Top today
ভুতের গলির সেই ভূত কি ফিরে এলো???
প্রথম পর্ব
রিকশা করে বাসায় আসতে আসতে রাশেদ ভাবছে এই এরিয়া র নাম ভুতের গলি কে রাখল, কেন রাখল l এখানে কি ভুতের উপদ্রব ছিল নাকি , রাশেদ এর খুব শখ ভুতের সাথে মোলাকাত করা l ভুতের গল্প, ভুতের সিনেমা এখনো তার খুব পছন্দ l সুযোগ পেলে সে ভুতের ছবি দেখতে বসে যায় এই বয়সে এসেও l রাশেদ দের বুয়ার দৃঢ় বিশ্বাস এখানে ভূত আছে, তাদের বাসায় যে আছে সে এটা আল্লাহ কিরা কেটে বলে l
রাশেদ শুনছে বুয়া বলছে “বুজলেন আম্মা ঐদিন রাত মনে হয় দুই টা তিনটা হইব, অনেক গরম পড়ছিল না, আমি বারান্দার দুয়ার বন্দ করি নাই কা, দেখি কি আম্মা ইয়া উলুম্বুশ মাথা ধরেন গিয়া ছাদ এ ঠেকছে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাই আছে l আমি তো ডরে আল্লাহ রাসুল এর দোহাই বইলা দৌড় দিয়া আপনার দরজার সামনে ঘুমাই রইলাম l আম্মা আমি কিন্তু কইলাম টিভি র রুম এ আর ঘুমাইতামনা, আপনার রুম এর মাটিতে ঘুমামু অখন থাইকা l
রাশেদ হেসে ঘর থেকে বের হয়ে আসল. বলল বুয়া এরপর ভূত বাবাজি র সাথে যদি দেখা হয় চুপি চুপি এসে আমাকে ডাক দিবে, কেমন? শব্দ করোনা কেমন.সে যদি আমার ভয়ে পালিয়ে যায়, কেননা তার ও তো জানের ভয় ডর আছে, সে অন্যর প্রপার্টি তে অনধিকার প্রবেশ করছে l
তুমি ভয় পেয়োনা, আমি ভুতের সাথে এক কাপ চা খাব, তারপর তাকে সসন্মানে চলে যেতে দিব
ভাইজান এর যে কি মস্করা, সব জিনিস নিয়া মস্করা করতে হয়না ভাইজান l
হাসতে হাসতে হাতের চা নিয়ে বারান্দার চেয়ার টাতে এসে বসলো.l হটাত করে একটা হুশ করে যেন শব্দ শুনলো রাশেদ l বুয়ার ভূত নাতো হাসতে হাসতে মনে মনে ভাবলো l সে মাথা যুকিয়ে নিচে দেখার চেষ্টা করলো l কোথা থেকে মনে হচ্ছে কুকুর কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে l মনে হচ্ছে কেউ যেন জোরে ছুটছে l
এই কে রে ? বলে রাশেদ জোরে চিত্কার করে পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলো l লোকটি মুখ তুলে উপরের দিকে তাকালো l রাশেদ আতকে উঠলো, কেমন একটা পশুর মত মুখ l
সে একটু ভয় পেলে তার বুদ্দি বিনাশ হয়নি, একটু পরে যুক্তি সহকারে বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ভান্তে আসল, কেউ একজন মুখোশ পরে দৌড়াচ্ছে l কিন্তু কেন? কি যে সুরু হলো, এই ভুতের গলিতে, মনে তো হচ্ছে সত্যিকার এর ভুতের আমদানি হয়েছে l কিছুদিন আগে বস্তির এক মেয়ে খুন হলো, তারপর দুইদিন পরে শুনলো পুলিশ এর মারামারিতে কে যেন মারা গেছে l ভুতের গলি র ভূত রা মনে হয় আমদের দেশের ভুতুড়ে পরিবেশ দেখে সবাই রে ভেংচি কাটার জন্য ফিরে আসছে l কিন্তু এ জিনিস টা কি সে রিপোর্ট করবে পুলিশ এ ? এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে এসে শুয়ে পড়ল l যাক কালকে কাজ নেই, শুক্রবার, একটু নিশ্চিন্ত মনে ঘুমানো যাবে l
কালকে মাকে নিয়ে মিউজিয়াম যাবে, এর পরে সংসদ ভবন এ ঘুরবে, তার পর সময় থাকলে মাকে নিয়ে শপিং করবে.l
ভাবতে ভাবতে একসময় সে ঘুমিয়ে পড়ল.
