ভুতের গলির সেই ভূত কি ফিরে এলো ?????
পূর্ব প্রকাশের পর
আলবার্তো র সময় এখন কাটে সবসময় পড়াশোনা আর প্রাথ্নায়। লাইব্রেরি থেকে যত ধর্মের বই আর প্রাচীন সভ্যতার যত বই সে পেয়েছে নিয়ে এসেছে আর দিন রাত দরজা জানালা বন্ধ করে সুধু পড়ছে আর পড়ছে। তার নাওয়া খাওয়ার ঠিক নাই, ঘুমানোর ঠিক নাই। একবেলায় খেলে আরেকবার খেতে ভুলে যায়। রাত তিন চার টা বেজে যায় পড়া থেকে উঠতে। কোনো হালকা নভেল বা উপন্যাস কখনো পড়েনা ,তার পড়ার বিষয়বস্তু কঠিন দর্শন শাস্র ,বিভিন্ন পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ। সম্প্রতি যে বইটা তার নাওয়া খাওয়া ভুলিয়ে দিয়েছে তা হছে বুধ্ব জীবনাবলী স্বম্বলিত বই তথাগত। পৃথিবীতে যত মহা মানব ,যুগে যুগে বিভিন্ন সময়ে,বিভিন্ন ধর্মে এসেছেন আলবার্তো কে যে মহামানব সবচেয়ে আকর্ষণ করে তিনি হলেন রাজা সিদ্বার্থ বুদ্ধ। যদিও সে আগে মুসলিম ছিল,পরে কনভার্ট হয়ে খ্রীষ্টান হয়েছে হজরত মুহাম্মদ(সব) অথবা জেসাস খ্রীষ্ট এর চেয়ে বুধহ এর প্রতি আবেগে মাথা বেশি নত হয়। তার এই বক্তব্য ক্ষুন্ন হয় তার মুসলিম বন্ধুরা, আলেম ওলিরা, চার্চ এর ফাদার রা। অনেক এর সাথে তার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে এ কারণে। তার সেই বন্ধু দের এখনো মিস করে কিন্তু সে তার হৃদয়ের বড় সত্য কে গোপন করে কিভাবে?
রাজা সিদ্বার্থ র উদারতা, ত্যাগ , স্বার্থহীনতা সব তাকে এত বেশি টানছে কয়দিন ধরে সে সারাদিন ধ্যানে বসে সিদ্বার্থ কে ধ্যানে তার মেন্টর হিসাবে কল্পনা করে। তার মতে পৃথিবীর সবচেয়ে আধ্যাতিক পুরুষ কিং সিদ্বার্থ। এই পৃথিবীতে যুগে যুগে অনেক মহামানব এসেছে, সাধক , অনেক পুত পবিত্র লোক এসেছে কোনো সন্দেহ নাই তাতে, তার মতে আল্লাহ অথবা ঈশ্বর এর সুন্দর রূপ তিনি সবচেয়ে বেশি অবলোকন করেছেন যার কারণে পার্থিব সব জিনিস তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল। যার কারণের সাধারণ মানবের সব চাহিদার বিলাস সামগ্রী অতি অবহেলায় পরিত্যাগ করতে পেরেছিলেন। আলবার্তো র খুব ইচ্ছে বুধ্হর মত সব জাগতিক জিনিস ছুড়ে ফেলে হিমালয় এ চলে যেতে। তবে এখনো সে সম্পূর্ণ মোহমুক্ত হতে পারেনি পারিবারিক আর সামাজিক বন্ধন থেকে। অতি শিগ্রই সে সব মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে আশা করে। এ সংসার,বন্ধন, সব খুব হীন জিনিস, এখানে মন বড় রাখা যায়না। কাওকে ভালোবাসলে স্বাভাবিক ভাবে মনে ঈর্ষা চলে আসে, সংকীর্ণতা চলে আসে। সুখী পার্থিব এর মানুষ এর পক্ষে রিপুর কন্ট্রোল করা অসম্ভব।
মাসুম আর এশা র এখন অনেক চমতকার সময় কাটে। দুই ফ্যামিলি থেকে তাদের সম্পর্ক মেনে নেওয়া হয়েছে। আয়েশা এখন মেডিকেল আর বুয়েট ভর্তি কোচিং করছে। মাসুম প্রতিদিন তাকে পৌছে দেয় আবার বাসায় নামিয়ে দেয়। কেয়া এত বাড়া বাড়ি পছন্দ করছেনা বিয়ের আগে এজন্য আয়েশা মাকে লুকিয়ে মাসুম এর সাথে বের হয়।
