Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

প্রিয়ন্তী-১৬ (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙ্গা তরুণী)

: | : ১৩/১১/২০১৩

Priontiসুশান্ত তার বিয়ের কথা বাবাকে বলেনি। বাবা জানতে পেরেছে কী না সেকথাও সে জানে না। আগে সুশান্ত মাঝে মাঝে বাড়িতে মোবাইল করতো কিন্তু বিয়ের পর থেকে সুশান্তর বাবাকে মোবাইল করতে সংকোচ বোধ করছে। কিন্তু না কৃষাণ বাবুও কোনদিন একটা মোবাইল পর্যন্ত করল না। বাবা যে তার বিয়ের কথা জানতে পেরেছে একথা সুশান্ত বুঝতে পারেনি। সেদিন দুপুরবেলা সুশান্ত বাবাকে মোবাইল করল, হ্যালো বাবা নমস্কার।
কৃষাণ বাবু বলল, খালি খালি আর আমাকে নমস্কার দিয়ে কী করবি? মাথায় তো লাথি দিয়েছিস, পায় ছুঁয়ে প্রণাম করে আর কী করবি?
বাবা।
হ্যাঁ, তোর শুভ বিবাহের খবর আমি শুনেছি।
বাবা বউমাকে দেখবে না?
কার বউমা? আমি তোকে বিয়ে দিয়েছি যে আমার বউমা হবে? যদি আমার বউমা হতো তবে তো আমিই সব দায়িত্ব পালন করতাম।
বাবা, তুমি আবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা পালন করে তোমার বউমাকে ঘরে তোল।
বাঃ, বাঃ আনুষ্ঠানিকতা পালন করে ঘরে তুলব একটা রাস্তার মেয়েকে। আহারে বড় বউমার বাবার বাড়ি থেকে প্রশান্তর মতো একটা গোমূর্খ কত জিনিসপত্র, গয়না-গাঁটি, জমি-জমা পণ পেল আর তুই তো একটা অনার্স পাস ছেলে তোর ওপর আমি কত আশা করেছিলাম, আমার কথা না হোক নিজের কথা ভেবে হলেও তো বিয়ে করার আগে একটু ভাবতে পারতিস।
বাবা এসব কথা মোবাইলে-
তুই কি ভাবছিস? আমি তোকে কাছে ডেকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে এসব কথা বলব? যতদিন ঐ মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবি ততদিন আমার বাড়ির দিকে মুখ ফিরে তাকাবি না। কোনদিন মনে করবি না তোর বাবা বেঁচে আছে। আমিও মনে করব সুশান্ত মরে গেছে, বলতে বলতে কৃষাণ বাবুর কণ্ঠস্বরবুজে এলো।
মহামায়া কৃষাণ বাবুর উচ্চস্বরেকথা বলতে শুনে কাছে এসে দাঁড়ালো, কী হয়েছে? কার সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলছ?
কৃষাণ বাবু মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল, কার সঙ্গে আবার, তোমার গুণধর ছেলের সঙ্গে, বউকে নিয়ে বাড়িতে আসতে চায়।
কৃষাণ বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে মহামায়া কিছু বলার সাহস পেলো না। কিন্তু মায়ের মন অনেকটা দূর্বল হয়ে গেল। অনেকদিন থেকে সুশান্তকে দেখেনি, সে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছে। নিজের বউমাকে একবার দেখার ইচ্ছা হলো। মহামায়া কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। ধীরে ধীরে কৃষাণ বাবুর মুখের ক্রুদ্ধ ভাবটা কিছুটা নমনীয় হলো।
মহামায়া কৃষাণ বাবুর কাছে গিয়ে বলল, গরমে ঘেমে গেছ, টেবিল ফ্যানটা একবার কাছে এনে দিব।
কৃষাণ বাবু কর্কশ কণ্ঠে বলল, মতলবটা কী? ছেলের পক্ষ নিয়ে ওকালতি করতে এসেছ নাকি?
মহামায়ার ধারণা ভুল। সে কৃষাণ বাবুর মুখের ভাব দেখে সে মনের ক্রুদ্ধতা অনুমান করতে পারেনি। তার রাগ বিন্দুমাত্রও কমেনি। সহজে কমারও নয় কারণ প্রশান্ত তার শ্বশুরালয় থেকে অনেক পণ পেয়েছে আর সুশান্ত খালি হাতে একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসবে এত উদার মনের মানুষ কৃষাণ বাবু নয়। কিন্তু মহামায়া সহজ-সরল প্রকৃতির মহিলা, কৃষাণ বাবুর মতো জটিল, হিসেবী মানুষের মনের গভীরতা মাপার কৌশল মহামায়ার জানার কথা নয়।
মহামায়া আর কোন কথা বলল না। সে চোখের জল মুছে তার কাজে চলে গেল।

