Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ক্লান্তি দূর করতে তারুণ্যের প্রথম পছন্দ ‘স্পা’

: | : ৩১/১০/২০১৩

1

কিছুদিন হল আমাদের দেশে ‘স্পা’ বিষয়টির আবির্ভাব। ‘স্পা’ এক ধরনের জল চিকিত্সা পদ্ধতির নাম। জলের সঙ্গে সুগন্ধি, দুধ, মধুসহ কিছু ভেষজ উপকরণ মিশিয়ে স্পা’র মাধ্যমে শরীর ও মনের সুস্থতা নিশ্চিত করা হয়। কর্মব্যস্ত জীবনে শারীরিক ক্লান্তি দূর করে নতুন উদ্যোম ফিরে পাবার কৌশল হিসেবে তরুণ-তরুণীদের কাছে ক্রমেই এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সৌন্দর্য চর্চাকারীদের জন্য এই নতুন সেবাটি এখন দেশের অধিকাংশ বিউটি পার্লার ও আন্তর্জাতিক মানের হোটেলগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে।

 

শরীর আর আত্মার সুস্থতায় ‘স্পা’ নবআনন্দে জেগে উঠার একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতির নাম। রূপ বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান কর্মব্যস্ত আর সমস্যাবহুল জীবনে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অবলম্বন ‘স্পা’। আমাদের দেশে এটি নতুন হলেও ‘স্পা’র ইতিহাস মোটেও আধুনিক নয়। সুপ্রাচীন কাল থেকে ‘স্পা’র ব্যবহার হয়ে আসছে। ‘স্পা’ শব্দটির মধ্যেই আছে এর অন্তর্নিহিত তাত্পর্য। SPA এর আভিধানিক অর্থ হল Sanus Per Aquam বা ‘হেলদি বাই ওয়াটার’ অথবা ‘হেলদি থ্রু ওয়াটার’। অর্থাত্ জলের দ্বারা সুস্থতা। তবে আধুনিক কালে ‘স্পা’র অন্য একটি ব্যাখ্যাও রয়েছে। আর এটা হলো: ‘স্কিন প্যাম্পারিং অ্যান্ড এজ ম্যানেজমেন্ট’। বয়স ধরে রাখার মধ্য দিয়ে সজীব সুন্দর আর যৌবনপ্রাপ্তিই আধুনিক ‘স্পা’র মূল মন্ত্র। যার প্রয়াস ছিল যুগে যুগে দেশে দেশে। সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ সুন্দর থাকার আদম্য সাধনায় মত্ত হয়েছে সব যুগে সব দেশে। তাই ‘স্পা’র ইতিহাসও খুব প্রাচীন।

 

ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ শতাব্দীতে মিসরে জল ও ভেষজ তেলের ব্যবহারের মাধ্যমে রোগ নিরাময় ও সৌন্দর্য চর্চা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে যা ছড়িয়ে পড়ে গ্রীক ও রোমানদের মধ্যে। তবে সপ্তদশ শতকে বেলজিয়ামের ছোট শহর ইস্পার উষ্ণ প্রস্রবণগুলোতে স্নানের মাধ্যমে রোগ নিরাময় ধারণা থেকে ‘স্পা’র প্রচলন শুরু। জনশ্রুতি ছিল এই নগরীর মিনারেল বা খনিজ লবণযুক্ত উষ্ণ প্রস্রবণগুলোর জলে রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আছে । মূলত সেখান থেকেই ‘স্পা’র আধুনিক কনসেপ্টের যাত্রা শুরু।

 

আমাদের এই উপমহাদেশে ভেষজ উপকরণ, প্রাকৃতিক উপাদান আর জল দিয়ে রোগ নিরাময়ের পদ্ধতি আয়ুর্বেদ চিকিত্সা হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়।

