কাল আমার বিয়ে
কাল আমার বিয়ে
– মো: ওবায়দুল ইসলাম।
আমার চাচি খুব বদ মেজাজি। কেউ তার সামনে সত্য কথাটিও বলতে সাহস না।
খুব সকালে আমার থাকা খুপরি ঘরটিতে ফোন করল।
চাচি বলল “কে?”
আমি বললাম “কাকি , আসসালামু আলাইকুম। কাকি , আমি আকাশ। ”
” ও তুই, শোন আগামি কাল তোর বিয়ে। ”
আমি আর সাহস করে জিজ্ঞাস করতে পারলাম না যে, কার সাথে বিয়ে? এটুকু ভাবতে ভাবতেই চাচি বলে ফেলল,
” কি তুই রাজি তো ?”
“হ্যা । ” আমি বললাম।না বলার তো কোন জো নাই।
” তাহলে তো মেয়ে দেখা, বাজার করা এগুলো সারতে হয়। ”
“এগুলো তুমিই সার,কাকি । ”
” তুই কি গাদা নাকি ? বাজার আমি সারলাম কিন্তু মেয়ে কে দেখবে? ”
” আমার বিয়ে ঠিক যখন একাই করেছ , মেয়ে ও তুমি ই দেখো। ”
“একা ঠিক করেছি মানে? আমি কি তোর ভাল চাই না। তোর বাবা মা মারা যাওয়ার পার মরা আমার উপর রেখে গেল । সে থেকে আমিই তোকে দেখে রাখছি আর তুই কিনা —— এত বড় —-। ” অগ্নি কন্ঠে চাচি বলল।
” কাকি তুমি রাগ করছ ক্যানো? তুমি ভালো চাইবে না তো কে চাইবে । তুমি ছাড়া আমার কি আর কেউ আছে? আমিতো তোমার সাথে একটু দুষ্টামি করছি । ”
“তাহলে তুই বিকেলে মেয়ে দেখে আয়। ”
” আমার মেয়ে দেখে লাভ কি, আমি তো বিয়েতে রাজি। তারচে মেয়েই আমাকে দেখে যাক। ”
চাচি বলল ” তা কিভাবে হয় ?”
” কা – কি , তুমি তো দেখি কিছু বোঝ না। মেয়ে তার কয়েক জন বান্ধবি নিয়ে আমাকে দেখতে এল, আমি মাথা নিচু করে বসে থাকলাম । তারা আমাকে প্রশ্ন করল। আমি যদি পাশ করি , তাহলে তারা আমাকে খুশি হয়ে পাচশ টাকার একটা নোট বা অন্য কিছু দিল এবং বিয়ে হল। ”
” যদি পাশ না করিস –| ”
” কি যে বল। তুমি নিশ্চিত থাক , আমি পাশ করবই । বোকা ছেলেরা মেয়ে পটাতে ওস্তাত। ভেবে দেখ, ব্যপারর্টা কেমন হবে? ”
চাচি রাজি হয়ে গেল।
আমাকে বলল ” তুই ভাল জামা কাপড় পরে থাকিস। ওদের বলব যাতে তিনটার ভেতর আসে। ”
” জোর হুকুম কাকি জান । ”
আমি আমার খুপরি ঘরটি পরিষ্কার করতে শুরু করলাম। এক টা মুড়ির কৌটায় কবে যে ইদুর পড়ে মরে রয়েছে, তাও জানি না। অথচ গত রাতেও মুড়ি খেলাম। এত বড় একটা ইদুর আমার হাতের ফাক দিয়ে বের হয়ে গেল ! পরিষ্কার করতে গিয়ে দুর্গন্ধে আমার ঘরটি ভরে গেল। শত চেষ্টা করে ও তা দূর করা গেল না।
কি পোষাক পড়ব ভাবছি। গেল দশ বছরে কোন নতুন জামা পড়েছি বলে মনে পড়ে না। অনেক খুজে একটা পাওয়া গেল। যেটা অন্তত সাত বছর বয়স। অনেক দাগ। তবে আশার কথা হল, দাগ গুলো একটা ছন্দ আছে। হঠাত করে বোঝা যায় না।
পাত্রী স্বদর্পে , সংগিনীদের নিয়ে যথা সময় হাজির। এতটা পার্ফিউম ব্যবহার করেছে যে, আমার ঘরে মরা ইদুরের গন্ধ পরাজিত হল।
মনে মনে বেজায় খুশি হলাম।
আমি মাথা নত করে বসে রইলাম আগন্তুকদের সামনে। তাদের এক জন বলল,
“ভাই মাথা তুলুন, এ রকম মাথা নত করে রাখলে আমরা কি দেখব? ”
আমি মাথা তুলে তাকালাম। My heart is sank. মনে খুব কষ্ট লাগল, বুঝতে পারলাম পাত্রী কিছুটা কাপড়ের অভাবে ভুগছে। যা ছোট ছোট পোষাক!
