ভুতের গলির সেই ভূত কি ফিরে এলো ?????
পূর্ব প্রকাশের পরে
রাশেদ আজকে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়েছে।মাকে নিয়ে ডাক্তার এর কাছে যেতে হবে। টাক্সি নিয়ে রওয়ানা হলো। বাসার কাছে পৌছতে টাক্সি ভাড়া মিটিয়ে উপরে উঠতে যাবে ফোন বেজে উঠলো।
স্লামালিকুম কেমন আছেন? টেলেফোন এর অপর প্রান্ত থেকে নারী কন্ঠ জিজ্ঞাসা করলো।
এই মেয়ে কে ? রাশেদ মনে করার চেষ্টা করলো।
জি ভালো আছি ,আপনি ভালো আছেন তো ? চিনতে না পারলেও বুঝতে দিলনা মেয়েটিকে।
যাক মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ সুস্থ এখন তাহলে একটু আমার উপকার করবেন ,তাহলে উপকারী র প্রতিদান দেওয়ার সুযোগ ও পেয়ে গেলেন।
ও এতক্ষণে চিনতে পারল রেহনুমা।
বলুন কি উপকার করতে হবে? হালকা গলায় বলল রাশেদ।
কালকে কি আপনি ফ্রি আছেন?
একরকম বলা যায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন , অফিস নাই, বলল রাশেদ।
তাহলে খালাম্মা কে নিয়ে কালকে বিকাল এ চলে আসুন আমার বাসায়। আমুদে গলায় বলল রেহনুমা।
আসতে পারি যদি আড্রেস পাই।
খুব সোজা চিনা আমার বাসা ,আপনার বাসা থেকে এক ব্লক সামনে রাস্তার ডানদিকে রেড বিল্ডিং চৌধুরী ভিলার তিনতলা।
কি ব্যাপার কোনো প্রোগ্রাম আছে নাকি?
তেমন কিছু না বন্ধু রা সব আসতে চাচ্ছে, সবাই মিলে এনজয় করা।
ok কালকে বিকাল এ প্রোগ্রাম তাইত ? আমি ঠিক সুনসান দুপুর বেলাতে চলে আসব । বলে রাশেদ একটু হাসলো।
না না সে কি ৬ টার পর আসলেও হবে। উত্তেজিত হয়ে রেহনুমা বলে।
ও লাঞ্চ করাবেন না ?
কি যে বলেন ok আপনার ব্রেকফাস্ট টু ডিনার দাওয়াত।
আরে না বললেন না হেল্প দরকার।
পরের দিন ছয় টায় রেহনুমা র বাসায় এসে দেখে জমাট আড্ডা চলছে। রেহনুমা র বয়সী প্রায় পনর ষোলো ছেলেমেয়ে বিভিন্ন কায়দায় বিভিন্ন ড্রেস এর হই হুল্লোর করছে। হাই ভলিউম এ গান হচ্ছে ক্যাসেট এ। কেউ নিজে চড়া গলায় গান গাছে, কেউ ডীস্কো নাচ্ছে। লিভিং রুম এ সোফার পাশে একটা স্টেজ বানানো হয়েছে।
ঘরে ডুকে রাশেদ এর মাথা ধরে গেল। রাশেদ পারত পক্ষে কোনো ভিড় হই হুল্ল্লোর এ যেতে চায় না তার কাছে মনে হয় এই শব্দ দূষণ টাকে পরিবেশ দূষণ । সে খুব ই বিব্রত বোধ করছে ,কোথাও রেহ্নুমাকেও দেখা যাচ্ছেনা অন্টি কেও না। একটা ছেলে কাউবয় হ্যাট পরা নাচতে নাচতে রাশেদ এর সামনে এসে জিজ্ঞাসা করছে।
মহাশয় আপনার পরিচয় টা কি জানতে পারি।
পিছন থেকে একটা মেয়ে রাশেদ কে বিব্রত দেখে বলছে এইযে পগা ওনার পরিচয় তোমার জানার দরকার নাই। তোমাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে সে কাজ কর। আপনি ঐদিকের সোফায় গিয়ে বসুন,রেহনুমা কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।
রাশেদ সোফায় না বসে একটা চেয়ার টেনে বসলো। তার ইচ্ছে করছে এখনি চলে যেতে, এত হট্রগোল হবে কে ভেবেছিল।
এদিকের একটা দরজা খুলে গেল, চার্চ বিয়ের মত একজন কেসেট এ পিয়ানো প্লে ছেড়ে দিল. পগা ছেলেটি ঘোষণার ভঙ্গিতে বলছে আসছে আমাদের রেহনুমা সুইটি সব ছেলেরা হুশিয়ার।
রেহনুমা কে দেখে রাশেদ সত্যিকার অর্থে মুগ্ধ হয়ে গেল। সে খুব সুন্দর ভাবে বাঙালি সাজে সেজেছে, তার ফ্রেন্ড দের মত কোনো উদ্ভট গেট আপ করেনি। নীল্ জামদানি শাড়ি কপালে নীল্ টিপ, হালকা গহনা আর হালকা সাজ। ঠিক এইরকম ই রাশেদ এর পছন্দ।
সে ছুটে এসে বলল আপনি এসেছেন। খালাম্মা কোথায় ?
