Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

উটন দাদুর কাহিনী–শুরুর পর্ব (শিশু ও কিশোরদের বনজঙ্গলের রোমাঞ্চকর উপন্যাস)

: | : ২৬/০৯/২০১৩

(গল্পটির ঘটনাক্রম ভাবনা প্রসূত। এর ঐতিহাসিক কোন প্রেক্ষাপট নেই। তবে স্থান কাল পাত্রের রূপরেখা কোথাও কোথাও সত্যকে ছুঁয়ে আছে এটা বলতেই হবে। এ ছাড়া ভাবনাকে বাস্তবতায় দাঁড় করাতে ভাব-ভাষার সাজ-সজ্জা যথাযথ রাখার চেষ্টা করা তো লেখকের ধর্ম।)

 

ছত্তিস গড়ের বস্তার জেলার জঙ্গল। বস্তার নামক ছোট্ট জেলাশহরটা এখানকার প্রধান জাগা–দণ্ডকবনেরই মধ্য প্রান্ত বলা যায়। শহরের পাশ থেকে মাইলের পর মাইল জঙ্গল আর জঙ্গল—সে ভয়ঙ্কর গভীর । জঙ্গলের মাঝে মাঝে রয়েছে ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম—আদিবাসী গ্রাম । আদিবাসী লোকেরা স্থানীয় ভাষা মাড়িয়া,মুড়িয়াতেই কথা বলে । এ জাগার ভাষা সাধারণজনের বোঝার মত নয়.পাঠকবর্গের বোধগম্যের জন্যে ভাষান্তর করে লেখা হল:

সে ইংরেজ আমলের কথা। সে সময় বস্তার জেলার রাজা ছিলেন ভঞ্জদেও। রাজা ভঞ্জ দেওয়ের রাজধানী বস্তারের জেলা শহর থেকে দশ বার কিলোমিটার দূরত্বে–জগদলপুর সদর শহরে ছিল। তাঁর রাজত্ব কালেই সেখানকার ইংরেজ শাসনের প্রতিনিধি শাসক ছিলেন,বিটেন আহর্ট। বিটেন আহর্ট তখন সপরিবারে সেখানে বাস করতেন।

বিটেন সাহেব সুযোগ পেলেই শিকার করতে বেরিয়ে যেতেন। বরাবরই শিকারের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল খুব বেশী। সময় সুযোগের অপেক্ষায় তিনি বসে থাকতেন।

সে দিন তিনি বেরিয়ে ছিলেন শিকারে। সঙ্গে তিন গাঁট্টাগোঁট্টা জোয়ান মর্দ–জাতিতে তারা আদিবাসী। শহরে বাস করতে করতে ওরা হিন্দি ভাষা আর ইংরেজির ইয়েস,নো’র মত কিছু শব্দ রপ্ত করে নিয়েছে। বিটেন সাহেবের দারোয়ানের কাজ করতে গেলে ওটুকু শিক্ষা তো খুবই দরকার।

বস্তারের গভীর জঙ্গল। এখানে বড়  বড় জন্তু জানোয়ারের অভাব নেই–বাঘ,ভাল্লুক,বন শূয়র, বাইসন ছাড়াও আছে অনেক জাতের হরিণ,সম্বর,হনুমান,বাঁদর,শেয়াল,হয়না,নানান সর্প প্রজাতি ছাড়াও আছে বিরাট বিরাট অজগর,আছে বন মুরগী,আর হাজার রকমের পাখীদের দল। এই জঙ্গলের মাঝে আছে ছোট বড় অনেক নদী,অনেক ঝর্ণা,অনেক পাহাড়,পর্বত। সৌন্দর্যের দিক থেকে বললে এর কোন দিক থেকেই তুলনা নেই।

কিন্তু বিটেন সাহেবের চোখ এখন ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। শুরু শুরুর প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করার দিনগুলি বুঝি আর বেঁচে নেই। শিকারের নেশা তাঁকে এখন পাক্কা শিকারী বানিয়ে দিয়েছে। এখন তিনি যেন জাত শিকারী, জঙ্গল মানেই তাঁর শিকারের ভুমি ক্ষেত্র!

এ জঙ্গল থেকে তিনি অনেক কিছু শিকার করেছেন। একটা বাঘ,তিনটি বুনো শূয়র,হরিণের তো গোনাগুনতি নেই। আর ভাল্লুক তো তার হাতের গুলি খেয়েও পালিয়ে গিয়েছিল। ভাল্লুকের কথা মনে আসায় তাঁর মনে পড়ে গেল সেবার তিনি ভাল্লুকের হাত থেকে বড় বাঁচা বেঁচে গিয়ে ছিলেন।

সেবার তিনি আর তার ষণ্ডাগুণ্ডা লোকগুলো হন্যে হয়ে এক বুনো শূয়রের পিছনে ছুট ছিলেন। দু দুটো গুলি পেটে নিয়ে শূয়রটা দিশেহারা ছুটে বেড়াচ্ছিল। বিটেন সাহেবের দলও ছাড়ার পাত্র নয়–তাদের মনে তখন শূয়রের মাংসের লালচ ঢুকে গিয়েছিল। বুনো শূয়রের মাংসের স্বাদ আগে অনেকবার তারা যে চেখে নিয়েছিল। এমন রকম ফের সুস্বাদু মাংস জিভে জল নিয়ে আসে বই কি !

