অনেক কথা১৩
পাগলের বাস্তবতা–
* একদিন কী কাজে জানি স্ত্রী আমার একান্ত ঘরে ঢুকে বলল, অরে রাখেন আপনার অনর্থ লেখাজোখা।
আমি মিটিমিটি হেসে বললাম, আমার লেখাজোখা যে অনর্থ–কী করে জানলে?
স্ত্রী বলল, কী করে জানছি মানে? জানব না কেন, দিনে দিনে চার দিন যান নি স্কুলে–পড়েন নি বই চারটা হতে চাচ্ছেন জগৎকর্তা! তারপর বিরক্তিগলায় নিজে নিজে বলছে, পাতাপচার কাণ্ডকারখানা যতসব–দেখলে গায়ে কাঁটা দেয়।
আমি মনে মনে হাসছি আর বলছি, তাই বুঝি! তবে পাতাপচা কেন?
ও কৌতুকের হাসি হেসে বলল, পাতাপচা কেন বলি?
আমি বললাম, বল দেখি।
ও বলল, আজকাল কচুলতার মতো যেহারে কবিলেখক বাড়ছে সেহারে জনসংখ্যাও ত বোধ হয় বাড়ছে না! তবে পাঠক কোথায়? মানুষ আর আপনাদের মতো বেকারত্ব জীবনযাপনে অভ্যস্ত নয়। শিল্পের মধ্যে শিল্পীর প্রকাশ, আর সেই শিল্প যদি হয় দর্শকহীন তা হলে শিল্পীর মূল্য কোথায়। গাছ থেকে পাতা ঝরে ঝরে যেমন স্তূপাকার হয়ে একসময় পচেগলে বিনষ্ট হয়, আপনাদের লেখাজোখা সেরকম স্তূপাকার হয়ে পচেগলে নাগেলেও তবে উইপোকার খাদ্য অবশ্য হয়। কারণ উল্টে দেখার দর্শক যখন থাকল না তখন উইঢিবি ছাড়া সন্দেহ কী। তাই আপনারা পাতাপচা…
আমি হাসতে হাসতে বললাম, তাই নাকি! তবে পাতাপচা নাবলে অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করা কি যায় না? যেমন : অকবি, অলেখক, বোকামি, ছেলেমি, নির্বোধের কাণ্ডজ্ঞান, বালকের স্বপ্নবয়ান, পাগলের কাণ্ডকারখানা এসব আরকি।
স্ত্রী হেসে বলল, এ ত দেখি সত্যিই পাগলের বাস্তবতা।
আমি মনে মনে চিন্তা করে দেখলাম, কথা তেমন একটা যুক্তিহীন নয়। অযৌক্তিকেরাও কখনো কখনো যৌক্তিক কথা বলে ফেলে, তাই তাকে যুক্তি বুঝে না বলে অবহেলা করা চলে না। অযুক্তিবাদী যখন যুক্তিবাদীর মতো কথা বলে–তা ভাবতে হয়। তবে খাওয়ার আনন্দ যেখানে বেশি সেখানে অনীহার কথা ভাবা যায় না।
চলবে…