ভুতের গলির সেই ভূত কি ফিরে এলো ?????
পূর্ব প্রকাশের পরে
দিদার এখন চেতন আর অবচেতনার মাঝখানে অবস্থান করছে। তার মা মনোয়ারা বেগম ছেলের বিছানার পাশে সেই যে তসবিহ হাতে নিয়ে বসেছেন তিন দিন ধরে তার কোনো নাওয়া খাওয়া নাই। নার্স কয়েকবার মায়া বশত অন্য রোগী দের রান্না করা খাওয়া থেকে তার জন্য একটা প্লেট এ ভাত মাছ আর একটা বাটি তে ডাল এনে রাখল।
খালাম্মা আপনি দুই দিন ধরে কিছু খান নাই, এই ভাত গুলা খাইয়া নেন। নার্স টি অনুনয় করে বলে।
মাগো খাওয়া আমার গলা দিয়া নামবনা , তুমি মা আমারে একটা জায়নামাজ আইনা দিতে পারবা।
দিব খালাম্মা একটু খাইয়া নেন আগে।
নার্স মেয়েটি অনেক ভালো, এত মায়া সবার জন্য ,নাম সুমিত্রা হিন্দু মাইয়া। হিন্দু মাইয়া যে এত ভালো হইতে পারে এই প্রথম দেখল মনোয়ারা বেগম।
মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললেন মাগো তুমি খুব ভালো, দোয়া করিগো মা আল্লাহ যেন তোমারে অনেক সুখী করে।
খেতে খেতে দুজন এর কিছু অন্তরঙ্গ কথা হলো।
মাগো তোমার কে আছে বাড়িতে? মনোয়ারা বেগম জিজ্ঞাসা করেন।
আমার বাবা আর তিন বছরের মেয়ে।
তোমার স্বামী কোথায়?
নাই।
আহারে মারা গেছে ? তো তোমার আর কত বয়স মা ,আরেক টা বিয়ে কর না কেন গো ?
উনি আরেক টা বিয়ে করছেন।
আহারে তোমার মত ভালো মেয়ের সাথে কোন পাষন্ড এমন করে ?
মেয়েরে দেখতে আসেনা ?
চায় আমি দেইনা বলল সে মৃদু গলায়।
থাক মা এগুলি নিয়া ভাইবনা বলে মনোয়ারা সুমিত্রা কে বুকে টেনে নিলেন।
সুমিত্রা ডিউটি শেষ করে চলে গেছে, ওই জায়গায় অন্য এক নার্স এসেছে। এই নার্স টিকে মনোয়ারা বেগম পছন্দ করতে পারলনা ,কেমন কাঠ কাঠ চেহারা ,অনেক বার ডাকলেও জবাব দেয়না।
অনেক বার জায়নামাজ চেয়ে না পাওয়ার পর একটা শাড়ি বিছিয়ে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ এর সালাম ফিরাতে যাবে শুনে মা ডাক।
মনোয়ারা বেগম এর হৃদপিন্ড দুলে উঠলো। কত দিন পরে ছেলেটার মা ডাক শুনলাম।
দৌড়ে ছেলে র বিছানার কাছে আসল বাবারে কেমন আছিস বলে ডুকরে উঠলো ,কেমন আছিস আমার বাপধন ?