বেশিক্ষণ আর তাদের দৌড়ানো হল না,ছুটতে ছুটতে হঠাৎ তাদের কানে এলো আশ পাশ থেকেই ভাল্লুকের ডাক–কুউউ কুউউ কুউ। তৎক্ষণাৎ ছোটায় ব্রেক কষতে হল,সবাই ভয় পেয়ে থেমে গেল। বেশী দূরে নয়,আশপাশ থেকেই ভাল্লুকের ডাক আসছে না ! বিটেন সাহেব বন্দুক রেডি করে কান খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করলেন কোন দিক থেকে ভাল্লুকের ডাক আসছে বলে।  ঠিক এমনি সময় মনে হল তাদের খুব কাছ থেকে ভাল্লুক—কুউউ,কুউউ…করে ডেকে উঠলো–না,বেশী দূর না,বিটেন সাহেব ভয়ে ভয়ে ঝোপ- ঝাড়ের  ডালপালা সরিয়ে উঁকি মেরে দেখতে চেষ্টা করেন। ঠিক এমনি সময় তাঁর এক আদিবাসী সাথী হুউ রে বা,হুরে বা…করে চেঁচিয়ে উঠলো।

বিটেন দেখেন ওদের থেকে মাত্র একশ হাত দূরেই একটা মস্ত ভাল্লুক মাটির ঢিবি ভেঙে উঁই পোকা বের করে খাচ্ছে !

মনে হল ভাল্লুক উঁই পোকা খাওয়াতে ব্যস্ত বটে কিন্তু সাথী আদিবাসী লোকটার কথা,হুরে বা,হুরে বা শব্দগুলি ওর কানে গিয়েছে। ভাল্লুক হাতের মুঠি থেকে উঁই পোকা নিয়ে খেতে খেতে বিটেন সাহেবদের দিকে বার বার তাকাচ্ছে। ওর হাব ভাবে মনে হচ্ছে,ভাল্লুক রেগেমেগে বলতে চাইছে,দাঁড়া আমার স্বাদের খাওয়াটা তাড়াতাড়ি শেষ করেই তোদের দেখে নিচ্ছি।

বিটেন সাহেব বলে উঠলেন,ডেঞ্জার–ডেঞ্জার,সাবধান ! সাবধান ! বিয়ার ! ভাল্লু !

এর মধ্যেই ভাল্লুক তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার সামনের দু পা হাতের মত নাড়াতে নাড়াতে গা হেলিয়ে দুলিয়ে ওদের দিকেই আসতে শুরু করেছে। আদিবাসী লোকগুলো তো পড়িমরি করে মোটা মোটা গাছ জাপটে ধরে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে অনেক ওপরে উঠে গেল,কিন্তু বিটেন সাহেব কি করবেন ! পাশে কোন গাছ তাঁর নজরে পড়লো না যাতে তিনি তাড়াতাড়ি করে চড়ে যেতে পারেন। অগত্যা তিনি তাঁর বন্দুক সাথী করে একটা ঝোপের আড়ালে মোটা গাছের পেছনে গিয়ে লুকাবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু না,ভাল্লুক বেটা দেখেই নিয়েছে—ঘত্ ঘত্, ফাস ফাস শব্দ করতে করতে একেবারে বিটেনের সামনে এসে দাঁড়ালো। বিটেন দেখলেন,প্রায় সাত,আট ফুট লম্বা, দীর্ঘকায়  ভাল্লুক তাকে ধরতে উদ্যত। তিনি দেখতে পেলেন ভাল্লুকের সামনের পা দুটোর আঙুল বের করা,তাতে ধারালো বড়  বড় অন্তত চার পাঁচ ইঞ্চি লম্বা লম্বা নখ! ভাল্লুক তাঁকে ধরবে ধরবে করছে ! হাতে মুহূর্ত মাত্র সময়–জীবন বাঁচাতে বিটেন তৎক্ষণাৎ বন্দুক তুলে ধরলেন,কিন্তু ভাল্লুককে  তাক করার আগেই ভাল্লুক বন্দুকের নল ধরে ফেলল। বিটেন বুঝে নিলেন,তাঁর বাঁচবার আর কোন উপায় নেই—মৃত্যু তার নিশ্চিত।

ঠিক এমনি মুহূর্তে গাছ থেকে আদিবাসী লোকগুলি হয় তো তাদের সাহেবকে বাঁচাতেই চীৎকার করে উঠলো। আচমকা চীৎকারে সামান্য দিশাহারা হয়ে গেল ভাল্লুক,ও তার ঘাড় ফিরিয়ে বাকি শত্রুর দিকে নজর দেবার চেষ্টা করল। আর ঠিক সেই মুহূর্তে গুড়ুম গুড়ুম–গুলি চালালেন বিটেন সাহেব। বোঝা গেল না গুলি ভাল্লুকের কোথায় গিয়ে লাগলো। ভাল্লুক ছিটকে দুবার গড়ান খেয়ে গিয়ে পড়লো হাত কুড়ি দূরে। বিটেন সাহেব নিজেকে বাঁচাতে আবার তাক করলেন ভাল্লুকের দিকে। সে গুলি ভ্রষ্ট হল,কিন্তু গুলির প্রচণ্ড আওয়াজে হবে ভাল্লুক ত্রস্তে মাটি থেকে উঠে দাঁড়াল–আর নিজের প্রাণের ভয়েই হবে দৌড়তে দৌড়তে পালিয়ে গেলো। বিটেন সে দিন ভাল্লুকের হাত থেকে বড় বাঁচা বেঁচে গিয়ে ছিলেন।

ক্রমশ…

 

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top