অশ্রুবন্যা
বৃষ্টির মতো ঝরছে কত চোখের পানি
অশ্রুবন্যার থইথই জলে হবে অথই সাগর–
মহাতরঙ্গে ভেঙেছে মিরসরাইয়ের কূল
তোরাবের মাঠে আজ আবির্ভূত কারবালা–
কেয়ামতের দুর্যোগ
ঘরেঘরে চলছে আপনহারার আহাজারিকাঁদন
সেই বুকফাঁটা কান্নায় কাঁপছে বোধহয় থরথর আরশতল–
শোকের কাফনে ঢাকা আজ সরাইনগরী।
হে ভগবান! আল্লাহ্ আমার! দিকেদিকে ঈশ্বরের ডাক
আজ তোরাবের মাঠে-ঘাটে-রাস্তায় কান্নার মাতম–
অশ্রুপ্লাবন!
হানা দিয়েছে দুর্দৈব–উপনীত প্রলয়
হায়! খোদার একি অভিমত–
সুখের ডাঙায় এঁকে দেয় সব সময় দুঃখের আলপনা!
কী সাঙ্ঘাতিক আঘাতে ছেদন হয়েছে সরাইয়ের বুক
ভুলা যায় কি জীবনে এসব দুর্ঘটনার কথা
নিরাপদ পথের প্রার্থনা হোক কুলমুল্লুকে।
হে তোরাব,
আঞ্জুমান,
ইতিহাস হবে তোমার–
বিশ্বেতিহাসে বিষম যত ঐতিহাসিক ঘটনাবলী
তোরাব অন্যূন–অনুরূপ
অনন্তযাত্রার দ্রুতরথের যাত্রী তোরাবের ভবিষ্য
চলে গেছে অগণিত সন্তান–মিশে গেছে মৃত্তিকায়
অকালে।
উড়ছে শোকের প্রতীক উড়ছে সারা বাংলায়
স্তিমিত বাংলাদেশ তোরাবের স্মরণে
সমস্ত মানবাত্মা কাঁদছে আজ তোরাবের শোকে
ভুলা যায় না কবে–
মর্মভেদীশোক জেগে রয় মানসমানচিত্রে
আমরণ।
স্মর্তব্য যে ঘটনা ঘটে আজ তোরাবের পথে–
পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ : পুত্রকাঁধে পিতৃ–সওয়া যায়
বিপরীত কেন প্রকৃতি? ভাইয়ের কাঁধে ভ্রাতৃশবের বোঝা
সবচেয়ে–
হাঁ, সবচেয়ে ভারী এ লাশের ভার!
আশার আরশি ভেঙে যাদের হয়েছে খানখান
তারা অনাত্মীয় কার?
এবিশ্ব আত্মীয় সকলের
পরমাত্মীয়তার বন্ধনে বন্দি জগৎ–
সকল মানব
মানবের সুখেদুখে আবদ্ধ মানবতা।
হে আল্লাহ্!
কষ্টের পাহাড়সমান পাথর বুকে চেপে দাও যার–
যার অনিষ্ট কর যুগসাধনার ফল–আনন্দের ফসল
যার ফুরিয়ে দাও পাথেয়–শেষ হয় নি পথ
চিরতরে নিবে দাও যার একমাত্র প্রদীপ–আশার আলো
পৃথিবী করে দাও আঁধার যার–কালো মেঘে ঢেকে
যার আশ্রয়াশ্রম ধ্বংস কর মহাকাল-ঘূর্ণিবায়ে
শূন্য কর যার জীবনমাঠ এবং চাঁদের হাট
চূর্ণবিচূর্ণ করে দাও যার হৃষ্টপুষ্টমন
চিরতরে কেড়ে নাও যার মানসিক সামর্থ্য
মৃত্যুর কাছে পরাভব কর যাদের শুরুতে
কী রেখেছ তাদের সৌভাগ্যে?
কোনো অমৃত আছে কি তাদের কল্যাণে?
ওগো দয়াময়,
জানি
শান্তির সমস্ত সান্ত্বনা তোমার ঘরে
স্বস্তি ফিরে দিতে পার ভাঙা সব হৃদয়ে–
তবে?
যারা হারিয়েছে সুখের ধন, বুকের মানিক
হারিয়েছে জীবনপাথেয়, আশার সম্বল
আবাদ কি হয় আর তাদের দুনিয়া
তবে এতটুকু কামনা–
গড়ে উঠবে ধস্তবিধ্বস্ত নগরে পুন মালঞ্চাবাস
গড়ে উঠবে নিরানন্দের সংসারে মহানন্দবাজার
গড়ে উঠবে আবার–
আবার।
২৮-৩০ আষাঢ়, ১৪১৮–
ডি সি রোড, চট্টগ্রাম।
কবিতাটি মিরসরাইয়ের সড়কদুর্ঘটনার স্মরণে রচিত…