উপন্যাস ” অমর প্রেম ” পর্বঃ ১৬
পরের দিন হেড স্যার বিষয়টি সমাধানের জন্য সকল শিক্ষক ও উভয় পক্ষকে নিয়ে বসল ।
প্রথমে স্বয়নের বাবাকে বলল ,
কেরাণী সাহেব আপনাদের সাথে আত্মীয় করতে চান না । আপনারা মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দেন যেহেতু ঘর সংসার করেনি পঞ্চাশ হাজার টাকার পরিবর্তে পঁচিশ হাজার দিলেই হবে । স্বয়নের আব্বা সায় না দিয়ে বলল ,
মেয়ে পক্ষ যেহেতু সংসার করাবেনা সেহেতু মেয়ে তালাক দিবে । এ প্রস্তাবে কেরাণী সাহেব মানতে রাজী নয় । তার কথা বিচার যাই হোক তাল যেন তার ভাগে পরে ।
এ অবস্থায় বিচারে কোন সমাধান হলো না । স্বয়নের বাবা এক পক্ষে রায় মেনে নেয়নি বিধায় হেড স্যার দায়িত্ব ছেড়ে দিল । এখন বড় বিপদ স্বয়নকে যুদ্ধ করে পরীক্ষা দিতে হবে ।
অবশেষে বড় ভাই মেজো ভাই পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এলো । ভাইদেরকে দেখে স্বয়নের বুকে অসীম সাহস জন্মিল । পরের দিন তিন ভাই এক রিক্সায় চড়ে পরীক্ষা দিতে গেল । কোন রকম সমস্যা সৃষ্টি হলো না । স্বয়নের মেজো ভাই লিমন ছিল ক্যাডার স্বভাবের দুরান্ত সাহস ঐ সময় তার মাথার চুল ছিল হাত খানেক লম্বা । লিমন সিদ্দিককে বলল ,
খানকির পোলা বাদশা কোথায় খুঁজে বের কর । দেখব ওর কলিজা কত বড় ?
এদিক সেদিক খুঁজল বাদশার দেখা মিললো না । লিমনের কাছে ও রকম চার পাঁচ জন বাদশা নাস্তার মত । ক্যারাতে মারে খুবই স্ট্রং চতুর্মূখী আক্রমনের প্রশিক্ষণ আছে । সাথীর কাক্কু এক পলক লিমনকে দেখে এক সেকেণ্ড দেরি করল না মাস্তান ভেবে কোথায় যে পালিয়ে গেল আর চোখে পড়ল না । দুইটা পরীক্ষা স্বয়ন ভালভাবেই দিল , পরবর্তী পরীক্ষায় সময় আর থাকতে পারল না স্বয়নকে সান্ত্বনা দিয়ে চলে গেল শহরে ।
এদিকে সবার মুখে মুখে একই কথা শেষ পরীক্ষার দিন স্বয়নকে মেরে হলেও তালাক নামায় সই নেবে । সকলেই বারণ করল পরীক্ষা না দিতে । স্বয়নের ছোট খালু বলল ,
স্বয়ন পরীক্ষা দিবে ওর শরীরে কেউ ফুলের টোকাও দিতে পারবে না । এমন কথা শুনে স্বয়ন সাহস পেল । খালুর হাই স্কুলের ক্লাসমেট ছিল আমিনুল । এই আমিনুল উলিপুরের শ্রেষ্ঠ ক্যাডার সহস্রাধিক মামলা তার নামে শতাধিক মাডার কেস । তবুও বুক ফুলে হাঁটে কোন সমস্যা হয়না থানা পুলিশ সব হাতের মুঠোয় । খালু আমিনুলকে বিস্তারিত খুলে বলল ।
আমিনুল সাহস দিয়ে বলল ,
তোর ভাগিনা মানে তো আমার ভাগিনা , কোন চিন্তা করিস না ।
আর বাকি মাত্র দুইটি পরীক্ষা । আমিনুল নিজের মটর সাইকেলে নিয়ে স্বয়নকে পরীক্ষার হলে দিয়ে আসল । বাদশা বাহিনী আমিনুলকে দেখে অবাক এত উপরে স্বয়নদের হাত সে কল্পনাও করেনি । এ দিন কোন সমস্যা সৃষ্টির সাহস পেলনা ।
