Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ভুতের গলির সেই ভূত কি ফিরে এলো ?????

: | : ২২/১০/২০১৩

পূর্ব প্রকাশিতের পর

নীল্ এর সময় এখন খুব ব্যস্ততায় কাটে l সকাল আটটায় ঘর থেকে বের হয়, কোনদিন ফিরে ১১ টায়, কোনদিন ১২ টা ১ টা বেজে যায় l বর্ষা প্রতিদিন বিকাল এর সময় ছাদে এসে বসে থাকে l এই কযেকদিন সে কলেজ বাদ দিয়ে বলা যায় সারাদিন ই ছাদ এ বসে নীল্ এর জন্য অপেক্ষা করেছে l তার পর ও নীল্ দেখা মিলেনি l

প্রতিদিন গোলাম মাওলা রনি নীল্ কে তার বাসা থেকে পিক করে, তারপর সারাদিন রনি র সাথে ঘুরা, তার সভা সমিতির বিবরণ লিপিবদ্ধ করা, এই তার প্রতিদিনের কাজ l রনি চাচার সাথে ঘুরতে ঘুরতে তার মনোজগতে এক বিপ্লব ঘটে গেছে l এখন সে রনি চোখ দিয়ে নিজেকে দেখে l তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন এখন রনি চাচা l সারাদিন বস্তিতে বস্তিতে ঘুরে, অসহায় মানুষের কথা শুনা, তাদের জন্য কিছু করা এটাই তার জীবনের অন্যতম কর্তব্য বলে এখন ভাবে সে l কবিতা লিখা, কোনো মেয়েকে সময় দেওয়া, পার্কে যাওয়া তার কাছে এগুলি এখন বিলাসিতার মত l সে এখন আর দেশের বাহিরে ও যেতে চায়না l দেশের অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করা এখন তার জীবনের অন্যতম ব্রত বলে মনে করে l

আজকে তারা চলে গেল পদ্মার তীরে ভাঙ্গন এ যারা ঘর, বাড়ি, সব সম্বল খুইয়েছে তাদের জন্য কিছু কাপড় চোপড়, চিড়া মুড়ি, কলা, আরো কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যখন এখানে পৌছল তারা তখন করুন এক দৃশ্যের অবতারণা হলো l সবাই অভুক্ত, পরনের কাপড় ভিজা, তাদের সঙ্গে কোনো শুকনা পরিস্কার বস্র ও নাই l নীলের চিত্ত ব্যথিত হয়ে উঠলো l

নীল্ বড় অসহায় আমার দেশের গরিব মানুষ l সম্পদের এত বৈষম্য এই দেশে l কিছু মানুষ টাকার উপর শুয়ে আছে, আর কারো দুবেলার অন্য নাই l কেমন অবিচার বলত এই দেশটাতে ? বলল রনি অসহায় ভাবে l

আমি ও অনেক সময় অনেক প্লান করি, যেমন চেষ্টা করেছিলাম উন্নত দেশের মত আমাদের দেশে বেকার ভাতা, অন্তত পক্ষে দেশের প্রতি টা মানুষ যেন প্রতিদিনের খাওয়ার টা যেন পায় l কিন্তু চাইলে সব কিছু করতে পারিনা, কিছু সীমাবদ্দতা নিয়ে চলতে হয়.l অগনিত ক্ষুধার্ত লোক, কতজনের জন্য করতে পারব l

তবু ও চাচা আমি আপনাকে সালুট করি, আপনি তো নিজে নিজে চেষ্টা করছেন l এভাবে যদি আমাদের সব এম পি রা চেষ্টা করত, অন্তত যদি দেশের সব বিত্তবান লোকরা ক্ষুধা নিবারণে এগিয়ে আসত, যে যার এলাকায় খোজ নিয়ে অসহায় আর গরিব দুখী দের খাওয়ার সরবরাহ করত, এটা কিন্তু সহজে সম্ভব l

নীল্ তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকতে পার l আমি তোমাকে এখন অনেক টা বন্ধুর মত ই মনে করি l এই প্রথম আমি আমার পাশে একজন কে পেলাম আমার রাজনীতিক জীবনে যার উপর নির্ভর করা যায় l আজকে আমি এ জানি যদি কিছু দিনের জন্য বাহিরে যাই, বা মারা যাই আমার কাজ তুমি আমার মত করে করবে l

