উপন্যাস ” অমর প্রেম ” পর্বঃ ১১
সাথী কেঁদে কেঁদে বলল ,
তুমি যদি আমাকে বিয়ে না কর তবে আমার মরা মুখ দেখবে ।
আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করব না ।
আমি কি বলছি তোমাকে বিয়ে করব না ,স্বয়ন উত্তর দিল ।
আজকেই বিয়ে করতে হবে ।
প্রিয়ার চোখের জল সহ্য করতে পারল না স্বয়ন । অন্ধ প্রেমের আবেগে বলে ফেলল ,
কেঁদনা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিয়ে করব ।
স্বয়নের ডান হাতটি সাথীর মাথায় তুলে নিয়ে সাথী বলল ,
কসম দাও ।
কসম ।
সঙ্গে সঙ্গে সাথী স্বয়নকে জড়িয়ে ধরে বলল ,
আমি জানি আমি তোমার নিঃশ্বাস ।
স্বয়ন বাড়িতে এসে ভীষণ টেনশনে পড়ল ।সহস্র দুঃচিন্তা মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে । বিয়েতে অনেক টাকার প্রয়োজন । কোথায় পাবে সে টাকা কোথ থেকে জুটবে ? এদিকে চিন্তা কাজির কারণ অপ্রাপ্ত বয়সের আমরা দু জন কি জানি কি সমস্যা হয় । আবার চিন্তা করে টাকা থাকলে বাঘের চোখও মেলে । অবশেষে সে রাতের আঁধারে আলমারি খুলে দশ হাজার টাকা চুরি করল । এটাই ওর জীবনের প্রথম চুরি । বার ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে গেল । সকাল বেলা ছুটে গেল জাহিদের কাছে , সবকিছু খুলে বলল । জাহিদ সাহসের বাণী শুনিয়ে বলল ,
তুই কোন চিন্তা করিস না , আমি সব ব্যবস্থা করছি । উকিল কাজী মৌলবী আমার হাতের মুঠোয় ।
দেরি চলবে না এখনি যেতে হবে ।
কোথায় ?
আমার এক দুলাভাইয়ের বাড়ি ।
কেন ?
ওনি একজন উকিল , দেরি হলে কোর্টে যাবে ।
উকিল সাহেব খুব সুন্দর করে চতুর্দিক বুঝালেন । পরিশেষে একটি বিষয় ভাল করে বুঝালেন যে , স্কুল সার্টিফিকেট অনুসারে তোমরা দুজন এখন অপ্রাপ্ত । মেয়ে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করলে বয়স আঠার হবে । এতদিন পর্যন্ত বিয়ের সম্পর্কটি গোপন রাখতে হবে । আর মেয়ে যদি কখনো কোর্টে সাক্ষ্য দেয় যে , তাকে জোড় করে বিয়েতে বাধ্য করছো । তাহলে তোমার জেল অনিবার্য । আর যদি তোমার পক্ষে বলে তাহলে বেঁচে যাবে । এখন ভাল করে বুঝে সামনে অগ্রসর হও । মনে রেখ আসল চাবি কিন্তু মেয়ের হাতে , মেয়ে যে পক্ষে কথা বলবে রায় হবে সেদিকে । আর টাকার কথাও বললেন প্রায় আট থেকে দশ হাজার টাকা লাগবে । ভাল করে বুঝে আমাকে জানাবে । স্বয়ন বলল ,
বুঝা শেষ আপনি ব্যবস্থা করেন ।
ঠিক আছে আগামীকাল দশটার দিকে মেয়েকে নিয়ে কোর্টে এসো ।
আচ্ছা , কথা কি ফাইনাল ?
