উপন্যাস ” অমর প্রেম ” পর্বঃ ৪
স্বয়ন বলল , কই ?
কোন বিয়ে সাধী নেই যে ব্যাপার ট্যাপার থাকবে ।
স্বয়ন বিষয়টা গোপন রাখতে চাচ্ছে । জাহিদের কাছে এ চালাকি পার পেল না সরাসরি বলে ফেলল ,
নিশ্চই কোন কারো মনের খাঁচায় বন্দি হয়েছ ।
ভেবেছ আমি জানি না ?
শোন দোস্ত তোর এটা ভুল ধারণা , স্বয়ন উত্তর দিল ।
দোস্ত তোর পরিবর্তন হলো না , মনের কথা মনে গোপন রাখিস ।
তোর মনে হয় আমি খোকা বাবু ফিটার খাচ্ছি । কিছুই বুঝিনা , তাই না ?
প্রেমের কবিতা জোর গলায় আবৃতি করছিস আর আমাকে বলতেই লজ্জা ।
ঠিক আছে , আমি মাইকিন করে দিব কিন্তু ? স্বয়ন আর না বলে পারল না । সার সংক্ষেপে বলল জাহিদকে ।শর্ত বেধে দিয়ে বলল , অনুরোধ কাউকে বলবি না । দোস্ত আমি কিন্তু সাথীকে …., কিন্তু সে আমাকে …..জানি না ।
আমি যদি শুধু এক তরফা ভালবেসে যাই । আর সে যদি আমাকে অপছন্দ করে তবে পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় অপমান , কষ্ট ও জ্বালা কি হতে পারে ?
তাই অন্যকে বলা মোটেও ঠিক হবে না ।
জাহিদ উত্তর দিল , খোদার কসম মুখে সুপার গুলু লাগালাম যতদিন সাকসেস না হবে ততদিন মশা মাছিও জানবে না ।
এখন তো ফেরেস্তার ন্যায় বলছিস পরে দেখা যাবে , স্বয়ন উত্তর দিল ।
স্বয়ন তুই আমাকে এখনও চিনতে পারিসনি তোর মত বন্ধুর জন্য জীবন বাজি রাখতে পারি ।
কোন চিন্তা করনা ,হায় প্রেমিক দোস্ত এখন তবে আসি ।
এদিকে সাথীর মনে একই কল্পনা রাত প্রায় বারটা পড়ার টেবিলে বসেই আছে । পড়াশুনায় কিছুতেই মনযোগ হচ্ছে না দু চোখে ভাসছে প্রেমের পুরুষের ছবি ।
অনেকে বলে থাকেন মেয়েরা ছেলেদের দিকে তাঁকায় না । এটা পুরো ঠিক নয় ,ওরা এমনভাবে তাঁকায় যাতে কেউ বুঝতে না পারে । ঠিক যেন পানিতে ডুবে পানি খাওয়ার ন্যায় । সাথীও ভাবছে স্বয়ন একটি অদ্বিতীয় ছেলে । স্বয়ন মধ্যম দেহ বিশিষ্ট পরিষ্কার ফর্সা একটি ছেলে । ওকে যদি পেতাম তাহলে জীবনটা ধন্য হতো । সাথী আনমনে বলল ,
একি ? হৃদয়ের অজান্তে ওকে ভালবেসে ফেললাম ।
কিন্তু ও যদি আমাকে প্রত্যাখান করে , তবে কি হবে ?
এ রকম বিভিন্ন ভাবনার মাঝে সেদিন পড়ালেখার ইতি ঘটল । অতঃপর লাইটের সুইচ অফ করে ঘুমিয়ে পড়ল । নিশির মাঝ পথে স্বপ্নে স্বয়নের সাথে সুখের বাসর হলো , সুখের দৈহিক মিলন ঘটল ।
ঘুম ভেঙ্গে দেখল , স্বয়ন পালিয়ে গেছে বুকের মাঝে ঘুমিয়ে আছে একটি কোল বালিশ । সাথী একটি লম্বা শ্বাস ফেলে ভাবল , স্বপ্নটি সত্যি হলে আমি ধন্য হতাম । কিছুক্ষণ পর মুয়াযযিনের কন্ঠের ধ্বনি ভেসে এলো কর্ণ কুহুরে ।
আর ঘুম এলো না । তারপর দাঁত ব্রাশ করে নাস্তা সেরে পড়ার টেবিলে বসল ।
কি আশ্চার্য ! বইয়ের প্রত্যেকটি পাতায় পাতায় স্বয়নের ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে । সাথী কোমল স্বরে বলল ,
এই দুষ্ট ছেলে তুমি আমার বইয়ের ভিতরে কেন ?
রান্না ঘর থেকে সুলতানা রহমান ডাকছে ,
সাথী খানা রেডি করছি খেয়ে যা ।
সাথী গোসল সেরে খানা শেষে স্কুলের দিকে রহনা দিল । গাঁয়ের ভেতর দিয়ে রাস্তা এঁকেবেকে চলে গেছে । কাঁচা রাস্তা তবুও মাল বোঝাই ট্রাক , বাস , টেক্সি , রিক্সা , ভ্যান বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি দৈনিক চলে এ রাস্তায় । পথের বাম পার্শ্ব দিয়ে পিপিলিকার ন্যায় পিল পিল নিঃশব্দে হেঁটে চলছে সাথী । কিছু দূর সামনে গিয়ে সাক্ষাত জুটলো বিথির । এখন আনন্দের সহিত খোশ গল্পে এগিয়ে অচ্ছে দু বান্ধবী । গল্পের মাঝে হঠাত্ করে সাথী জিজ্ঞাস করল ,
গতকাল বৃষ্টিতে যে ছেলেটার সাথে দেখা হয়েছিল , তুই ওকে চিনিস ?
বারে রে চিনবো না কেন ?
ও তো আমাদের স্কুলের ছাত্র । এ কথা শুনে সাথী মনে খুশির তরঙ্গ দোলা দিচ্ছে । বিথি আরও বলল ,
জানিস সাথী ? ও অত্যান্ত মেধাবী ছাত্র ক্লাস ফাইভ ও এইটে বৃত্তি পেয়েছে ।
সাথী আনন্দ পূর্ণ চিত্ত বলল ,
আর প্রশংসা করতে হবে না । কোন ক্লাসে পড়ে সেটাই বল ।
নবম শ্রেণিতে পড়ে , বিথি উত্তর দিল ।