Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

বৃষ্টি মানেই প্রেমে পড়া

: | : ১৩/১০/২০১৩

1

ভালবাসা আর তার চাহিদা সব ঋতুতেই এই শহর আর তার মানুষকে ঘিরে রাখে; তাহলে ঝরঝর মুখর বাদল দিনে বিশেষ করে কেন জোয়ার আসে মনে? আকাশ ছেয়ে বৃষ্টি নামলেই কেন এই শহরের কবির কলম বলে, ‘বুকের মধ্যে বৃষ্টি নামে নৌকা টলমল’? অঝোর বারিধারা কি বিরামহীন ভালবাসার সুযোগ জোগায় এই শহরে? উত্তরটা যেমনই হোক, এই শহর আর তার আষাঢ়-শ্রাবণ বারে বারে ভালবাসার কথাই মনে করিয়েছে। এ কথাটা যেমন সত্য সেকালে, তেমনই একালেও। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একদিন শহর থেকে দূরে কোথায় দূরে দূরে একলা হয়ে বাদলদিনে হাতে তুলে নিয়েছিলেন ‘মেঘদূত’ কাব্য। সেই মেঘদূত, যেখানে আকাশে বর্ষার মেঘ দেখেই বিরহী যক্ষের মনে পড়ে গিয়েছিল প্রেয়সীর কথা। তারপরে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর; ঢাকা কিন্তু রয়েছে ঢাকাতেই। এখনও শহরের বুকে বৃষ্টি নামলে ভালবাসা নিশির ডাকের মতো তাড়িয়ে ফেরে; ঝড়জলের তোয়াক্কা না-করে হাতে হাত ধরে অভিসারে যায় যুগলেরা! ঠিক যেমনটা হয়েছে রুকসানার। বৃষ্টি তাকে ভালবাসার ডাক দিয়েছে!

শহরের প্রেমে আর পাঁচজন যেমন অহরহ মজে থাকে, ঠিক তেমনই রুকসানাও মজছিল- না, এখনও সে মজছে! এই বর্ষার ওর মনের নিলয়-অলিন্দে যেন শুধুই বৃষ্টিসুধার ছাট ভালবাসা হয়ে ধরা দিয়েছে। রুকসানা জানাচ্ছিল, রাজারহাটের একলা অথচ দরাজ ফ্লাইওভারের পাশ দিয়ে আক্রমের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময়ে নারকেল গাছের সারির সঙ্গে চোখাচুখিতে কথা সারছিল যখন ও, ঠিক সেই সময়ই ঝড়ের বেগে চলতে থাকা ট্যাক্সির জানলা দিয়ে সামান্য বেরিয়ে থাকা ওর হাতে একটা ফোঁটা পড়ল- ‘টুপ’! ‘বৃষ্টির মধ্যে ডেটিং-এর একটা আলাদা মজা আছে; ঠিক এটাই আমি চাইছিলাম। কালো করে আসা ডাকাতিয়া আকাশে তখন কোন সুরাসুরের যুদ্ধ লাগতে চলেছে, তা জানা না থাকলেও একটু পরেই যে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না আমার! বৃষ্টির মধ্যেই তো সবার চোখের সামনে মনের মানুষের হাত ধরে ভেজা যায়’, হাসতে হাসতে অকপটে নিজের বর্ষাপ্রেমের কথা জানাল মেয়ে।

আবার রুকসানার মতোই অঝোরধারার দিনে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসে সাগ্নিক। বৃষ্টির মুখে মনের মেমোরি কার্ডে অনেকটা সময় রিক্যাপ করে ফেলে তাই সাগ্নিক। আর জানায়, ‘প্রেমের আবেগের অথবা সোহাগের সঙ্গে আমার জীবনে এই বর্ষাপ্রীতি যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে- প্রথমবার ডেটে গিয়েছিলামও এক বাদল দিনেই। তখন আমি স্কুলে পড়ি। সেই স্কুল জীবনের ইচ্ছাকৃত বৃষ্টিভেজা, ছাতা ভুলে আসার বাহানা আর জমা জলে ছলাৎ-ছলাৎ করে জুতো-মোজার সঙ্গে মন ভিজিয়ে ভালবাসার পরশ নিয়ে বাড়ি ফেরা- কখনও ভোলা যায়? আর কোথাও যাওয়ার না-থাকলে বৃষ্টি-ঝমঝম ছাদে এক ছুটে উঠে কাক ভেজা ভিজলেই ভালবাসা ভিড় করে আসে’!

