উপন্যাস ” অমর প্রেম ” পর্বঃ ২
প্রেমের বিয়েতে বাঁধা সৃষ্টিকারী হলো অভিভাবকরা । মোট কথা এরাই প্রেমের প্রধান শত্রু । নিষ্পাপ মনগুলো ভেঙ্গে করছে চুরমার । নির্মমভাবে খুন করছে মনের সুখ ও শান্তি । এ সকল অভিভাবকদের বলছি । যারা ভাবে আমার সন্তানকে প্রতিষ্ঠীত কোটি পতির সাথে বিয়ে দিবেন । যেন সারা জীবন পরম শান্তিতে থাকে । কিন্তু মনে রাখবেন , সুখ যার নসিবে নেই সে রাজ সিংহাসনে বসলে সিংহাসন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে । যার কপালে সুখ লিখন আছে সে কাঠের পিড়িতে বসলে পিড়ি স্বর্ণে রুপান্তরিত হবে । এ কথা চিরন্তন সত্যি । আর একটা কথা তাদেরকেই বলছি , সন্তানদের অমতে বিয়ে দিলে যে সুখি হয়না তার দৃষ্টান্ত অহরহ দেখা যায় । এছাড়া কিছুই বলার নেই ওরাই যে জন্মদাতা । তাই প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন ওনাদের ভুল ভেঙ্গে দেয় ।
এ কথাগুলো ভাবতে ভাবতে পড়ালেখার কথা বিন্দুমাত্র স্মরণ নেই সাথীর । হঠাত্ সুলতানা রহমান ডাকলেন ,
সাথী ,আজ স্কুলে যাবে না মা ?
যাব , সাথী উত্তর দিল ।
কখন যাবে ?
সকাল খেকেই দেখছি তোর মন মরা কি যে গভীর ভাবনায় ডুবে আছিস ।
এদিকে সময় পেরিয়ে যচ্ছে খেয়াল আছে কি ?
তাই তো !
এ বলে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে সাথী । তারাতারি খানা সেরে বইয়ের ব্যাগটি কাঁধে ঝুলিয়ে অন্তরঙ্গ বান্ধবী বিথিসহ রহনা হল ।
গাঁয়ের আঁকাবাকা পথেই হেটে চলছে দু জন । পথের দু পাশে সোনালী ধানের ক্ষেত , ধান গাছের পাতাগুলোকে দোলা দিয়ে দিয়ে আসছে শীতল বাতাস;লাগছে দু জনের গায় । মিনিট দশেক পর প্রচন্ডভাবে শুরু হল ঝড় বৃষ্টি ও বজ্রপাত । ফাঁকা পথ আশে পাশে কোথাও বাড়ি নেই , তাই কোন আশ্রয় পেলনা । এখন তারা বাড়ি ও স্কুলের মধ্য পথে । স্কুল যেতে আরো মাইল খানেক যেতে হবে ।
বৃষ্টি থামার কোন আলামত নেই , অবিরাম ঝড়ছে । অবলা অসহায় দুটি মেয়ে হেঁটেই চলছে বৃষ্টিতে ভিজে । এ বিপদ ক্ষণে ঘটল এক ঘটনা –
পিছন থেকে আসছে একটি ছেলে বাই সাইকেল চালক হয়ে সেও স্কুলে যাবে । ডান হাতে ছাতা বাম হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেল । সাইকেল চালিয়ে আসতে বড় কষ্ট হচ্ছে কত বার যে পিছলে পরার উপক্রম হচ্ছে ।
যারা বৃষ্টিতে কাদা রাস্তায় সাইকেলের চালক হয়েছেন কেবল তারাই বেশ উপলব্ধি করবেন । পথ হয় বড় পিচ্ছিল ব্যালেন্স রাখা কঠিন তাতে আবার ছাতাসহ ।
অসহায় মেয়ে দুটির কাছে আসতেই সমুখের চাকা পিছলে গিয়ে কাদা ছিটকে পরে সাথীর জামায় ও চোখে মুখে । আর ছেলেটি পরে গেল রাস্তায় । সাথী মনে মনে ভীষণ রাগান্বিত হয়েছে । ছেলেটিও প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে কিন্তু লজ্জায় বলছে না । বিথি চোখ রাঙ্গিয়ে বলল ,
চোখ নেই ,দেখে চালাতে পারেন না ?
ছেলেটি কোন জবাব না দিয়ে মুখটা গোমরা করে চলে গেল ।
বৃষ্টি মুসলধারে চলছে আকাশ ভেঙ্গে ডুকরে ডুকরে ডাকছে , সেই সংগে শীতল বাতাস । বাতাসে ছাতা উল্টিয়ে নিচ্ছে ,তাই ছেলেটি সাইকেল চালানো বন্ধ করে একটি বট গাছ তলে আশ্রয় নিল । সহজ-সরল সাদা মাটা ছেলেটি মনে কষ্ট পেল । সে বিবেককে প্রশ্ন করল , বিপদ মাঝে মেয়ে দুটিকে সাহায্য তো করলাম বরং কাদা লাগিয়ে দিলাম । বেশি অবাক হলো এ ভেবে , যার গায়ে কাদা লাগল সে কিছুই বলল না যতটুকু বলল অন্য মেয়েটি ।
অন্য কেউ হলে গাল মন্দ করে চরম অপমান করতো ।
আজ কাল এমন ধৈর্য্যশীল মেয়ে হাজারে একজন মিলবে কিনা সন্দেহ আছে ।সে ভাবল আমি অন্যায় করছি , আগামিকাল তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেব । পর মুহূর্তেই ভাবল কি করে সম্ভব ?
