ভুতের গলির সেই ভূত কি ফিরে এলো ?????
পূর্ব প্রকাশের পর
আশফাক দৌড়াচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে ,ছুটছে বাতাসের গতিতে। তার আর ঘূর্ণি ঝড়ের দৌড়ের প্রতিযোগিতা। সবাই ঘুর্নিঝড়ের দলে। মেঘ, বিজলি ,আকাশ,বাতাস ,তুফান সবাই শোরগোল করে কোরাস গাইছে,
ঘূর্ণি ঝড় ঘূর্ণি ঝড়
এগিয়ে যাও এগিয়ে যাও
আমরা আছি তোমার সাথে।
আশফাক এর পক্ষে সুধু নিলুফা, সে সুধু মৃদু গলায় বলছে আশফাক,আশফাক।
প্রতিযোগিতা হলো ওই দূর পাহাড়ের মাথায় একটা পতাকা লাগানো আছে। ঘূর্ণিঝড় যাওয়ার আগে আশফাক কে ওই পতাকা নিয়ে এখানে ফিরে আসতে হবে।
আশফাক হেরে গেছে, তাকে এখন মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। আকাশ আর বাতাস এর চাপায় বিজলি গেথে দেওয়া হবে গলায়। শক্ত করে নিলুফা তাকে ধরে আছে আকাশ,বাতাস এর সঙ্গে,বিজলি এগিয়ে আসছে তার দিকে।
আশফাক আর্তচিত্কার করছে,নিলুফা আমাকে বাচাও ওদের হাত থেকে।
নিলুফা কঠিন গলায় বলছে তা হয়না সোনা তুমি শর্তে হেরে গেছ, এখন কিছু করার নাই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে।
আশফাক এর মুখ থেকে গো গো আওয়াজ বের হতে থাকে।
এই এই নিলুফা তাকে ধাক্কা মেরে ডাকছে, এরকম অবস্থায় হাত পা কাপতে কাপতে তার ঘুম ভাঙ্গে।
হলি কাউ এটা কি সপ্ন? ঝড় বৃষ্টি মনে হছে ঘর বাড়ি ভেঙ্গে ফেলবে।
ড্রয়িং রুম থেকে নিলুফার চিত্কার শোনা যাচ্ছে।
এই জানালা লাগিয়ে দাও, আমি পারছিনা।
ওরে বাবা বৃষ্টির ছাতে সোফা কার্পেট অনেকখানি ভিজে গেছে।
বাপরে এরকম ঘুম মানুষ যায়, তোমারে টানা বিশ মিনিট চিত্কার করে ডাকছি, দরজা জানালা যেভাবে বাড়ি দিয়ে শব্দ করছিল।
আমি তো মরে গেছিলাম, ঘুমাছিলামনা, তুমি আর বিজলি মিলে আমার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করছিলে।
কি বলছ?নিলুফা জিজ্ঞাসা করে অবাক হয়ে।না মজা করছি।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে কাপড় চেঞ্জ করতে করতে ভাবে এই জিওগ্রাফি চেঞ্জ করতে হবে, পেট টা ফুটবল এর শেপ নিছে।
এই তুমি জিম এ ভর্তি হও, মোটা হয়ে যাচ্ছ কিন্তু।
আমি কি আর খেয়ে মোটা হচ্ছি,অযত্নে মোটা হচ্ছি। আমারে যত্ন করার কেউ নাই।
কাজ থেকে আসছি সেই পাচটায, এখনো না পেয়েছি চা, না খেয়েছি ভাত, তারপর ও যদি মোটা হই আর কি করা।
ছি এইভাবে বলছ? তুমি ই তো বলছ ঘুমাতে চাও।
আমি তোমার রোমাঞ্চে বাগড়া দিতে চিনি। নায়ক রাজ রাজ্জাক এর সাথে কল্পনায় কবরী হয়ে নাচছ,..