সুশান্ত শান্ত প্রকৃতির কিন্তু জেদি। ছোটবেলা থেকে বাবা-মা’র কাছে যে আব্দার করতো তা বাবা কোনভাবে পাশ কাটিয়ে গেলেও মা লুকিয়ে তার আব্দার পূরণ করতো। শৈশবে তার আব্দার পূরণ না হলে বাসার তৈজষপত্র ভাংচুর করতো, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাংচুরের অভ্যাসটা গাম্ভীর্যে রুপান্তরিত হয়েছে। আজ বাবার সঙ্গে কথা বলা শেষে মোবাইলটা সিটের ওপর রেখে কিছুক্ষণ গম্ভীরভাবে বসে রইল।
বিকেলবেলা প্রিয়ন্তী মোবাইল করল, হ্যালো।
হ্যাঁ প্রিয়ন্তী বলো।
তোমার কী হয়েছে?
কিছু না।
নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে, তুমি রেডি হও তো আমি তোমার মেসের গেটে আসছি।
আচ্ছা।
কিছুক্ষণের মধ্যে প্রিয়ন্তী সুশান্তর মেসের গেটে এসে মিস্ কল দিল।
সুশান্ত বেরিয়ে এলো, তুমি কি রেডি হয়ে আমাকে মোবাইল করেছিলে নাকি?
কেন?
খুব তাড়াতাড়ি এলে তো।
হ্যাঁ।
কোথাও যাবে?
পদ্মার পাড়ে।
কেন?
তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে।
চলো, বলে একটা রিক্সা ডেকে দুজনে রিক্সায় উঠল।
শরৎ কাল, পদ্মায় অনেক চর জেগেছে, সেই চরের কাশবনে অনেক ছেলেমেয়ে নিরিবিলি পরষ্পরের গায়ে গা ছুঁয়ে গল্প করার জন্য যায়। আগে প্রিয়ন্তী আর সুশান্তও যেত, সুশান্ত প্রিয়ন্তীর কোলে মাথা রাখতো আর প্রিয়ন্তী সুশান্তর চুল আঙ্গুল এলিয়ে দিত। এখন আর যায়না, শুধু কাশবনে নয়, ভদ্রা পার্কেও যায় না। ওসব জায়গায় প্রেমিক-প্রেমিকারা যায়, স্বামী-স্ত্রীরাখুব একটা যায় না। কারণ সবার চোখে ফাঁকি দেওয়ার সময়টা তারা অতিক্রম করেছে, যাবাার আগ্রহটাও অনেকটা কমে গেছে। আজকাল খুব বেশি হলে পদ্মার পাড়ে আসে প্রয়োজনীয় কথা বলে চলে যায়।
প্রিয়ন্তী আর সুশান্ত একটা বেঞ্চে বসলো।
সুশান্ত জিজ্ঞেস করল, প্রিয়ন্তী কী খবর বলো?
সুশান্ত সবকিছু তোবোঝা হলো, আমার বাড়ি থেকে তো আর টাকা আসবে না। ঐদিকে মুখ করে আর তাকাবার সুযোগও নেই। বাবা থাকলে হয়ত কান্নাকাটি করে একসময় তার মন গলাতে পারতাম, মা আছে কিন্তু মায়ের হাতে তো সংসারের কোনকিছু নেই। হিন্দু সমপ্রদায়ে বিয়ের পর বাপের বাড়িতে মেয়েদের কোন অধিকার থাকে না।
সুশান্ত চুপ করে বলল। প্রিয়ন্তী কী বলতে চাইছে তা খুব সহজ, সুশান্তর বুঝতে অসুবিধা হলো না। সে কয়েকমুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, প্রিয়ন্তী তুমি কী করতে চাও?
আবার আমাকেই জিজ্ঞেস করছ কেন? কি করা উচিত তুমি বলো?
প্লিজ প্রিয়ন্তী তুমি বলো আমার মাথা কাজ করছে না।
আমি তিথির সঙ্গে কথা বলেছি, আমরা শেয়ার করলে ওরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবে। এমনিতেই তো আমাদের দু’দিকে খরচ হচ্ছে তাই না? বলে প্রিয়ন্তী সুশান্তর উত্তরের অপেক্ষায় রইল।
সুশান্ত বলল, টাকা?
দু’জন মেসে থাকলে আমাদের টাকা লাগছে না? মনে করো সেই টাকাটা এক জায়গায় খরচ হবে। দু’জনে টিউশনি করব। আর বাকি টাকা-
সুশান্ত প্রিয়ন্তীর কথা বলা শেষ হওয়ার আগেই বলল, বাকি টাকা কোথা থেকে আসবে?
প্রিয়ন্তী কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর জিজ্ঞেস করল, তোমার বাড়ির খবর কি জেনেছে?
হুঁ।
তারপর।
সুশান্ত কিছু বলল না। সে মাথা নত করে বসে রইল।
প্রিয়ন্তী বলল, সুশান্ত আমার কিছু গয়না আছে, আপাততঃ সেখান থেকে কিছু বিক্রি করে ওদের সঙ্গে বাসায় উঠি, তারপর দুজনে টিউশনি করাবো। আমাদের দুজনেরই ইংরেজিতে অনার্স, কোচিং সেণ্টারগুলোতে চাকরি পেতে আমাদের খুব একটা অসুবিধা হবে না। অবশিষ্ট সময় বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াবো।
প্রিয়ন্তী তোমার মাথায় যে বুদ্ধি এসেছে আমার মাথায় কোনদিন সে বুদ্ধি আসতো না। তবে আমার একটা কথা আছে?
কী কথা?
তোমাকে গয়না বিক্রি করতে হবে না।
টাকা।
আমি ব্যবস্থা করব।
টাকা কোথায় পাবে?
আছে।
প্রিয়ন্তী একবার আকাশের দিকে তাকালো। আকাশে সাদা খণ্ড খণ্ড মেঘ খেলা করছে, পাখিরা নীড়ে ফিরতে শুরু করছে। হাল্কা হাল্কা কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। প্রিয়ন্তী বলল, চলো, শীত পড়ছে।
হ্যাঁ চলো।
চলবে…

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top