Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ধারাবাহিক উপন্যাস “প্রচ্ছায়া”

: | : ২১/০৯/২০১৩

aª¼রাতের বেলায় ঢাকা শহরের রাস্তা বেশ ফাঁকা থাকে । মিজান সেই ফাঁকা রাস্তায় মনের আনন্দে গাড়ী হাকিয়ে বেড়ায় । কোনো কোনো রাত কাভার করে দেয় রাস্তাতেই । গাড়ী থাকলেও মিজানের মোবাইল নেই । সে ইচ্ছে করেই কিনে নি । তার ধারনা মোবাইল থাকলে মেয়েরা অযথা ডিস্ট্রাব করবে । বাড়ির লাইন ফোনে মাঝে মাঝে মেয়েলি কন্ঠের ফোন আসত বলে মশিউর সাহেব বিদেশ চলে যাবার পর থেকে সেটিকেও বিকল করে রাখা হয়েছে ।

ঘুরতে ঘুরতে মিজান এক রাতে মিরপুর গেল । শীতের রাত । মাজারে গান হচ্ছে । মিজান মনোযোগ সহকারে বেশ কিছুক্ষণ গান শোনল । শিল্পীর দরদী কন্ঠের চেয়ে শিল্পীর হাতের বেহালার মায়াবী আওয়াজ তাকে বেশি আকৃষ্ট করল । মিজান মনে মনে দৃঢ় পণ করল, এই আশ্চার্য যন্ত্র বাজানো তাকে শিখতেই হবে ।

অনেক ঘোরা ফেরা করল, অনেকের কাছে গেল, কিন্তু কেউ শেখাতে রাজি হল না । মিজানের ব্যাপারটা অন্য রকম, ও আর পাঁচ দশটা ছাত্রের মতো নয়, একেবারেই ভিন্ন । সে মাস্টারের কাছে গিয়ে শিখতে রাজি নয়, মাস্টারকেই তার বাড়িতে এসে শেখাতে হবে । টাকার কোনো প্রশ্ন নেই, যা লাগবে তার চেয়ে বেশি বৈ কম দিবে না । অনেক ঘুরাঘোরি করার পর বেকারগুছে র একজনকে পাওয়া গেল, যিনি কিনা বাড়িতে এসে শেখাতে রাজি হয়েছেন । মিজান মৌচাকের বাদ্যঘর থেকে সুন্দর একটি বেহালা কিনে এনেছে ।
কথামত বিকেল হতেই মাস্টার মহাশয় চলে এসেছেন । তাকে বসার ঘরে বসতে দেওয়া হয়েছে । ইতোমধ্যেই বাবুর্চি মাস্টার সাহেবকে চা নাশতা দিয়েছে । চা-এ দুই চুমুক দিতেই মিজান বসার ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, কেমন আছেন স্যার ?
চায়ের কাপ টেবিলে রেখে মাত্রাতিরিক্ত বিনয়ের সহিত মাস্টার সাহেব বললেন, ভালো । আপনি কেমন আছেন ?
মাস্টারের অতিশয় বিনয় মিজানকে সামান্য অস্বস্তিতে ফেলে দিলো । সে কিছুতেই ঠাহর করতে পারছে না যে, মাস্টার মহাশয় কেন তাকে আপনি করে সম্বোধন করছেন ? খানিক নিশ্চুপ থাকার পর মিজান ফের বলল, আপনি আমাকে আপনি করে বলছেন কেন ?
মাস্টার সাহেব নিরুত্তর । শিক্ষক তার ছাত্রকে তুমি করে বলবে এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু মিজানদের বাড়ি দেখে মাস্টারেজ আক্কেল গুড়ুম হয়েছে । এতবড় বাড়ির একমাত্র সন্তানকেও যে তুমি করে বলা যায়, তিনি বোধ হয় তা ভুলেই গিয়ে ছিলেন । হয়ত ভেবে ছিলেন, বড়লোকের সন্তান তুমি থেকে আপনিতেই বেশি তুষ্ট হবে । কিন্তু বাস্তবতা তার ভিন্ন । মিজান যথেষ্ট বিনয়ী ও রক্ষনশীল । মাস্টার সাহেব মিজানের সৌজন্যবোধ দেখে চমত্কৃত হলেন । মাস্টার সাহেব তত্ক্ষনাত মুখে কৃত্তিম হাসি এনে বললেন, সরি । তুমি কোমন আছ ?
ভালো ।
মিজানের আগ্রহের ভিত অনেক বেশি পুক্ত বলে আলোচনা শুরু করল প্রশ্ন দিয়ে । স্যার ।
মাস্টার সাহেব সঙ্গে সঙ্গে জবাব করলেন, হ্যা বলো ।
বেহালা শিখতে কতদিন লাগবে ?
মাস্টার সাহেব পুনঃরায় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে শান্ত স্বরে বললেন, তা নির্ভর করছে তোমার মনোযোগ ও চর্চার উপর ।
মনোযোগ একশতে একশ, আর চর্চাতেও কোনো ঘাটতি হবে না । মিজানের সহসা উত্তর ।
চা শেষ । বেহালা বাজানোর ক্লাস শুরু হয়েছে । মিজান আত্যান্ত মনোযোগ দিয়ে বেহালা বাজানো শিখছে । তার মনোযোগ দেখে মনে হচ্ছে, আগামীকালই তাকে বাংলাদেশ বেতারে অডিশন দিতে হবে । মাস্টার সাহেব প্রতিদিন সকাল বিকাল দুইবার করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন । মিজানের আগ্রহ ও টাকা দুটোই তাকে চুম্বুকের মতো টেনে নিয়ে আসছে ।

গুলশান লেকের পাড়ে এক তরুনীর লাশ পড়ে আছে । তরুনীর মুখশ্রী এতটাই বিগড়ে গেছে যে, চেহারা দেখে সনাক্ত করার কোনো উপায় নেই । পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top