ভুতের গলির সেই ভূত কি ফিরে এলো ?????
পূর্ব প্রকাশের পর
নীল্ এর বৌভাত এ লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল। রনি চাচা র নিজস্ব লোক ই প্রায় একশ এর উপরে। রনি চাচা নিজে কমিউনিটি সেন্টার বুকিং দেওয়া, গাড়ি ম্যানেজ করা, ফুল সরবরাহ করা, নীল্ এর প্রতি টা কাজ ই আপন মানুষ এর চেয়ে বেশি দরদ দিয়ে করতে লাগলো। বাবাও কয়েকবার বুকে জড়িয়ে ধরেছে আবেগ আর মমতায় রনি চাচা কে।
তোমাকে ছেলে বলব না ছোট ভাই মনে করব ,তুমি একেবারে আপন মানুষের মত ই করছ রনি, বলল আদেল নাশফি নীল্ এর বাবা।
কি যে বলেন ভাইয়া এটা তো আমার দায়িত্ব। রবিন কি বলবে আমি যদি আপনার এটুকু না করি।
যথাসময়ে নীল্ এর খালাত বোন্ রা বর্ষা কে পার্লার থেকে সাজিয়ে নিয়ে আসল। বর্ষাকে দেখে নীল্ এর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল , একরাতের মধ্যে তার চেহারায় এক অপুরূপ লাবন্য অসীম সৌন্দয্য এড হয়েছে নীল্ চোখ ফেরাতে পারলনা।
মনে মনে বলল বর্ষা তুমি কি জানো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর চমত্কার মেয়ে হচ্ছ তুমি, আর কোনো দিন তোমাকে আমি চোখের আড়াল করতে পারবনা।
পিছন থেকে জোরে কেউ পিঠে চাপড় মারলো , তাকিয়ে দেখে রনি চাচা।
না নীল্ তোমার ভাগ্য দেখে হিংসা হচ্ছে, খুব সুন্দরী তোমার বউ বলল চাচা আন্তরিকতায়।
আজকে সাজ পোশাক এর জন্য বেশি সুন্দর মনে হচ্ছে, এমনি চাচা সাধারণ চেহারা লজ্জা পেয়ে বলল নীল্।
পরে কথা ঘুরিয়ে বলল বর্ষাকে ওর সফট সুন্দর মন এর জন্য বেশি ভালবাসি, চেহারা নিয়ে মাথা ঘামাইনা , রূপ আর কয় দিনের।
রনি আন্তরিক ভাবে নীল্ কে জড়িয়ে ধরলেন।
ক্যামেরা ম্যান এসে নীল্ আর রনি র ছবি তুলতে সুরু করলে রনি বাধা দিল।
কামেরামান একটু ত্যাড়া কোন পত্রিকার কামেরামান, নিষেধ করা সত্যেও সে শাটার চেপে দিল ,তারপর ঘাড় বাকা করে ভাব করলো এটা কোনো ব্যাপার, সে খুব তাচ্ছিল্যের চোখে রনি কে দেখতে লাগলো, বোঝা যাচ্ছে সে রাগানোর জন্য এ ছবি টা তুলল।
don’t do it এগেইন বললেন রনি চাচা ঠান্ডা গলায় ,চাচাকে কোনদিন এত অপ্রসন্ন অবস্থায় নীল্ আগে দেখেনি।
ক্যামেরা ম্যান আর ভিডিও ম্যান সবাই ছবি তুলছে, সবাই নীল্ কে ডাকছে দেখে নীল্ স্টেজ এর কাছে চলে গেল।
নীল্ হাত ইশারা করে রনি কে ডাকাতে স্টেজ এর কাছে এসে দাড়ালো, চাচা আমার বউ এর সাথে পরিচিত হও।
আমি তো ওনাকে ভালো ভাবে চিনি বর্ষা বলল হেসে।
কিভাবে চাচা হেসে জিজ্ঞাসা করলো।
আপনাকে তো সবাই চিনে টক্ শো এর কারণে, আপনি এখন অনেক ফেমাস জানেন আপনার স্পষ্টবাদিতার কারণে। এমনকি যারা আওয়ামী লিগ কে পছন্দ করেনা তারা কিন্তু আপনাকে অনেক পছন্দ করে, চাচা।
সর্বনাশ তুমি ও দেখি নীল্ এর মত আমাকে চাচা ডাকতে সুরু করছ, এত সুন্দর ইয়ং লেডি এর চাচা হতে চাইনা , বন্ধু হতে চাই বলল রনি হেসে।
ওকে চাচা তুমি যেমন আমার ফ্রেন্ড বর্ষার ও ফ্রেন্ড বলল নীল্ আন্তরিকতার সুরে।