আর একটি মাত্র পরীক্ষা বাকি থাকলো । এটা শেষ হলে স্বয়ন মুক্তি পায় এ জীবন মরণ পরীক্ষে থেকে ।ভাইয়েরা বলেছে পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্র ঢাকার গাড়িতে তুলে দিতে । শেষ পরীক্ষাটি স্বয়নের জীবন মরণের খেলা ।
দুর্ভাগ্য শেষ পরীক্ষার দিন আমিনুল থাকতে পারবে না , কারণ মামলার তারিখ পরেছে কুড়িগ্রাম কোর্টে যেতে হবে । আমিনুল তার দুই সহচরকে দায়িত্ব দিয়ে চলে গেল ।
স্বয়নের মাথায় বুদ্ধি এলো পুর্ণ তিন ঘণ্টা পরীক্ষা দেয়া যাবে না । তাই পনে দুই ঘণ্টায় পঁচাত্তর নম্বরের উত্তর লিখে খাতা জমা দিল । মেইন গেইট দিয়ে বের না হয়ে টয়লেটের পাশের উঁচু ওয়াল ডিঙ্গিয়ে সরাসরি বাস স্ট্যান্ডে গেল । সেখানে ছোট খালু প্রস্তুত স্বয়নকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে যাবে । ঠিক তাই হলো ।
পরীক্ষা শেষ স্বয়নের গন্ধও শুনতে পেল না ভারাটে গুণ্ডাগুলো হা করে রইল কোন লাভ হলো না ।
এদিকে সাথী জানে আজ স্বয়নকে আটকাবে যদি ওর কিছু হয় এ ভেবে পালিয়ে গেল স্বয়নদের বাড়িতে । কিছুক্ষণ পর ফোন এলো বাদশার কাছে , সাথীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সাথে সাথে থানায় গিয়ে ভ্যান ভর্তি পুলিশ ভাড়া করে স্বয়নদের বাড়িতে হামলা করল ।বাদশা সাথীকে দেখল টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে । পরে সাথীকে নিয়ে যেতে চাইল কিন্তু গ্রামবাসী বিনা শর্তে ছেড়ে দিতে চাইল না ছোট খাট একটি শালিস হয় পুলিশগুলো উপস্থিত ছিল । দারগা জিজ্ঞাসা করল ,
তোমাকে অপহরণ করে এনেছে ?
না , আমি স্বেচ্ছায় এসেছি ।
আরো বিভিন্ন প্রশ্ন করে যা উত্তর পেল তাতে স্বয়নদের কাউকে মামলায় ফাঁসানোর সুযোগ নেই ।
অবশেষে লিখিত নিয়ে সাথীকে যেতে দিল । মা ওকে আটকে রাখতে না পেরে কাঁদতে লাগল । বাবারও চোখের জলে দাড়ি মোবারক ভিজে গেল । মা বাবা সাথীকে নিজের মেয়ের মত ভালবাসত । কিন্তু সাথী পরিবারের নিঠুর লোকজন তাদের কষ্ট বুঝলো না । অর্থ ও ক্ষমতার বলে সাথীকে জোড় করে নিয়ে যাচ্ছে ।
যাবার বেলায় সাথী মায়ের অশ্রু মুছে দিয়ে বলল ,
মা , কেঁদনা । আমি আবার ফিরে আসব । আর স্বয়নকে বলবেন ,
ও যেন আত্মহত্যা না করে ।
আর কথা বলার সুযোগ দিল না সাথীকে টেনে হেঁচরে গাড়িতে তুলল । বাড়িতে নিয়ে সাথীকে ইচ্ছামত পিটিয়েছে অসুস্থ হয়ে গেছে সাথী । এখন দিন রাত ওকে পাহাড়া দেয় । রাতের বেলা দরজায় তালা দেয় যাতে পালাতে না পারে ।
এ বাড়িতে সাথী যেভাবে আছে জেলখানা শত গুণ ভাল ।