Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

কথার মাঝে স্ল্যাং বা খিস্তি-খেউড় ব্যবহারের প্রবণতা

: | : ০২/১১/২০১৩

২২শে শ্রাবণ ছবিটার কথা মনে পড়ে? যাঁরা টিভিতে ছবিটা দেখেছেন, সংলাপের চেয়ে বিপ শব্দ বেশি কানে বেজেছে। কারণ ছবিতে সংলাপের প্রয়োজনে (প্রয়োজন ছিল কিনা, এখন সে বিতর্ক থাক) অভিধান বহির্ভূত বেশ কিছু শব্দ, স্পষ্ট ভাষায় খিস্তি-খেউড় ব্যবহার করেছেন অভিনেতারা। সিনেমা হলে তাতে কাঁচি না করা হলেও, টেলিভশনে কালচার-কাকুরা সেসব শব্দ ছেঁটে দিলেন। এ ব্যাপারে বেশ বিরক্তবোধের কারণ আছে বইকি! সাবালক সবাঙালি দর্শক (পড়ুন ইয়ং বং) চলতি কথার মধ্যে ভাবপ্রকাশে খেউড়কে প্রাধান্য দিয়ে কথা বলার মধ্যে কোনও সমস্যা অনুভব করে না। একটু রাস্তাঘাটে কান পাতলে শোনা যাবে, জেন ওয়াই কথার মাঝে আমেরিকান স্ল্যাং-এ মনের ভাব প্রকাশ করার বদলে ইদানীং বাংলার খাস খিস্তিতে মন দিয়েছে। রাগ বা অসূয়া প্রকাশে একটি বা গুচ্ছ খেউড়ের সাবলীল ব্যবহারে মস্তিতে আছে জেন ওয়াই।

 

এক সময় কলেজপড়ুয়া বখা ছেলের মুখে এহেন খিস্তি-খেউড় শোনা যেত, কিন্তু সময়-অধ্যায়ের পরিবর্তিত চ্যাপ্টারে রকবাজ গুড্ডু বা সাউথ সিটির নয়নতারা মজুমদার একই খেউড় (লেখার মাঝে বিপ শব্দ দেওয়া যাবে না বলে উদাহরণে গেলাম না) দিয়ে রাগাশ্রয়ী বাক্য সম্পূর্ণ করে। কল্লোলযুগ পরবর্তী সাহিত্যে ‘কান লাল’ করা খেউড়যুক্ত ভাষার ব্যবহার এখন তাই মুখে মুখে। চলতি হাওয়ার চলতি ফ্যাশনে মুখের ভাষায় ফেসবুক যেমন জায়গা করে নিয়েছে, তেমন ভাবেই খিস্তি-খেউড়ের জনপ্রিয়তা বেশি বই কম একেবারেই নয়।

 

কথায় আছে শব্দ হল ব্রহ্ম- আর খেউড় হল ব্রহ্মাস্ত্র। সোজা আঙুলে নাকি ঘি ওঠে না। ভীষণ ব্যস্ত ইয়ং বং চাপের বোঝায় নুয়ে পড়তে পড়তে একেবারে বাঁকা আঙুলে ঘি-টুকু সাবড়ে নিতে চায় যে। তাই কথার মাঝে হালকা গার্নিশিং-এর চমক মানেই চলতি বা লুপ্তপ্রায় খিস্তির ব্যবহার। এক কালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আর প্রেসিডেন্সি কলেজের (ভদ্র) ছেলেমেয়েদের এই সব খিস্তি-খেউড়ের রাজা-রানি বলে বাঁকা চোখে দেখা হলেও, এখন সে বিভাজন উঠেছে মশাই। কিন্তু কথার মাঝে খেউড়ের এমন প্রবল বিচরণ নিয়ে কি বলবে জেন ওয়াই?

 

‘খিস্তি তো জেনেরালি রাগ না হলে কাউকে দিই না। আর সেই রাগটা পুরোপুরি প্রকাশ করতে খেউড় একেবারে জুতসই। মানে, না হলে মনটা উসখুস করতে থাকে আর কী! আরও একটা ব্যপার আছে। যখন ভীষণ অসহায় লাগে, তখন প্রাণপুরে বেমক্কা কাউকে গাল পাড়লে ‘দিল একেবারে গার্ডেন গার্ডেন’- খেউড়ের পক্ষে সওয়াল সোহমের। কিন্তু এ তো গেল প্রয়োজনে লাঠিসোটা ব্যবহারের কথা। ফ্যাশন আসে কোথা থেকে বলুন তো?

 

জেন ওয়াই-এরই একভাগ বলছে, গাল পাড়াও নাকি এক ধরনের ফ্যাশনই বটে। গোলপার্কে অর্জুনদার চায়ের দোকানে আইনের কারবারি অনির্বাণ পালিত বলছেন, ‘বাঁধা গরু ছাড়া পেলে কী হয় দেখেছেন? তড়বড় করে। সেরকমই একটা গ্রুপ দেখতে পাই মাঝে মাঝে। বিশেষত কচি মামনিরা ফুকফুক করে ধোঁয়া ছেড়ে কথার মাঝে অযথা খিস্তি দিয়ে নিজেদের বিশাল হনু মনে করে। এদের কাছে খেউড় ফ্যাশন তো বটেই। শুনলেই বোঝা যায় ‘বোকা’ শব্দটা উচ্চারণ করতেই তাঁদের দাঁত ভাঙে। তার তারপর আর একটি শব্দ দিয়ে ওই চার অক্ষর বানাতে গিয়ে হাস্যকর করে তোলে পরিস্থিতি। খিস্তি তো কাউকে ধমক দেবার কাজে লাগে, লোক হাসানোর জন্য নয়। এই ছেলেপুলেদের জন্য খেউড় তার ধার হারিয়ে ফেলছে’।

 

সে যাকগে, বড়রা বলবেন- বাজে জিনিসের অত ধার না থাকাই ভাল বাপু। কিন্তু কিঞ্চিৎ ভয় দেখাচ্ছেন যে মনোবিদরা। অনিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘কথার মাঝে স্ল্যাং ব্যবহারের প্রবণতা তাদেরই থাকে, যারা শর্ট টেম্পার্ড হয়। আজকালকার ছেলেমেয়েদের সহনশক্তি বড়ই কম বলে, ঠান্ডা মাথায় মনের ভাবপ্রকাশ না করে স্ল্যাং ইউজ করে। এতে আসলে ওর অসহিষ্ণুতাই সামনে আসে। জানিয়ে রাখি, যারা বেশি খেউড় ব্যবহার করে তাদের সেক্সুয়াল লাইফ কিন্তু খুব আনহ্যাপি আর শর্ট টাইমড। কারণ অধৈর্যদের যৌনক্ষমতা বা জীবন সফল হতে পারে না’।

 

বড়রা নাক তুলে হাসতেই পারেন। কিন্তু মতামত দিতে তো আমি বসিনি। এ শুধুই একটা হিসেব মাত্র। পাশাপাশি, সামান্য একটা পরামর্শ- যদি বেশি কথায় মন সায় না দেয়, তবে একটি খেউড়ে সে কাজ সারুন। কিন্তু খেউড়কে পাথেয় করে ফ্যাশন করতে গেলে তো ভাই ‘আরও ভাল কিছু’ মাটি হয়ে যাবে। ভেবে দেখুন।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top