আস চাচা একসাথে ছবি তুলি বলে সন্মতি চাইল নীল্।
এবার রনি আপত্তি করলনা ছবি তুলতে।
ছবি তোলা শেষে একসঙ্গে খেতে বসলো, নীল্ এর একপাশে বর্ষা আর এক পাশে রনি।
হটাত করে ঝড়ের মত এসে উপস্থিত হলো একটু আগের সেই কামেরামান, বলা নাই কওয়া নাই পট পট করে সুধু রনি র ছবি তুলতে লাগলো বর বধু র ছবি না তুলে ,
এইযে এইযে তুড়ি মেড়ে কামেরামান কে হাত উচু করে ডাকলো রনি
বর কনের ছবি তোলো, আমি পাত্র ও না বা কোনো ফিল্ম স্টার না একটার পর একটা ছবি তুলতে থাকবে বললেন তিনি করা সুরে।
আপনি ফিল্ম স্টার দের চেয়ে বড় স্যার, সে স্যার বললে গলার স্বরে তার অবজ্ঞা গোপন থাকলোনা।
সবাই খাওয়া শেষ করে সিংক এ হাত ধুতে আসল , একজন ব বেয়ারা হাত কচলে তার কাছে বখশিস চাইল।
একই ক্যামেরা ম্যান আবার যখন ক্যামেরা ক্লিক করলো রনি র দিকে এবার আর সে ছেড়ে দিতে চাইলনা এই ত্যাদর কে ।
কি ব্যাপার আমার ছবি নিয়ে ইনকাম এর ধান্ধা করছ নাকি? বলে রনি হাত চেপে ধরল কামেরামান এর।
কামেরামান চিল্লাফাল্লা সুরু করলো এম পি হয়েছেন বলে কি মাথা কিনে নিছেন নাকি ? গায়ে হাত তুললেন কেন?
হাত তুলিনি তবে তোলা উচিত ছিল বলল কড়া গলায় রনি।
আমি প্রধানমন্ত্রী না বা মন্ত্রী না, তাছাড়া আমি এখানে পার্সোনাল ভিসিট এ আছি, এটা কোনো প্রফেশনাল ভিসিট না। তোমাকে কতবার নিষেধ করছি যে ছবি তুলতে চাচ্ছিনা।
ক্যামেরা মান তারপর ও তর্কের ভঙ্গিতে বলে উঠলো আমি তো মাত্র দেখলাম বর কনের সঙ্গে গাদা গাদা ছবি তুলছেন।
সেটা আমার চয়েস আমি কার সঙ্গে ছবি তুলব না তুলব সেটা কি তুমি ঠিক করবে?
এখনি যদি চলে না যাও সত্যিকার মার খাবে।
চেচামেচি শুনে নীল্ আর রনি র সিকিউরিটি দৌড়ে আসল
কি হয়েছে স্যার সিকিউরিটি জিজ্ঞাসা করলো।
এ আবর্জনা কে বাহিরে রেখে আস বললেন আদেশের স্বরে।
আপনি এভাবে যা ইচ্ছে করতে পারেন না দেশটা আপনাদের একার না।
এবার রনি এসে একটা জোরে চড় বসিয়ে দিল কামেরামান এর গালে
এই ইচ্ছেমত কে চলছে তুই না আমি ? মানুষ কে সন্মান করতে শিখ,,প্রাইভেসী কে মর্যাদা দিতে শিখ, আমার মত এম পি কে তোর্ পাত্তা দেওয়ার দরকার নাই, বলে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।
সিকিউরিটি রা ধাক্কাতে ধাক্কাতে কামেরামান কে বাহিরে নিয়ে গেল।
রনি হতাশ হয়ে পাশের একটা চেয়ার এ বসে পড়ল।
নীল্ হতভম্ব হয়ে পড়ল পুরা পরিস্থিতিতে। রনি চাচার এত রাগী মুখ সে আজ প্রথম দেখল,এদিকে কামেরামান ফজলু সে স্পেশাল দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছে।
কি হয়েছে চাচা? জিজ্ঞাসা করলো হতাশ কন্ঠে
