Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

মেঘের কোলে রোদ-৯

: | : ২৭/০৯/২০১৩

আজ সারাদিন খুব ধকল গেছে ওয়াশিমের।মাথায়ও যন্ত্রণা

হচ্ছে।জ্বর আসার পূর্ব-লক্ষণ। এখন একটু ঘুমিয়ে নিলে

হয়ত শরীরটা চাঙ্গা হবে।কিন্তু বাড়ি ফেরার উপায় নাই।

খালা খুব রেগে আছে। যাকে দেখছে তাকেই ঝাঁটাপেটা

করছে।

লোকে বলে খালার নাকি মাঝেমধ্যে ভর ওঠে। তখন কি

যে করে তার ঠিক নাই। গালিগালাজ,শাপ-শাপান্ত,হাতে

কাছে যা থাকে তাই ছুঁড়ে সামনের জনকে মারা।বাদ যায়

না হায়দারও। তবে সে এটাকে ‘ভর-ওঠা’ ভাবতে নারাজ।

এটা নিশ্চয় কোন অসুখ। বড় কোন ডাক্তার দেখালে সেরে

উঠবে কিন্তু খালা কিছুতেই ডাক্তারের কাছে যাবে না।

হায়দারের প্রতিটি সকাল শুরু হয়,খালা গালমন্দ শুনে।

রোজ সকালে কোন না কোন লোক আসে তার খোঁজে।

সদর দরজায় হাঁক ছাড়ে, মিঞাভাই আছেন নাকি?

হায়দার বিছানায় শুয়ে-শুয়েই শুনতে পায়, না-গো

তোমাদের মিয়াভাই কাল রাতে মরে গেছে,পরে এসো

খানা খাবে।শুয়োরের বাচ্চারা ছেলেটাকে শান্তিতে ঘুমাতেও

দেয় না গো!

তড়িঘড়ি বিছানা ছেড়ে উঠতে হয় হায়দারকে। খালাকে মৃদু

ধমক মারে,আপনি অমন করেন কেন বলেন তো? ওরা আমার

কাছে আসে বিপদে-আপদে সাহায্যের আশায়,ওদের কেন শাপ-

শাপান্ত করেন।

—মর তুই, মর হারামজাদা,বাপ খেলি,মা খেলি,এবার আমাকে

খা । না হয় নিজেকে খা। আমার জান জুড়োক।

খালার শাপ-শাপান্ত পেছনে রেখে যে এসেছে তার কাছে যেতে

হয় হায়দারকে। হাসিমুখে শুনতে হয় তাদের সুবিধা-অসুবিধার

কথা।

খালার ভাষায় নবাব পুত্তুরের দরবার।

সেই দরবারে ফ্লাক্স-ভর্তি চা,বড় পেয়ালা ভর্তি ডিমসেদ্ধ নিয়ে

হাজির হন খালা।বলে,সবকিছুতে বিষ দিয়ে রেখেছি,খেয়ে মর

হারামজাদা।

হাসিমুখে তা খায় হায়দার। সাথে যারা থাকে তাদেরও দেয়,বলে,

ভয় নাই,আমার খালা বিষ দেয়নি,আপনারা নিশ্চিন্তে খান।

আজ সকালে তেমনই এক অবসরে খালা বলে উঠল,সারা

জীবন কিপটামী করলি,এবার যা কবরে,ফাঁকা হাতে।

হায়দার চা খেতে খেতে বলল,আজ আমি মরব নাকি খালা,কিন্তু

আমি কিপটামী করিনি কোনদিন।

— বালাই ষাট তুই মরবি কেন,আজ হামিদের দিন।আমি জানি

ওর ছেলেরা এক পয়সাও খরচ করবে না,তোকেই আংটি-বোতাম

বেচতে হবে। তুই যদি আজ মরা-বাড়ি যাস,তবে আমার মাথা খাস।

দরবারে বসে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে হায়দার বলল,আজ

কি কেউ মারা গেছে।

—না, তো।

—তবে যে খালা বলছে! হামিদ মিঞা কি অসুস্থ?

— না,না, এই তো সকালবেলা তাকে পুকুরপাড়ে দাঁতন করতে দেখলাম।

বলল কলিমুদ্দিন। হামিদ মিঞার বাড়ির লাগোয়া পুকুরপাড়ের বাসিন্দা সে।

মেয়ের বিয়ে স্থির হয়েছে তার।সাহায্যের জন্য আগাম দরবার করে রাখছে

সে।

—কিন্তু খালা যা বলে তা কেমন করে জানি ঠিক মিলে যায়।

—দাঁড়ান বড়ভাই, আমি এক্ষুণি খবর নিয়ে আসছি। বলে উঠে দাঁড়াল

সফি।

একটু পরে হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকল সে। বলল, হামিদ মিঞা,চা

খাচ্ছে গো। তারসাথে এক কাপ চা খেলাম। সিগারেটও দিতে

চায়ছিল,আমি খাই না,তাই একটা নিয়ে এলাম।নেন,কে খাবেন

খান।

সকালের দরবার শেষ হয়েছিল হাসি-আমোদে। কিন্তু দশটা নাগাদ

হায়দার যখন নাস্তা করছিল,তখনই সফি এসে খবর দিল,একটা

খারাপ খবর আছে ভাইজান,হামিদ মিঞা এখনই ইন্তেকাল করলেন।

দুঃসংবাদ। মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলেও হায়দার ভেবেছিল,খালা যা

বলে,তা সব হয়ত  পাগলের প্রলাপ নয়।

(পরের কথা আগামী পর্বে )

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top