ভালো বন্ধু বই
বই মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। বই পড়লে কেবল জ্ঞানের পরিধিই বাড়ে না সেই সঙ্গে শরীর ও মনের উন্নতি ঘটে। নিয়মিত বই পড়লে আপনি যেসব সুফল পাবেন।
ভালো বই পড়লে মানুষের মনের উন্নতি হয়। বই মনকে সৃষ্টিশীল কাজ করতে উৎসাহ দেয়। দু:খ-কষ্ট ভুলে থাকতে সাহায্য করে। ভিজ্যুয়াল ছবি যত না মনে দাগ কাটে তার চেয়ে বইয়ের একটি বাক্য বেশি দাগ কাটে। গবেষকরা মনে করেন, চোখের সামনের ছবি স্বয়ংক্রিয়। ছবির চেয়ে সয়ংক্রিয় হচ্ছে একটি বাক্য। এজন্য তারা বলেন,যখন মানুষ কোনো বস্তু সম্পর্কে বইয়ে পড়বে তখন সয়ংক্রিয়ভাবে সেই লক্ষ্যবস্তুর ছবি সে দীর্ঘদিন দেখতে পাবে।
ভালো আলোচক হতে শেখায়
মানুষ সবচেয়ে ভালো আলোচনা করতে পারে যদি তার সে বিষয়ে জানা থাকে। জানতে হলে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা যায় যখন আপনি কোনো গল্প বলেন, তখন শুধুমাত্র আপনার মস্তিষ্কের ভাষা প্রক্রিয়াকরণের অংশ সক্রিয় হয় না সেইসঙ্গে আপনার মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটে। বই পড়লে সংবেদনশীল অঙ্গের উদ্দীপনায় সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলা, সুন্দর সুন্দর শব্দ চয়ন করা যায়।
বাস্তব অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে দেয়
বই মানুষের চিন্তার জগৎকে নাড়া দেয়। যখন বই পড়বেন তখন আপনি আপনার অভিজ্ঞতার সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাবেন। বেশি বেশি পড়লে অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হবে। যা কাজে লাগিয়ে জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবেন।
কল্পনা ও চিন্তার পরিধি বাড়িয়ে দেয়
বই হচ্ছে মানুষের কল্পনা ও চিন্তার বিশুদ্ধ প্রকাশ। যে কোনো বই পড়লে আপনার মস্তিষ্ক উন্নতি ঘটবে। বিভিন্ন ধরণের বই পড়লে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। গবেষকরা দেখেন যে যারা বিভিন্ন রকম সাহিত্য পড়েন তারা খুব সহজে একাধিক জটিল কাজের সমাধান করতে পারে এবং তাদের মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। মানুষের মস্তিষ্কে বিপুল জ্ঞানের ভাণ্ডার রয়েছে। নিয়মিত বই পড়লে মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটে। কল্পনা ও চিন্তার পরিধি বাড়িয়ে বিশাল জগতে নিয়ে যেতে পারে একমাত্র বই।
মস্তিষ্কে ভালো কজের পরামর্শ দেয় ও মনোযোগ বাড়ায়
বই মানুষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে। বেশি বেশি বই পড়লে মানুষের মস্তিষ্ক ইতিবাচক কাজের পরামর্শ দেয়। এ কারণে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বাবা-মাকে পরামর্শ দেয়, তাদের সন্তানদের বেশি বেশি পড়তে উৎসাহ দেয়ার জন্য। বই পড়লে শিশুদের সুন্দর চরিত্র গঠিত হবে সেইসঙ্গে জ্ঞানের পরিধি বাড়বে। বই তরণ-তরণীদের নমনীয় করে তোলে,কাজে মনোযোগী হতে সহায়তা করে।
বৃদ্ধ বয়সে মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে
পৃথিবীতে কেউ পাঠক হিসেবে জন্মগ্রহণ করে না। অল্প অল্প করে পড়ে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করতে হবে। কম পড়ে সাহিত্যের সত্যিকার মজা পাওয়া যায় না। বেশি বেশি করে পড়লে কেবলমাত্র সাহিত্যের সত্যিকার মজা পাওয়া যায়। নিয়মিত বই পড়লে মস্তিষ্কের চর্চা হয় ফলে মস্তিষ্ক ভালো থাকে। বিজ্ঞানীরা দেখেন যে, নিয়মিত পড়লে মস্তিষ্কের ভাষা মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের সেরিব্রাল করটেক্স এবং হিপ্পোক্যাম্পাসের গঠনমূলক উন্নতি হয়। তাই সুস্থ ও সুন্দর থাকতে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বিজ্ঞানীরা গবেষনায় আরো দেখতে পান যে, বৃদ্ধ বয়সে বই পড়া কিংবা লেখালেখির মতো কাজে ব্যস্ত থাকলে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। একজন মানুষ সারা জীবন এ ধরনের কাজে ব্যস্ত থাকলেও বৃদ্ধ বয়সে মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে সমর্থ হন।
বই সহানুভূতিশীল হতে শেখায়
মানুষ যখন গভীরভাবে বই পড়ে সে তখন নিজেকে সেই সব চরিত্রের মধ্যে হারিয়ে ফেলে। বইয়ের চরিত্রের মতো করে নিজের চরিত্র গঠনে উৎসাহ পায়। এছাড়া বাস্তব জীবনে আরও সহানুভূতিশীল হতে শেখায়। সেইসঙ্গে জীবনে আরও সতর্কতা ও সচেতন করে গড়ে তোলে। বই দেশ, জাতি ও সমাজ নিয়ে ভাবতে শেখায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর কামাল উদ্দিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘শিশুদের সঙ্গে যার বেশি ইন্টারঅ্যাকশন থাকে তাকে সে রোল মডেল মনে করে। রোল মডেল হতে পারে তার বাবা-মা, শিক্ষক, তারকা কিংবা বইয়ের কোনো চরিত্র। যদি তার বইয়ের সঙ্গে বেশি সম্পর্ক থাকে তাহলে তার মতো করে সে ভাবতে শিখে। বইয়ের মতো করে তার চরিত্র গঠন করে। তবে সব বই ভালো না। পড়ার ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ বই বাছাই করে পড়তে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বই মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। বই পড়লে দু:খ কষ্ট ভুলে থাকা যায়। ফলে মন ও শরীর ভালো থাকে। একারণে নিয়মিত বই পড়লে বৃদ্ধ বয়সেও মস্তিষ্ক ভালো থাকে।’