Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

উপন্যাস ” অমর প্রেম ” পর্বঃ ১

: | : ০৩/১০/২০১৩

আজ বুধবার মেঘলা আকাশ সুবহি সাদিক থেকেই গগনে গুড়গুড়ি আওয়াজ ও অবিরাম বিদ্যুত চমকাচ্ছে । মনে হয় এ যেন কোন বিশ্বকর্মার কাজ । প্রাচীন কালের মানুষ হয়তো ভাবতেন অভ্রে বসবাসকারী মানব ও দানবের মাঝে বিশাল যুদ্ধ শুরু হয়েছে । শৈশবে অনেকেই ভাবতাম আকাশে আল্লাহ আছেন । আর তিনি আমাদের প্রতি রাগান্বিত হয়েছেন । এ সকল ধারণা পুরোপুরি ভ্রান্ত । প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানীদের মতামত অনুযায়ী মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে বিজলী চমকায় ।

ভোর পেরিয়ে সকালে পদার্পণ করলো , খাটের উপরের ক্রমা ফোমের শয্যা ত্যাগ করে ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে বারান্দায় এলো সাথী । পলকহীন দৃষ্টিতে প্রকৃতির দিকে তাঁকাতেই অন্তরে নানান ভাবনা এসে ঘর বাঁধলো । বর্তমান প্রকৃতির ভাবনা , প্রাচীন কালের , জাহেলিয়াতের যুগের , কখনও এ দেশ এ দেশের আইন শৃংখলা , দূর্নীতি ,সন্ত্রাস , ব্যভিচার , প্রতিহিংসা , জন সেবা , রাষ্ট্র সেবা নামে ধোকাবাজী ও স্বাধীন নামক এ রাজ্য সম্পর্কে । ১৯৭১ সালে ১৬ ই ডিসেম্বরে আমরা সোনার বাংলা নামের একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি লাখো লাখো শহীদ ভাই বোনদের রক্তের বিনিময়ে । স্বাধীন নামের রাষ্ট্র পেয়েছি ঠিকই কিন্তু স্বাধীনতা পাইনি , ন্যায অধিকার পাইনি , পাইনা কোন ন্যায় বিচার , এগুলোর চরম অভাব । পেয়েছি হিংসা , স্বার্থপরতা , দূর্নীতি ও সন্ত্রাস পূর্ণ দেশ । শিক্ষাঙ্গণে,চিকিত্‍সালয়ে,চাকুরী ক্ষেত্রে , আইন আদালতে , ব্যবসা বানিজ্যে মোট কথা প্রতিটি স্তরে দূর্নীতি কুনীতিতে পরিপূর্ণ । বিশেষ করে একটি হৃদয় বিদারক কথা হলো আমরা এদেশের উন্নয়ন ও শান্তির জন্য নেতা নির্বাচিত করি তারা আসলে মাকাল ফল । বিভিন্ন দূর্নীতি ও জঘন্যতম অপরাধের রাজ্যে রাজত্ব করে । তবে সব নেতারাই এক নয় , তার নজির একজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁর নামটি উল্লেখ করলাম না । স্বল্প কালের জন্য হলেও প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও সত্‍ নেতার পরিচয় দিয়েছেন । যদি সকল নেতা ও নেত্রীগণ অন্যায়কে গ্রহণ না করেন , দূর্নীতিকে ঘৃণা করেন । তবেই এ দেশের মাটি থেকে সকল প্রকার অপকর্ম অন্যায়জনিত কাজ চিরতরে বিদায় নেবে । তখনই আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা ফিরে পাব ।

এ বিভিন্ন ভাবনা সাথীর হৃদয়ে দোলা দেয় । আবার কখনও ভাবে মানুষের আশা ভালবাসা , প্রেম প্রীতির বৃহত্তর অপরাধ বিচার-আচার , অভিজাত্যের গৌরব মর্যাদা ও অহংকার সমন্ধে । নানান কথা ভাবতে ভাবতে ওর নানীর কথা মনে পরে । এখনো তো জানাই হলো না ,
কে সাথী ?
আর কে তার নানী ?
জুম্মা হাটের মধ্যম পরিবারের মাহফুজার রহমানের অতি আদরের দুলালী । মায়ের নাম সুলতানা রহমান । সাথীরা পাঁচ বোন তন্মধ্যে তিন নম্বরে স্থান নিয়েছে সাথী । বাকি চার বোনের তুলনায় সাথী বেশ রুপসী ও লাবন্যময়ী । পূর্ণিমা চাঁদ যেন ওর গায়ে বাস করে । তাই সবার অধিক নজর ছিল সাথীর উপর যাতে চাঁদের ন্যায় কলংক স্পর্শ না করে । মাহফুজার রহমান মাদ্রাসার একজন সাধারণ ক্লার্ক (কেরাণী) তিনি যা আয় করেন সাধারণ পন্থায় সংসার চলে ।

