উপন্যাস ” অমর প্রেম ” পর্বঃ ৩
কে এই স্বয়ন ? পরিচয় জানলে হয়তো অনেকে বলবেন ,
এতো আকাশ কুসুম কল্পনা ।
স্বয়ন সাধারণ একজন কৃষক পরিবারের ছেলে ।স্বয়নের বাবা ছিল গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুরের একজন ধনাঢ্য কৃষক । ওদের ছিল দুইশ শতাধিক বিঘা জমি । স্বয়নের বাবাকে সবাই এক নামে চিনতো ।
তিস্তা নদী ভাঙ্গনের ফলে বর্তমান অবস্থা শোচনীয় । ভবিষ্যতে হয়তো উক্ত জমি চাষাবাদের উপযোগী হবে , তবু ও বিশ্বাস নেই ।
স্বয়নরা তিন ভাই কোন বোন নেই । মোট পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কোন ঝুট ঝামেলা নেই ,সুখি পরিবার বলা যায় । স্বয়ন সবার ছোট বড় ভাই আই এ পাশ মেজো ভাই মেট্রিক পাশ । নদী ভাঙ্গনের ফলে আর পড়া লেখার সুযোগ হয়নি । এমতাবস্থায় বড় ভাই আঃ মালেক ও মেজো ভাই আতাউর রহমান লিমন সংসার চালানোর ভার গ্রহণ করেন ।
ঢাকা শহরে এসে বড় ভাই চাকুরী পেল একটি বেকারীর ম্যানেজার পদে আর মেজো ভাই ঐ বেকারীর কারিগর । এখন দুই ভাইয়ের আয়ের টাকা দিয়ে সংসার ভালই চলছে । দুই ভাইয়ের উপার্জনে সমস্ত ভরণ পোষণ ও স্বয়নের পড়াশুনা বেশ চলছে । বড় ভাইয়ের বয়স ৩০ পেরিয়েছে তবুও বিয়ের চিন্তা করছেনা । তাদের একটি লক্ষ্য ও বুক ভরা আশা স্বয়নকে মানুষের মত মানুষ করবে । মা বাবারও ইচ্ছা স্বয়নকে বি .সি .এস. পাশ করাবে ,বানাবে সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা । স্বয়নদের তিন ভাইয়ের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক তা পৃথিবীতে অন্য ভাইদের মাঝে আছে কি না সন্দেহ । তিন ভাই এক সাথে গলাগলি করে হাঁটতো এতে অন্যদের হিংসা লাগত ।
একদিন তিন ভাই আমন্ত্রণে যাচ্ছে নানার বাড়িতে পায়ে হেঁটেই গাঁয়ের পথ যানবাহনের সুব্যবস্থা নেই । বর্ষাকাল আইলে রাস্তায় উপরে হাঁটু পানি জমেছে । স্বয়নের পায়ে সু জুতা থাকায় বড় ওকে জুতা খুলতে দেয়নি । পিঠে নিয়ে অর্ধ মাইল পথ অতিক্রম করল ।
এমন ক’জন ভাই আছে ?
সবাই স্বয়নকে নিয়ে যে আশার স্বপ্ন বুনছে ,ইনশাআল্লাহ তা পূরণ হবে । স্বয়ন দেখতে মনে হয় কোন মিনিস্টারের ছেলে ।
যেমন দেখতে তেমনি তার মেধা । বরাবরই ক্লাশে প্রথম স্থান দখল করে আসছে । এক মিনিটের তরে কোথায় প্রাইভেট পড়েনি । তথাপিও পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি আর অষ্টম শ্রেণিতেও । শুধু তাই না অষ্টম শ্রেণির মূল্যায়ন সমীক্ষায় উলিপুর উপজেলায় প্রথম স্থান দখলকারী এই ছেলেটি । তাই ওর সুনাম বহুদুর পর্যন্ত । শিক্ষকদের নিকট স্বয়ন ছিল অত্যন্ত প্রিয় ।
আসল যে ছাত্র পড়ালেখায় ভাল কেবল তারাই শিক্ষকদের মন জয় করতে পারে । স্বয়ন ছিল ক্লাস ক্যাপ্টেইন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে , আর দুই জন প্রতিদ্বন্দি ছিল তারা পরাজিত । স্কুলে প্রতি বৃহস্পতিবার হাফ প্রিয়ডের পর সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান হতো । হামদে এলাহী , কুরআন তিলাওয়াত , নাতে রাসূল ,ইসলামি সংগীত , কবিতা আবৃতি ও কৌতুক ছিল এ অনুষ্ঠানের কার্যাদি । সকল শিক্ষার্থীকে একটি কক্ষে সমবেত করানো আর পরিচালনা করার দায়িত্ব ছিল গোলাম মাওলা নামের একজন হুজুরের । কেহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকতে চাইলে , হুজুর তাকে চোরের মত মারে ।