হ্যাঁ , ফাইনাল ।
স্বয়ন বাড়িতে ফিরে চিন্তায় পড়ে গেল মা বাবাকে কিভাবে বাড়ি থেকে সরাবে ? হঠাত্ বুদ্ধি এলো নানীর অসুস্থতার কথা বলে সেখানে পাঠাবে ।
ঠিক তাই , আজ বুধবার সাথী স্কুলের ছলে স্বয়নদের বাড়িতে উপস্থিত । পরে ওরা তিন জনে বাস যোগে কুড়িগ্রাম কোর্টে পৌছিল সকাল দশটায় । বিয়ের সকল কার্য সম্পন্ন করে পুনরায় বাড়িতে ফিরল বেলা দুইটার দিকে । জাহিদ ক্যামেরা দিয়ে বর কনের একত্রে ছবি তুললো দুই রিল ।পরে সাথী জিজ্ঞাসা করল ,
মা কোথায় ?
নানীকে দেখতে গেছে ।
কি হয়েছে ?
সপ্তাহখানেক ধরে জ্বরে ভুগছে ।
জাহিদ বিদায় নিল । স্বয়ন প্রধান দরজা বন্ধ করে দিল নির্জন নিরিবিলি পরিবেশ বাড়ি । দুজনের আর বিলম্ব সহ্য হলনা ফুল শয্যাবিহীন কামরায় বাসর সমপন্ন করলেন । জীবনের সবচেয়ে আকাঙ্খিত চাওয়া পাওয়া মিটে গেল সল্প কালের মধ্যে । ফরজ স্নান সেরে দুজন একই থালায় ভাত খেল পরস্পর পরস্পরকে খাইয়ে দিল । কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর স্বয়ন বলল ,
প্রস্তুত হও এখন তোমাকে রেখে আসব ।
কোথায় ?
কেন তোমাদের বাড়িতে ?
আমি যাব না ।
কেন ?
ইচ্ছা করছে না ।
পাগলামী কর না এখন মা এসে পড়বে ।
বুঝেছি তাড়িয়ে দিচ্ছ । সাথী হেসে বলল ।
হৃদয় থেকে তো দেইনি ?
তা আমি জানি ।
স্বয়ন আর বিলম্ব না করে সাইকেলে করে ঐ ব্রীজে রেখে এলো । ওখান থেকে সাথী হেঁটে হেঁটেই বাড়িতে গেল ।
এখন ওরা উভয়ই চিন্তামুক্ত মনযোগ দিয়ে পড়ছে । হারিয়ে যাওয়ার ভয় পালিয়ে গেছে , প্রতিদিন স্কুলে সাক্ষাত হয় কথা হয় ।
বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে স্বয়ন উত্তীর্ণ হলো ক্লাস টেনে আর সাথী নাইনে । স্বয়ন আবার প্রথম স্থান লাভ করল । এতে ওর দুই সহপাঠি বাবু ও ফারুক ভীষণ শত্রুতা শুরু করল । কোন লাভ নেই , রাখে আল্লাহ মারে কে ? ক্লাস সিক্স থেকে ওর এক রোল হচ্ছে ওকে হারাতে না পেরে দু বন্ধু কথা বলা বন্ধ করে দিল । স্বয়নও কথা বলত না সাথীও । ভাল ছাত্রদের দু এক শত্রু ক্লাসে থেকে যায় ।
পবিত্র মাহে রমজানের আগমন ঘটল । দেখতে দেখতে ছাব্বিশটি রোজা অতিবাহিত হলো ।স্বয়নের বড় দুই ভাই বাড়িতে এলো ঈদের ছুটিতে । বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ঠিক রাখতে একটি টু পার্ট টি সি এল মোবাইল নিয়ে এসেছে । মোবাইলের সব অপশন সুন্দর করে বুঝিয়ে দিল স্বয়নকে । মোবাইল পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল । উল্লাসে মোবাইল হাতে নিয়ে নাচতে লাগল ।
নাচবেই তো এখন আর কাগজ কলমের ব্যয় হবে না । সরাসরি কথা হবে প্রিয়ার সনে ।