Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

উপন্যাস ” অমর প্রেম ” শেষ পর্বঃ ১৯

: | : ৩০/১০/২০১৩

এ খবর স্বয়নদের বাড়িতে পৌছা মাত্রই জ্ঞান হারিয়ে ফেলল । মাকে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলো । বাড়িতে অশান্তির শোক বন্যা বয়ে যাচ্ছে । অপর দিকে কেরাণীর পরিবারে সুখ শান্তির সুবাসে মোহিত হয়েছে । বাদশা থালায় পানি নিয়ে নাচছে । স্বয়নের জেল হবে চৌদ্দ বছর শুধু সাথীর মুখে একটি হ্যাঁ স্বাক্ষীর অপেক্ষা ।

প্রিয় বন্ধু জাহিদ পরের কুড়িগ্রাম জেলখানায় গেল স্বয়নকে দেখতে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলল ,
বন্ধু তোর কোন কোন উপকার করতে পেলাম না , আমাকে ক্ষমা করে দে ।
শুনতেছি সাথী এখন ওর ফ্যামিলীর পক্ষে চলে গেছে । তোর চৌদ্দ বছর জেল হতে পারে আবার ফাঁসিও ।
স্বয়ন হেসে হেসে উত্তর দিল ,
তুই কাঁদছিস কেন ? পাগল ছেলে ।
সাথীকে পাবার জন্য মরণ হলে , এতো আমার সৌভাগ্য ।
এর থেকে অধিক সুখ আমি পৃথিবীতে পাব না । আমি মরেও বেঁচে রবো সবার মাঝে । আমাকে নিয়ে লেখা হবে কবিতা , গল্প , গান , উপন্যাস , লেখা হবে কত বই আমি প্রচার হবো সংবাদ মাধ্যমে ।
ছোট করে হলেও ইতিহাস হয়ে থাকবে আমার প্রেম ।
কি ঠিক বলছি না ? হেসে হেসে বলছে ।
আসলে এটা তো হাসি নয় কষ্টের অশ্রু কখনো কখনো পাথর হয়ে হাসে ।
জাহিদ আমার ইচ্ছে করে ?
কি দোস্ত ?
জানতে ।
কি জানতে ?
স্বয়ন এবার সত্যিকার অশ্রু মাখা কন্ঠে মান্না দের এই গানটি গাইতে শুরু করল –

খুব জানতে ইচ্ছে করে
তুমি কি সেই আগের মতই আছো
না কি ?
অনেক খানি বদলে গেছো
ঐ ….।।
………………………………
………………………………

তিন দিন পর স্বয়নদের বাড়িতে কোর্ট থেকে নোটিশ এলো আগামীকাল স্বয়নের মামলার রায় হবে ।
জুম্মাহাট ও বামনাছড়া উভয় এলাকার লোকজন এ রায় দেখতে ছুটে গেল কুড়িগ্রাম আদালতে । স্বয়নের মাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে রেখে সবাই চলে গেল কোর্টে । আদালতের কার্য যথা সময়ে আরাম্ভ হলো ।
স্বয়ন একটি কাঠগড়ায় সাথী অপর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে । সাথীর পরিবার ভীষণ খুশি কারণ সাথীকে ময়না পাখির মত বুলি শিখিয়েছে । সে কথাগুলোই ময়না পাখি ব্যক্ত করবে । ওদের বিশ্বাস সাথী ওদের শেখানো কথাগুলো বলবে কাঠগড়ায় ওঠার পূর্বেও স্বীকার করেছে ।
প্রথমে মেয়ে পক্ষের উকিল স্বয়নের নামে মিথ্যা অভিযোগ করে বলল ,
জর্জ সাহেব এই ছেলেটি একজন চরিত্রহীন লম্পট অপহরণকারী । ফুলের মত নিষ্পাপ নাবালিকা সাথীকে পর পর দুইবার অপহরণ করেছে । আমি এই ঘৃণিত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি ।
স্বয়নের পক্ষের এক মহিলা উকিল বলল ,
জর্জ সাহেব , আমি প্রতি পক্ষ উকিলের ন্যায় বানোয়াট কথা বলব না । যে ব্যক্তির অপহরণের অভিযোগ উঠেছে সে ছাড়া সত্য বিষয়টি কে সঠিক জানতে পারবে ?
আমি সেই সাথীকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানাচ্ছি । জর্জ সাহেব অনুমতি দিলেন । উকিল সাহেব সাথীর সমুখে গিয়ে আঙ্গুল উঠিয়ে স্বয়নকে দেখিয়ে দিয়ে বলল ,
আপনি কি ঐ ছেলেটিকে চেনেন ?
হ্যাঁ ,ভাল করেই চিনি ।
কত দিন ধরে ?
প্রায় তিন বছর ধরে ।
আপনার সাথে ওনার কি সম্পর্কে ?
ও আমার হাজব্যান্ড ?
এর কোন ডকুমেন্টস আছে ?
হ্যাঁ ।
কোথায় ?
ওর কাছে ।
স্বয়নের মামা বিয়ের যাবতীয় প্রমাণাদি উকিলের কাছে দিলেন ।
সাথীর কথা শুনে কেরাণী গ্রুপের মন খারাপ হয়ে গেল ।
পরে জিজ্ঞাসা করল ,
সত্যি করে বলুন , স্বয়ন কি আপনাকে অপহরণ করেছিল ?
স্বামী কখনো স্ত্রীকে অপহরণ করে আমি শুনি নাই আজ শুনলাম ।
আমাকে স্বামীর বাড়িতে যেতে দিত না দিনরাত ঘরে আটকে রাখত । একদিন দিন আমি সুযোগ পেয়ে পালিয়ে স্বামীর বাড়িতে গিয়েছি , এর নাম কি অপহরণ ?

