল টা নিয়ে জোরে তার দুই গালে দুইটা মারলো l
ওই লোক ও মাগো বাবাগো বলে মাটিতে বসে পড়ল ,
তার দুইটা দাত ছিটকে বেরিয়ে এলো, রক্ত বেরোতে লাগলো, হাবিব চড় এর আন্দাজ রাখতে পারেনি, কিন্তু তার কোনো অনুশোচনা হলনা, এইভাবে মারাতে l
সে খুবই ধমকের স্বরে কড়া গলায় সবাইকে উল্লেখ করে বলল
এই আইন কোত্থেকে পাশ করছিস তোরা শয়তান এর দল., সে বয়স্ক গুরুজন কাওকে গ্রাহ্য করছেনা  l
রমিজ আর তার বাহিনী , ব্যাপারী, মোড়ল সবাইকে হ্যান্ডকাপ পরানো হলো , সবাইকে নিয়ে পলিক এর গাড়ি ততক্ষনাত শহরের দিকে রওয়ানা হলো l
গাড়িতে উঠানোর সময় রমিজ নুরুদ্দিন এর তাকিয়ে দাত কিরমির করে শাসানোর চেষ্টা করলো, দাড়া জেল থাইকা বাহির হই, তোদের দুই ভাই বোন্ রে দাড়া কি করি l
নুরুদ্দিন জবাব দেওয়ার আগে জবাব দিল হাবিব এর থাপ্পর l
তোরা বাপ ছেলে কাফনের কাপড়ের অর্ডার দে, তার পর ব্যাপারীকে উল্লেখ করে বলল
আপনি হয়ত ফাসি র দড়ি থেকে বাচলে ও আপনার চাদের টুকরার কিন্তু ফাসি হইব ঠিক ই , এখন  পোলারে শিখান কিছু দুরুদ কালাম মরার আগে যেন কিছুদিন আল্লাহ এর নাম নিতে পারে l
আস্তে আস্তে সামিনার জ্বর ভালো হলো, একসময় সে পুরা ই সুস্থ হলো , এই সময় টাতে এই পরিবার টাকে ঘিরে রাখল হাবিব ,মোহাম্মদ এবং তাদের পরিবার l হাবিব প্রতি শুক্রবার এসে ওদের খোজখবর নিয়ে যায়, সামিনা এই সময় টার  জন্য একান্তে অপেক্ষা করে l
দৃশ্য দশ
নারী নির্যাতন ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারায় রমিজ আর তার সঙ্গীদের ফাসির রায় হলো l মোড়ল আর ব্যাপারী তাদের সাত বছরের জেল আর ১০০০০ টাকা জরিমানা র শাস্তি হলো l
শাস্তি হওয়ার আগে ব্যাপারী এর স্ত্রী এসে অনেক অনুনয় বিনয় করলো, সামিনা কে ছেলের বউ করে ঘরে নিবে, তারা যেন কেস টা উঠিয়ে নেয় l
নুরুদ্দিন তাকে বুঝাতে সক্ষম হলনা যে এটা তার হাতে নাই , আর সে কোনো কেস ও করেনি তবে এটা সে বলতে পারল, তার ছেলের সঙ্গে সামিনার বিয়ের কথা কোনদিন ই চিন্তা করতে পারবেনা l
আস্তে আস্তে সময় গড়িয়ে যেতে থাকলো l নুরুদ্দিন পুলিশ বিভাগে চাকরি পেল, চত্ব একটা বাসা ভাড়া করে মাকে ঢাকায় নিয়ে আসল l
শরতের এক সুন্দর দিনে সামিনার সাথে হাবিব এর বিয়ে হয়ে গেল, সামিনাকে হাবিব ঢাকা শহরে নিয়ে আসল, ইডেন কলেজ এ ভর্তি করে দিল l সামিনার জীবন পুরো পাল্টে গেল, দিনে কলেজ এ ফ্রেন্ড দের সঙ্গে পড়া লিখা, ম্যাডাম দের সাথে কথা বলা, রাতে তার প্রেম ময় স্বামীর ভালবাসায় চমত্কার সময় কাটতে লাগলো l  সে ভাবলো আমি অনেক ভাগ্যবতী এরকম অপূর্ব একজন স্বামী পেলাম, চমত্কার কলেজ পড়ালিখা করছি l
সুখ  দুখ সমান্তরাল গতিতে  চলে, রাত এর পর ভোর হয়, মেঘ সরে যাওয়ার পর সূর্য এর হাসি মুখ দেখা যায় l শয়তান রাজত্বে তান্ডব লীলার পরিদর্শন শেষে পালনকারী আল্লাহ যখন তার নির্যাতিত অসহায় বান্দার কষ্ট দেখেন তখন দুখের ক্ষতকে সুখের মলম দিয়ে সুন্দর কসমেটিক সার্জারি তে এমনভাবে ঢেকে দেন বান্দার আর মনে থাকেনা এখানে কোনসময় ক্ষত ছিল, সামিনা এসব ভাবছিল তার প্রিয়তম স্বামীর মুখ  দেখতে দেখতে, ঘুমের মধ্যে তার স্বামী হাসছে শিশুদের মত সাত আট মাস আগে ঘটে যাওয়া অন্যায় আর দুর্ভাগ্যের l  .কথা তার আর মনে ই পড়েনা

সমাপ্ত

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top