ছিলাম মানুষ হইলাম ভূত (একজন আদম সন্তানের ভূত হওয়ার পিছনের ঘটনা)
ছিলাম মানুষ হইলাম ভূত (একজন আদম সন্তানের ভূত হওয়ার পিছনের ঘটনা)
শিশুতোষ রসাল ভূত কাহিনী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
আসিফ সাহেব ত্রিপিটক ঘুটঘুট মিটমিট আনোয়ার মনোয়ার সবাই একসঙ্গে সকাল এর নাস্তা বানাচ্ছে আসিফ এর স্ত্রী আনোয়ার এর মা দেশের বাহিরে আছে
শিক্ষার মান উন্নয়নকল্পে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোর করণীয় ” ইউনিসেফ এর সেমিনার এ যোগ দিতে আফরিন আনোয়ার মনোয়ার এর মা বার্লিন গিয়েছেন মনোয়ার এর কান্নাকাটিতে প্রথমে তিনি ভাবলেন যাওয়া ক্যানসেল করে দিবেন তার স্বামীর অনুপ্রেরনায় পিড়াপিড়িতে তিনি কিছুটা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সেমিনার এ যোগদান এর জন্য গত সপ্তাহে বার্লিন এ গিয়েছেন
প্রথম কয়েকদিন মনোয়ার এর খুব মন খারাপ আর কান্নাকাটিতে যাচ্ছিল মাকে ছাড়া এখন তার মন বেশ ভালো ভূত আঙ্কেল দের পেয়ে
ইতিমধ্যে মনোয়ার তার সবচেয়ে প্রিয় ভিডিও গেম টা ত্রিপিটক আঙ্কেল কে গিফট করেছে যেটা কিছু দিন আগে সে সারা পৃথিবীর বিনিময়ে দিতে রাজি ছিলনা
একটা কথা বলা পাপ্পি ছিল সেটা দিল ঘুটঘুট আঙ্কেল কে আর তার প্রিয় ঠাকুরমার ঝুলি দিল মিটমিট আঙ্কেল কে
দুই আঙ্কেল তাকে জড়িয়ে চুমু খেতে খেতে অস্থির করে ফেলল
আনোয়ার মনোয়ার মনে আজ আনন্দের কোনো সীমা নাই আজকে তাদের মনে হচ্ছে পিকনিক সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করা
বাবা পরোটা বানাচ্ছে ত্রিপিটক আঙ্কেল আলু কাটছে
ঘুটঘুট আঙ্কেল পেয়াজ কাটছে আর ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদছে
বাবা জিজ্ঞাসা করেছে ঘুটঘুট তোমার কি হয়েছে ?
স্যার মায়ের কথা মনে পড়ে গেল মাও এভাবে পেয়াজ কাটতে কাটতে কাদত বলে সে আবার একটু ফুফিয়ে উঠলো
মিটমিট আঙ্কেল ডিম ফাটছে অতি উত্শাহের সাথে তাওয়ায় পরোটা দিচ্ছে আর সেকছে
সিদ্বান্ত হলো ঘুটঘুট আঙ্কেল ভাজবে আলু
ত্রিপিটক ভাজবে ডিম
আসিফ সাহেব বেলিতেছিল পরোটা
মিটমিট তা দিচ্ছিলো তাওয়ায়
তার প্রথম রুটি সেকা হয়ে গেছে এক বিরাট শিল্পকর্ম চারিদিকে গোল গোল পোড়া দাগ
মিটমিট কবে তুই শিখবি কবেরে ?