এবার আমার ইন্টাভিউ শুরু হল।
একজন জিজ্ঞাস করল,
” আপনার নাম কি?
“আকাশ। ”
আরেক জন , ” নাম টি বিষয় বলুন। ”
” বাবা মা তো অনেক আগে মারা গেছে, তবে আমার এক খালার সাথে বাবার খুব ভাব ছিল, তার মুখে শুনেছি – বাবার কবি কবি ভাব ছিল। তার ধরনা, ছেলের নাম আকাশ রাখলে – ছেলে আকাশে মত উদর হবে। তাই আমার নাম আকাশ রেখেছেন। ”
” লেখা পড়া ? ”
আমি বললাম –
” ডাক্তার – ইঞ্জিনিয়ার – উকিল থেকে শুরু করে মুচি পর্যন্ত আমার লেখা পড়া। ”
হবু বধু অবাক হয়ে বলল –
” মানে ? ”
” মানে হল – কারও জ্বর হলে যেমন নাপা খেতে বলি , আবার কখন বিনা ওয়ারেন্টে পুলিশ কাউকে ধরতে পারে তা জানি, আবার জুতা সেলাইও জানি , সে অর্থে আর কি! ”
এবার হবু বধু বলল, ” তা আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন যে , খাওয়াবেন কি? ”
” আমি তো আপনাকে বিয়ে করতে চাচ্ছিনা। কাকিই আমাকে আপনার ঘাড়ে উঠিয়ে দিচ্ছেন । ”
“কেন তা কেন ?”
” ওনার বহু বিবাহের সখ আছে তো , তাই আমাকে বিয়ে দিয়ে ওনার সাধ মেটাচ্ছেন ”
” এবার কাজের কথায় আশা যাক, আমাকে সপ্তায় দুই দিন চাইনিজ খাওয়াতে হবে, মাসে চারবার বসুন্ধারায় নিয়ে কেনা কাটা করতে হবে, পারবেন তো ? ”
এবার মনে হল – আমার হার্ট এ্যটাক হবে। তারপর ও বুক টান টান করে বললাম –
” দেখুন চাইনিজ তো খাওয়া যাবেনা, তবে চাইনিজদের খাবার খাওয়া যাবে। ”
আমার হবু বধুর সংঙ্গীরা ঠিক ঠিক বলে চেচিয়ে উঠল। আমি আস্থত হলাম – আমার সাপোটার পাওয়া গেল। আমি আবার বললাম –
” টাকা যদি শশুর বাড়ি থেকে আসে তবে সপ্তাহে দু দিন কেন সাত দিন খাওয়াতে আমার আপত্তি নাই।সাথে আমি খাব ফাও। তাছাড়া আপনার মত সুন্দরী সাথে এক সাথে বসে খেতে দুনিয়ার সব চেয়ে পাগল ও পাগল । আর আমি তো দূরের কথা। আর কেনা কাটাও ওই একই ভাবে যাবে। জীবনে বহু বার চেষ্টা করেও বসুন্ধরায় ডুকতে পারি নি। আমার পোষাক দেখে ওখানের লোকজন আমাকে হিরুইনসি মনে করেছে। আপনার মত সুন্দরী সাথে থাকলে ওরা স্যার বলে অতি আদরে ডুকাবে। ”
হবু বধুর এক সঙ্গিনী বলল – ” আপনি তো দেখছে খুব মজার লোক । ”
অন্য একজন বলল – “তাহলে তো আপনাকে তো ঘর জামাই থাকতে হবে। ”
আমি বললাম ” তাহলে কি আপনারা ঘর বধু থাকতে এসেছেন ? এ ঘরে থাকতে হবে । দেখুন ঘরটি পছন্দ হয় কি না? ”
হবু বধু এমন ভাবে মুখ বাকাঁ করল তাতে বোঝা গেল যে, আসন্ন কষ্টে সে এখনই কাতরাচ্ছে।
এবার আমার মেহমানরা বললেন –
” আজ তবে উঠি । ”
আমি বললাম –
“সে কি , আমাকে দেখা শেষ ? ”
” জি। ”
“তা আমি কি পাশ করেছি ? ”
হবু বধু হাসলেন। বললেন –
“পরে টের পাবেন। ”
মেহমান যাওয়ার পার একটা স্বস্তির নি:শ্বাস ছাড়লাম।
রাতে চাচি ফোন করলেন । বললেন –
” মেয়েরা তো তোকে পছন্দ করেছে। ”
“কাকি , তুমি আর যাই বল সবাইকে বিয়ে করতে বলো না। সবাই যদি আমাকে পছন্দ করে তাতে আমার দোষ কি! ”
” তুই একটা গাধা । ”
