Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

উপন্যাস “প্রচ্ছায়া” (৬ষ্ঠ পর্ব)

: | : ০৩/১০/২০১৩

দুই মাস ধরে মিজান নলিতা ড্যান্সস্কুলে নিয়মিত নাচ শিখছে। প্রতিদনি বিকেল সাড়ে চারটায় আসে, ক্লাস শেষ করে ছয়টার মধ্যে সবার সাথে বেরিয়ে যায়। মাঝে মাঝে গাড়ী নিয়ে আসে। এছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাসে কিংবা সিএনজি করে স্কুলে যায় । দিনের বেলায় যানযটের মাঝে গাড়ী চালাতে ভালো লাগে না বলে দিনে কোথাও যেতে হলে বাস আর সিএনজি-তেই সে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে ।

এমনিতেও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মিজান দিনের বেলায় বাসা থেকে বের হয় না। মিজান একধরনের ঘর কোণো, নিজ ঘরে থাকতেই বেশি ভালোবাসে। আত্মীয় স্বজনদের ওখানে যেতেও তেমন আগ্রহ নেই তার। তবে সে এবার অনেক আগ্রহ নিয়ে নাচ শিখছে। যা ইতোপূর্বে অন্য কোনো কাজের বেলায় খেয়াল করা যায় নি।
নাচের স্কুলের টিচার নলিতা দাস সবর্দা তার সঙ্গে হেসে হেসে এমন ভাবে কথা বলেন, যা অন্য ছাত্রদের ক্ষেত্রে তেমন দেখা যায় না । মিজান এই ব্যাপারটা একাধিবার লক্ষ্য করেছে । একাকী বসে বসে মাঝে মাঝে সে ভাবে, ম্যাডাম তার সঙ্গে এত অন্তরঙ্গ দেখায় কেন ? অনেক ভেবেও মিজান কোনো কারণ খোঁজে পায় নি। কারণ খোঁজে না পেলেও ম্যাডামের লাল ঠোঁটের চমত্কার হাসিটি ধীরে ধীরে তাকে চমত্কৃত করছে।

আজ বৃহস্পতিবার। মিজান অন্যান্য দিনের মতোই বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নাচের স্কুলে গিয়ে হাজির হল। মিজান আজ তার গাড়ী নিয়ে আসে নি। গেইটের কাছে পৌছতেই মিজানের ভেতর কেমন যেন অন্য রকম অনভূতি হল। অন্যান্য দিন এই সময় গেইট খুলা থাকে। গেইটের বাইরে থেকে ছাত্রছাত্রীদের হৈচৈ শোনা যায় । আজ কেমন যেন শুনশান নিরবতা, কোনো রকম হট্টগোল বা হৈচৈ নেই, গেইট বন্ধ ! মিজান আলতু করে গেইটে ধাক্কা দিলো, গেইট খুলল না। মনে হচ্ছে ভেতর থেকে গেইট বন্ধ। দুই চার বার গেইটে নক ও ধাক্কাধাক্কি করার পর কেউ একজন ভেতর থেকে গেইট খুলে দিলো। টিনের গেইট পার হতেই মিজান থমকে দাড়াল। কেদারা পেতে দুইজন গ্রামপুলিশ অপ্রসন্ন হয়ে বসে আছে। মিজানকে দেখেই তাদের একজন জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে ?
মিজান উক্ত প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টা প্রশ্ন করল, কী হয়েছে? স্কুল বন্ধ কেন?
মিজানও তার প্রশ্নের জবাব পেল না। তার প্রশ্ন শেষ হতেই তাকে আরেকটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল। গ্রামপুলিশের একজন গলা টান করে বললেন, তার আগে বলেন, আপনি কেরা? কী চান এইহানে ?
মিজান বলল, আমার নাম মিজান।
বুঝলাম তো, কী চান এইহানে?
আমি এখানে নাচ শিখি।
মিজানের কথা শোনে গ্রামপুলিশের দুইজন একে অন্যে মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন। মিজানের কথা তাদের বিশ্বাস হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। খানিকক্ষণ নিশ্চুপ থেকে দ্বিতীয়জন ঈষদুচ্চ স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এইহানে নাচ শিখেন?
মিজান হ্যাসূচক মাথা নাড়ানোর পর লোকটি ফের বললেন, আজ থেকে এখানে নাচ শেখানো বন্ধ।
মিজান সঙ্গে সঙ্গে জানতে চাইল, নাচ শেখানো বন্ধ কেন ?
লোকটি বিরক্তির সঙ্গে বললেন, আরে মিয়া এত ঘ্যানর ঘ্যানর করেন ক্যান? জানেন না, এইহানে একটা মাডার অইছে।
মিজান স্তম্ভিত স্বরে বলল, মার্ডার হয়েছে, কে খুন হয়েছে?
লোকটি নিরস মুখে জবাব দিলো, এই স্কুলের মাস্টারনি।
মিজান অতিশয় বিস্ময়ের সঙ্গে জিজ্ঞেস করল, নলিতা ম্যাডাম খুন হয়েছে ?
নলিতা না কলিতা, তা জানি না। তয় খুন অইছে একজন।
মিজান আর কিছু বলল না। নিরাশ হয়ে বাসায় ফিরে এল। বিছানায় শুয়ে ঘন্টা দুয়েক এপাশ ওপাশ করল, কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। উপায়ান্ত না পেয়ে অবশেষে ঘুমের টেবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের ঔষধ খাওয়ার অভ্যেস তার মোটামোটি পুরানো। গত ছয়মাস ধরে তার মাঝে মাঝে অনিদ্রা হচ্ছে। যখনি নিদ্রাহীনতা হয়, তখনি সে ঘুমের টেবলেট খেয়ে লম্বা ঘুম দেয়।

