ভূল বিশ্বাস ও পরিবেশ পরিবর্তন
ভূল বিশ্বাস বা অন্ধ বিশ্বাস আমাদের সমাজে এখনও কম বেশি জড়িয়ে রয়েছে । এখনও সাপের কামড়ে ওঝার ডাকার প্রবণতা রয়েছে ।কখনও কখনও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে চিকিত্সার সুযোগ না থাকার কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে ওঝার শরণাপন্ন হয়ে থাকে ।সব সময় যে বিষধর সাপের দংশন ঘটে এমন নয় । নির্বিষ সাপের দংশনেও মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে ।ওইসব ক্ষত্রে মানুষ মারা যায় অত্যাদিক ভয়ে, দুর্বল হৃত্পিণ্ডের সহজাত ক্রিয়ায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ।বলা বাহুল্য ,ওঝার ঝাড় ফুকে নয় ,নির্বিষ দংশনের অব্যবহিত পরে মানুষ আপনা আপনি সুস্হ হয়ে ওঠে । আর ওইসব ক্ষেত্রে ওঝার কৃতিত্ব বাড়ে ।আবার বিষধর সাপের দংশনে মানুষ মারা গেলেও ওঝার কেরামতি কিন্তু এতটুকু কমে না । কারণ ,সেইসব ক্ষেত্রে পরিস্কার করে দেওয়া হয় খুব দেরি হয়ে গেছে ।এইভাবে স্মরণাতীত কাল থেকে চলে আসছে সর্পদংশন এবং ওঝার কর্মকাণ্ড ।
সাম্প্রতিক কালে ওঝার ঝাড় ফুকে শিরার মধ্যে রক্ত থেকে বিষ নামানোর বিশ্বাসে কিছুটা হলেও চিড় ধরেছে । কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে শিক্ষা এবং বিজ্ঞানমনস্কতার ছোয়া এখনও পৌছায়নি ,সেখানে আজও এ দৃশ্য ঘটে চলছে ।এখনও সমাজের বহু ক্ষেত্রে ভূল বা অন্ধ বিশ্বাসের শেকড় বহু গভীরে প্রোথিত হয়ে আছে ।বেচে ওঠার আশায় এখনও সাপে কাটা মৃত মানুষকে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় ।স্বাভাবিক মৃত্যুতেও কখনও কখনও স্বর্গ প্রাপ্তির আশায় পুর্ণ্যতোয়া নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয় । এছাড়া রয়েছে শিবরাত্রিতে দুধ নৈবেদ্যের প্রতুলতা ,প্রাচীন বটবৃক্কের পাদদেশে ঘি আহুতি বা যজ্ঞ যা বৃক্ষের বৃদ্ধি ব্যাহত করে ।পৃথিবী গ্রহের প্রাথমিক খাদ্য উপাদান এবং অক্সিজেন গ্যাসের সৃষ্টি করে উদ্ভিদ ।
কারও অজানা নয় ,নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া মৃত মানুষের দেহের পাচন নদীর জলের গুণমান নষ্ট করে ।তাছাড়া মৃত ব্যাক্তির অন্ত্র থেকে ব্যাকটেরিয়া জলে এসে যায় ।
এই প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে । বিষয়টি যদিও কিছুটা স্পর্শকাতর তবুও তার দু একটা দিক প্রাসঙ্গিক । পুজার্চ্চনা সমাজের একটা গুরুত্ব পূর্ণ অঙ্গ ।বন্ধত্ব , ভ্রাতূত্ববোধ ,বিশ্বাস ,মানসিক শক্তি ,সামাজিকতা ছড়িয়ে পড়ে সমাজের মধ্যে ।দেশ ও দেশের বাইরে বসবাসকারী আত্মীয় স্বজন ,বন্ধূ বান্ধবের মিলনের সুযোগ ঘটে । তাই পুজো সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । আবার পুজোর শেষে প্রতিমা বিসর্জন পুজোর আর একটি বিশেষ অঙ্গ এবং তা জলেই ঘটে বিশেষ করে নদী বা ঘাটে । এই আচার বা রেওয়াজ চিরকালের ।
বলা বাহুল্য ,জলে প্রতিমা নিরঞ্জন ঘটলে তার একটা প্রভাব অবশ্যই রয়েছে ।বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যে তাত্ক্ষণিক একটা পরিবর্তন এই অঞ্চলে ঘটে ।প্রথমত, প্রচুর পরিমাণে মাটি এক জায়গায় পড়ার ফলে জল ঘোলা হয়ে ওটে ।একদিকে যেমনি ওই অঞ্চলে জলজ প্রাণীর জৈবিক ক্রিয়ায় বাধা আসে তেমনি সূর্যরশ্মি জলস্তরে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয় ,ফলে অণু উদ্ভিদকণার বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ।ওই অঞ্চলে ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতা খর্ব হয় ।আবার পচনশীল জৈব পদার্থ যেমন ফুল ,পাতা ,খড় ,দড়ি ,কাপড় ইত্যাদির কারণে জলের দ্রবীভূত অক্সিজেনের দ্রুত হ্রাস ঘটে ।অথচ যদি এগুলো স্হলভাগের কোথায় মাটিতে দেওয়া হয় তবে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ঘটে । কিন্তু তা করা হয় না কারণ জলে ভাসানোই রীতি নীতি ।
অতিরিক্ত দুধের প্রভাবে অনেক সময় জলের গুণমান নষ্ট হয় ।অতিরিক্ত জৈবগুণ সম্পূর্ণ এই পদার্থের কারণে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় । কখনও এই অঞ্চলে অক্সিজেন একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায় ।আরেকটা কথা -চরণামৃত কতটা অমৃতের কাজ করে বা গণেশ কতটুকু দুধ পান করতে পেরেছিল তা হয়তো বলা সম্ভব নয় । তবে তা মানুষের স্বাস্হ্যহানি বা পরিবেশের যে অবক্ষয় ঘটায় তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে ।আমাদের মধ্যে জনসচতেনতা বৃদ্ধি পেলে পরিবেশের অনর্থক বিরূপ পরিবর্তন আটকে দেওয়া সম্ভব হবে ।