Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

উপন্যাস ” অমর প্রেম ” পর্বঃ ১৭

: | : ২৯/১০/২০১৩

শহরে স্বয়নের মন কিছুতেই টিকছে না বার বার সাথীর কথা মনে পড়ছে । মনে হয় ওকে আর ফির পাবে না । বিভিন্ন দুঃচিন্তায় ও যেন পাগলের মত হয়ে গেছে । ঠিকমত খায় না ঘুমায় না শুধু ছটপট করে দিন কাটছে ।
একদিন মাকে ফোন করে কেঁদে কেঁদে বলল ,
আমার এখানে ভাল লাগে না । আমি গ্রামে চলে যাব , সাথীকে দেখতে যাব । মা স্বয়নকে বুঝিয়ে বলল ,
বাবা কাঁদিস না । তুই কি ভুলে গেছিস ?
জীবন মানে দুঃসাহসিক অভিযান বুকে সাহস রাখতে হবে ।
জীবন মানে দুঃখ একে জয় করতে হবে ।
জীবন মানে নিমর্ম অসহ্য যন্ত্রণা এটাকে মেনে নিতে হবে ।
জীবন হচ্ছে খেলা এ খেলায় জিততে হবে ।
জীবন মানে তো সংগ্রাম যুদ্ধ করতেই হবে ।

স্বয়ন মায়ের বাণীগুলো শুনে একটু নিজেকে বুঝাল , আসলে তো ঠিক আমি যে ভাবে একটি বিষয় নিয়ে চিন্তায় মগ্ন এতে আমার ব্রেইন আউট হয়ে যাবে ।বড় ভাই ভাবলো এভাবে বসে বসে চিন্তা করলে পাগল হয়ে যাবে তাই কম্পিউটার কোচিং এ ভর্তি করে দিল । দৈনিক তিন ঘণ্টা কম্পিউটার শেখে ।

এদিকে বাড়িতে শুধু মা ও বাবা । মায়ের অসুখ হলে বাবাকে কষ্ট করে রান্না বান্না করতে হয় । নারীর কাজ পুরুষের জন্য বড় কঠিন ও বিরক্তিকর । তাই মা এম কফিল চেয়ারম্যানকে ডেকে অনুরোধ করে বলল ,
যেভাবেই হোক সাথীকে আনার ব্যবস্থা করেন প্রয়োজনে ওর নামে কাঠা পাঁচেক জমি লিখে দেব । আমাদের বাড়ি থেকে পড়াশুনা করবে কোন সমস্যা নেই । চেয়ারম্যান সাহেব মায়ের খালু আর স্বয়নের নানা ।

চেয়ারম্যান প্রথমে মুকুল হাজীর কাছে গিয়ে প্রস্তাব দিল । হাজী সাহেব বলল ,
আমার ভাগনী ঠিক আছে , মেয়টা তো কেরাণীর । আমি হ্যাঁ না কিছুই বলতে পারব না । আপনি কেরাণীর সাথে কথা বলেন ।
চেয়ারম্যান সাহেব সরাসরি কেরাণীকে বলতে রহনা দিল ।
জুম্মাহাট বাজারে গিয়ে দেখা হল কেরাণীর সাথে । চায়ের দোকানে ডেকে নিয়ে বুঝিয়ে বলল ,
স্বয়ন সাথীর বিয়েটা মেনে নিলে বুঝি ভাল হতো । দিন দিন তো ওদের উন্নতি হচ্ছে ।
স্বয়নের মা বলেছে সাথীকে ওরা পড়াশুনা করাবে আর সাথীর নামে পাঁচ কাঠা মাটি লিখে দিতে রাজী আছে । ভেবে দেখেন এ জমির বর্তমান মূল্য সাত আট লক্ষ টাকা ।
চেয়ারম্যান সাহেব শুধু বলেই যাচ্ছে কেরাণী হা হু কিছুই বলেনা । অবশেষে মুখ খুলে বলল ,
যত কিছুই বলেন এটা কোন দিন হবে না ।
একটু ভেবে দেখেন বড় মেয়েকে দিয়েছেন সন্ত্রাসের হাতে । মেয়ে বার মাসের মধ্যে দশ মাস থাকে আপনার বাড়িতে আর বাদশা থাকে জেলহাজতে নয়তো পাগলা গারদে । কেরাণী সাহেব বলল ,
আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না ।
কেন ?

