বোধোদয়
মাসুদ থার্ড ইয়ারে পড়াকালীন বিভিন্ন দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত হয়। সে পড়াশোনা শেষে কি করবে, চাকরি পাবে কি পাবে না, ছোট দুটি ভাই যাদের একজন রাজশাহী ভার্সিটি-তে পড়ে আরেকজন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে ওরা কি করবে এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লো।
ঠিক ঐ সময় তার বড় এক ভাই মুস্তাফিজ যিনি চট্টগ্রাম ভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খুঁজছিলেন তিনি ছোট ভাই মাসুদের কাছে আসেন তাকে দেখার জন্য।
সন্ধ্যার পর রুম থেকে বের হয়ে হলের পশ্চিম প্রাচীরের ফুটো দিয়ে বের হয়ে জহুরুল হক হলের ক্যান্টিনের নিকটের দোকান থেকে চা নাস্তা খেয়ে জহুরুল হক হলের টিনশেড এক্সটেনশনের পশ্চিমের মাঠে ঘাসের উপর বসে দুই ভাই সুখ দুঃখের কথা উঠালো।
মাসুদ এক কথা দুই কথা বলতে বলতে তার হতাশার কথা বলা শুরু করলো। বলতে বলতে সে কেঁদে ফেললো। দু চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরতে লাগলো। বললো, আমার শিবলীর কি হবে, বাদলের কি হবে?
বড় ভাই এসেছে ছোট ভাইকে দেখতে। আর ছোট ভাইয়ের এত খারাপ অবস্থা! নিজেও এখনও চাকরি পায়নি। নিজের কষ্টের কথা চেপে রেখে সে ছোট ভাইকে বিভিন্নভাবে সান্তনা দিতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই সে মাসুদকে শান্ত করতে পারলো না।
বড় ভাইয়ের চোখ দিয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
মাসুদ বললো, আপনি চাকরি পাচ্ছেন না, আমার পড়াশোনা শেষ হলে কি করবো আর ওদেরই বা কি হবে? আমাদের ভাগ্যে এমন ঘটলো কেন? কি এমন অপরাধ করেছিলাম?
মাসুদের এই অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে না পেরে মুস্তাফিজ ছোট ভাইয়ের চুলের মুঠি ধরে দাঁড় করলো। তারপর সে তাকে বললো, আয় আমার সাথে আয়।
এই বলে সে মাসুদকে জহুরুল হক হলের এক্সটেনশনের সামনে দিয়ে দক্ষিণ দিকে নিয়ে চললো।
গেট দিয়ে পলাশীর মোড়ে বের হয়ে তারপর পূর্বদিকে গিয়ে এস এম হলের গেটের সামনে বুয়েটের প্রাচীরের সাথের ফুটপাতে গায়ে, মুখে ময়লা জমে কালিমতন হয়ে যাওয়া মহিলা, ছেলে, মেয়েদেরকে দেখিয়ে মুস্তাফিজ মাসুদকে জেজ্ঞেস করলো, এরা তো আমাদেরই মতো মানুষ। এরা কি অপরাধ করেছিল?
মুস্তাফিজ আবার বললো, প্রত্যেকদিন এই মানুষগুলো তোর চোখের সামনে পড়ছে। তারপরও তুই আমাকে এতক্ষণ ধরে নিজের হতাশার কথা বলিস কিভাবে? তোর সব প্রশ্নের উত্তর তো তোর চোখের সামনেই রয়েছে।
সে আবার বললো, ভার্সিটিতে মানুষ ভর্তি হয় শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষের মতো মানুষ হতে। তুই তো দেখছি গরু হচ্ছিস!
মাসুদ নিরবে কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর বললো, সরি। আমি আসলে ভুল করেছি। এরাও তো মানুষ। এদের তুলনায় আমরা তো বহুগুণে ভালো আছি। আমিই যদি এইসব কথা বলি তাহলে এরা কি বলবে?
সে মুস্তাফিজ এর হাত চেপে ধরে বললো, আপনি আমার কাছে আসায় আমার খুব উপকার হয়েছে। আপনার কারণেই আমার হতাশা দূর হয়ে গেল।
মাসুদের কথা শুনে মুস্তাফিজ খুব শান্তি পেল। বললো, ওসব কথা বলতে হবে না। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করিস।
এরপর দুই ভাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে হাঁটা শুরু করলো।