সকালে বুয়ার চেচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল l হড় বড় করে বুয়া যা বলল, ত়া হচ্ছে তাদের পাশের বিল্ডিং এ কালকে নাকি বিরাট ডাকাতি হয়েছে l দোতলা বাড়ি ওয়ালা র বাসা থেকে নাকি অনেক সোনা, ক্যাশ টাকা ছিল সব নিয়ে গেছে l
কি যে সুরু হইলো এখানে থাকতে ভয় করে রে বলল রাশেদ এর মা
বাংলাদেশ এর সব জায়গা এখন একরকম, মানুষ এর জীবন এর ই কোনো নিরাপত্তা নাই সেখানে সম্পদ এর কোথা চিন্তা করে আর কি লাভ বলে রাশেদ
চল মা আজকে সারাদিন এর প্রোগ্রাম তোমাকে নিয়ে l
কি করবি? সংসদ ভবন যাব, শপিং করব তোমার জন্য l
দূর ও আমার কি সেই বয়স আছে সংসদ ভবন এ ঘুরার, তুই আর তোর্ বউ ঘুরবি l বিয়ে কর, বউ নিয়ে ছবি তুলবি, আমি সেই ছবি দেখব.l
তার মা টা এমন করে কথা বলে যে রাশেদ এর মায়া লাগে l সে মায়ের সাথে অনেক ফ্রি
কি মেয়ে পছন্দ করছ নাকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো রাশেদ?
তোর্ হুমায়রা খালার কথা মনে আছে?
ঐযে ঘটকালি করে যে , যা ফাজিল কোথায় ঘটকালি করে, সবসময় তো শুনি পাত্রী র ছবি ওনার ব্যাগ এ থাকে l
তোর্ টেবিল এনভেলপ এ একটা মেয়ের ছবি আর বায়োডাটা আছে দেখ, আমার তো বেশ ভালো লাগছে l
রাশেদ এসে এনভেলপ খুলে ছবি বের করলো, দেখল, ভালই মন্দনা, প্রফেসন কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ার , ঠিকানা নিউজিলেন্ড, মা আর খালার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, এ মেয়ে তারে পছন্দ করবে কেন?
বিকাল এ বাহির থেকে আসার পথে বাসার সামনে যে দোকান সেখানে থেকে কিছু দরকারী জিনিস কিনার জন্য দাড়ালো l মা বলছে ডিম আর দুধ শেষ, কিনে টাকা দিয়ে মুখ ফিরতে দেখে একটা ছোট পাচ বছর এর মেয়ে তার প্যান্ট ধরে টানছে l
কে তুমি, কি চাও? রাশেদ জিজ্ঞাসা করলো খুব মায়াভরে l মেয়েটার ফেস টা একেবারে গুলগুলে খুব মায়া মায়া, এত ছোট মেয়ের মা বাবা ছাড়া এখানে কি করছে তাকাতে দেখতে পেল, একটা মেয়ে দৌড়ে আসছে তাদের দিকে l
অনুশকা মা তোমাকে বলেছি এভাবে একা একা বের হয়না বেবি
অনুশকা খুব জেদী আর রাগী স্বরে বলছে
ওহহ মা তুমি যে কিনা আমি তো বাবার জন্য দাড়িয়ে আছি , বলে ছোট হাতে রাশেদ এর হাত ধরে টানতে লাগলো l
অনুশকার মা মেয়েটি খুব বিব্রত বোধ করছে, সরি আপনি কিছু মনে করবেন না .
রাশেদ হেসে ফেলল না না এতে মনে করার কি আছে , ওর বাবা কোথায়?
ওর বাবা নেই , নেই মানি, কি মারা গিয়েছেন?
হু আস্তে আস্তে মাথা নাড়ে অনুশকার মা l
অনুশকা তার ছোট্ট পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করে জেদী স্বরে বলছে
মা তুমি মিথ্যে বলছ, আমি ড্রিম দেখেছি বাবাকে, বাবা আছে, বাবা আছে বারবার সে জেদী স্বরে এই কথা বলছে l
তার মা জোর করে রাশেদ এর হাত থেকে তাকে ছাড়িয়ে কোলে নিয়ে বাসার দিকে যেতে সুরু করলো.
বাচ্ছা টি একনাগাড়ে রাশেদ এর তাকিয়ে বলতে ই থাকে “বাবা আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও, বাবা আমি তোমার সাথে যাব l
বাচ্চা টা র জন্য রাশেদ এর মন মায়া আর বেদনায় ভরে গেল l
(পরবর্তিতে )