উপন্যাস ” অমর প্রেম ” পর্বঃ ৯
পরের দিন সকাল বেলা স্বয়ন পড়ার টেবিলে ব্যস্ত । মা ডাকছে, ভাত খেয়ে নে ।
আসছি মা ।
স্বয়ন খেতে বসছে ঠিক সে সময় ওর চাচাতো ভাই সাঈদ এসে উপস্থিত । সাঈদ ও স্বয়নের বড় ভাই শহরে পাশা পাশি থাকে । তাই সংবাদ নিয়ে এসেছে আঃ মালেকের চাকুরীর আবেদন পত্র সরাসরি রংপুরে নিয়ে জমা দিতে হবে । স্বয়ন রংপুর যাচ্ছে কথা পাকা হল । কিন্তু এদিকে বিপদ সাথী স্কুলে গিয়ে স্বয়নের দেখা না পেলে অভিমানে ক্ষেপে যাবে । তাই প্রেমের প্রথম সংক্ষিপ্ত পত্র লিখতে শুরু করল –
আমার জীবন সাথী ,
পত্রের শুরুতেই আমার বুকের জমানো সমস্ত ভালবাসা নিও । আশা রাখি তুমি ভাল থাক । তোমার ভাল থাকাই আমার স্রষ্টার নিকট কামনা । লক্ষীটি আমার তুমি রাগ করনা । আজ তোমার সাথে দেখা হবে না । এজন্য তুমি মন খারাপ করলে আমি ব্যথা পাব । আমি জানি আমাকে না দেখলে তোমার মাথা নাগোর দোলার মত ঘুরবে । কিন্তু কি করবো বলো ? বড় ভাইয়ের ব্যপারে জরুরী রংপুরে যাচ্ছি । তুমি তো জান বড় ভাইয়ের সকল আদেশ উপদেশ প্রত্যেক ছোট ভাইদের শোনা উচিত্ । তাছাড়া বড় ভাইয়ের উপার্জনে আমাদের সংসার চলে । আল্লাহর কৃপায় বেশ চলছে কোন সমস্যা হয় না ।
হৃদয় পাখি আমার আজ আমাকে না দেখে আমার ছবি দেখিও , কেমন ? তাই চিঠির সাথে একটি ছবি পাঠিয়ে দিলাম আগামীকাল ক্লাসে তো দেখা হবেই । জান আমি তোমাকে কত ভালবাসি তা সাত সমুদ্র তের নদী দ্বারাও বুঝা সম্ভব নয় । তোমার মাঝে আমার ভালবাসার স্বপ্ন দেখি তোমাকে নিয়ে ছোট্ট একটি সুখের ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখি । আমি চাই তোমার আমার প্রেম অমর হয়ে সার্থকতা লাভ করবে পৃথিবীতে । হঠাত্ কলমের কালি শেষ হয়ে গেল তাই আজকের জন্য বিদায় নিলাম ।
ইতি
তোমার নিঃশ্বাস স্বয়ন
এ সময় জাহিদ এসে উপস্থিত ।
কি রে দোস্ত কেমন আছিস ?
ভাল ।
ভাল তো থাকবেই মনের পাখি খাঁচায় বন্দি হয়েছে ।
থাক আর উপহাস করিস না ।
আজ একটা উপকার করে দে ।
কি উপকার ? বল আমি এক পায়ে খাড়া ।
জীবন দিতেও রাজী আছি ।
আরে না ,
জীবন দিতে হবে না , এই নে চিঠি সাথীর কাছে পৌছালেই চলবে ।
কোন চিন্তা করিস না । আমি এক্ষুণি যাচ্ছি ।
স্বল্পক্ষণ পরেই স্বয়ন রংপুর রহনা দেয় । এদিকে সাথী ক্লাসে উকি দিয়ে দেখল স্বয়ন নেই । তাই কমনরুমে বসে চিন্তা করছে । কেন সে এলো না ? কি হয়েছে ? আবার অসুস্থ হলো নাকি ? বিভিন্ন দুঃচিন্তার মহা সমুদ্রে ডুবে আছে । জাহিদ কমন রুমে উকি মেরে দেখল , সাথী মাথা নিচু করে বসে আছে । আস্তে করে ডাকল ,
ম্যাডাম কি ভাবছেন ?
সাথী চমকে উঠে দেখল জাহিদ ।
অনতিবিলম্বে জিজ্ঞাসা করল ,
আপনার বন্ধু কোথায় ?