কি যে বলেন মারা যাবেন কেন? আমরা থাকতে খুব আন্তরিক ভাবে বলল নীল্ l

সারাদিন ছাদে বসে থাকায় মায়ের দৃষ্টি তে পড়ে গেল..বর্ষা , বর্ষা বলে ডাকতে ডাকতে মা ছাদে উঠে এলেন l অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে সবদিকে দেখার চেষ্টা করলেন, মেয়ের সারাদিন বসে থাকার , ঠিক এইসময়ে ছাদে নীল্ উঠে এলো l

মায়ের মুখ একটু অন্ধকার হলো l একটু গম্ভীর হয়ে বলল, সারাদিন ছাদে বসে থাক, পড়ালিখা নাই l সামনে তোমার বোর্ড পরীক্ষা l

বর্ষা র হৃদপিন্ড ছলকে উঠলো অনেক দিন পড়ে নীল্ কে দেখে l নীল্ তার দিকে হাসতে হাসতে সামনে আসতে বর্ষার পাশে তার মা কে দেখে,মুখটা উদাসীন এর মত করে মুখটা ঘুরিয়ে অন্যদিকে হাটতে লাগলো l

বর্ষা অনেক কষ্টে হাসি সামলালো, না হলে মা সন্দেহ করবে l
তোমার বাবা ডাকছেন, তাড়াতাড়ি নিচে নেমে অস বলে মা নিচে নেমে গেলেন, যাওয়ার আগে একবার তির্যক দৃষ্টিতে নীল্ দের ছাদের দিকে তাকাতে ভুললেন না l
উফ হাফ ছেড়ে বাচলো, হাতে ছোট একটা চিঠি লিখে কযেকদিন ধরে ছাদে আসছে l কিন্তু নীল্ এর সাথে দেখা না হওয়ায় চিঠি এখনো সে বয়ে বেড়াচ্ছে l

চিঠিতে লিখা সুধু একটা লাইন

তুমি এক্ষনি আমাদের বাসার ছাদে চলে আস, চিঠি টা একটা ইটের টুকরায় বেধে নীল্ এর ছাদ এ ছুড়ে মারল l

নীল্ চমকে লাফ দিয়ে পিছনে সরে গেল l তা দেখে বর্ষা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল l সে ভুলে ই গেল প্রায় একমাস পড়ে নীল্ ছাদ এ উঠেছে l নীল্ এখন তার কলেজ যাওয়ার সময় রাস্তায় দাড়িয়ে থাকেনা l তার নীল্ এর সাথে অভিমান করে থাকা উচিত ছিল l কিন্তু সব অভিমান ভুলে গিয়ে সহজ স্বাভাবিক ভাবে হেসে হাত নাড়ালো সে তার মানি “:কেমন আছ? নীল্ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল যাক বর্ষা রাগ করে নেই l

নীল্ তাড়াতাড়ি নেমে এলো বর্ষা দের ছাদে যাওয়ার জন্য l গেট টা খোলা ই আছে যাক কোনো দারোয়ান নাই, উপরে উঠতে যাবে, মনে হচ্ছে কেউ একজন নেমে আসছে উপর থেকে, ভারী মহিলা গলা l সে দুর দাড় করে লাফ দিয়ে সিড়ি পার হয়ে বাসায় চলে আসলো. আসলে তখন সিড়িতে কেউ ই নামছিলনা, বর্ষার মা ভিতরের রুম টিভি দেখতে দেখতে কথা বলছিল কাজের বুয়ার সাথে l কিন্তু নীল্ এর পক্ষে সেটা জানা সম্ভব ছিলনা l সে এটাকে অনৈতিক কাজ মনে করে বর্ষা দের ছাদে ও গেলনা এবং নিজেদের ছাদে ও আর গেলনা l এসে ই সে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল l
সে ভুলেই গেল বর্ষা ছাদে তার জন্য অপেক্ষা করছে , অন্ততপক্ষে বর্ষাকে যে কোনভাবে একটা মেসেজ দেওয়া l

এদিকে বর্ষা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে যখন নীল্ কে দেখতে পেলনা, তার মন টা ব্যথা আর বিষাদে ভরে গেল l সে এসে না খেয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল l কান্নায় তার বালিশ ভিজে যেতে থাকলো l

