Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

নিকৃষ্ট বৈধ কাজ বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ ও প্রতিকার

: | : ০১/১১/২০১৩

বিবাহ বিচ্ছেদের সাথে সাথে একটি দাম্পত্য সর্ম্পকের অবসান ঘটে। এর মাধ্যমে শুধু স্বামী-স্ত্রীর সর্ম্পকেরই অবসান ঘটে না, দুটি পরিবারের সমস্ত আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে সর্ম্পকের অবসান ঘটে। আমাদের সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ যদিও কোন অপরাধমূলক কাজ নয় এবং এর পেছনে ধর্মীয় সমর্থন আছে তথাপি এটা একটা নিকৃষ্ট বৈধ কাজ। তাই যতটা সম্ভব এই নিকৃষ্ট বৈধ কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়েই সমস্যার সম্মুখীন হয়। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে পুরুষের চেয়ে নারী সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়ে। কেননা যে নারী স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরশীল, সে নারী যখন তালাকপ্রাপ্ত হয় তখন সে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? হয়তো বা তার বাবা-মা এখন বেঁচে নেই বা বৃদ্ধ। আর অনেকের হয়তো ভাই নেই বা যাদের ভাই আছে তারা যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। এ মূহূর্তে যদি ভাইয়েরা তাকে আশ্রয় দেয় তাহলে তাদের করুণার উপর বেঁচে থাকতে হবে। বাবা-মা, ভাইয়েরা তার অন্যত্র বিয়ে দিতে গিয়েও সমস্যার সম্মুখীন হয়। এমন অবস্থায় একজন তালাকপ্রাপ্ত নারী কত যে অসহায় তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না। অন্যদিকে পুরুষ কিন্তু তেমন সমস্যার সম্মুখীন হয় না। তারা ইচ্ছে করলে অন্য জায়গায় বিয়ে করতে পারে। আবার না করেও সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারে। কেননা পুরুষ কারো উপর নির্ভরশীল নয়। বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে সমাজ স্বামী-স্ত্রী উভয়কে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে। বিশেষ করে নারীরা হয় সমাজের উপহাসের পাত্র। অনেক তালাকপ্রাপ্ত নারীকে কটুক্তি করে বলে, কপাল পোড়া, কুলক্ষে, পোড়ামুখী ইত্যাদি। খুব কমক্ষেত্রেই পুরুষকে দোষারুপ করতে দেখা যায়। বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি হচ্ছে সন্তান-সন্তুতি লালন-পালন, অভিভাবকত্ব, সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে। অনেক সময় এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আলাদলতের শরণাপন্ন হতে হয়। যার ফলে সন্তানরা অবহেলিত হয়। তারা মাতা-পিতার আদর, স্নেহ, ভালোবাসা ও জন্মগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারণে এসব অবহেলিত সন্তানরা সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। যেমন- সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত দু’টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা তুলে ধরা যেতে পারে।
১.    বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ ও গুলতেকিন।
২.    সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ ও বিদিশা।
বিবাহ বিচ্ছেদের একাধিক কারণ আছে। সেই কারণগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তারপর কিভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ রোধ করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে আমাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হবে না। যেমন-
১.    যৌতুক: বিবাহ বিচ্ছেদের কারণগুলোর মধ্যে প্রথম যে কারণটির কথা উল্লেখ করা যায় তা হলো যৌতুক। যৌতুকের কারণে কত সংসার যে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে তার কোন হিসাব নেই। অনেক কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা-মাতা যৌতুক প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কন্যাকে বিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু পরবর্তীতে যারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যৌতুক প্রদান করতে পারেনি তাদের কন্যারা ঐসব যৌতুক লোভী স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত হন।
২.    যৌন অসামঞ্জস্যতা: তারপর যে কারণে তালাকপ্রাপ্ত হতে পারে তা হলো যৌন অসামঞ্জস্যতা। অনেক অক্ষম পুরুষ আছে যারা যৌন মিলনে নারীকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিতে পারে না। অসৎ পথে চলে ও বিভিন্ন পতিতালয়ে গমন করে যৌন ব্যাধিতে ভুগছে। যার ফলে নারী স্বেচ্ছায় ঐসব পুরুষদেরকে ডির্ভোস দিতে বাধ্য হয়।
৩.    পরকীয়া প্রেম: পরকীয়া প্রেম নারী-পুরুষের সংসার ভাঙ্গনের অন্যতম একটি কারণ। পরকীয়া প্রেম ও বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যৌন অসামঞ্জস্যতার কারণেও হতে পারে। আবার মতের অমিল বা ভুল বুঝাবুঝির কারণে হতে পারে। বিশেষ করে ঐ সব সংসারে পরকীয়া প্রেম বেশী ঘটে যেসব সংসারে স্বামী-স্ত্রীর পৃথক বসবাস করে। যেমন বর্তমানে যারা সদ্য বিবাহ করে প্রবাসে চলে যায় তাদের ক্ষেত্রেই বেশির ভাগই দেখা যায় তার স্ত্রী অন্য পুরুষের হাত ধরে চলে গেছে। যার ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
৪.    নেশা: অনেক পুরুষ আছে যারা নেশা করে। দেখা যাচ্ছে তারা নেশা করতে গিয়ে সংসার চালাতে অক্ষম হয়ে পড়ছে। কখনো বা নেশা করে এসে স্ত্রীকে অযথা মারধর বা গালমন্দ করে। যার ফলে সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হয়। ক্রমে ক্রমে সংসারে অশান্তি বেড়েই চলে। ফলে এক সময় বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।
৫.    বহুবিবাহ: এটি বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম একটি কারণ। দেখা যাচ্ছে একজন পুরুষ যখন তার স্ত্রীর অসম্মতিতে অন্য একটি নারীকে বিয়ে করে তখন সংসারে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। কারণ কোন নারীই চায় না তার স্বামীর সোহাগ অন্য কোন নারী পাক। নারী সব সহ্য করতে পারলেও সতীন সহ্য করতে পারে না। যার ফলে ঐ নারী এক সময় স্বামীকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
এভাবে আরো অনেক কারণ আছে যা স্বল্প পরিসরে এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তাই নারী-পুরুষের সকলের উচিত বিবাহ বিচ্ছেদের কারণগুলো চিহ্নিত করে সমঝোতার মাধ্যমে তার সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। কথা আছে, ‘সংসার সুখরে হয় রমণীর গুণে।’ একথাটি পুরোপুরি আমি বিশ্বাস করতে পারি না। কারণ সংসার শুধু রমণীর গুণে সুখের হতে পারে না। যদি পুরুষের গুণ না থাকে। তাই আমি মনে করি সংসার সুখের হয় নারী-পুরুষ উভয়ের গুণে। তবে নারীদেরকে একটু বেশী গুণী হওয়া উচিত। তবেই সংসার সুখের হবে। এক সাথে সংসার করতে গেলে টুকটাক ঝগড়া ঝাটি হবেই। তবে এই ঝগড়াটিকে সংসারের ভিতরেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আর কোন বিষয়ে মতনৈক্য দেখা দিলে দু’জনে মিলে সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আর যৌন মিলনে পুরুষ যদি অক্ষম হয় তাহলে দুজনে পরামর্শ করে ভাল ডাক্তারে মাধ্যমে তা সারিয়ে তুলতে হবে। তাহলে সংসার সতিই সোনার সংসার হিসেবে রূপ নিবে।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top