আজকে ক্লাস শেষ করে মাসুম প্রস্তাব করে চল একটু সংসদ ভবনে চল। আয়েশার না মা সারাক্ষণ জেরা করে মাসুম।
আচ্ছা হাফ এন আওয়ার, বেশিক্ষণ বসবনা প্লিস এশা। দুজন রিক্সা থেকে নেমে আইল্যান্ড এ হাটতে এক পথচারীর সঙ্গে মাসুম ধাক্কা খাওয়ার মত অবস্থা হলো। লোকটি নিজেকে বাচাতে গিয়ে হোচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে গেল।
আহা আপনার লাগে নি তো ? মাসুম দৌড়ে এসে তাকে টেনে তুলল মাটি থেকে দেখে একজন মুন্তিত মস্তক বুদ্ধ।
ইটস ওকে আই এম অল রাইট। বলে পথচারী বুদ্ধ তাদের কে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলো।
মাসুম এর মনে কেমন খচ খচ করছে কি যেন একটা জিনিস মনে করার চেষ্টা করছে।
ওহ গড এ আমি কাকে দেখছি মাসুম খুব অবাক বিস্ময়ে ভাবে। দুজনে দৌড়ে এসে পথিক এর পথ আগলে দাড়ায়।
আলবার্তো আঙ্কেল ব্যাপার কি ? আপনার কি হয়েছে? মাসুম বিষন্ন ভাবে জিজ্ঞাসা করে।
মাসুম যখন মুসলিম থেকে খ্রীষ্টান হলাম তখন তো অবাক হও নি আজকে অবাক হচ্ছ কেন? তুমি তো জানো আমাকে আমি রিলিজিওন সার্চ করছি বা এভাবে বলি সৃষ্টিকর্তার রূপ সন্ধান করছি। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ আমার স্রষ্ট্রা ,আমার কাছে রিলিজিওন এর চেয়ে স্পিরিট এর গুরুত্ব বেশি মাসুম। আমি মনে করি আল্লাহ,ভগবান , গড ,ওম সব একই আকৃতি একই পালনকর্তা তুমি তাকে যেভাবে ডাক তিনি শুনবেন।
যদি তাই মনে করেন তো বার বার চেঞ্জ করেন কেন উষ্মা ভরে আয়েশা জিজ্ঞাসা করে।
এটা আমার কাছে পোশাক বদলের মত, অনেক সার্চ করার পর আমার মন এখানে এসে স্থির হয়েছে।
আলবার্তো চলে যাওয়ার পর দুজন অনেকক্ষণ ওখানে পাথরের মত দাড়িয়ে ছিল। কিসের সন্ধানে আলবার্তো র অভিজাত লোক তার বিলাস প্রাচুয্য ফেলে লাইফ টাকে এভাবে এক্ষ্পেরিমেন্ট করছে দুজনে ওখানে দাড়িয়ে কেদে ফেলল। সত্যি যারা আলবার্তো কে আগে দেখেছে তারাও মাসুম বর্ষার মত কেদে ফেলবে। বুদ্ধ দের গেরুয়া পোশাকে আলবার্তো কে ভগ্ন স্বাস্থের অসহায় কুদর্শন মনে হচ্ছিল।
===========================================================
কাদতে কাদতে চোখের জলে আয়েশার বালিশ ভিজে গিয়েছে। কেন যে তার এত কষ্ট হচ্ছে আয়েশার আলবার্তো র জন্য,সে নিজে জানেনা। এই রহস্য ময় পুরুষ ততোধিক উদ্বট মানুষ টির কাছে সে কেন বার বার যেতে যায় বা তার কাছে কি পেতে চায় সে নিজেও জানেনা। সুধু রহস্যময় কারণে তার মন সারাক্ষণ আলবার্তো র কাছে পড়ে থাকে।
মাসুম এর সাথে সে এখন অনেক টা কমিটেড ,এই মুহুর্তে অন্য কোনো ছেলে র কথা চিন্তা করা রং,মনকে কলুষিত করা। এই অপরাধ বোধ এর গ্লানি একই সঙ্গে আলবার্তো র জন্য আবেগ এর টানাপরণে আয়েশা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করলো।সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারলনা। আলবার্ত কে আরেকবার দেখার জন্য বুকের ভিতরে হাহাকার করতে থাকে। খুব সকালে ঘুম থেকে নাস্তা না খেয়ে বের হওয়ার উদ্যোগ করতে কেয়া জিজ্ঞাসা করলো এত সকালে কোথায় যাচ্ছিস ? নাস্তা খেয়ে যা।