===========================================================

আলিফ পড়ে স্ট্যান্ডার্ড সেভেন অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ l তার স্কুল সকাল আটটা থেকে বিকাল তিনটা l প্রতিদিন এর মত বাবা তাকে নামিয়ে দিয়ে গেছে l এই সময় টা তার খুব প্রিয়, বাবার সঙ্গে গল্প করতে করতে যায় l বাবা ও তখন একটু হালকা মেজাজ এ থাকে l তাদের মধ্যে ছোট খাটো খুনসুটি হয় l সে বাবার পকেট থেকে টাকা বের করে নেওয়ার চেষ্টা করে গোপনে, বাবা ভাব করছে কিছু ই খেয়াল করছেনা, শেষ মুহুর্তে খপ করে আলিফ এর হাত টা টেনে নিয়ে বলবে,

আলিফ দেখ তো বাবা কোন চোর আমার পকেট থেকে টাকা চুরি করছে l আলিফ হাত বের করে হেসে ফেলে l

বাবা একটা গেম কিনব টাকা দাওনা l

এখন না বিকালে স্কুল থেকে ফেরার পথে বাবা কিনে দিব কেমন ?

প্রমিস ? হা বাবা প্রমিস .

প্রথমে আপু কে নামিয়ে দিল l আপুর মনে হচ্ছে মেজাজ খারাপ, কোনো দিকে না তাকিয়ে গাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে l

এই আয়েশা আয়েশা বাবা জোর গলায় ডাকলেন “তোর্ টাকা লাগবেনা? তুই না বললি সব বন্ধুরা মিলে রেস্তুরেন্ট এ খাবি l

বাবা তুমি জানো মা এসব পছন্দ করেনা, কালকে মা আমাকে অযথা ই অনেক বকা দিল. আমার বন্ধুরা জোর করলে আমি কি করব বাবা, বলল অভিমানের সুরে, এবং সে তার চোখের জল গোপন করতে পারলনা কালকে রাতে মায়ের বকার কথা মনে হওয়াতে l
,
তুই একটা কাজ করনা মা কালকে তোর্ সব বন্ধুদের কে দাওয়াত কর, আমি তোর্ বন্ধুদের জন্য স্পেশাল আইটেম বানাবো l .

বাবা আমার স্কুল এর দেরী হয়ে যাচ্ছে পিছন থেকে আলিফ বলে উঠলো l

ওকে তাহলে বাই মামনি, টেক কেয়ার l

আলিফ কে স্কুল এ নামিয়ে দিয়ে বাবা চলে গেলেন অফিস এ l

আলিফ এর সবচেয়ে প্রিয় সাইন্স টিচার মিস সাইমন l সবসময় সাদা স্কার্ট না হয় সাদা গাঁউন পড়বে মনে হয় যেন সাদা পায়রা, এঞ্জেল এর মত l

আজকে শেষ ক্লাস হয়নি, ড্রয়িং টিচার অসুস্থ, সবাই হই হই করে ক্লাস থেকে বের হয়ে আসল l আলিফ এর অবশ্য বসে থাকতে হবে বাবার জন্য l সে এই একঘন্টা কিভাবে কাটাবে চিন্তা করতে করতে তার ব্যাগ থেকে ছোট বল টা বের করে একা একা খেলতে সুরু করলো.l একটা লাঠি দিয়ে স্ট্যাম্প বানিয়ে বল দিয়ে বাড়ি দিয়ে স্ট্যাম্প আউট করার চেষ্টা করলো অদৃশ্য প্রতিপক্ষ কে l হটাত একবার বল টা বেশি জোরে মারায় উড়ে গিয়ে মাঠের ঐভাগে গিয়ে পড়ল l ঐখানে খেলছিল আলিফ দের বাসা একটু দুরে ওদের বাসা, সুমন আর তার বখাটে বন্ধু রা বসে কার্ড খেলতেছিল. ছেলেগুলি দেখতে যেমন দশাসই , তেমনি বিতিকিচ্ছিরি এদের ব্যবহার l আলিফ এদের কে দেখলে দৌড়ে পালিয়ে যায় l সুমন যেটা সেটা একেবারে বদ, পড়ালিখা করেনা, মেয়ে দেখলে শীষ দেয়, অথচ বয়স মাত্র ষোলো l আলিফ কে দেখলে এরকম ভাবে বলে.দেখি তোর্ গালে একটা থাপ্পর দেই দৌড় দে, দৌড় দে বলে ফাজিল গুলি ওরে তাড়া করে সবসময় l বলটা পড়বি তো পর একেবারে ফাজিল সুমন এর মাথায় গিয়ে পড়ল l এই কেরে কে রে বলে বিভীষণ গতিতে আলিফ কে তাড়া করলো l

এই দাড়া তুই কইতাছি দাড়া কিন্তু বলে একটা হুঙ্কার দিল বদ টা

আলিফ ভয়ে থেমে গেল .

সুমন টা আলিফ কে বুকে ধাক্কা দিয়ে বলতে থাকে এই তুই আমার দিকে বল ছুড়ছিশ কেন বল বলে আলিফ কে সমানে ধাক্কা মারতে থাকে l

অমিত ইচ্ছে করে ছুড়িনি বল কোনো রকমে সে মিন মিন করে বলল l

তারপর ও যখন পাজিটা চড় থাপ্পর মারতে থাকলো আলিফ কে সে আর সহ্য করতে পারলনা সে ও গরু শিং বাকিয়ে গুতা দেওয়ার ভঙ্গিতে তার মাথা দিয়ে সুমন এর পেটে আঘাত করলো l তার অস্র সুধু নখ আর তার মাথা, সে সমানে তা চালাতে লাগলো l দুজন দুজনের মাথার চুল টেনে ছিড়ে ফেলার চেষ্টা করতেছে l এ যেন প্রতিযোগিতা চলতেছে কে কার মাথার কত বেশি চুল ছিড়তে পারে l

ওরে বাপরে সুমন গুঙিয়ে উঠে , পিছি রাক্ষস, খামচিয়ে আমার সব মাংশ তুলে নিছে , নিজেকে ছাড়ানোর জন্য জোরে এক থাপ্পর বসালো আলিফ এর গালে l

আলিফ ঘুরে পড়ে গেল, তার একটা দাত ছিটকে বের হয়ে আসল এবং তার সাথে রক্ত পড়া সুরু করলো l রক্ত দেখে সে ভয়ে কানতে সুরু করলো, ফাজিল গুলো রক্ত দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল l

কিছুক্ষণ এভাবে মাঠে পড়ে থাকার পর সে সচেতন হলো, একটু পরে বাবা আসবে তাকে নিতে, বাবা তাকে এরকম অবস্থায় দেখলে অনেক কষ্ট পাবে, তাড়াতাড়ি খুড়িয়ে খুড়িয়ে কষ্ট করে বাথরুম এ আসলো, আয়নায় নিজে কে সে জোরে কেদে ফেলল l কিছুক্ষণ দরজা বন্ধ করে মেজে তে বসে বসে কাদলো মা মা বলে l তারপর আস্তে আস্তে উঠে ভালো করে চোখ মুখ পরিষ্কার করলো, বার বার কুলি করে মুখের রক্ত পরিস্কার করলো, ডান দিকের ঠোট একটু ফুলে নিচের দিকে ঝুলে আছে, এটা বাবাকে কি বলা যায় সেটা ভাবছে মনে মনে l

এদিক মিজান প্রায় পনর মিনিট হলো এসেছে, আলিফ কে খুঁজে যাচ্ছে, পুরা স্কুল বন্ধ কাওকে দেখা যাচ্ছেনা, দুশ্চিন্তায় মিজান এর দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম l তার ডাকাডাকি র শব্দে স্কুল এর পিছন এর ঘর থেকে বের হয়ে আসলো দপ্তরী l স্কুল এর পিছনে ছোট ঘরটা তে সে থাকে l

স্যার আপনি কারে খুজেন দপ্তরী জিজ্ঞাসা করে

আমার ছেলে আলিফ, কোথায় সে?

স্যার সবাই তো স্কুল ছুটির পর যে যার বাসায় চলে গেছে l আমি তো আধা ঘন্টা আগে সব দরজা জানালা বন্ধ করে তালা লাগাই দিছি .

কি বল পাগল এর মত আমার ছেলে স্কুল এর ভিতরে আছে, সে আমাকে না বলে কথাও যাবেনা l
ও মাই গড তুমি তাড়াতাড়ি দরজা খোল, সে ডুকরে উঠলো ভয়ে

হে আল্লাহ ছেলেটাকে সুস্থ রেখো মিজান অস্থির হয়ে বলতে থাকে .

একটার পর একটা দরজা খুলে তারা চেক করতে থাকে, কোথাও আলিফ নেই,

হে আল্লাহ আমার ছেলে কে সুস্থ ভাবে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও ,

স্যার কোথাও নাই তো , না না বলে মিজান কাদতে সুরু করে,

দাড়ান স্যার বাথরুম দেখিনাই ,

শেষ বাথরুম এর দরজা ঠেলা দিতে দেখা গেল সে মেজেতে পরে আছে অজ্ঞান হয়ে l

(পরবর্তীতে)

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top