2

শরীর মন আর আত্মা নিয়ে আমাদের জীবন। ব্যস্ত জীবনযাত্রায় শরীর হারায় ভারসাম্য, দূষিত পদার্থ জমে দেহে। দেখা দেয় নানা রোগ। ‘স্পা’র মাধ্যমে এই দূষণ দূর করে শরীরের সুস্থতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। স্পা ‘পঞ্চকর্ম পদ্ধতি’ মেনে ব্যথা উপশমসহ নানারকম রোগ থেকে মুক্তি দেয়। আধুনিককালে স্পা করা হয় বিজ্ঞানসম্মত ভাবে। যা ভেষজ সুগন্ধিযুক্ত তেল মাসাজ, ফ্যাসিয়াল, প্যাডিকিউর, মেনিকিউর, স্নান আর সুষম আহারের সঙ্গে সুরের মূর্ছনায় সম্পন্ন হয় একটি ‘স্পা জার্নি’র মধ্য দিয়ে।

 

এক সময় ঈষদুষ্ণ জলে স্নান কিংবা ‘ভ্যাপার সাওয়ার’ নেয়া হতো। সেই স্নান ঘরকে বলা হত ‘ল্যাকেনিক’। রোমানরা এই স্নান ঘরকে আরও বিলাসবহুল করে নাম দেয় ‘বালনিয়াম’। ‘বালনিয়ামে’র উন্নত স্নান সেবা ‘ডায়োক্লেশিয়ান বাথ’ নামে পরিচিত ছিল। এই সকল স্নান ঘরে একসাথে ৬০০০ মানুষ স্নান সেবা নিতে পারতেন। রোমান সম্রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল এই স্নান ঘর। কালক্রমে খেলাধুলা, শরীর চর্চা এবং রেস্তোরাঁ যুক্ত হয়ে স্নান ঘরগুলো বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়। খেলাধুলা ও শরীর চর্চার ফলে ঘাম হলে তিনটি ঘরে উষ্ণ জলে স্নান করে এই ‘স্পা জার্নি’ সম্পন্ন করা হতো। প্রথমে সবচেয়ে বড় ও বিলাসবহুল ঘর ‘টেপিডারিয়াম’ এ বিভিন্ন রকমের সুগন্ধি তেল মাসাজ করা হত। পরে অপেক্ষাকৃত ছোট ‘কালডেরিয়াম’ ঘরে নিজের পছন্দমত শীতল অথবা উষ্ণ জলে স্নান করতে হতো। সবশেষে সবচেয়ে গরম ঘর ‘ল্যাকোনিকাম’ এ স্নানপর্ব সারা হতো। উষ্ণতা ব্যবহার করে ক্লান্তি আর অবসাদ ঘোচানোর কারণেই এই স্নান ঘরের নাম হয় ‘থারমি’ বা তাপ। রোমানরা প্রায় দুইশ’ বছর ‘থারমি’র সেবা উপভোগ করেন। ‘থারমি’তে শরীর মাসাজ করতে ভেষজ তেলের পাশাপাশি ‘স্ক্রাব’ ব্যবহার করে শরীরের নিষ্প্রাণকোষ তুলে ফেলা হতো। এ কাজে ব্যবহার হতো ‘স্ট্রিজিল’ নামক বিশেষ যন্ত্র। আর হাতের নানা অংশ দিয়ে কৌশলে মাসাজ করার পদ্ধতি জানা ছিল তাদের। এই মাসাজের মাধ্যমে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়ে উজ্জীবিত হতো মানুষ।

3

‘থারমি’র পরে রোমানরা ‘পুল পিজিডারিয়ামে’ শীতল স্নান শেষে সব ক্লান্তি ঝেরে ফেলে বেরিয়ে আসতেন সজিব সুন্দর হয়ে। ৭৩৭ খ্রিস্টাব্দে জাপানে ‘ওনসেন’ নামে এক ধরনের উষ্ণ স্নান এর প্রচলনের ছিল। পরে জাপানীরা ‘রিয়োকেন’ নামের সরাইখানায় চালু করে মানসিক ও শারীরিক অবসাদ উপশমের জন্য বিশেষ ধরনের স্নান। ইস্তাম্বুলের হাম্মামখানা এই ধরনের স্নানের জন্য বিখ্যাত ছিল। মোঘল সম্রাটদের হাম্মামখানা বিলাসবহুল স্নানের জন্য বিখ্যাত ছিল। দুধ, মধু চন্দন, হলুদ, এলোভ্যারা, তিলের তেল ও ফুলের পাপড়ি ভেজানো জল দিয়ে মোঘল সম্রাজ্ঞীরা করতেন রূপ ধরে রাখার চর্চা।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top