তার প্রথম রুটি সেকা হয়ে গেছে এক বিরাট শিল্পকর্ম চারিদিকে গোল গোল পোড়া দাগ
মিটমিট কবে তুই শিখবি কবেরে ? উস্মা ভরে বলে ঘুটঘুট
আমার আলু ভাজি যে খায় সে সারাজীবন মনে রাখে বুজলিরে মিটমিট দাড়ায়ে দাড়ায়ে দেখ
যখন কানাডা লন্ডন যাবি হোটেল রেস্টুরেন্ট এর পেয়াজ আলু কাটা ছাড়া আর কোনো কাজ নাই
তখন কি করবি গলায় আবার ফাস লাগাবি না না খাইয়া থাকবি ? কাজ কাজ ই কোনো কাজ অসন্মানের কিছু নাইরে মিটমিট
এই কথার মানে ব্যাখ্যা করলো ঘুটঘুট আসিফ সাহেব এর কাছে
স্যার মিটমিট তার বউ এর ঝগড়া কইরা আত্মহত্যা করছে এমন বোকা মানুষ হয় যদি দেখতাম সংসদ এর সামনে আমাদের মন্ত্রিগুলার সামনে মরছিশ একটা প্রতিবাদ হিসাবে আমাদের রাজনীতিতে সেন্স আনানোর জন্য বুঝতাম যদিও তুই এখন ভূত অন্ততপক্ষে মানুষের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে এই ভূত হওয়া
মিটমিট হাতের চেটোয় তার চোখ মুছতে লাগলো
স্যার আমার বউ আর ছেলেটার লাগি খুব খারাপ লাগের বলে আজকে যদি সুযোগ পাইতাম বউ রে তোর্ জন্য তিন রেস্টুরেন্ট এ কাজ করতাম রে তোরে সব শাড়ী গয়না কিনে দিতাম রে আপন মনে কষ্টের সঙ্গে বলতে থাকে
পরিবেশ একটু ভারী হওয়াতে আসিফ গা ঝাড়া বসলেন
মিটমিট তুমি তাড়াতাড়ি টেবিল রেডি কর আনোয়ার মনোয়ার রে নিয়ে
ঘুটঘুট তেলের কড়াই তে পেয়াজ দিয়ে বলে আমার আলু ভাজি খা সারাজীবন মনে রাখবি
পেয়াজ কড়াই তে পড়া মাত্র ধপ করে আগুন ধরে গেল কড়াই তে
ওরে বাপরে বলে পিছনে উল্টা খেয়ে পড়ল মিটমিট বাকি সবার অবস্থাও করুন পোড়ার গন্ধে কাশতে কাশতে সবার নাভীশ্বাস উঠে গেল
গায়ের ময়লা ঝেড়ে উঠতে উঠতে মিটমিট বলল কৌতুকের স্বরে ঘুটঘুতের উদ্দেশ্যে
ঠিক কয়েছেন ভাইজান এই আলুভাজির কথা ভোলে সাধ্য কার ? আমি আরেক টূ হলে ভাজি হয়ে যাচ্ছিলাম
ঘুটঘুট কটমট করে তাকালো মিটমিট এর দিকে ভাবখানা এরকম সুযোগ পাইয়া তুই আমারে একহাত নিলি আমার protiggha তোরে আলু ভাজি খাওয়াব
আমার নাম ঘুটঘুট বাবার নাম দুরদুর মায়ের নাম পুটপুট আর আমার ভাই বিখ্যাত চুরচুর
কলিং বেল এর আওয়াজ এত ভোরে কে আসল ?
দরজা খুলে আসিফ সামনে মসজিদ এর হুজুর আর মুয়াজ্জিন কে দাড়িয়ে থাকতে দেখল
আসালামুয়ালায়কুম ওরাহমাতুল্লাহ আসিফ সাহেব আপনার সব কুশল তো ?
আসিফ মাথা নাড়ে সালামের জবাব দিয়ে
জনাব মুয়াজ্জিন সাহেব বললেন উনি আজান দেওয়ার সময় কি যেন দেখেছেন আপনার ঘরের বারান্দায় সেই থেকে উনি ভীত হয়ে আছেন বললেন হুজুর কাশতে কাশতে অস্বস্তিতে l
আমার বাসায় ভয় পাওয়ার মত কিছু নাই তাছাড়া আমি সাহসী মানুষ অযথা ভয় পাইনা বলল আসিফ বিরক্তির স্বরে
জনাব সবকিছু কে অবহেলা করবেন না আমাদের জ্ঞানের বাহিরে অনেক কিছু আছে যেমন ভূত জ্বিন প্রেত l
কিছু তাবিজ দিয়ে বলল ঘরের চার কোনায় রেখে দিবেন আর শুনলাম আপনার ছেলে দুইটি মানসিক ভাবে অসুস্থ সবাইকে নাকি ঢিল পাটকেল ছুড়িয়া মারে বলে অস্বস্তিভরে কাশতে থাকে
এই দোয়া পড়বেন আর তার সাথে আয়াতুল কুরচি সবসময় পড়বেন বলে হুজুর দোয়ার বই দেন হাতে এবং নিজে পড়তে থাকেন দুরুদে শেফা ওয়া ইয়াশফি সুদুরা ক্বাউমিম মুমিনিনা’ ওয়া শিফাউল লিমা ফিস সুদুর ইয়াখরুজু মিম বুতুনিয়া শারাবুম মুখতালিবুন অলোয়ানুহু ফিহি শিফাউল লিন নাস l
সঙ্গে সঙ্গে হাতের লাঠি দিয়ে দরজায় আঘাত করতে করতে বলেন
সরে যা সব ভূত প্রেত শকুনির দল আল্লাহ রাসুলের দোহাই তোরা মানুষের লোকালয় ছেড়ে যা
হুজুর এর আত্মচিত্কার এ ত্রিপিটক দের মন গলে গেল তারা অবিলম্বে আসিফ সাহেব এর বাসা ত্যাগ করে তাদের বাসস্থান সেই শেওড়া গাছে ফিরে গেল l
আসিফ এর বিরক্তির সীমা রইলোনা
ভিতর থেকে আনোয়ার মনে মনে ভাবে এবার তোমাদের পালা হুজুর আঙ্কেল আমার গুলতির লক্ষ্য হবে তোমাদের একজনের টুপি আরেকজনের দাড়ি l
সেদিনের পর থেকে আজপর্যন্ত প্রায় দশদিন পার হলো ত্রিপিটক ঘুটঘুট আর মিটমিট কে আসিফ সাহেব এর বাসার ত্রিসীমানায় দেখা যায়নি। আসিফ সাহেব প্রতিদিন দরজায় এসে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। তার মন টা বিষন্ন হয়ে যায় যখন মনে হয় আহারে ওরা না খেয়ে চলে গেছে।
আনোয়ার মনোয়ার সবসময়ে মনমরা হয়ে বাসায় বসে থাকে। এমনকি তাদের প্রিয় গুলতি খেলা তারা বন্ধ করে দিয়েছে কয়দিন হলো। তাদের হট্রগলে পাড়া সবসময় অস্থির থাকে। পথচারী এ বাসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এখন অবাক হয়ে ভাবে কি কয়েছে এই বাসায় কেউ মারা যায়নি তো ?