“তা যা বলেছ, খারাপ বলনি। ”
” শোন, মেয়ে তার মোবাইল নম্বর দিয়েছে। তুই তার সাথে কথা বল। ও তোকে খুব পছন্দ করেছে। ”
“কাকি , সমস্যা যা হয়েছে তা হল, আমার মোবাইলেও টাকা নাই। ”
“তোকে নিয়ে —— । যাক টাকা দিচ্ছি। কথা বল। ”
কাকি টাকা দিল। মোবাইলে টাকা পেয়ে আমার হবু বধুকে কল করলাম।
কল টা আমিই করলাম।
“হ্যালো, কে? ”
চিকন সুরে , মায়াবি কন্ঠে বলল –
” আমি সারমিন সুলতানা, আপনি কে? ”
দেখে তাকে যতটা আশাহত হয়ে ছিলাম, কথা শুনে ততগুন মুগ্ধ হলাম। বললাম –
” আমি আকাশ। ”
গাড়ির বেগে কথা চলল কিছুক্ষন। আমিই ফোনটা রাখলাম ব্যস্ত বলে।
তার পর বুঝলাম প্রত্যেক ব্যাক্তি সে তার নিজ গুনে বিকাশিত হয়। পাগল ও তার নিজ গুনে পাগল হয়।
হবু বধু যে ঐশ্বর্য বহন করে আছে তা যে তার নিজ গুনে তা বুঝতে বাকি রইল না।
রাত গেল প্রেমে পড়তে পড়তে।
ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল দশ টা। চাচির ফোন, বজ্র কন্ঠে বলল – “তুই কি এখনো বাসায় । ”
“জি ”
” গাধা কোথাকার ”
” কাকি , আর গাধা বলনা। আজ আমার বিয়ে, কাল বাবা হব, সন্তানে সামনে বসে গাধা গাধা করে ডাকলে, ওরা বাবা না বলে আমাকে আবার গাধা বলে ডাকবে। ”
” তুই আবার সন্তান পেলি কোথায় ? ”
” বউ যেমন নিজ ইচ্ছা ছাড়াই আসছে, বাচ্ছাও তেমনি আমার ইচ্ছা ছাড়া কাল চলে আসবেনা তা কেমন করে বলি। ”
” প্যাচাল না পাড়ে , আমার বাসায় চলে আয়। মার্কেট করতে হবে না ? ”
যথা সময় আমার বিয়ে হল শশুর বাড়িতে বসে, আমার কুড়ে ঘরে নয়। শশুর বাড়িতে অনেক খাওয়া দাওয়া। একা একা খাচ্ছি। খাওয়ার শেষে দেখলাম পানি নেই , কাউকে ডাকলাম ও না। সোজা চলে গেলাম শশুর বাড়ির বাসর ঘরে। বউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম বউ সেজে। ওদিকে আমার হাবলু মার্কা চেহারা নিয়ে সবাই হাসাহাসি করছিল, তা শুনে আরো চুপসে গেলাম। ভাবলাম চেহারা সুদর্শন হলে হয়তো আমাকে কেউ মনে করতো না। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।
ঘন্টাখানেক পর বউ স্বামী বেসে বীরদর্পে বাসর ঘরে ডুকল। পরনের শাড়ি দেখিয়ে চোখ বড় বড় সিংহী কন্ঠে বলল –
“এ শাড়িটা কে কিনেছে ? ”
” আমি। ” ভয়ে ভয়ে বললাম।
“এ রকম শাড়ি দিয়ে আমাদের ঘর ও মুছা হয় না। ”
আমি আস্তে করে বললাম ” তাহলে তুমি ওটা দিয়ে ত্যানা বানিও। ”
অমনি বউ হুংকার ছেড়ে আমার জামার কলার ধরে খাট থেকে নিচে ফেলে দিল।
আমার ঘুম ভেঙে গেল। দেখলাম আমি খাটের নীচে। হুম হুম শব্দ বের হতে থাকল। ম্যাচের অন্য রুম মেম্বররা আমার মুখ থেকে কাথা টেনে বের করল। বলল –
” খাটের নীচে কেন ? ”
আমি বললাম –
” বউর হাতের মার খাচ্ছিলাম। ”
ওরা আবার জিজ্ঞাস করল –
” কাথা মুখের ভেতর কেন? ”
আমি বললাম – শশুর বাড়ি মজার মজার খাবার খাচ্ছিলাম । ”
ওরা সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
ম্যাচ বাসা , ফকিরাপুল।
২৫/০৭/২০১৩।