না মা এসে খাব বলে মাকে দ্বিতীয় কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি নেমে গেল। কেয়া পিছন থেকে আয়েশা আয়েশা চিত্কার করে ডাকতে থাকে। আয়েশা না শোনার ভান করে নিচে নেমে গেল।
মেয়েটার কান্ড কেয়া হতাশ হয়ে বলে।
আয়েশা চার্চ এ এসে খুব হতাশ। আলবার্তো এখানে আসেনা একজনের কাছে থেকে তাই শুনলো। এখানকার বিশপ এর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছে। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে চার্চ এর বাহিরে এ এসে গাছের সামনে বেঞ্চ টা তে বসলো।
এশা তুমি কি এখানে কারো জন্য অপেক্ষা করছ? একজনের কথা শুনে মুখ তুলে তাকাতে দেখল আলবার্তো কে। অভিভূতের মত তাকিয়ে থাকলো। আনন্দ আর খুশিতে তার ভিতর টা কাপতে থাকলো অপ্রত্যাশিত দেখা হওয়াতে।
সেই কালকের বুদ্ধ দের ড্রেস মুন্ডিত মস্তক ,কিন্তু আজকে কালকে র মত খারাপ লাগছেনা , কেমন জানি মনে হচ্ছে এটা ই তার পোশাক। আজকে চোখে মুখে অনেক হাসি খুশি ভাব।
কেমন আছ এশা বলল অনেক দরদ ভরা কন্ঠে। এই প্রথম আলবার্তো তার সঙ্গে এত আন্তরিক ভাবে কথা বলল।
আয়েশার চোখে পানি এসে গেল। বলল জানিনা কেমন আছি।
আলবার্তো আয়েশার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল ,কি এত ভাব বল তো ? তুমি অনেক অল্প বয়সী
আমার কত বয়স জান ?
আস্তে মাথা নেড়ে বলে না।
৪৪ বলে হাসলো।
ওমা তাই নাকি বলল অবাক হয়ে এবং হেসে ফেলল।
তাহলে বল তোমার এটা কি বোকামি হয়ে যাচ্ছে না? আমাকে রোমান্টিক ভাবে দেখা ,বলে আলবার্তো হেসে ফেলল।
আয়েশা চমকে গেল আলবার্তো র কথায় ,লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখল।
তারচেয়ে তোমার যার সাথে সম্পর্ক মাসুম সে অসাধারণ ছেলে ,তোমাকে অনেক সুখী করবে দেখো। মন থেকে এ ফীলিংস দূর করে ফেল, এটা তোমার আর মাসুম দুজনের জন্যই ভালো হবে। তুমি আমার সব চেয়ে ছোটো বোন্ এর চেয়ে আট বছরের ছোটো।আমি তোমাকে আমার ছোটো বোনের মত দেখি।
এশা প্রেম ভালবাসা, ঘর, সংসার এসবের প্রতি আকর্ষণ আমার অনেক আগে চলে গেছে। কোনো মেয়ের প্রতি আমার রোমাঞ্চে বা কোনো আকর্ষণ হয়না। আমি খুব অস্বাভাবিক চরিত্রের মানুষ। আমি আমার প্রেমময়ী সুন্দরী স্ত্রীকে ডিভোর্স করে এসেছি কেননা ওর প্রতি আমার কোনো ফিজিকাল আকর্ষণ হতনা। প্রথমে মনে করলাম অন্য মেয়ের প্রতি হয়তবা আকর্ষণ হবে। পরে ফাইন্ড আউট করলাম মেয়েদের প্রতি আমার আবেগ আর কাজ করেনা।
আয়েশা স্তব্দ হয়ে বসে থাকে।
তোমদের বিয়ে কবে?
এখনো ডেট ফিক্সড হয়নি ,বলল নিচু গলায়।
আমি অবশ্য ই তোমার বিয়েতে যেতে চাই। আমাকে দাওয়াত দিবে তো?
আয়েশা এ কথার কোনো উত্তর করলনা।
আলবার্তো উঠে দাড়ালো ওকে আয়েশা আমাকে যেতে হবে এখন।
Be happy always..take care. বলে আলবার্তো সামনে রাস্তায় উঠে গেল আয়েশা কে বাই বাই বলে।
আয়েশা আচ্ছন্নের মত তাকিয়ে রইলো আলবার্তো র গমন পথের দিকে।
(পরবর্তীতে)