মসজিদ এর মুয়াজ্জিন সাহেব অবশ্য খুব বড় মুখ করে বলছে এটা আল্লাহ র কালাম বাসার চার কোনে পুতে দিয়ে আসছি।ভুতের ঘস্ঠি র গায়ে আগুন ধরায় দিছি।
আনয়ারদের মা কালকে বার্লিন থেকে এসে পৌছেছে সেমিনার শেষ করে। তিনি নিয়ে এসেছেন আনোয়ার আর মনোয়ার এর অনেক পছন্দের খেলনা। কিন্তু উনি বাচ্ছাগুলি র কোনো আনন্দ বা উত্তেজনা দেখছেন না। স্বামীর অবস্থা ও একইরূপ।
কি ব্যাপার তোমাদের কি হয়েছে আসিফ ?আফরিন জিজ্ঞাসা করে উত্কন্ঠায় দেখে মনে হচ্ছে ভুতের বাড়ি এটা।
আসিফ তাড়াতাড়ি সহজ ও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে।
একটু শরীর খারাপ ছিল মনোয়ার এর কোনরকম মিনমিন করে বললেন তিনি।
কই দেখিত তাড়াতাড়ি আফরিন এসে ছেলর গায়ে হাত দিয়ে জ্বর দেখার চেষ্টা করে।
এতক্ষণে মনোয়ার ফুফিয়ে কাদতে শুরু করে
আম্মু ত্রিপিটক আঙ্কেল আমার ভিডিও গেম না নিয়ে চলে গেছে., আমি আঙ্কেল কে ওটা গিফট করছিলাম।
ত্রিপিটক আঙ্কেল সে কে ? প্রশ্নবোধক চোখে জিজ্ঞাসা করে আসিফ কে ?
আসিফ অস্বস্তিভরে কাশতে থাকে। সে বুঝতে পারছেনা তার স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর কি দিবে।
মনোয়ার যাওত বাবা আম্মুর জন্য না তুমি গিফট কিনেছ সেটা দেখাও এটা বলে পরিবেশ টা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিল।
এদিকে শেওড়া গাছের ঢালে শুয়ে আছে ত্রিপিটক, ঘুটঘুট আর মিটমিট। তাদের মন বড়ই উদাস। কেন যে এই দুইটা বিছু পিচ্ছির কথা এত মনে পড়ছে।
তাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল ঠিক এইভাবে।
ঘুটঘুট : মিটমিট রে অত্যাধিক বিষন্ন লাগতেছে কিছু ভালো লাগতেছেনারে। কাওরে ভেংচি কাইটা ও মনে আনন্দ হইতেছেনা।
মিটমিট : ঠিক কয়েছেন ভাইজান আমার ও সুধু ওই বাচ্চা দুইটার লাইগা পরান পড়তেছে।
তাদের কথার উত্তরে ত্রিপিটক কিছু বলতেছেনা। সে উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।
হটাত সে গাছ থেকে লাফ দিয়ে পড়ল মাটিতে তারপর বলল চললাম বাই
কোথায় কোথায় ঘুটঘুট আর মিটমিট ও লাফ দিয়ে নিচে নামল।
বাচ্চা গুলোর কাছে।
তিনজনে দ্রুততার সাথে উড়তে উড়তে আসিফ এর বাসার দিকে আসতে লাগলো রাস্তায় অনেক কে অজ্ঞান করে।
আসিফ সাহেব এর বাসার কাছে পৌছে লাফ দিয়ে বারান্ধায় নামল। দেখল ছোট মনোয়ার সুন্দর একজন মেয়ের কোলে শুয়ে আছে।
তাদেরকে দেখা মাত্র মনোয়ার তালি দিয়ে উঠলো খুশিতে
ত্রিপিটক আঙ্কেল এসেছে কি মজা ত্রিপিটক আঙ্কেল এসেছে।
(পরবর্তিতে)