Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ঠাকুমার স্মৃতি

: | : ১৭/১১/২০১৩

প্রণব সপ্তাহে একবার ঠাকুরমাকে দেখতে যায়। সে দিন ঠাকুমাকে দেখতে কাকুর বাড়ি গিয়ে ছিল। সে সময় কাকুর বাড়ির সবাই টিভি দেখতে ব্যস্ত ছিল। প্রণব চুপচাপ ঠাকুমার ঘরের দিকে পা বাড়াল। বাড়ির এক কোণে ছোট্ট একটা কুঠুরির মত ঘরে ঠাকুমা থাকেন। ঘরের দরজা খোলাই ছিল। ঘরের আলো নেভানো ছিল। আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছিল ঠাকুমা শুয়ে আছেন।

প্রণব ঠাকুমার ঘরে ঢুকতেই ঠাকুমা ধীরে ধীরে উঠে বসলেন। প্রণবের ঠাকুমার দিকে চোখ পড়ল, তাঁর আলুথালু চুল,পরনে ছিঁড়া মলিন আধখানা কাপড় জড়ানো,গায়ের ব্লাউজ এক দিকে ঝুলে পড়ছিল। ঠাকুমা তাঁর পোশাক টেনে একটু ঠিকঠাক করে মাথার চুল হাতের আঙুল দিয়ে গোছগাছ করে নেবার চেষ্টা কর ছিলেন। খাটে বসেই ম্লান হাসবার চেষ্টা করে প্রণবের মাথায় স্নেহাদরের হাত ঠেকালেন,কেমন আছ দাদা ভাই ?

প্রণব তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে করতে বলল,ভাল আছি ঠাম্মা ! তুমি কেমন আছ,ঠাম্মা ?

আবার ঠাকুমা মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললেন,ভাল আছি রে দাদা ভাই !

ঠাকুর মার এমন দৈন্য অবস্থা দেখলে প্রণবের খুব খারাপ লাগে। এবার ফেরার সময় প্রণব কি মনে করে পকেট থেকে কুড়িটা টাকা বের করে ঠাকুমার হাতে গুঁজে দিল।

প্রণবের নজর পড়েনি,কাকিমা আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কিছু খেয়াল করছিলেন। তিনি ঠাকুমার হাত থেকে টাকাটা ছিনিয়ে নিয়ে প্রণবের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।

প্রণব বলে ছিল,আমার তো ঠাকুমাকে কিছু দিতে ইচ্ছে করে, কাকিমা !

কাকিমা ঝাঁঝির সুর নিয়ে বলে উঠেছিল,এত ইচ্ছা যখন তা হলে করে দেখাও না–নিয়ে যাও না ঠাকুরমাকে–তোমাদের কাছে কিছু দিন রাখো।

প্রণবের কিছুই করার ছিল না। ঘরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ঠাকুমার দৈন্য অবস্থার কথা ভেবে ভেবে সে খুব দুঃখ পাচ্ছিল। তার চোখের সামনে চলচ্চিত্রের মত বারবার ঠাকুমার করুণ মুখটা ভেসে উঠছিল।

ঘরে গিয়ে প্রণব বাবাকে বলল,বাবা,আমরা ঠাকুমাকে আমাদের ঘরে নিয়ে আসি ?

বাবা বললেন,নিয়ে তো আসতাম,কিন্তু আমাদের ঘরে তোর ঠাকুমাকে রাখব কোথায় ?

প্রণব বাবার কথা শুনে অবাক হয়ে গেল।  সাহসে ভর করে সে বলে উঠলো,ঠাকুমা আমার ঘরেই থাকতে পারবে।

বাবা রেগে বলে উঠলেন,কেন ? তোমার পড়া শুনা কিছু করতে হবে নাকি ! তারপর কিছুটা নরম সুর নিয়ে বলে উঠলেন, দেখো,পৈত্রিক বড় বাড়ি তোমার কাকার ভাগে পড়েছে,তাই কথা মত ঠাকুমাকে রাখার দায়িত্ব তোমার কাকুর ওপর।

প্রণব অসহায় ছিল। ওর করার কিছুই ছিল না। শুধু মনে হয়ে ছিল,বাবা,কাকা চাইলে ঠাকুমাকে ভাল ভাবে রাখতে পারতেন না কি ?

এ ঘটনার চার দিন পরেই ঘরে ফোন এলো,ঠাকুমা  নেই !

খবর শুনেই প্রণব ছুটে গেল কাকুর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখল একদিনের জন্যেও ভালভাবে ঠাকুমার সেবা করে নি সেই কাকিমা ও মা গলা ছেড়ে কেঁদে চলেছেন ! সে কান্নার আওয়াজ আশপাশের ঘর পর্যন্ত নিশ্চয় পৌঁছে থাকবে। পাশের বাড়ির এক বৃদ্ধ এসে অনেকটা ব্যঙ্গের সুর নিয়ে বলে উঠলেন,অনেক হয়েছে,এখন সংস্কারের ব্যবস্থার দিকে মন দাও তো !

বেঁচে থাকতে একটা নতুন শাড়ি দিয়ে যাঁর যত্ন নিতে পারেনি আজ সেই শাশুড়ির মৃত দেহে বৌমাদের নতুন সাড়ি চড়িয়ে শ্মশানে পাঠাবার ঘন ঘটা প্রণবের চোখে পড়ল। মৃত ঠাকুমার ফুল চন্দনের সাজ সজ্জার নিয়ম আচারের আয়োজন প্রণবের মনকে ভীষণ পীড়া দিচ্ছিল।

পরের দিন পত্রিকায় ঠাকুমার ছবি ছাপা হল–তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হল। বাবা,কাকা ঠাকুমার ঘটা করে শ্রাদ্ধ শান্তির ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত ছিল।

প্রণব চুপচাপ এক পাশে দাঁড়িয়ে ঘরের মাঝখানে সাজিয়ে রাখা ঠাকুমার বড় ফটোর দিকে তাকিয়ে ছিল।

সমাপ্ত

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top