Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

আমরাও নাগরিক, আমাদেরটাও জীবন!

: | : ১৬/১১/২০১৩

এক লোকের অনেক ইচ্ছে ছিল তার মা-কে নিয়ে সমুদ্র ভ্রমণে যাবেন। কিন্তু সেই জন্যে তিনি যতবার নৌকা তৈরী করতে উদ্যোগ নিয়েছেন, ততবার-ই কোনো না কোনো বিপত্তি ঘটে সেই উদ্যোগ ভেস্তে গিয়েছে। কখনো নৌকা বানানোর সময় মিস্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে, কখনো কাঠে ঘুণে ধরেছে, আবার কখনো নৌকা বানিয়ে পানিতে নামানোর সাথে সাথে তলদেশ ফেঁটে গিয়েছে। লোকটি ধর্মভীরু হওয়ায় এই জন্যে বারবার ঈশ্বরের কাছে দোয়া করেছেন, ঈশ্বর যেন তার মনবাসনা পূর্ণ করেন। কিন্তু এত কিছুর পরও যখন সমুদ্র ভ্রমণ অনিশ্চিত হয়ে গেল, তখন লোকটি ঈশ্বরের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ঈশ্বরকে গালিগালাজ শুরু করলেন এবং বন্ধ করে দিলেন ধর্মীয় উপাসনা। এভাবেই বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাত একদিন দৈববাণীর মাধ্যমে ঈশ্বর লোকটিকে জিজ্ঞাস করলেন, সে ঈশ্বরের উপর ক্ষোব্ধ কেন ? জবাবে লোকটি যখন জানালেন, ঈশ্বর তার দোয়া কবুল করেন নি বলে সে ক্ষিপ্ত। তখন ঈশ্বর বললেন, সব দোয়া কবুল করা যায় না, তাতে অসুবিধা আছে।
প্রতিত্তরে লোকটি যখন আবার বললেন, আমি আমার মা-কে নিয়ে সমুদ্র ভ্রমণে যাবো। এখানে অসুবিধার কি আছে ? ঈশ্বর পুনঃরায় যখন বললেন আসুবিধা আছে এবং তুমি তা বুঝবে না। লোকটি আরও ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, হয় তুমি আমার দোয়া কবুল করো, না হয় আমাকে দোয়া কবুল করার ক্ষমতা দাও। তখন আমি-ই আমার কাজের জন্যে দ্বায়ী থাকবো, তোমাকে আর দোষারোপ করবো না। নচেত্ আমি তোমাকে স্বার্থপর হিসেবেই ভেবে নেবো, এবং জীবনে আর কখনো তোমার উপাসনা করবো না।
ঈশ্বর লোকটিকে পাঁচজন মানুষের একটি করে দোয়া কবুল করার ক্ষমতা দিলেন। লোকটি সেই ক্ষমতা পাওয়ার পর প্রফুল্ল চিত্তে প্রথমে নিজের দোয়া কবুল করলেন, পরে সস্ত্রী-র একটি দোয়া কবুল করলেন। নিজ বাড়়ির চাকরকে ভালোবাসতেন বলে চাকরের একটি দোয়া কবুল করলেন। লোকটির দুই ভগ্নিপুত্র কুস্তিবীর ছিল। লোকটি কুস্তিবীর দুই ভগ্নিপুত্রকে অত্যাধিক স্নেহ করতেন। দোয়া কবুল করার ক্ষমতা পাওয়ার দ্বিতীয় দিনে সেই দুই ভগ্নিপুত্র কুস্তি লড়াইয়ে হেরে লোকটির কাছে এল। আদুরে ভগ্নিপুত্রদ্বয়ের মন খারাপ দেখে লোকটি সঙ্গে সঙ্গে একটি করে ওদের দুইজনের দুইটি দোয়া কবুল করলেন। এরপর একদিন ভোরে মা ও মাঝিমাল্লা নিয়ে তিনি সমুদ্র ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লেন। ছয়মাস পর সমুদ্র ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে নৌকা ডোবে মা-সহ মাঝিমাল্লারা সব নিহত হল। লোকটি কোনো রকমে নিজের জীবন বাঁচিয়ে বাড়িতে ফিরে এসে দেখেন যে চাকরের দোয়া তিনি কবুল করে ছিলেন, সেই চাকর তার সব কিছুর মালিক হয়ে গেছে এবং তার স্ত্রী সেই চাকরকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছে! লোকটি এসব দেখার পর অভিমানে রাস্তা ধরে হাটতে শুরু করলেন। বেশ কিছুদূর হাটার পর রাস্তার পাশে অনেক লোক সমাগম দেখে একজনকে জিজ্ঞাস করে জানতে পেলেন সেখানে গত চব্বিশ ঘন্টা ধরে দুই পালোয়ান কুস্তি লড়াই করছে, কিন্তু এখনো কেউ হার মানে নি! লোকটি আগ্রহ নিয়ে ভিড় ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখলেন তার দুই ভগ্নিপুত্র নিজেদের মধ্যে কুস্তি লড়াই করছে এবং তাদের অবস্থা খুবই করুণ। নাক মুখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফেঁটে রক্ত ঝরছে, এখনি না থামালে হয়ত মরে যাবে! লোকটি ঢের চষ্টা করেও যখন থামাতে পারলেন না, তখন ঈশ্বরের স্মরণাপন্ন হয়ে পালোয়াদেরকে থামানোর জন্যে দোয়া করলেন। দৈববাণীর মাধ্যমে লোকটিকে জানিয়ে দেওয়া হল, তা কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ ছয়মাস আগে তিনি এই দুই পালোয়ানের যে দোয়া কবুল করে ছিলেন তা ছিল, ওরা যাতে কখনো কোনো কুস্তি লড়াইয়ে না হারে। এই কথা শোনার পর লোকটির নিজের প্রতি ঘৃণা এসে গেল এবং তিনি আত্মহননের পথ বেছে নিলেন।

এই গল্প বলার উদ্দেশ্য হল, কোনো খেলাতেই কেউ কখনো পরাজিত হতে চায় না। এই পরাজিত না হওয়ার অদম্য ইচ্ছে থেকে আমাদের রাজনৈতিক খেলায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বড় দুই দল দাবার যে চাল দিচ্ছে, তা ধীরে ধীরে আত্মঘাতী রূপ ধারন করেছে! হ্যা নির্বাচন রাজনীতির-ই একটা অংশ। আর নির্বাচন মানেই প্রতিযোগীতা। প্রতিযোগীতায় নেমে সব প্রতিযোগী-ই জিততে চায় এটাও স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু সেই জিততে চাওয়া যখন মরণপণ সংকল্প হয়ে ওঠে, তখনি সমস্যা প্রকট আকার ধারন করে। আমাদের বড় দুই রাজনৈতিক দল বা জোট আমাদেরকে নিয়ে এমনি মরণপণ খেলা শুরু করেছে। সেই খেলায় আমরা জনগণ হচ্ছি বল। ঘুরে ফিরে যার কাছে যাচ্ছি সেই স্বজোরে লাথি মারছে!

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top