তবে শুধুই রুকসানা বা সাগ্নিক নয়, আসলে বৃষ্টির প্রেমে অহরহ হাবুডুবু খেতে থাকে অনেকেই। বয়স্ক যাঁরা, তাঁদের বৃষ্টি ঘিরে উচ্ছ্বাস হয়তো কম; কিন্তু বৃষ্টি নিয়ে ভালবাসা তাঁদের মনে একটুও কম নেই। সেই তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই বাদলদিনে পথে চোখে পড়ে বেশি অল্পবয়সীরাই। খর রোদের দিনে শহরের নানান উদ্যানে তারা ভিড় জমালেও বৃষ্টিবেলায় অনেকেই পথে নামতে পছন্দ করে। অথবা তারা চলে যায় নদীর ধারে। শহরের এক অধ্যাপিকা অভিষিক্তা মুখোপাধ্যায়ের কথায় প্রমাণ মিলল তার, ‘বৃষ্টি পড়লেই আমার প্রিয় মানুষটার হাত ধরে নদী দেখতে ইচ্ছে করে! সব সময় তো আর সেটা হয় না, তখন আমি একা একাই ড্রাইভ করে চলে যাই প্রিন্সেপ ঘাটে। এক ভাঁড় চা নিয়ে দেখি জলের বুকে জলের খেলা! কখনও-সখনও অকাদেমি অফ ফাইন আর্টস-এর সামনে গাড়িটা পার্ক করে ভিজতে ভিজতে পায়চারি করি মাঠে- কলেজে পড়ার সময়ও এভাবেই প্রেম করতাম আমরা বৃষ্টি দিনে’। অভিষিক্তাই বা কেন শুধু, বৃষ্টিপ্রিয় বাঙালি যতই কাজের চাপে ভারাক্রান্ত থাকুক না; প্যাচপ্যাচে জল কাদার মাঝেই শহর কলকাতার রক-উঠোন-বারান্দা-রেলিং জুড়ে অবাধে রাজত্ব করতে থাকা বৃষ্টিবালিকাদের আধিপত্যকে কিন্তু একটুও কম ভালবাসে না কেউই। বৃষ্টি মানে তাই যেন এই শহরের ‘মনের কোণের সব দীনতা মলিনতা ধুইয়ে দাও’ বলার সময়ও!

বৃষ্টি মানেই তাই এই শহরে শীতল জলের ছাট, ভেজা শরীর জুড়ে রবিঠাকুরের গানের সুরে মন্দ্রিত হওয়া। বৃষ্টি মানে ঠিক তেমনই আবার নতুন করে প্রেম অধ্যায়ের ধোঁওয়া-ওঠা গরম চা; বৃষ্টি তেমনই আবার ভেজা কাকটার সঙ্গীর সঙ্গে রেলিং-বিহারের মিষ্টি সুযোগ। মনোবিদ অভিরুচি চট্টোপাধ্যায় এক লহমায় স্পষ্ট করে দিলেন তার কারণও। ‘বর্ষা আসলে মানুষকে খুব একা করে দেয়। চারপাশে যখন শব্দ করে জল পড়ে, তখন যে নিঃসঙ্গতা তৈরি হয়, তা একমাত্র দূর হয় প্রিয় মানুষের সাহচর্যেই। কবিতায়, গানে, গল্পে, এমনকি সিনেমাতেই তাই বৃষ্টি প্রেমের প্রতীক হয়ে ঘুরেফিরে আসে। শহরের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়ে ওঠার কোনও কারণ নেই’, হাসতে হাসতে জানালেন তিনি।

আকাশ জোড়া ঘন কালো মেঘের ছটা দেখলেই ইদানিং তাই রোম্যান্টিক মনের কোণায় কোণায় যেমন একদিকে গীতবিতানের প্রকৃতি পর্যায়ের পাতাগুলো ফুটে উঠছে, ঠিক তেমনই বর্ষা দিন বললেই শুধু যেন প্রিয় মানুষটির সঙ্গে একটু আলাদা সময় কাটানোর ইচ্ছে জাগছে শহরের মনে। জাগবে নাই বা কেন? এমন দিনেই তো তারে বলা যায়… এমন ঘনঘোর বরিষায়… এমন দিনে মন খোলা যায়!

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top