যাও পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিল আশফাক কে নিলুফা।
তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে আস ফ্রেশ হয়ে, আজকে তোমার সব প্রিয় তরকারী রান্না করেছি।
নিলুফার সাথে খুনসুটি করতে করতে খাওয়া, মজা করে অনেকদিন পর অনেক বেশি খেয়ে ফেলল। নিজেকে ভালই তো সুখী আর পরিতৃপ্ত মনে হচ্ছে, একটু আগে দেখা উদ্ভট সপ্নের রেশ ও রইলোনা মনে।
==========================================
মিজান ফাইল নিয়ে ম্যাডাম এর রুম এর দিকে আসতে শুনতে পেল কাকে ফোন এ বলছেন একটা গাধা জযেন করছে দুইদিন হলো এক কথা ১০০ বার বললেও বুজেনা। দেখে মনে হয় পড়ালিখাও নাই কিভাবে এই মুর্খ এই অফিস এ কাজ পেল আল্লাহ জানে।
মিজান ডোর নক করলো তাড়াতাড়ি, কাজ ফাকি দিয়ে গসিপ কি দেখছ গাধামির,এখন দেখবে বুড়ি ময়না গাধা কত প্রকার আর কত জাতের ।
কাম ইন বলতে মিজান ভিতরে ঢুকলো,ফোন এ কথা বলতে বলতে হাত বাড়িয়ে ফাইল চাইল ইশারায়। বসতে বললনা।
মরি মরি
কি রূপ তোমার
বুড়ি বুড়ি
যত করছ
চেষ্টা সাজতে
পুড়ি ছুড়ি
তুমি দেখতে
একেবারে
হদ্দ বুড়ি।
ছড়া টা বার বার মনে আবৃত্তি করে মনের ঝাল মেটাল। খুব শব্দ করে চেয়ার টা টেনে হাত পা ছেড়ে আয়েশ করে বসলো। বড় বড় হাই তুলতে লাগলো।
ম্যাডাম কি যে বলব একেবারে ঘুমাতে পারিনি কালকে রাতে। এত ছারপোকা যে কি বলব, সারারাত গায়ের উপর হাটাহাটি করছে আর রক্ত শোষণ করছে। ইচ্ছে করে মিজান বই এর ভাষায় কথা বলছে। আমারে গাধা বলে। বলে হাত দিয়ে ম্যাডাম এর চোখের সামনে ছারপোকার ভঙ্গি করছে।
এই এরকম করছেন কেন ? আপনি কি ছারপোকা নাকি ,মহিলা এমন ভাবে তাকে দেখছে মনে হচ্ছে সে ছারপোকা বা তার গায়ে ছারপোকা হাটছে।
সাজের বাহার দেখো তারে আকৃষ্ট করার জন্য মনে হয় একটা লিপস্টিক পুরা ইউস করছে, চোখের পাপড়ি তে লাগছে আলকাতরা ,গালে কত কিছু লাগাইছে, যেন কাজ করতে আসেনি মডেলিং এ আসছেন।
আহা এর পাশে তার কেয়া কত স্নিগ্ধ, সুন্দর, একটু সাজেনা, তারপর ও কত সুন্দর, মিজান ওয়ালেট টা বের করে কেয়ার ছবি টা দেখল। এতক্ষনে তার মনে শান্তি ফিরে এলো। যাক ম্যাডাম তোমাকে মাপ করে দেওয়া হলো আমার মিস্টি বৌটার জন্য। শেষ বার এর মত একটু বিরক্ত করি।
ম্যাডাম তাকে জরুরি ভাব করে ফাইল দেখিয়ে কি যেন বলতে চাচ্ছিল সে ওয়ালেট থেকে কেয়ার ছবি দেখিয়ে বলল ম্যাডাম আমার ওয়াইফ।
কাজে বাধা পেয়ে থমকে গেল ম্যাডাম, গম্ভীর মুখে বললেন হা সুন্দর।
কি বলেন জানেন ওত আমিন জুএলারস এর এড এ চানস পেয়েছিল। আমি করতে দেইনি। ডাহা মিথ্যে কথা বলল মিজান, মিথ্যে কথা বলে সে খুব মজা পেল.
কাজ শেষ করে সব ফাইল পত্র গুছিয়ে বের হতে হতে ছয়টা বেজে গেল। যাহ বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছেনা। কেয়া নাই বাসায় গিয়ে কি করবে। কেয়ার জন্য মন টা হু হু করতে লাগলো। ইশ একবার যদি কেয়াকে দেখা যেত। দূর আজকে ঢাকা গিয়ে কয় ঘন্টা কেয়ার সাথে কাটিয়ে রাতের ট্রেন এ ব্যাক করবে। ডিসিশন নেওয়ার পর মনটা হালকা হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে এলো।
ঘরে তার জন্য বড় চমক অপেক্ষা করছিল। কেয়া ঢাকা থেকে চলে এসেছে, সারা ঘরে মেয়েলি সৌরভ, সুস্বাদু খাদ্যের গন্ধ, চারিদিকে ঝকঝকে গোছানো। আহ আমার আল্লাহ তুমি আমাকে এত ভালবাস, আমার মনের ইচ্ছে জানার সঙ্গে আমার সব ভালবাসার জিনিস আমার কাছে এনে দিয়েছ,ভাবতে ভাবতে কৃতজ্ঞতায়, আনন্দে চোখে পানি চলে এসেছে মিজান এর।এই মুহুর্তে মিজান এর নিজেকে খুব সুখী মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবাইকে ভালবাসে এমনকি তার রুখসানা ম্যাডাম কে।
==========================================