ড্যন্সমাস্টার নলিতা দাসের অপমৃত্ত্যুর খবর মিডিয়ায় প্রকাশ হবার পর ঢাকা শহরে এক ধরনের আতংক ছড়িয়ে পড়ল। ছয় মাসের মধ্যে ঢাকা শহরে তিন তরুনীর মুখশ্রী বিগড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার ! প্রত্যেকটি টেলিভিশন চ্যানেল আর পত্রিকায় খবরটি লাগাতার কয়েক দিন হেডলাইন হল। মানব অধিকার সংস্থাগুলো রীতিমতো চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিলো। অনেক তরুনীর বাবা মা তাদের মেয়েদেরকে একা একা স্কুল কলেজে পাঠাতে সাহস পেলেন না। সারাক্ষণ বুদ্ধির প্যাঁচ প্যাঁচ খেলে, এমন অনেক বুদ্ধিজীবী গলা ফুঁলিয়ে বললেন, ঢাকা শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে।
বলা পর্যন্তই সাড়। এইসব জ্ঞান পাপীদের কাউকে ঢাকা ছেড়ে অন্যত্র যেতে দেখা গেল না। প্রতিটি চ্যানেলের টকশো-তে আলোচনার টপিক এক, গত ছয় মাসে ঢাকা শহরে তিন তরুনীর মুখশ্রী বিগড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার। বিরোধীদল আইনশৃঙ্খলার অবনতির দোহাই দিয়ে সারা দেশে অর্ধদিবস হরতাল পালন করে সুযোগের সদব্যবহার করে ফেলল। পুলিশ এটাকে এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলছে না। তারা ধারনা করছে, কোনো সিরিয়াল কিলার হয়ত হত্যাকান্ডগুলো ঘটাতে পারে। স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হল। সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি বিরোধীদলের হরতাল ডাকা নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। প্রশাসনের টনক নড়ল অবশেষে। দেশে এই প্রথমবার কোনো নারী স্ব-রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন। ঢাকা শহরে একের পর এক তরুনীর মুখশ্রী বিগড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার হবে, তিনি নিশ্চয় তা বেশি দিন সহ্য করবেন না। তাই তো তিনি পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, যেভাবেই হোক হত্যাকারীকে ধরতে হবে। ঢাকা শহরের সবগুলো প্রবেশপথে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হল। তল্লাসী ছাড়া কোনো গাড়ী ঢাকা থেকে বের হতে এবং ঢাকায় ঢুকতে পারছে না। পুলিশের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে, হত্যাকারী হত্যা করার পর রক্তমাখা শরীর নিয়ে গাড়ী করে ঢাকা ছেড়ে যাবে, আর সেই সময় পুলিশ তাকে অনায়েসেই ধরে ফেলবে !

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top