অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে করণীয়
গতকাল গাজীপুররে শ্রীপুর উপজেলার বেরাইদেরচালা এলাকায় পলমল গ্রুপের আসওয়াদ কম্পোজি মিলসে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে। এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় দীর্ঘ ১২ঘন্টা চেষ্টা করতে হয়েছে এ জাতিকে। ইতিমধ্যে আমরা দশজনের মৃত্যু খবর পেয়েছি। যা জাতির জন্য আরেকটি বেদনাদায়ক অধ্যায়। কিছুদিন পর পরই আমাদের দেশে বিভিন্ন মিল কারখানায় আগুন লাগে। কিন্তু এর প্রতিরোধে কোন সরকারই প্রয়োজন তেমন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তবে আমরা যদি নিজেরা সচেতন হয় তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও অগ্নিপ্রতিরোধ করতে পারি। নিম্নে অগ্নিপ্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
১. বৈদ্যুতিক তার ত্রুটিমুক্ত কি না মাঝে মাঝে পরীক্ষা করুন।
২. ইস্ত্রিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ রেখে কখনো সরে যাবেন না।
৩. খোলা বাতির ব্যবহার বন্ধ রাখুন।
৪. রান্না করার পর চুলা নিভিয়ে রাখুন।
৫. অকারণে একটা ম্যাচের কাঠি বাঁচানোর জন্য গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখবেন না।
৬. বাড়ি-ঘর, কল-কারখানা, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপনী যন্ত্র স্থাপন করুন।
৭. ধূমপান করার পর সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ নিভিয়ে নিরাপদ স্থানে ফেলুন।
৮. ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে আগুনের কাছ থেকে দূরে রাখুন।
৯. প্রতিটি শিল্প কারখানায় ফায়ার সার্ভিস অধ্যাদেশের বিধান মতে ওয়ার হাউজ, ওয়ার্কশপ লাইসেন্স নিশ্চিত করুন।
১০. বিয়ারিং ও অন্যান্য চলমান যন্ত্রাংশ নিয়মিত লুব্রিকেন্ট দিন।
১১. অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
১২. রান্না ঘরের মুলি ও বাঁশের বেড়ার উপর মাটির প্রলেপ দিন।
১৩. মিল কারখানায় ধূমপান বর্জন করুন।
১৪. একান্ত বাধ্য না হলে গ্যাসের চুলায় জামা কাপড় শুকাবেন না।
১৫. শিল্পকারখানা ও বাড়ি-ঘরের সামনে সব সময় পর্যাপ্ত পানি রাখুন।
১৬. স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন থেকে অগ্নি নির্বাপনী ও প্রতিরোধ সর্ম্পকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন।
১৭. অগ্নি নির্বাপণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলুন।
১৮. নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টেলিফোন নম্বর নিজ দায়িত্বে সংগ্রহ করুন।
১৯. অগ্নিকান্ড ঘটার সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিন।
২০. কয়েল বিছানা থেকে দূরে রাখুন।
২১. মশারীর নিকট মোম বাতি বা কুপি রাখবেন না।
মনে রাখবেন আগুন আমাদের বন্ধু। কারণ আগুন আবিষ্কারের ফলে খাদ্য দ্রব্য রান্না করে খেতে পারছি। তা না হলে আদিম সমাজের মত আমাদেরকে কাঁচা খেতে হত। বিদ্যুৎ ও এক প্রকার আগুন। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে আজ আমরা আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছি। আধুনিক সভ্য ও উন্নত জীবনে সর্বক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা আমরা অনুভব করে থাকি। শহরের চেয়ে আমাদের দৈনন্দিন গ্রামীণ জীবনে বিদ্যুতের ব্যবহার কম হলেও বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো, ধান ভাঙানোর মেশিন চালানো, পানি সেচের মেশিন চালানো, টিভি, টেপ রেকর্ডার বাজানো, বৈদ্যুতিক হিটার, ইস্ত্রী চালানো, কম্পিউটার চালানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবহার অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কলকারখানা চালানো, গাড়ী চালানো ও চিকিৎসা ক্ষেত্রেও বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। এই বিদ্যুৎ বা আগুন আমাদেরকে যেভাবে বন্ধুর মতো সেবা দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই বন্ধুই একদিন হয়তো আপনার শত্রু হয়ে যেতে পারে যা অস্বাভাবিকের কিছু নয়। তাই এই প্রয়োজনীয় বন্ধুকে সব সময় বন্ধুর মত আগলে রাখতে হবে। এই বন্ধু যাতে শত্রু না হয় সেদিকে সকলকে নজর রাখতে হবে।
পরিশেষে বলব, আমরা সবাই যদি অগ্নি প্রতিরোধে সচেতন হই তাহলে এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ড থেকে আমাদের জানমালকে নিরাপদে রাখতে পারবো।