সাথীর নানী অনেক আগেকার মানুষ তার বয়স দেড়শত বছর অতিক্রম করেছে চেহারা দেখে তা কল্পনা তূল্য নয় । তিনি রুপ কথার কাহিনী , জীন-পরি , বেহুলা সুন্দরী , রাধা-কৃষ্ণ ও রাজা বাদশাদের কাহিনী জানতেন । এর ফলেই সে নানীকে ভুলতে পারে না । নানীর পাজরে বসে মনোযোগের সহিত গল্প শুনতো । সেই প্রিয় নানীর একটি কাহিনী মনে পড়ল ।

একদা আরব সামরাজ্যে ছিল কোরানের আইন কানুনের প্রচলন । সে সমাজে সুবিচার করে মানুষের অধিকার পূর্ণ করতো । আজ সেই সমাজ যেন এলোপাথারী হয়ে বাতাসের সাথে গেছে কোন এক অচিন রাজ্যে । তাই বড় বড় নেতা ও মাতাব্বরকে দু’একশত টাকা দিয়ে কেনা যায় । আর এ মাতাব্বররা অর্থের বিনিময়ে ন্যায়কে অন্যায় , অন্যায়কে ন্যায় , সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে শালিশ করে থাকেন । বিশেষ করে আইনের সেবক পুশিককে এক প্যাকেট বিড়ি দিয়েও কেনা যায় । তার অনেক দৃষ্টান্ত আছে যা বলা বাহুল্য । তবুও কিছু সংখ্যক নজির আমাদের দৃষ্টির অগোচরে নয় । মুখোশধারী বিড়ালদের অনেক অবিচারের ফলে অনেক মূল্যবান জীবন নির্মমভাবে হত্যা করছে । আরো কিছু সংখ্যক কু শিক্ষায় শিক্ষিত অবিভাবক তাদের মূল্যবান জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে । এভাবে সমাজকে দিন দিন পতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে । কারণ সমাজে প্রেম ভালবাসা নাকি বৃহত্তর অপরাধ । এই অপরাধে যুবক-যুবতী নিঃস্ব হয়ে বিরহের অনলে ধুকে ধুকে মরছে । হরণ তাদের জীবনের সুখ-শান্তি ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন । এ দেশে লক্ষাধিক প্রেমিক প্রেমিকারা আত্মহত্যা করছে । এর মূল কারণ প্রায় অবিভাবকরা মেনে না নেয়া ।
তাই অসংখ্য ব্যর্থ প্রেমিক প্রেমিকারা ড্রাগের জগতে ডুবে গিয়ে নিজ হাতে সুন্দর জীবনকে নষ্ট করছে ।

নারায়ণগঞ্জ শহরের ডনচেম্বার এলাকার হিরণচি উজ্জ্বলের কথা না বললেই নয় । সে এম ,এ পাশ করেছে । চির কুমার এ উচ্চ শিক্ষিত উজ্জ্বল নেশা করে মাতাল হয়ে পরে থাকে রাস্তায় । আজ তার জ্ঞান শিক্ষা দেশের ,সমাজের ও জাতির কোন উপকারে আসে না । এ জন্য কাকে দায়ী কে ? নিশ্চই ঐ অবিভাবকরাই যারা উজ্জ্বলের ভালবাসার সম্পর্ক মেনে নেয়নি । পৃথিবী কেন বোঝে না ?সমাজ কেন বোঝে না ঐ সকল অবিভাবকরা কেন বোঝেনা প্রেম ভালবাসা কোন অপরাধ নয় , নয় কোন পাপ ও অন্যায় । প্রেম বোঝে না দারিদ্র ধনি , না বোঝে অভিজাত্যের মর্যাদা । মোট কথা প্রেমের চোখ অন্ধ । স্রষ্টার কাছেও ভালবাসা নিরপরাধ বরং আল্লাহ পাকের নির্দেশ ” তোমরা পরস্পরকে ভালবাসো ” । আল্লাহ পাকের হুকুম ছাড়া কোন সম্পর্ক তৈরি হয় না । মানুষকে ভাল না বাসলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না । হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে ,” রাসূল (সা) বলেছেন,সেই বিয়ে উত্তম যদি উভয়ের পছন্দ মোতাবেক হয় ” । বাস্তবে ভুবনে যদি প্রেম ভালবাসা না থাকতো তবে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত । তাই প্রেম অন্যায় নয় বরং ঘৃণা ও অহংকার বড় অন্যায় ।

ঐ সকল অভিভাবক অধিক অর্থের মোহে অন্ধকারে আচ্ছন্ন । অনেকে আবার বলে থাকেন বিয়ের পর পড়ালেখা হয়না । এ কথাও পুরো ভুল । কেননা ” শিক্ষার সময় দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ” হাদিসের এ বাণী তারা ভুলেই গেছে । মূল কথা ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top