Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

স্বপ্নভঙ্গ…

: | : ০৮/১০/২০১৩

নিঃশব্দ নীরবতায় ক্রমশ গ্রাস করছে পৃথিবীকে। সমস্থ পৃথিবীর মানুষ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শুধু দু’ চোখে মিনুর। শত চেষ্টায় ব্যর্থ হয় নিদ্রাদেবীর কাছাকাছি যেতে সে। বাইরে বেরিয়ে বেলকোনিতে আসে মিনু। জ্যোৎস্নাস্নাত রাত,অদূরে ঝি ঝি পোকার ডাক। জোনাকির ক্ষীণ আলোয় এমুহুর্তে প্রকৃতিটাতে যেন ভিন্নতা এনে দিয়েছে। ইজি চেয়ারে বসে আকাশের বুকে ছড়িয়ে থাকা তারা এবং চাঁদের সাথে মেঘের হালকা আনাঘোনা দেখছে।
আজ বড় ক্লান্ত মিনু। আর কত!-পড়ালেখা শেষ করার পর ভালো একটা চাকুরী পেল। তারপর ছন্দময় জীবনের সিঁড়িতে যার সাথে প্রথমে ধাক্কা খেলো,যার হাতে প্রথম হাত রাখলো সে হাতের কলংকিত ছাপে আজ মিনুর জীবনের বাঁকে বাঁকে দুর্দশাগ্রস্থ। মিনুর সাদা মনে সেই হাতের কালো স্পর্শ মনে করিয়ে দেয় ঝরাপাতাদের দীর্ঘশ্বাস। বিষন্ন বিকেল,জীবনের রঙ্গমঞ্চে ভালোবাসার অভিনয়। বিশ্বাসের মূল্যে সেই ছোপ ছোপ দাগ কখনো মুচা যায় না। প্রথমত বন্ধুত্ব তারপর প্রেম শেষে বিয়ে করে মিনু আর শাহেদ।
নতুন সংসার। চাকরির সুবাদে মফস্বল শহরের এক বাড়িতে ভাড়া বাসায় ওঠেছে দুজন। সুন্দর করে নিপুন হাতে গড়ে তোলা সাজানো সংসার। রুমের প্রতিটি আসবাব,এবং কি রান্না ঘরের পাতিল পর্যন্ত বলে দেয় সুখ কাকে বলে।
বেঁচে থাকার ধারাবাহিকতায় মিনু সকালবেলা অফিসে যায় সন্ধ্যায় আসে। ঘরে ঢুকে দেখে শাহেদ বসে আছে তার জন্য। মুহুর্তে যেন মিনুর সারাদিনের ক্লান্তি মুছে যায়। পৃথিবীর সমস্থ সুখ যেন মিনুর হাতের মুঠোয়। এভাবে দীর্ঘ ছয় মাস চলতে লাগলো। এই ছয় মাসের মধ্যে এমন একটি দিন যায়নি মিনুর সংস্পর্শ ছাড়া শাহেদের একাকিত্ব। সত্যিই ভালোবাসার পসরা দিয়ে সাজিয়েছে মিনু সংসারকে।
প্রতিদিনকার নিয়মে রাতে দুজন খেয়ে ঘুমাতে গেল। শাহেদ বুকে টেনে নিলো মিনুকে তারপর আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো। মুহুর্তে ক্লান্তিতে দুজনার ঘূম চলে এলো। গভীর ঘুমে আছন্ন মিনু। হঠাৎ! কিসের আওয়াজে মিনুর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। হাত বাড়িয়ে দেখলো শাহেদ পাশে নেই। মিনু ভাবলো সে হয়তো টয়লেটে গেলো। অপেক্ষার পর অপেক্ষা। অনেক্ষণ অপেক্ষার পর মিনু বিছানা থেকে ওঠে বারান্দা আর টয়লেট খুঁজে শাহেদকে পেলোনা। মিনুর বুকটা ধক করে ওঠলো। তাহলে গেলো কোথায়? মনে মনে ভাবে পাশের রুমের আন্টিকে কি একবার ডাকবো। না থাক এতো রাতে আরো কিছুক্ষণ দেখি। চোখে পড়লো আন্টির রুমের দরজাটা আধো খোলা আধো বন্ধ! আবার মনে খটকা। এরকমতো কোনদিন হয়না। দরজা ধাক্কা দিতে দেখে শাহেদ ভিতরে। শাহেদ আন্টির সাথে…ছি ছি। মিনু ফিরে এলো রুমে স্তব্দ হয়ে বসে রইলো অনেকক্ষণ। তারপর বাসা থেকে বের হয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলো। রাত তখন তিনটা মিনু হাঁটতে লাগলো উদ্দেশ্যহীনভাবে। নিকষ অন্ধকারের নিশ্চুপ ক্ষণে বাতাসে ছেড়ে দিলো একবুক দীর্ঘশ্বাস। শাহেদের প্রতি ভালোবাসার সব দরজা বন্ধ করে দিলো। ঘৃণায়,ক্ষোভে, দুঃখে সহসা মনটা কেঁদে ওঠলো। তারপর পুরুষদের প্রতি তার একটা বাস্তব ঘৃণা জন্মালো,যার জ্বলন্ত প্রমাণ শাহেদ। মিনুর বিশ্বাসই হয়না শাহেদ এই কাজ করতে পারে। কিসের অভাবে শাহেদ আমাকে ছেড়ে দুই ছেলের মায়ের বিছানায় যায়। তাহলে এতদিনের সব সম্পর্ক কি ভুল ছিলো? প্রশ্ন মনের ভেতর বিধাতার প্রতি। আমার মন কাননে শাহেদ ভালোবাসার যে চারা রোপন করেছে তিলে তিলে সেটার যতœ নিলাম,বড় হলো পাতা গজালো আর শাহেদ নিজ হাতে তা উপড়ে ফেললো? কিন্তু শাহেদের সেই গাছের শিকড় যে আমার মনে অক্টোপাসের মত ছেয়ে গেছে তার কি হবে?
এরপর থেকে মিনু চলে আসলো শাহেদের সীমানার অনেক বাইরে। মিনু শাহেদের মুখোমুখি হতে চায় না। তাকে জিজ্ঞাসা করতে চায় না শাহেদ ওই রাতে আমি কি ভুল দেখেছিলাম? না কিচ্ছু জানতে চায় না মিনু। মিনু শুধু জানে তার বিশুদ্ধ ভালোবাসার অবমাননা করেছে শাহেদ। ছোট্ট একটা চাকুরী নিয়ে মিনু কাটিয়ে দিচ্ছে বাকীটা পথ। না সে আর বিয়ে করবে না। ছয় মাস সংসার করে সে আজ বড় ক্লান্ত। মিনু আর চায়  না তার এই বুকে আর কোন পুরুষের ছোঁয়া লাগুক। এই বিষয়ে স্বজনরা, বন্ধু-বান্ধবীরা কেউ আর মিনুকে রাজী করাতে পারেনি। রোজ নয়টা থেকে ছয়টা এই সময়টা বড্ড ব্যস্ত রাখে সে নিজেকে। তারপর আসে রাত, একেকটা কষ্টের রাত। নিদ্রা দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে করতে  কখনো কাটিয়ে দেয় নির্ঘুম রাত। কখনো বা বেলকোনিতে ইজি চেয়ারে জীবনের অংক মিলাতে গিয়ে বার বার মর্মাহত হয়। ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ কেঁদে ওঠে চিৎকার করে। মিনুর সকাল,দুপুর,সন্ধ্যা, কিছুই ভালো লাগে না। বড্ড বেশী ভালো নেই রাতের এই সময়টাতে। আমি কি বেঁচে আছি ভাবতে মিনু আশ্চর্য হয়। বরং সেই বেঁচে থাকার বিষাদের মেঘ ছেয়ে আছে তার আকাশ জুড়ে। আকাশ,চন্দ্র,সূর্য,পৃথিবীর মতো সব সত্যি জেনেও শাহেদ আমি কেন হেরে গেলাম? হয়তো বা তোমার ওই নোংরামী, নষ্টামী আচরণকে প্রশ্রয় দেইনি বলে। যে স্বামী নিজের বিছানায় বউ রেখে অন্যের বিছানায় রাত কাটাতে পারে তাকে কি কখনো প্রশ্রয় দেয়া যায়?
ঝরে যাওয়া পাতাদের আওয়াজ শুনার পর আজ দশ বছর হতে চললো মিনুর একাকী জীবনের। তার সমাজ,তার ভাবনা, তার জীবন সব অন্য রকম। এই দশটা বছর মিনুর জীবন থেকে অতীত হয়ে গেছে। রাঙ্গা এজীবন ভালোবাসার নির্মম কষাঘাতে জর্জারিত,আহত নীল কষ্টেরা।
আজ মিনু কাঁদে কারো ভালোবাসা দেখলে। নিজের মনকে শাসন করে। এভাবে সময় ভয়ে যায়। ঘড়ির কাঁটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে কেবল মনের মনিকোঠায় জমা হয় মিনুর কিছু দুঃসহ স্মৃতি। শাহেদের জীবনে হয়তো সেই স্মৃতিগুলো পড়ে আছে ওল্টানো ক্যালেন্ডারে মতো। যা শাহেদকে কখনো ভাবাবেনা।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top