যাকে আমি চিনিনা জানিনা । কি তার নাম ?
কোথায় তার বাড়ি ?
তাহলে এখন কি হবে ?
এ ভাবনার মাঝে হঠাত্ পিছনে তাকাল , দৃষ্টিগোচর হল মেয়ে দুটি । বৃষ্টিতে ভিজে ওদের আপাদমস্তক ঠান্ডায় কাঁপছে । তাতেই প্রবল বাতাস এ যেন কাটা গায়ে নুনের ছিটা । ওরা যখন সন্নিকটে আসল তখন লাজুক ছেলেটি চোখের পাতা বুজে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে । অবশেষে ওরাও আশ্রয় নিল এ গাছ তলায় । ছেলেটি মনে মনে বেজায় খুশি । কাছে যখন পেয়েছে ক্ষমাটা চেয়ে নেবে ।
কিন্তু কিভাবে বলবে ও তো মেয়েদের সাথে কথা বলতে লজ্জা পায় । তবে কি এ সুযোগ হাত ছাড়া হবে ?
ক্ষমা না পেলে চিরকাল তাকে ঋণের বোঝা বহন করতে হবে । এ কথা ভেবে লজ্জা শরম ত্যাগ করে চোখ বন্ধ করে বলল ,
আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন । আপনার শরীরে কাদা লাগিয়ে দিয়েছি ।
ক্ষমা করেছেন তো ?
বিথি কিন্তু ছেলেটিকে বেশ চিনে , একই স্কুলে পড়ে মাত্র একটি শ্রেণির তফাত্ । ছেলেটির নাম স্বয়ন নবম শ্রেণিতে পড়ে আর বিথি ও সাথী পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে । বিথি চিনে কিন্তু সাথী চিনেনা ,
এর কারণ কি ?
এর কারণ পরে জানা যাবে । বিথি জানে স্বয়ন অত্যন্ত সহজ সরল বড় লাজুক মেয়েদের দিকে তাঁকায় না । তাই কায়দা মাফিক বলল ,
ভাইয়া ছাতাটা দিলে সাথী ক্ষমা করবে ।
সাদা বাঙ্গাল ছেলেটি বলল ,
এই নিন ছাতা ।
চোখ বুজে হাত বাড়িয়ে দিল ।
এবার ক্ষমা করেছেন তো ?
বিথি আবারও কায়দা করে বলল,
যদি আমাদের দিকে না তাঁকান তাহলে ক্ষমা পাবেন না ,
তাই না সাথী ?
সাথী কোমল কন্ঠে বলল ,
হ্যাঁ ।
আজ স্বয়নের লাজ শরম ধুলার সাথে মিশে গেল । নিরুপায় হয়ে চোখ খুলে বলল ,
এবার হয়েছে তো ?
সাথী উত্তর দিচ্ছে না পলকহীন তাঁকিয়ে রইল স্বয়নের দিকে ।
আর স্বয়নও তাঁকিয়ে সাথীর দিকে ।
এই প্রথম স্বয়ন টানা টানা চোখে সাথীকে দেখল , পূর্বে কোন মেয়ের দিকে ভাল করে তাঁকায়নি । বড় ভালই লাগল স্বয়নের , এত সুন্দর ভুবন মোহনী চেহারা রুপসী ভুবনে আছে কি না সে জানে না । যেমন ফর্সা তেমন লাল টুকটুকে চেহারা । মনে হয় যেন একটি ফুটন্ত লাল গোলাপ । তাতেই পরেছে চুমকি লাগানো লাল জামা , চোখে লাল রঙ্গিন চশমা ।
এ যেন সাথী নয় চিত্র জগতের নায়িকা নেহা । স্বয়ন মনে মনে ভাবল ,
সাথীকে পেলে তার তুচ্ছ জীবনটা স্বার্থক হতো ।
স্বর্গের সুখ হাতের মুঠোয় থাকতো ।
এদিকে সাথীও ভাবছে অনিচ্ছাকৃত আমার শরীরে কাদা লেগেছে । এ জন্যই আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে । কিন্তু সে নিজেও ব্যথা পেয়েছে রক্ত ঝড়েছে সে চিন্তা করছে না ।
আবার নিজের গা বৃষ্টিতে ভিজিয়ে আমাকে ছাতা দিচ্ছে । এমন সত্, নিষ্ঠাবান ও স্বার্থহীন ছেলে ক’জন আছে ?
সাথী মনে মনে এমন একজন জীবন সঙ্গি খুঁজছে । স্বয়নও দেখতে কম নয় , সুশ্রী চেহারা অপূর্ব হ্যান্ডসাম একটি ছেলে ।