আমার মেয়ে রাজী ছিল না ওরা জোড় পূর্বক করিয়েছে ।
তাহলে আপনার মেয়েকে তালাক দিতে বলেন , তবেই কেল্লা ফতে ।
আমার মেয়ে তালাক দিবে কেন ? ছেলে তালাক দিবে ।
এ অযৌক্তিক কথায় চেয়ারম্যান ক্ষেপে গিয়েছিলেন পরে নিজেকে শান্ত করে বললেন ,
আপনার মেয়ের সাথে কথা বলে নিজের কানে শুনবো , সে রাজী আছে কি না ?
আপনি কথা বলার কে ? কেরাণী একটু উচ্চস্বরে বলল ।
এ কথা শুনেই চেয়ারম্যান সাহেবের মাথা গরম হয়ে গেল । তবুও নিজেকে সামলিয়ে উত্তর দিল ,
আপনার চেয়ে গরু ছাগলের জ্ঞান অনেক বেশি ।
মনে হয় মেয়েকে স্বামীর সংসার করাবেন না ঘরের খুঁটি করে রাখবেন ।
ছিঃ মেয়ের বাপ হয়ে গর্ব করেন লজ্জা করে না ?
এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার ।
এর পর আর কোন কথা না বলে চেয়ারম্যান সাহেব চলে গেলেন । স্বয়নের মাকে বুঝিয়ে বললেন ,
কেরাণীকে রাজী করাতে পারিনি , তবে আমি শুনেছি মেয়ে এখনো রাজী আছে সুযোগ পেলে চলে আসবে ।
আর এবার এলে আমাকে খরব দিবেন , দেখে নেব কেরাণীর কত বড় ক্ষমতা ।

একদিন দুটার সময় বড় ভাই কেজি দশেক মিষ্টি নিয়ে হাজির । সবাইকে মিষ্টি বিতরণ করে বলছে , আমার ছোট ভাই পরীক্ষায় পাশ করেছে । এ আনন্দে অফিসের সবাই খুশি কেবলমাত্র স্বয়ন ব্যতীত । বড় ভাই জিজ্ঞাসা করল ,
কি রে তোর মন খারাপ কেন ?
আমার আশা ছিল A+ পাব কিন্তু ওদের কারণে পেলাম না ।
ভাই আমার তুই A পেয়েছিস তাতে আমার বুক ভরে গেছে ।
জীবন বাজী রেখে পরীক্ষা দিয়েছিস এমন রেকর্ড কোন দেশে আছে কি না আমার জানা নেই । তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে নিশ্চিত F গ্রেট পেত । এখন সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল । ঐ দিকে যা হবার তা হবে তোর চিন্তা করে কোন লাভ নেই । সরকারী তোলারাম কলেজে রাজনৈতিক প্রভাব বেশি থাকায় সরকারী আদমজীনগর এম ডব্লিউ কলেজে ভর্তি করে দিল স্বয়নকে ।

স্বয়ন যথারীতি কলেজ যাচ্ছে । শহরে টাকা পয়সা একটু বেশি প্রয়োজন বাইরে এক গ্লাস পানি খেতে ২ টাকা লাগে । পকেট খরচের টাকা ভাইয়ের কাছে চাইতে লজ্জা করে তাই দুইটা টিউশন নিল । এতে করে আর সমস্যা হয় না । ভাইদের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমে গেল । যত কিছুই করুক স্বয়ন সাথীকে ভুলতে পারে না । কলেজে গিয়ে আনমনা হয়ে বসে থাকে ক্ষণে ক্ষণে সাথীর কথা মনে পড়ে ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top