নীল্ হাটতে হাটতে এলিফ্যান্ট রোড এ ওয়াচ এর স্টোর এ আসল। মুকুল এর এখানে আসার কথা। অপেক্ষা করতে করতে একটা পেপার খুলে পড়তে শুরু করলো।
হটাত করে পাশে একজনের ওরে বাবা বলে আত্মচিত্কার শুনতে তাকিয়ে দেখে রিকশায় বসা এক রগচটা গুন্ডা চেহারা র ছেলে তার রিক্সাওয়ালা কে জোরে থাপ্পর মেরেছে। থাপ্পর খেয়ে বৃদ্ব রিক্সাওয়ালা মাটিতে বসে পরেছে, তার ঠোটের ফাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে।
রিক্সাওয়ালার অপরাধ সে না দেখে চালিয়ে সামনে রিচ্ক্সায় ধাক্কা লেগেছে।
এইসব ঘটনা দেখলে সবসময় নীল্ হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে যায়। নীল্ কাছে এসে রিক্সাওয়ালা কে মাটি থেকে উঠিয়ে মুখের রক্ত মুছিয়ে দিল যত্ন সহকারে টিসু দিয়ে।
ছেলেটি রিক্সা থেমে যাওয়ার উদ্যোগ করতে রিক্সাওয়ালা বলে উঠলো স্যার আমার ভাড়া দিলেন না।
তোরে আরো কয়টা চড় থাপ্পর যে দেইনি তাই শুকর কর বেটা ,আমার নুতুন প্যান্ট এ কাদা লাগায় দিছে বেটা ।
চাচা মিয়া আপনার ভাড়া কত নীল্ রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করে।
স্যার পঞ্চাশ টাকা।
ভাড়া টা দিয়ে দাও গরিব রিক্সাওয়ালা নীল্ ছেলেটিকে বলে।
ওই তুই কেরে ? আমারে পরোপকার শিখাস ছেলেটি খেকিয়ে উঠে।
আমি কে এখনি বুজবি বলে ছেলেটার একহাতে কলার চেপে থাপ্পর দিল জোরে গালে।
নীল্ এর শক্ত হাতের থাপ্পর খেয়ে ছেলেটি চোখে সর্ষে ফুল দেখতে লাগলো।
নীল্ এই ফাকে ছেলেটির পকেট হাতড়ে মানিব্যাগ বের করে দেখল পাচশ টাকার ছয়টা নোট পেল অর্থাৎ তিন হাজার টাকা ,সব টাকা নিয়ে রিক্সাওয়ালা দিয়ে দিল বলল বাকি টাকা আপনার ক্ষতিপূরন।
চাচা এখন কেমন ফীল করতাছেন ? রিক্সা চালায় বাসায় যাইতে পারবেন?
আমার সব টাকা হাহাকার করে বলে ছেলে টি।
আরেক থাপ্পর খাওয়ার আগে আমার চোখের সামনে থেকে সর। তোরে যে জানে শেষ করে দেয়নি শুকর কর, তোর্ মত কিট রা দেশে থাকলে দেশের ক্ষতি ,যা সর চোখের সামনে থেকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিল গুন্ডাটাকে।
চাচা আপনারে ট্যাক্সি ঠিক করে দেই, আর আপনার রিক্সা আমার লোক পৌছায় দিবে।
না বাজান আর কিছু করা লাগবেনা। তুমি কোথাও গেলে বল আমি নামাই দিমু।
আপনি রিক্সা চালাবেন আর সেই রিক্সায় আমি উঠব সেটা আমি পারবনা চাচা ,মনে হবে আপনার বুকের উপর রিক্সা চালাই দিছি.
তুমি অনেক ভালো বাজান, আল্লাহ তোমার অনেক ভালো করবে।
চাচা আমার ভালোর জন্য দোয়া না করে এই দেশের ভালোর জন্য, দেশের মানুষের জন্য দোয়া করেন। অন্ততপক্ষে এই দেশের মানুষ গুলি মানুষের মত মানুষ হয়, কেউ যেন কাওকে অকারণে শোষণ না করে, যেমন আপনার সাথে যা হলো একটু আগে, আমরা সব মানুষ যেন মূল্যবোধ আর মনুষত্ববোধ না হারিয়ে ফেলি। এই দেশের মানুষগুলোর দরকার সুস্থ বিবেক ও সৎ মানসিকতা।
নীল্ আপনাকে ফিরে পেল যেন অনেক দিন পরে এই ঘটনার মধ্যমে। না এই দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেনা। এই দেশের প্রতি আমার একটা দায়বদ্বতা আছে। এই দেশ,দেশের মানুষের নেগেটিভ জিনিস না দেখে ভাবতে হবে কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় এগোলে দেশের সত্যিকার এর উন্নতি হবে। নীল্ ডিসিশন নিয়ে ফেলল রনি চাচার সঙ্গে পলিটিকস এ জযেন করবে, তবে এখনকার কোনো দলে। তারা দৃষ্টান্তমূলক পলিটিক্স করবে যাতে আমাদের সব পলিটিশিয়ান রা তাদের দেখে অনুপ্রানিত হবে। তাদের মূল উপজীব্য হবে এই দেশ কে ভালবাসা, দেশের মানুষ কে ভালবাসা। সব ধরনের হিংসা,ঘৃনা দলাদলির রাজনীতি থেকে নিজেদেরকে অনেক দুরে রাখবে। গান্ধীর অহিংস নীতিতে ভালবাসব মানুষ কে ঠিক ই আবার অন্যায় কে দমন করতে হবে কঠিন হস্তে।
অনেকদিন পর নীল্ বিছানায় গিয়ে ভারমুক্ত হয়ে শিশুর মত ঘুমিয়ে পড়ল।
(পরবর্তীতে)