আমার মা তুই কেমন আছিস ? আবেগে দিদার এর চোখে জল এসে গেল।
এই যে আপনি এত ডাকেন কেন? ওই যে থানা থেকে একজন আসছে ,আপনার সাথে কি কথা বলবে নার্স টি খেকিয়ে উঠে বলল l
পুলিশ এর কথা শুনে দিদার এর মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে মুর্ছার ভান করে পরে রইলো।
===========================================================
কাজ শেষ করে বের হতে হতে সুমিত্রার প্রায় ছয়টা বেজে গেল। তাড়াতাড়ি বাসার যাওয়ার জন্য সামনে যে লোকাল বাস পেল তাতে উঠে গেল। বাস থেকে নামতে একটু হোচট খেল তাতে স্যান্ডেল এর ফিতে ছিড়ে গেল। এই যাহ এখন তো হাটতে পারবেনা। মাসের শেষের দিকে রিক্সা নেওয়া তার জন্য বিলাসিতা। প্রতি টি টাকা তাকে খুব হিসাব করে খরচ করতে হয়। না হলে মাসের শেষের দিকে খুব টানা টানিতে পড়তে হয়। এই দশ দিন কিভাবে চলবে, বাবুর দুধ কিনতে হবে, ঘরে চাল প্রায় শেষ এর দিকে। টেনে আর দুই দিন চলবে। মুদির দোকানদার বলছে আর বাকি দিবেনা।
হাটতে গিয়ে উহ করে উঠলো। ইশ পা টা কেটে গেল দেখি, কাছের টুকরা ঢুকে গেছে পায়ে।চারিদিকে তাকিয়ে বসার মত কিছু পেলনা,কাচের টুকরা বের করে ব্যান্ডেজ করতে হবে। একটু সামনে ফার্মেসী দেখা যাচ্ছে, কোনো রকমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসে ফার্মেসী এর সামনে বেঞ্চ টাতে বসলো, কাছটা টেনে বের করলো।সমানে রক্ত পড়তে লাগলো। ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে গিট্টু দেওয়ার চেষ্টা করলো। ফার্মেসী র ভিতর থেকে একজন জিজ্ঞাসা করলো কি হইছে তোমার?
পায়ে কাচ ফুটছে ,বলল বেদনার্ত গলায় সে।
আহারে দেখি আমারে দেখতে দাও , ওসুধ এর সামনে যে লোক টা সবসময়ে বসে থাকে সে কাছে এসে দেখল বলল দাড়াও এদিকে আস। লোকটি ব্যান্ডেজ দিয়ে যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দিল। সুমিত্রা কৃতজ্ঞ চোখে তার দিকে তাকিয়ে দিল । খুব লজ্জা সহকারে জিজ্ঞাসা করলো, আপনারে কত দিব।
আরে না না এটার আর কি দিবা। ব্যথা যদি বেশি করে সেটামল খাইয়া নিও।
অনেক কষ্ট করে সে হাটার চেষ্টা করছে।পিছন থেকে ছেলেদের শীষ আওয়াজ শুনতে পেল। না তাকিয়ে বুজতে পেল এই ছেলেগুলি রেস্তুরেন্ট এর সামনে বসে থাকে, কোনো মেয়ে দেখলে বদ নজরে দেখা শীষ দেওয়া এদের অভ্যাস। এই এলাকা টার পরিবেশ ভালো না। সন্ধার পর কোনো মেয়ে একা চলতে পারেনা বখাদের উত্পাতে।
তার সামনে এসে একটা রিক্সা থামল।
যাইবেন আপা রিক্সা ওয়ালা জিজ্ঞাসা করলো।
সুমিত্রা আর দ্বিতীয় কিছু না ভেবে সোজা রিক্সায় উঠে বসলো। রিক্সা ওয়ালা ভাড়া মিটিয়ে ঘরে ঢুকে মনে হলো তেল শেষ, বাবুর দুধ শেষ আনা হলনা। এখন আর যাওয়া ও সম্ভব না।
কিরে মা আসছস ? সুমিত্রার বাবা ক্রাচ এ ভর দিয়ে এসে দাড়ালো।
হা বাবা একটু দেরী হয়া গেল, খিদা লাগছে না বাবা?