আর বলনা নীল্ এসব কেচো এর মত মিডিয়া ম্যান আছে এগুলিকে যে কি করি, এগুলি মনে করে এম পি গভট এর লোকদের খুচিয়ে নিউস তৈরি করলে ক্রেডিট। মিডিয়া ম্যান দের কাজ কি? অন্যায় অব্যবস্থাপনা নিয়ে লিখবে,মানুষ কে সচেতন করার মত, মানবতা বোধ জাগ্রত করার জন্য দেশের গরীব দের ফিচার তৈরি করবে,,,এদের ভাগ্য উন্নয়নে সরকার কে গাইড করবে, আর দেখো তাদের রোল বিশ্বজিত কে যখন সবাই কুপিয়ে যাচ্ছিল আমাদের মিডিয়া ম্যান ক্যামেরা ম্যান রা কি করছিল, পুলিশ ফোর্স এ খবর দেয়নি, বাধা দেওয়ার চেষ্টা না করে তারা রগরগে ছবি তুলেছে পরেরদিন নিউস স্টোরি এর জন্য, আওয়ামী সন্ত্রাসী দের রূপ দেখানোর জন্য। সন্ত্রাসী রা বিশ্বজিত কে খুন করছে আর তোমরা বলিউড এর মুভি দেখার মত করে আনন্দ নিয়ে দেখছ। আমি কিছু সত্যি কথা বলছি আমাদের পলিটিশিয়ান দের নেচার নিয়ে, কিছু সাংবাদিক আমার পিছু নিছে ,তাদের হয়তবা ধারণা কারো প্ররোচনায় এ কাজ করছি।
নীল্ যে কি বলবে খুঁজে পেলনা, অসহায় এর মত একবার রনি চাচা কে দেখছে আর তার বন্ধু ফজলুর কথা ভাবছে। বেচারা কিছু খেতে পারলনা। ==========================================================
রাশেদ দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দূর ভিতর থেকে বন্ধ, অনেকক্ষণ ট্রাই করে ও দরজা খুলছেনা, দরজা লাথি মারবে কিনা চিন্তা করতে দরজা খুলে গেল।
দরজায় যাকে দেখা গেল রাশেদ তার জন্য প্রস্তুত ছিলনা, লম্বা এলোকেশী জীবনানন্দের বনলতা সেন টাইপ এর মেয়ে তার ঘরে কি করছে?সে কি ভুল বাসায় চলে আসল নাকিরে?
তাকিয়ে দেখে বাসার নম্বর ঠিক আছে।
মেয়েটি তার বিব্রত অবস্থাটা বুজতে পারল।
সে ও বেশ জরসর হয়ে পড়ল, বলল আপনার মা এখনি এসে পরবেন।
আমার মা আর আপনার মা নিচে একটা বাসায় গিয়েছে দরকারে।
আপনি চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিন, ওনারা নিচ্চয় এর মধ্যে চলে আসবে।
রাশেদ বিব্রত বোধ করছে, ঠিক বুজতে পারছেনা অচেনা মেয়ে র সাথে ঘরে থাকবে? নাকি ঘরে থেকে বের হয়ে যাবে, কিছুক্ষণ পরে আসবে।
আবার দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে গেল এই ভেবে এই মেয়েটা সত্যি বলছে তো? এটা তো তার বাসা ,অচেনা একজনের দায়িত্বে বাসা দিয়ে চলে যাবে? এটা কি বোকামি হয়ে যাবে না?
নানারকম ভাবতে ভাবতে বারান্ধায় এসে দাড়ালো। ইশ ভাবছিল বাসায় এসে কড়া একটা ঘুম দিবে, ঘুম এ চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে, কালকে রাতে একেবারে ঘুম ভালো হয়নি।
মেয়েটিকে আবার বারান্ধায় দেখা গেল , বলল এই যে ফোন নম্বর আছে যেখানে আপনার আম্মা আছে ফোন করে দেখতে পারেন তাহলে টেনশন ফ্রি হতে পারবেন।
রাশেদ নম্বর নিয়ে ঘুরাতে ওখানে কেউ একজন ধরল, পরিচয় দিয়ে মায়ের কথা বলতে কিছুক্ষণ পরে এসে মা ফোন ধরল।
ওহ মা তুমি যে কি করনা অচেনা এক মেয়েকে রেখে বাসা থেকে হওয়া বলল রাশেদ ফিসফিসিয়ে , ভয় পাছে মেয়েটি শুনতে পায় তার কথা।
তোর্ অপরিচিত আমার তো অপরিচিত না ,তোর্ রাহেলা খালার মেয়ে, তোর্ মনে নাই , ছোটবেলায় যাত্রাবাড়ি থেকে যে এক খালা আসত, তোকে কত আদর করত, বলত রেহনুমা র জন্য তোকে বাছাই করে রাখছে।
উহ মা থামাও তোমার পাগলের কথা বার্তা , মায়ের কোনো সেন্স হলনা, সবাই নিচ্চয় মায়ের সব কথা শুনতেছে।