প্রতি সপ্তাহে ঐ হুজুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পৌছিত প্রিন্সিপাল হুজুরের নিকট । যার ফলে প্রিন্সিপাল স্যার অনুষ্ঠান পরিচালনার ভার দিলেন স্বয়নের উপর । স্বয়ন তার মিষ্টি ভাষায় উপদেশমূলক বক্তব্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে পেরেছে । প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বয়নের সাফল্য অর্জনের ফলে শিক্ষক মন্ডলী স্বয়নকে অত্যান্ত ভালবাসত ।
অপর দিকে হল সাথী কেরাণী মাহফুজার রহমানের আদরের দুলালী । সেই সাথে উলিপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুকুল হাজীর ভাগিনী ও কুখ্যাত সন্ত্রাস বাদশা মিয়ার শালিকা । বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেকে হয়তো ভাববেন , স্বয়ন বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়িয়েছে কিংবা মাটি হয়ে আকাশ ধরতে চেয়েছেন ।এসব ধারণা সম্পূর্ণ ভুল । চাঁদ যদি নিজ ইচ্ছায় এসে ধরা দেয় বা আকাশ যদি মাটিতে নেমে আসে তাহলে বামন ও মাটির কি দোষ ? যাদের মনে ভালবাসা নেই , চিত্ত যাদের অহংকারে ভর্তি তারাই এমন ইতিবাচক চিন্তা করেন ।
ঐ সকল লোকদের সাথে চ্যালেন্জ করলাম , যদি দুটি মন বিনা সুতার বন্ধনে আবদ্ধ হয় । তাহলে কোন বাহ্যিক শক্তি আলাদা করতে পারবে না ।
এদিকে রবি নয়ন মেলে হাসছে , তার কিরণে পৃথিবী হিরকের ন্যায় জ্বলছে । সেদিকে কারও খেয়াল নেই , পলকহীনভাবে একে অপরের প্রতি তাকিয়ে আছে । বিথি উপহাস স্বরুপ বলল , অনেক ক্ষমা হয়েছে আর লাগবে না । কবেই বৃষ্টি থেমে রোদ উঠেছে ।
তাই তো ! চল বিথি , এক্ষুণি চল , সাথী চমকে উঠে বলল ।
এদিকে স্বয়ন বাড়িতে এসে হাত মুখ ধুয়ে খানা খেয়ে পড়ার টেবিলে বসতেই সাথীর কথা হৃদয়ে দোলা দিল । ওকে দেখার পর থেকেই পৃথিবীটা উল্টা-পাল্টা মনে হচ্ছে । পাঠে মন বসছে না বার বার আঁখির সামনে সাথীর চাঁদ মুখ খানি প্রতিফলিত হচ্ছে । ও যেন চিত্তের মাঝে গেথে গেছে ।
তা না হলে মন থেকে তার কল্পনা দূরীভূত হচ্ছে না কেন ? ভাবনার ভিন্ন জগতে ডুবে গিয়ে আপনা আপনি মুখ থেকে একটি নারীর কবিতা বের হলো ।
নারীর মাঝে দুঃখ নারীর মাঝেই সুখ
সব যাতনা হারিয়ে যায় হেরিলে তার মুখ
ওরা পাগল করে মন হতে প্রিয়জন
অনুরাগে সোহাগে পূর্ণ করে জীবন ।
ওরা বন্দি করে ভালবাসায়
কখনো সপ্ত নরকে ভাষায়
পারে হাসাতে কাঁদাতেও পারে
ঠাঁই দিয়েও রাখে হৃদয় পাজরে ।
ওরা রজনী গন্ধা সতরে দেখায় রুপ
সুবাসে মোহিত হয়ে মোরা দেই ডুব
ওরাই কিন্তু মরণের কারণ
কখনো দেখায় স্বর্গ ভুবন
থাকিলে প্রিয়ার প্রেম ভুলে যায় দুনিয়া
ভিন্ন জাহানে করে বাস তাহারে নিয়া ।
কবিতাটি শেষ হবার পূর্বে একটি এসে হাজির । এ ছেলেটির নাম জাহিদ স্বয়নের অন্তরঙ্গ বন্ধু । ছেলেটি বেশ সহজ-সরল বটে কিন্তু কুটনৈতিক বুদ্ধি সমপন্ন ।
ঠিক উকিলের কথার প্যাঁচ । কবিতা শুনেই থ । একি ? নারীর কবিতা স্বয়নের কন্ঠে ।
যে ছেলে কোন মেয়ের দিকে তাঁকায় না তার মুখে …..?
অনুমান করে বলল , কি দোস্ত আজ দেখছি তোকে খুশি খুশি লাগছে ।
ব্যাপারটা কি ? খুলে বল ।