নারে মা তুই আগে হাত মুখ ধূয়া নে, তারপর দেখ কি রান্না করা যায়।
সুমিত্রা আগে ভাতের চাল ধুয়ে বসিয়ে দিল এক্চুলায় আরেক চুলায় দুইটা ডিম আর দুইটা আলু সিদ্ব দিয়ে দিল।
তাড়াতাড়ি কাপড় নিয়ে কলঘরে আসল। সুধু দুই বালতি জমানো পানি দিয়ে কালকে সকাল পর্যন্ত চলতে হবে। এক মগ পানি হাত মুখ ধুলো , তার পর সাবান ছাড়া সারা গায়ে দুই তিন মগ পানি ঢেলে কোনরকমে গা মুছে বের হয়ে আসল।
ঘরের ভিতরে ঢুকে মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে চমকে উঠে, জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে গা।ঘরে অসুধ ও নাই দুধ ও নাই।
পাশের বাড়ির ভাবির ঘরে এসে দরজা ধাক্কা দিল।
শুনতে পেল লোকের গলা তোমার ফকিরনি বান্ধবী আসছে খবরদার কইলাম দরজা খুলবানা।
সুমিত্রা র কোনো উপায় নাই দুধ ছাড়া সে যেতে পারবেনা। মানুষের জীবনে কত কষ্ট। ভগবান সবার জীবন ই কি এত কষ্টের না কি আমার কোন অন্যায়ের জন্য এত কষ্ট।
পরক্ষণে অনুতাপে বিড়বিড় করে বলে মাপ কর ভগবান এই অনাথিনীরে।
দরজা খুলে গেল ,আসমা ভাবি কে দেখা গেল দরজার গোড়ায়।
কিরে সুমিত্রা শরীরl ভালো নি তোর্? আন্তরিক ভাবে জিজ্ঞাসা করে ভাবি।
এই ভাবি সত্যিকার বোন্ এর মত মায়া করে।
ভাবি যদি একটু দুধ থাকে দিবা,
দাড়া তুই বলে তাড়াতাড়ি একটা বাটিতে দুধ ,আরেকটা বাটি এনে হাতে দিল , এখানে একটু মুরগির সালুন আছে তোর্ জন্য।
ভাবি বাচ্চাদের ঠান্ডার অসুধ কি আছে ? লজ্জায় জিজ্ঞাসা করে।
দাড়া দেখি উমা তো কেনে ওর বাচচার জন্য।
আবার শুনতে পেল পুরুষ লোকটির গলা যত সব ফাকিরনিরা ওনার দোস্ত।
এই আস্তে শুনবে তো ? ভাবির ফিসফিস গলা শোনা গেল।
আমি তো শোনানোর জন্য বলতেছি।
ভাবি তাড়াতাড়ি এসে অসুধ দিয়ে বললেন জ্বর কমলে আমারে এটা ফেরত দিস ,বুজছিস এটা উমার মেয়ের।
আর শোন সোনা বোন্ তোর্ ভাই এর কথায় কষ্ট নিসনা। মানুষ খারাপ না শোকে দুখে মাথা খারাপ এর মত হয়ে গেছে।
না ভাবি আমার আর কি মন খারাপ ,আমার বাচা মরার লড়াই।
ঘরে এসে দুধ গরম করে বাচ্চা খাইয়ে অসুধ খাইয়ে দিল।
তাড়াতাড়ি বাবাকে খাওয়ার দিল।
আহা বাবা আজকে তৃপ্তি করে খাচ্ছে ওই ঘরের মুরগি র মাংশ দিয়ে।
কিরে মা মাংশ কখন রান্না করলি ?
ওই বাসার ভাবি দিছে বাবা তোমার জন্য।
বেটির রান্না খুব স্বাধ। একেবারে তোর্ মায়ের হাতের রান্না র মত বলতে বলতে বৃদ্ধের চোখ সপ্নাতুর হয়ে গেল।
রাত এগারো টা বেজে গেল। সব কাজ শেষ করে বিছানার কাছে আসতে আসতে। মেয়ের কপালে হাত দিয়ে দেখল জ্বর নেমে গেছে।
ভগবান এর মূর্তির সামনে এসে প্রাথ্য়না করতে গিয়ে অনেক দিন আজকে সংযম হারিয়ে লুটিয়ে পরে কাদতে লাগলো।
প্রভু ধৈর্য্য দাও প্রভু আমার মেয়েটাকে বড় না করা পর্যন্ত আমাকে সুস্থ রাখো।
(পরবর্তীতে)