ওকে আমি তাহলে বাহির থেকে ঘুরে অসি , একঘন্টা পরে বাসায় আসব। ঘর থেকে বের হয়ে চিন্তা করছে কোথায় যাওয়া যায়। দেখি অনুশকার বাসা ট্রাই করা যাক।
দোকান থেকে চিপস ,চকলেট কিনে অনুশকার বাসায় গেট খুলে ডুকতে দারোয়ান এর ড্রেস পরা এক লোক এগিয়ে এলো
আফনে কাহারে চান ভাই সাহেব ? দারোয়ান দৌড়ে এসে পথ আগলে দাড়ায়।
এই সাধু রীতির দারোয়ান কবে থেকে রেশমি নিয়োগ দিল, একে তো কালকে দেখেনি।
অনুশকা ওরা বাসায় নাই ? অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে রাশেদ।
তেনারা আজকে সকাল বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। দারোয়ান জবাব দেয়।
রাশেদ ভীষণ অবাক হয় চলে গেছেন মানে এটা তো তাদের বাড়ি।
এটা খালুজানের বাড়ি, আপার বাবার। কালকে ভাইজান এসে আপারে নিয়া গেছে তেনাগো গুলশান এর বাড়িতে।
মানি এটা কোন ভাইজান ? রাশেদ দুশ্চিন্তার স্বরে জিজ্ঞাসা করে।
অনুশকা মামনির বাবা।
এই সাধু রীতি কি বলতেছে কিছু ই বুজতে পারছেনা রাশেদ, অনুশকার বাবা বাহির থেকে কবে আসল।
রাশেদ মানসিক ভাবে দমে গেলেও সে বারবার রেশমি র সেল এ ট্রাই করতে লাগলো।
বারবার বলছে মোবাইল ইস সুইসএড অফ ,ঘরের ফোন করাতে জানলো লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে।
কি এমন হয়েছে একরাতের মধ্যে কোনো মেসেজ ছাড়া সে চলে যাবে।
ভগ্ন মন ব্যথিত হৃদয় নিয়ে রাশেদ বের হয়ে আসল। তার মাথা এত ঘুরতে লাগলো মনে হচ্ছে বমি হয়ে যাবে। এমনি তে সে শারীরিক ভাবে দুর্বল , তারপর কালকে রাতে একেবারে ঘুম না হওয়া, দুপুর থেকে বলা যায় অভুক্ত একরকম, ঘরে গিয়ে রেস্ট হয়নি তার সঙ্গে রেশ্মির রহস্য জনক অন্তর্ধান রাশেদ কে একেবারে নির্জীব করে দিল।
সে চোখে জাফশা দেখছে এলোমেলো ভাবে পা ফেলে হাটছে প্রাথ্হনা করছে আল্লাহ আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাও, মায়ের কোলে মাথা রেখে শুলে তার সব যন্ত্রণার অবসান হবে।
পিছন থেকে কার ও জোর গলার আওয়াজ পেয়ে তাকাতে দেখে অনুশকাদের দারোয়ান
ভাইজান ভাইজান চিত্কার করে ডাকতে ডাকতে ছুটে আসছে দারোয়ান
আফনের নাম কি রাশেদ ? আপামনি এই চিঠি টা রাখিয়া গিয়াছে আফনের লাগি।
আপনার শরীর ঠিক আছে তো ভাইজান,আপনারে কেমন জানি দেখাইতেছে।
আমি ঠিক আছি বলে চিঠি হাত থেকে হাটতে সুরু করলো।
এইযে মিয়া সরেন সরেন আরে এ কি চোখে দেখে না নাকি পিছনের রিকশা বেল বাজাতে বাজাতে আসছিল, সাইড দিয়ে ধাক্কা লেগে রাশেদ রাস্তায় পড়ে গেল।
অজ্ঞান হওয়ার আগ মুহুর্তে দেখল এক অনিন্দ সুন্দর মায়াবী মুখ তার দিকে ঝুকে আছে আর পানির জাপটা দিছে আর বলছে আপনার কি হয়েছে ?
তার মনে পড়ল কিছুক্ষণ আগে তার বাসায় দেখা সেই বনলতা সেন। মূর্ছিত হতে হতে চিন্তা করতে লাগলো আল্লাহ জীবনানন্দের বনলতার সঙ্গে বারবার আমার সংঘর্ষ হচ্ছে কেন, আমার মত অপয়া ভাগ্যহীন দের জীবনে প্রেম ভালবাসা বা বনলতাদের কোনো ঠাই নাই, ভাবতে ভাবতে চোখের কোলে একটু জল আসল, পরক্ষণে সে মূর্ছিত হয়ে গেল।
(পরবর্তীতে)