মার শরীর টা বিশেষ ভালো না আসতে পারলেন না ,আপনার কাছে সরি চাইলেন, আপনার জন্য কি যেন দিয়েছেন বলে একটা প্যাকেট দিল তার হাতে।
রেহনুমার পিছন থেকে একটা পাঙ্ক গেট আপ এর ছেলে এসে হাত ধরে টানতে থাকে।
বেবি কখন কেক কাটবে।
স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে রেহনুমা অস্বস্তি বোধ করছে রাশেদ এর সামনে তার বন্ধুদের ফ্রি নেস এ।
সবাই হই হুল্লোর করে ডাইনিং টেবিল এর কাছে কেক কাটা দেখার জন্য।
রাশেদ বারান্দায় এসে দাড়ালো। কিছুক্ষণের মধ্যে রেহনুমা কে দরজায় দেখা গেল হাতে দুইটা প্লেট এ কিছু নানা রকম ভাজা ভুজি পাকোড়া আর চা নিয়ে আসল। হেসে বলল আপনি কি বিব্রত হচ্ছেন। এরা আসলে সব আমার ক্লাস মেট ,তেমন ইনটিমেট কেউ না ,সে বুঝাতে চাইল যে ক্যাজুয়াল রিলেশন।
রাশেদ হেসে ফেলল এতক্ষণ পরে রেহনুমার কথা বলার ভঙ্গিতে।
বলল আপনি দেখতে অনেক সুন্দর ,নীল্ রং আমার খুব পছন্দ, আপনাকে নীল্ শাড়ি তে সে আর কথা শেষ করতে পারলনা রেহনুমা র লজ্জা পাওয়া দেখে।
রাশেদ নিজে ও এখন লজ্জা পাচ্ছে। সে কি বেশি বলে ফেলল।
পরক্ষণে আবার রাশেদ বলল। প্লিস আমাকে নিয়ে টেনশন করবেন না ,আপনি ফ্রেন্ড দের কে এটেন্ড করেন আর আমি এই খাওয়ার গুলি এটেন্ড করি বলল সে হেসে।
রেহনুমা হেসে চলে গেল ভিতরে।
পার্টি শেষ করে চলে আসতে রেহনুমা কে দেখা গেল প্যাকেট হাতে করে আসতে।
রাশেদ ভাই এখানে খালাম্মা জন্য কিছু খাওয়ার আছে ,আর একটা ব্যাপার খালাম্মার গিফট আমি নিতে পারবনা এই মুহুর্তে বলে প্যাকেট টা ফিরিয়ে দিল।
কেন কি আছে এতে? প্যাকেট খুলে দেখে তার সহজ সরল বোকা মা শাড়ি র ভাজে ভারী তার গোল্ড এর চুড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
একদিকে যেমন তার মন তা বিরক্তিতে ভরে গেছে মায়ের উপর তাকে না জানিয়ে এই কাজ করার জন্য আরেক মন মায়ের জন্য মমতায় আর ভালবাসায় দ্রবীভূত হয়ে গেছে।
সে কাতর গলায় বলল আমার মাকে ভুল ভুজবেন না প্লিস। উনি সবাই কে ওনার সব জিনিস দিয়ে দেন। একবার ঈদ এ আমাদের বুয়ার শাড়ি সাধারণ হওয়াতে উনি ওনার ঈদ এর দামী শাড়ী বুয়া কে দিয়ে দিছিল। এটা আমি ফেরত নিলে আমার মা কষ্ট পাবেন, অপমানিত বোধ করবেন। ..প্লিস
প্লিস আপনি ভুল বুজবেন না এটা মূল্যবান বলে আমি এভাবে নিতে চাচ্ছিনা। বলে চুড়ি গুলি সে ফেরত দিল।
রাশেদ এর মনে মায়ের জন্য এত ই বেদনা বোধ হলো সে আর রেহনুমার দিকে তাকাতে পারলনা। একটু আগের সব ভালো লাগা মন থেকে চলে গেল, তার মনে হলো মেয়েটা কমপ্লিকেটেড।
রেহনুমা তাকে পিছন থেকে ডাকতে থাকলেও সে তার জবাব না দিয়ে খাওয়ার প্যাকেট ফেলে বেরিয়ে আসল।
(পরবর্তীতে)