আমি আদালতের কাছে প্রার্থনা জানাই আমাকে আমার স্বামীর বাড়িতে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন । আমি আর ঐ জালিম পরিবারে যেতে চাই না । ওনি আমার পিতা নামের কলংক ।

এ কথা শুনে জর্জ সাহেব আর দেরি করল না স্বয়ের নিঃশর্ত মুক্তি দিলেন সেই সঙ্গে সাথীকে আইনের সহায়তায় স্বয়নের বাড়িতে পৌছে দেয়ার নির্দেশ দিলেন ।
রায়ের সাথে সাথেই স্বয়নদের এলাকার লোকজন কোর্টের সামনে নাচানাচি করতে লাগল । শুধু তাই নয় আনন্দে রং মাখামাখি খেলতে লাগল ।
আর জুম্মাহাটের লোকজন পরাস্ত কুকুরের ন্যায় লেজ বাঁকিয়ে বাড়ি ফিরে গেল । কেরাণী ও বাদশা লজ্জায় মাথা তুললো না । সাথী যাবার সময় বলল ,
যদি এবার আমাকে আনতে যান তাহলে আমি গলায় দড়ি দেব ।

পুলিশ ভ্যানে স্বয়ন , সাথী ও আত্মীয়দের পৌছে দিতে রহনা দিল ।
সাথী সরাসরি হাসপাতালে গেল শ্বাশুরী মাকে দেখতে । অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে আছে । সাথী মাকে ডাকতে লাগল ,
মা উঠো , দেখ আমি এসেছি । মায়ের জ্ঞান তবুও ফিরল না । স্বয়ন সাথী এক সঙ্গে কাঁদতে লাগল । এ কাঁন্না যেন মাকে সংবাদ দিল স্বয়ন সাথী ফিরে এসেছে ।
মায়ের জ্ঞান ফিরে এলো চোখ খুলে স্বয়ন সাথীকে এক সাথে পেয়ে বুকে জড়িয়ে আনন্দে ডুকরে কাঁদতে লাগল ।
নার্স এসে বলল ,
কি সর্বনাশ ! কাদঁছেন কেন ?
আপনি তো অসুস্থ ।
মা উত্তর দিল ,
কে বলেছে আমি অসুস্থ ?

( সমাপ্ত )

( এই উপন্যাসটি আমি লিখেছিলাম যখন আমি ক্লাস নাইন ও টেনে পড়ি । দুঃখের বিষয় অর্থের অভাবে বই আকারে প্রকাশ করতে পারিনি । ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন । এই ব্লগে প্রথম প্রকাশ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত । আর উপন্যাসটি আমি হতভাগা টাইপ করেছি মোবাইলের মাধ্যমে । আমি সবার নিকট দোয়া প্রার্থী )

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top