আমার পকেটে ।
মশকারী করেন ? সাথী বলল ।
জাহিদ দেড়ি না করে পকেট থেকে চিঠিটা বের করে দিয়ে বলল ,
এখন স্বয়নের সাথে কথা বলেন ।
চিঠিখানা পেয়ে ওর চিত্ত আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল । কিন্তু স্কুলে তো পড়ার সুযোগ নেই । কারণ ওর বড় দুই বোন মারুফা ও মুন্নী ক্লাস টেনে পড়েন । তাই ছলনা করে বলল ,
আপু আমার ভীষণ মাথা ব্যথা করছে , বাড়িতে যাব । মারুফা একটু কোমল কন্ঠের মানুষ । কিন্তু মুন্নী ঠিক দারগা মেজাজের মেয়ে কথায় একটুও রস নাই । মোট কথা মুন্নীর যে স্বভাব বিয়ে হলে স্বামীর সংসারে আড়াই দিন টিকতে পারবেনা । সৃষ্টি কর্তার নিকট প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন মুন্নীকে পরিবর্তন করে দেন ।
মুন্নী সাথীকে বলল ,
বাড়ি যাওয়া হবেনা । এমন মাথা ব্যথা আমারও ঠিক হয়ে যাবে ।
মারুফা মুন্নীকে বলল ,
তোর পাথরের দেহ মন তাই বলে সবার নয় ।
একথা বলে সাথীকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল ।সাথী বাড়িতে গিয়ে চিঠিটা বার বার পড়ে আর ছবিটি চুমা খায় । প্রতি রাতে ছবিটা বুকে নিয়ে ঘুমায় । কোন দিন ছবি বুকে না নিলে সেদিন ওর ঘুম হয়না । সাথী আর স্থির থাকতে পারল না ।তাই প্রাণের রাজাকে চিঠি লিখতে বসল ।জীবনের প্রথম পত্র তাই ভেবে উঠতে পারছে না কি দিয়ে সম্বোধন করবে । অবশেষে একটি ছোট কবিতা দিয়েই শুরু করল –
ভালবেসে তোমায় বুকে দিয়েছি ঠাঁই
তুমি ছাড়া এ মনে আর কেহ নাই
আমি যে তোমার হয়েছি মনের মালিনী
তুমিবিনা আমি বড় অভাগিনী ।
এ হৃদয় মাঝে শুধু তোমার কলতান
তোমাকে ছাড়া অচল এ মন প্রাণ ।
তোমার আত্মা আমার আত্মা নয় ভিন্ন
আমি শুধু তোমার তুমি আমার জন্য ।
দু জনে ফুটাব প্রেমের কলি
শত কষ্টেও এক সাথে যেন চলি
হে প্রিয় তুমি আমার নিঃশ্বাস
বাঁচার একমাত্র অনুপ্রেরণা আর বিশ্বাস ।
প্রথম তোমার চিঠি পেয়ে আমি স্বর্গের আনন্দে আল্পুত হয়েছি । তুমি কেমন আছ ? নিশ্চয় ভাল । তোমার ভাল থাকা আমার একান্ত কাম্য । আমি ভাবতে পারিনি পত্রের সাথে ছবি দিয়ে আমাকে এত আনন্দ দিবে । তুমি আমার জান তুমি আমার জীবন মরণ । তুমি আমার স্বপ্ন সাধনা । তোমার আমার ভালবাসা কখনও শেষ হবে না , সমুদ্রের পানির যেমন শেষ নেই তেমনি ।
আমার এ চিঠির বাহক হৃদয়ের জমে থাকা সকল ভালবাসা । যেখানে বাস দুটি মনের , কেন জানি তোমার বিহনে রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারিনা । তোমার সঙ্গ পেতে মন অস্থির হয়ে উঠে তোমার প্রতিচ্ছবি চোখে ভাসে । তুমি কোন দিন হারিয়ে যেওনা আমার অবুঝ ভালবাসার ভেলা মাঝ দরিয়ায় ভেসে দিয়ে । তুমি জেনে এতটুকু জেনে রাখ তোমাকে হারালে আমি বাঁচবনা ।
আজ তবে এখানেই শেষ । কাল তো শুক্রবার তুমি বিকেল ৫টায় আমাদের বাড়ির পাশের ব্রীজে আসবে । তুমি কি জান শিশিরে ভেজেনা মাটি বৃষ্টি না হলে , চিঠিতে ভরে না মন কাছে না পেলে ।
ইতি
তোমার লক্ষীটি
হুমায়রা সিদ্দিকা সাথী